রিফাত হাসান সম্পর্কিত, সংস্কৃতি-উদ্যোগের আলাপ

সালাহ উদ্দিন শুভ্র

রিফাত হাসানের জন্মদিনে..

February 21, 2022   0 comments   10:34 am
সালাহ উদ্দিন শুভ্র

তো, এর পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের পরে আসলে আমাদের এখানে চিন্তার জগতে বড় ধরনের উলটপালট ঘটল। অর্থাৎ প্রগতিশীল যে চিন্তাভাবনাগুলো, ঘরানাগুলো, পলিটিক্যাল এলায়েন্সগুলো বা সঙ্গগুলো, পলিটিক্যাল পাঠচক্রগুলো, সেগুলোকে আমরা দেখলাম যে, তারা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের যে অসাড়তা, অন্তঃসার শূন্যতা সেগুলো আমরা চোখের সামনে দেখলাম। তার ঠিক বিপরীতে না, তার পাশাপাশি আরেকটা চিন্তা যেটা আসলে ইনক্লুসিভ ধরনের, যেটা আমরা বাম রাজনীতির প্রশ্নে বলি, ইসলাম প্রশ্নে বলি, বিভিন্ন প্রশ্নগুলোকে আরেকটু গভীর থেকে অর্থাৎ দেখার আরেকটা দৃষ্টিভঙ্গি যেটা আমাদের সোসাইটিতে কখনো ছিল না তা না, খুব ক্ষীণ আকারে ছিল সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা— রিফাতের মধ্য দিয়ে আবার আমরা পাই আর কি। মানে আমাদের সময় যেটা, আমাদের সময় বলতে, আমরা যদি আমাদের চিন্তার এখানে ধারাটা ভাবি, তাহলে হয়তো আহমদ ছফা, বা আবদুর রাজ্জাক, বা পরবর্তীতে ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান এই একটা ধারা, যে ধারাটা ঠিক অফট্র্যাক, মূল ধারার পাশাপাশি আরেকটা ধারা, সেই ক্ষীণ ধারাটা আমাদের সময়ে এসে কারা তার প্রতিনিধি? তো, আমি দেখলাম যে, রিফাত হাসান হচ্ছেন আমাদের সময়ের সেই প্রতিনিধিদের একজন।

Share

আচ্ছা সবাইকে ধন্যবাদ। ওইভাবে তো বলার প্রস্তুতি নাই। মানে আসলে রিফাত হাসানের প্রোগ্রাম উপলক্ষে আসা। বিশেষ করে অনেকেই আছেন এখানে, যাদেরকে ফেসবুকে দেখি, সামনা সামনি নিজের চেহারাকে দেখানো, কথা বলা, এটার জন্যেই আসা। তো, রিফাত হাসানের সঙ্গে আমার আসলে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ অনেক দিনের, সামহোয়্যার-ইন ব্লগের সময় থেকে । আমি যত দূর মনে করতে পারি। তা, আমাদের এখানে ভার্চ্যুয়াল বুদ্ধিজীবিতার দুইটা ফেইজ আছে। একটা হচ্ছে ব্লগে আমরা যখন লিখতাম, ব্লগে আমি অবশ্যই অনেক পরে যুক্ত হয়েছি, কিন্তু আগে থেকে যদি ধরেন, ব্লগের লেখালেখি ওই পর্বটার পরে, শাহবাগ আন্দোলন, শাহবাগ আন্দোলনের পরে এখন আবার ফেসবুকে একধরনের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা চলছে আর কি। তো, ব্লগে রিফাতকে দেখতাম লেখালেখির বিষয়ে। কিন্তু, ব্লগের লেখালেখিগুলো আসলে অত মনে নাই। ফেসবুকে বিশেষ করে, যখন ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলন হয়, তখন রিফাতের একটা লেখা, আমার মাঝে মাঝে মনে পড়ে।

এখনো, আজকে আসতে আসতে যখন ভাবতেছিলাম, তখন মনে পড়তেছিলো যে, হেফাজত যখন ঢাকায় আসে, তাদের সাথে ট্রেনে চড়ার একটা বিবরণ, রিফাত ওই হেফাজতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ট্রেনে আসার একটা বিবরণ অর্থাৎ আমরা ঢাকা শহরে যে প্রগতিশীল একটা সারাউন্ডিংসের মধ্যে ছিলাম, বা আমরা প্রগতিশীলতাকে যেভাবে ফিল করতাম, দেখতাম, সেখান থেকে রিফাতের ওই লেখা পড়ে আমার মনে হইল যে, তাইলে দেখার আরো একটা দৃষ্টিভঙ্গি আছে। মানে, এই দৃষ্টিভঙ্গিটার মধ্যে যে একটা সর্বজনীনতা অর্থাৎ সবাইকে ইনক্লুড করার একটা, ইনক্লুসিভ একটা আউটলুক, সেই ব্যাপারটা আছে আর কি। ফলে আমার মধ্যে প্রগতিশীলতার যে সমস্ত চিন্তা বা ধারণা সেগুলো ধীরে ধীরে যে পরিবর্তন সেখানে রিফাত হাসানের ওই লেখাটার একটা ছোট বা বড় যাই হোক, একটা ভূমিকা আছে। মানে ওটা আমার স্মৃতির মধ্যে আছে আর কি।

