তিন বছর আগের এক সন্ধ্যা …
রিফাত ভাইয়ের “সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি” পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম মূলত দুই কারণে, গদ্যের সাবলীলতায় আর চিন্তার স্বচ্ছতায়। তাঁর ফেসবুক পোস্ট পড়া হয় প্রায় নিয়মিত। কিন্তু ফেসবুক পোষ্টের চেয়ে তাঁকে অনেক বেশি মুক্ত লেগেছে আমার বইয়ে। ফেসবুক যেহেতু রাস্তার মোড়ের মতো, রাস্তায় না চাইলেও দেখা হওয়া লোকের সাথে কথা বলতে হয়, ফেসবুকে সামাজিকতা রক্ষার যেন একটা দায় থাকেই। তাঁর নিজ বন্ধু বা ঘরনা আছে সুস্পষ্ট। তাঁদের সব চিন্তা ও মতের সাথে আমি একমত নই। কিন্তু লেখক রিফাত হাসানের ‘লেখনি চিন্তা’ ও’ চিন্তার নৈতিকতা’ প্রশ্নে আমাকে অবাক করেছেন। আমার এমন ভালোলাগা তাঁর প্রজন্মের লেখকদের ভিতরে বিরল প্রায়।
প্রথম বই পড়েই তাঁর অন্য বই সম্পর্কে আগ্রহী হই। তাঁর একটি বই এর নাম আমার কৌতূহল আরও বাড়িয়ে দিল, “এই সময়টি কিভাবে উদযাপন করবেন”। অনেকবার বাতিঘর ও রকমারিতে সন্ধান করেও পাইনি। সম্ভবত এখন বাজারে নেই। আমি বন্ধু লেখকের বই ও কিনে নিতে চাই। এটা আমার ব্যক্তিগত বোধ আর গুরুর নির্দেশ। কিন্তু রিফাত ভাইয়ের এই বই আনন্দ আর কৃতজ্ঞতার সাথে উপহার নিয়েছি।
এখন বই নিয়ে বলি। আজ হাত এ পেলাম। রাতে পড়ব। বইয়ের প্রচ্ছদে দেখি চার্লি চ্যাপলিন এর ছবির স্কেচ। একটু থমকে গেলাম। নানান কারণে চার্লি চ্যাপলিন নিয়ে আমার দুর্বলতা আছে। বুঝলাম এই বই আসলেই অন্য কিছু হবে। উলটে পালটে দেখার সময় দেখি, রিফাত ভাই ভুমিকার স্থানে লিখেছেন,” রূপকথা, ভাঁড়, অধিবিদ্যা ও রাজনীতির আলাপ”। তখন বুঝলাম কেন চ্যাপলিন প্রচ্ছদে।
তো বহমান সময়ের মাঝে যখন চারপাশের বাতাস একটা নকল কারাগার বানিয়ে রাখে, একটা দমবন্ধ আর জমাট ঘোর আপনাকে পেয়ে বসবে আপনি কি করে সেই সময় উপভোগ করবেন? “ধরুন, আপনার বিস্তর সময়। বিকেলটা ফাঁকা পড়ে আছে। বন্ধুদের আড্ডায় যাবেন, তারও উপায় নেই। ছবির হাট বন্ধ। আড্ডার জায়গাগুলো সিলগালা করে দেওয়া। ফেসবুকে রাজনৈতিক আলাপ করবেন, তাইলে গ্রেফতার হবেন। মিছিল-মিটিং? প্রশ্নই আসে না। এনজিওগিরি করতে পারেন। সেনিটেশন ও সৌহার্দ্য প্রোগ্রাম। শিশুদের যৌন সচেতনতা। সাক্ষরতা।- এইসব ফাজলামো। তবে অধিকারের মত না, যার আগ্রহ রাজনীতি।
কিন্তু যদি এইসবে আপনার অরুচি থাকে? রাজনীতিতে অবসরভোগিরা এ সময়টাতে মানববন্ধন কইরা বেড়ান। গেরুয়া কাপড় পরে। উনারা মহাত্মা গান্ধি। তাইতেও মাঝে-মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। লাঠিচার্জ হয়। তাহলে কী করবেন? আমি বলি কি, কৌতুক তো করতে পারেন। ননসেন্স।
“কিন্তু এসব করেও খুব বেশি আরামে থাকবেন কি করে? অথবা নিরব হতেই পারেন। চুপ একদম। এই আধুনিক রাষ্ট্র তো একটা যৌথতা ভিত্তিক কারাগার। সেখানে চুপ থাকাও সন্দেহ জনক। কৌতুক করা বিপদজনক। চারপাশে ওত পেতে আছে টিকটিকি।
“ টিকটিকিগুলো গণ্ডারের মতোই। তাই, আপনার এই নীরবতা ওদের জন্য আতঙ্কও নিয়ে আসতে পারে।
ধরুন মহান টিকটিকিবাবু আগ্রহ নিয়া বইসা আছেন, কখন আপনার ঠোঁট নড়ে। কখন আপনি কথা কয়ে ওঠেন, কোন ভাষায়। কী বিষয়ে কথা কন। কন শব্দ বন্ধ ব্যবহার করেন, তার কোন গন্ধ।কার নাম উচ্চারণ করেন। কারে নিয়া মশকরা করেন। হাবে ভাবে প্রধানমন্ত্রীরে গালি দ্যান নাকি ভ্রুকুটি করেন। টিকটিকির চোখে ঘুম নেই, কিন্তু দেখা গেল যে বিষয়ে তার মহামহিম আগ্রহ, সেই তিনিই নেই আপনার আপনার কৌতুকে। তার মুখ, হাসি, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শরীর, ভাষা এই সব নিয়া আর আলাপ নেই আপনাতে। ধরুন আপনার বিষয় হল আকাশ। এবং পাখি। এবং হনুমান। এবং কুকুর। এবং বড়জোর আপনি নিজে। যেন তার কোন ইতিহাসই নেই আপনাতে। তিনি অনেতিহাস। মরা একটি ঘটনা”।
০৩/০৬/২০১৭