খেয়াল করলাম রিফাত হাসানের সাথে আমার কেবল নীলক্ষেতেই দেখা হবে, এইটাই যেন সাহিত্যিক নিয়তি। যেহেতু সাহিত্য করার জন্য ঐ পাড়ায় আমার আনাগোনা, যদিও এখন বেশ কমে এসেছে, মানে ‘এই সময়টি আপনি কীভাবে উদযাপন করবেন’-এর কাল অনুযায়ী, মূলত ওটা দিয়েই তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়। বইটার নামে একটা প্রাত্যহিকতার গন্ধ ছিল, যেন আমাদের খানার টেবিল থেকে বইয়ের শিরোনামে এসে পড়ছে, ফলে খুব আপন কিছু। ভেতরে না ঢুকে কেবল নাম দিয়ে বিচার করলেও আপনি অনুমান করতে পারবেন রিফাত আসলে গণমানুষের কথা ও ব্যথা, রাষ্ট্রীয় নানা অসঙ্গতি নিপীড়ন ধরপাকড় ও অন্যান্য গণইস্যুগুলোতে পাবলিক ও প্রাইভেট ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, (এখানে পাবলিক বলতে আমি সরকারকেই মিন করছি) নিয়ে এক প্রকার উইটি গদ্য সমেত সরব থাকেন। যেটা অনেক গদ্য লেখকের মধ্যেই অনুপস্থিত কিংবা নেই বললেই চলে।
উইট হিউমার এসব না থাকলে গদ্য খুব ম্যাড়ম্যাড়ে ঠেকে, সেটা ওনার গদ্যে নেই, নিস্তেজ নীরস ভাবটা আর কি। ফলে আগেপরে চিনপরিচয় না থাকার পরও ‘এই সময়টি….’ আমি তরতর করে পড়ে ফেলতে পেরেছিলাম। অর্থ্যাৎ একটা সারল্যও আছে, তবে সেটা ধরতে পারার জন্য আপনার মধ্যেও বৈচিত্র্য থাকা চাই, মানে আপনি যদি একমুখী গদ্য পড়তে অভ্যস্ত থাকেন আপনার রুচিকে ধাক্কা দিবে।
এরপর আপনি অভিযোগ অনুযোগ করতে পারেন রিফাত রাইসু ও তাদের সমসাময়িকদের গদ্যে একটা গোলক ধাঁধাঁর প্যাঁচ আছে, পাঠক অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলে, আমি জিজ্ঞাসিব তাতে কি তাদের গদ্যের বৈচিত্র্য কমেছে! মোটেই না, বরং নতুন সম্ভাবনাই তৈয়ার হইছে, যেখানে ভাষা ইটসেল্ফ চিন্তার টুল হয়ে উঠতে পারছে।
সমস্যা হইল রিফাত সহজ কথা সহজে না বলার মতোই রাবীন্দ্রিক, তার গদ্যে অভ্যস্ত হবার একটা বিষয় আছে, আপনি নিয়মিত তাকে ফলো না করলে সেটা দুর্বোধ্যই ঠেকবে। আমি তার অনেক স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে সেই উদ্বেগ লক্ষ করেছি, লেখক নিজস্ব রীতিতে লিখবেন, তাকে ধরতে পারা না পারা পাঠকের আনন্দ উৎকণ্ঠার বিষয় হতে পারে লেখকের নহে, ফলে রিফাত নিজের মতো করেই লিখছেন ও ভাবছেন, সচল থাকছেন।
গতকাল বই দু’টো (‘সম্পর্ক বন্ধুত্ব রাজনীতি’ ও ‘টেক্সট কন্সপিরেসি রূপকথা’ ) কিনে ভাবলাম, ওনাকে কিঞ্চিৎ চমকে দিয়ে কিছু লেখা যাক, কেননা ওনার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের স্মৃতি যে নীলক্ষেত তা তো জেনেছেন, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিচয়ও নীলক্ষেতেই ঘটল। যদিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা গায়ে গায়ে মিশে আছি। আরো অনেক কিছু হয়তো বলার ছিল কিন্তু ঘুম থেকে উঠে যতোটা মনে আসল ততোটাই পেশ করা গেল, আমি যথেষ্ট আইলসা মানুষ, ফলে ওনার গদ্যের রীতি নিয়ে আরো বিস্তারিত না বলে ফাঁকি দিচ্ছি, তবে শেষ কথাটা এই, রিফাতের গদ্যে ছলনা আছে চাতুরি নেই!
হারুন সুমন রশীদ, লেখক।