Blogs

রিফাত হাসান

শহীদ মিনার দখল

October 17, 2014   0 comments   7:54 pm

পিয়াস করিম জীবিতকালে কবে শহীদ মিনার গেছেন আল্লাহ মালুম। মসজিদের খবরও জানি না। শহীদ মিনার কেন্দ্রিক যে আলগা-রাজনৈতিক-বখাটেপনার ধর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যদ্দুর বুঝেছি, পিয়াস তার বিরুদ্ধে ছিলেন। আবার ভদ্রলোক আপাদমস্তক সেকুলার ছিলেন। রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রগতিশীল। এই প্রগতিশীলতার জায়গা, একই সাথে তার নামেই তৈরি হওয়া সেকুলার প্রতিক্রিয়াশীলতা ও ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদের উগ্র ফেনোমেনাগুলোর বিরুদ্ধে তার লড়াই ছিল। যেমন শাহবাগ বিষয়ে তার প্রথম মন্তব্য: জনপ্রিয় আন্দোলন থেকেও ফ্যাসিজম উঠে আসতে পারে। যার পরে তার বাসায় হামলা হইছিল, মনে পড়ে। শাহবাগ থেকে তার উপর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এর পরও পিয়াস করিমকে মত পরিবর্তন করতে দেখা যায় নাই কোন দিন। জীবিত কালে। কিন্তু দেখা গেল মরার পরে তাকে ক্ষণিকের তরে শহীদ মিনারে যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি কইরা আবেদনপত্র লিখতে হল। সেই আবেদন নিষ্পত্তির জন্য তিনদিন ধরে হিমঘরে বইসা থাকতে হল। যেন শহীদ মিনারেই একমাত্র মোক্ষ বা নির্বাণ। নইলে তার আত্মা ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াবে। মিনার একটি পৌত্তলিক ব্যাপার। রাষ্ট্রীয় ধর্মবাসনার চিহ্ন। যেখানে ধর্ম নেই, ধর্মবাসনা আছে। একটি সেকুলার ধর্মচিহ্ন , যা বর্তমানে প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিস্টদের মাজার বৈ কিছু নয়। আমার মনে হয় পিয়াস রাষ্ট্ররে সে অর্থে ওন করতেন না, যে অর্থে বর্তমানে শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে। এইসব সত্ত্বেও তার সতীর্থরা কেন তার লাশ সেখানেই নিয়ে যেতে চাইতেছিলেন? বোধ করি সেকুলার জায়গা থেকেই। কারণ যদিও দুটোই…

Share

পিয়াস করিম জীবিতকালে কবে শহীদ মিনার গেছেন আল্লাহ মালুম। মসজিদের খবরও জানি না।

শহীদ মিনার কেন্দ্রিক যে আলগা-রাজনৈতিক-বখাটেপনার ধর্মসংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যদ্দুর বুঝেছি, পিয়াস তার বিরুদ্ধে ছিলেন।

আবার ভদ্রলোক আপাদমস্তক সেকুলার ছিলেন। রাজনৈতিক চিন্তাধারায় প্রগতিশীল। এই প্রগতিশীলতার জায়গা, একই সাথে তার নামেই তৈরি হওয়া সেকুলার প্রতিক্রিয়াশীলতা ও ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতীয়তাবাদের উগ্র ফেনোমেনাগুলোর বিরুদ্ধে তার লড়াই ছিল।

যেমন শাহবাগ বিষয়ে তার প্রথম মন্তব্য: জনপ্রিয় আন্দোলন থেকেও ফ্যাসিজম উঠে আসতে পারে। যার পরে তার বাসায় হামলা হইছিল, মনে পড়ে। শাহবাগ থেকে তার উপর হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এর পরও পিয়াস করিমকে মত পরিবর্তন করতে দেখা যায় নাই কোন দিন। জীবিত কালে।

কিন্তু দেখা গেল মরার পরে তাকে ক্ষণিকের তরে শহীদ মিনারে যাওয়ার জন্য কাকুতি মিনতি কইরা আবেদনপত্র লিখতে হল। সেই আবেদন নিষ্পত্তির জন্য তিনদিন ধরে হিমঘরে বইসা থাকতে হল। যেন শহীদ মিনারেই একমাত্র মোক্ষ বা নির্বাণ। নইলে তার আত্মা ভূত হয়ে ঘুরে বেড়াবে।

মিনার একটি পৌত্তলিক ব্যাপার। রাষ্ট্রীয় ধর্মবাসনার চিহ্ন। যেখানে ধর্ম নেই, ধর্মবাসনা আছে। একটি সেকুলার ধর্মচিহ্ন , যা বর্তমানে প্রতিক্রিয়াশীল ফ্যাসিস্টদের মাজার বৈ কিছু নয়। আমার মনে হয় পিয়াস রাষ্ট্ররে সে অর্থে ওন করতেন না, যে অর্থে বর্তমানে শহীদ মিনার দাঁড়িয়ে আছে।

এইসব সত্ত্বেও তার সতীর্থরা কেন তার লাশ সেখানেই নিয়ে যেতে চাইতেছিলেন?

বোধ করি সেকুলার জায়গা থেকেই। কারণ যদিও দুটোই ধর্মচিহ্ন, শেষ পর্যন্ত শহীদ মিনার একটি সেকুলার প্রপঞ্চ।

অথবা আরো মহৎ ব্যাপার থাকতে পারে। মাজার সংস্কার আন্দোলন বা শহীদ মিনার পুনর্দখলের বাসনা।

উভয় বাসনাই অদ্ভুত মনে হইছে আমার। প্রথমত শহীদ মিনাররে মোক্ষের জায়গায় নিয়ে যাওয়া। দ্বিতীয়ত মৃত পিয়াস করিমকেই পুনর্দখল বাসনার উপলক্ষ বানানো। তার লাশ দীর্ঘ তিন দিন ধইরা বসিয়ে রাখা। কিছু একটা করতে পারার স্বপ্ন? তাদের না পারাটা মরহুম পিয়াস করিম করে দেবেন?

আমি মনে করি শহীদ মিনার পুনর্দখল হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত যখন সেটি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রপার্টি বইলা দাবি করা হয়, বা সেখানে যেতে বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়। মসজিদ যেমন, উদার সেকুলারদের জন্যও জায়গা দরকার। শহীদ মিনার পাবলিক প্রপার্টি।

কিন্তু কিছু করতে চাওয়ার ব্যাপারটি জীবিতদের কাজ। শহীদ মিনার যদি পুনর্দখল করা দরকার হয়, তাও। নিজেদের অক্ষমতাটিরে মেনে নিতে শেখা দরকার পিয়াস করিমের সতীর্থদের। অনুমতি নিয়ে দখলিস্বত্ব কায়েম হয় না বন্ধুগণ।

অথবা আজ থেকে আমাদের কোন শহীদ মিনার না থাকুক। মসজিদ তো আছেই। তাকে পুরোপুরি ভারমুক্ত করে দেওয়া যায়।

শহীদ মিনারে যার জায়গা হয় নাই, মসজিদে তারও জায়গা হবে, তা নিশ্চিত। সেকুলার পিয়াস করিমের জন্য মসজিদের ভাইবেরাদরগণ কোন বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাই। বরং খুশবো ও সুগন্ধি রুমাল নিয়ে অপেক্ষারত। আল্লাহু রাব্বি। মুহাম্মদ নবি।

তাই পিয়াস করিমেরও শেষ যাত্রা মসজিদের দিকেই।

বিদায়, পিয়াস করিম। আপনার এই যাত্রা শুভ হোক।

Leave the first comment