তো, এর পরবর্তী সময়ে ২০১৩ সালের পরে আসলে আমাদের এখানে চিন্তার জগতে বড় ধরনের উলটপালট ঘটল। অর্থাৎ প্রগতিশীল যে চিন্তাভাবনাগুলো, ঘরানাগুলো, পলিটিক্যাল এলায়েন্সগুলো বা সঙ্গগুলো, পলিটিক্যাল পাঠচক্রগুলো, সেগুলোকে আমরা দেখলাম যে, তারা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের যে অসাড়তা, অন্তঃসার শূন্যতা সেগুলো আমরা চোখের সামনে দেখলাম। তার ঠিক বিপরীতে না, তার পাশাপাশি আরেকটা চিন্তা যেটা আসলে ইনক্লুসিভ ধরনের, যেটা আমরা বাম রাজনীতির প্রশ্নে বলি, ইসলাম প্রশ্নে বলি, বিভিন্ন প্রশ্নগুলোকে আরেকটু গভীর থেকে অর্থাৎ দেখার আরেকটা দৃষ্টিভঙ্গি যেটা আমাদের সোসাইটিতে কখনো ছিল না তা না, খুব ক্ষীণ আকারে ছিল সেই দৃষ্টিভঙ্গিটা— রিফাতের মধ্য দিয়ে আবার আমরা পাই আর কি।

মানে আমাদের সময় যেটা, আমাদের সময় বলতে, আমরা যদি আমাদের চিন্তার এখানে ধারাটা ভাবি, তাহলে হয়তো আহমদ ছফা, বা আবদুর রাজ্জাক, বা পরবর্তীতে ফরহাদ মজহার, সলিমুল্লাহ খান এই একটা ধারা, যে ধারাটা ঠিক অফট্র্যাক, মূল ধারার পাশাপাশি আরেকটা ধারা, সেই ক্ষীণ ধারাটা আমাদের সময়ে এসে কারা তার প্রতিনিধি? তো, আমি দেখলাম যে, রিফাত হাসান হচ্ছেন আমাদের সময়ের সেই প্রতিনিধিদের একজন। এর বাইরে রিফাতের যে সমস্ত বই, আমি সবগুলো পড়েছি তা না, কিন্তু এখানে এই যে আগের দুই বক্তা একটু সিরিয়াস মনে হলো আমার কাছে। আমি মনে করি না যে, রিফাত হাসানের অত সিরিয়াস ‘এক্টিভিজম’ ধরণের আছে ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে বা বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। বরং রিফাত হাসানের জল্লাদের, জল্লাদখানায় বইসা কবিতাপাঠ বা জীবনটাকে, এই সময়টাকে কীভাবে উদযাপন করবেন— এই যে পরিহাস বা হাস্যরস এই বিষয়গুলো কিন্তু মানে উইটগুলো রিফাতের একটা গুণ বলে আমি দেখি আর কি বা আমি পাই, রিফাতের যে গুণ আছে।

এর বাইরে আমাদের সময়ের মূলধারার বিপরীতে রিফাতের যে অবস্থান সেটা আরো অনেকের সঙ্গেই রিফাত আছেন কিন্তু তিনি তার নিজস্ব একটা, যেমন উনি চট্টগ্রামে থাকেন, ঢাকায় থাকেন না। তো চট্টগ্রামে থেকেও মানে ঢাকার— চট্টগ্রামে থাকার একটা সমস্যা আছে। সেটা আমরা স্বীকার করি বা না করি। ঢাকায় না থাকার সমস্যা যেটা। তো কেন্দ্রের বাইরে থেকেও উনি একটা কেন্দ্র হয়ে উঠলেন, যেমন আমি দেখলাম যে আমার ফেসবুকে অনেকে বলতেছেন যে তিনি সিলেট থেকে বা কুমিল্লা থেকে কোথায় কোথা থেকে যেন আসতেছেন, রিফাতের অনুষ্ঠানে হাজির হওয়ার জন্য। তো আমি দেখি যে, রিফাতের জনপ্রিয়তা বা ফেসবুকে তাকে ওউন করা, তাকে ফলো করা, সাবস্ক্রাইব করা, এগুলোতেও রিফাত আমাদের অনেকের চেয়ে বেশ ভালো একটা অবস্থানে আছেন। এর পুরো কৃতিত্বই তার।

এর বেশি কিছু আর বলব না, তাকে জন্মদিনের লেট শুভেচ্ছা। সবাই ভালো থাকবেন।

সালাহ উদ্দিন শুভ্র, লেখক।

Leave the first comment