This pic and caption is taken from Daily Star, credited to CNN: Meer Hayet Kabir, father of one of the militants of the Dhaka cafe attack grieves for the actions of his son.
টেক্সট প্রলয়ঙ্করীও বটে। রূপকথা যেমন। এর ধাধাগুলো এমন, যতই টেক্সট থেকে আপনি পালাতে চাইবেন, ততই আপনি এর ভেতরে ঢুকে পড়বেন। যেমন জঙ্গী।
জঙ্গী নিয়া বহুত লুকোচুরি ও মুখ ভেটকি হইছে। অবশ্যই, এর মধ্য দিয়াই টেক্সট নিজের বয়ান ও প্রেক্ষিত তৈরী করছে। এরকমই হয়। ফলত ওরা যতই এটা থেকে পালাতে চায় ততই ওরা এর ভিতরে ঢুকে পড়ে।
উপসংহার হলো, আমরা এখন টেক্সট, মানে জম্পেশ গল্পের ভেতরে ঢুকে পড়েছি। অবশেষে জঙ্গি বয়ানের পাত্রপাত্রি। যদিও কনসপিরেসি প্রচুর। এইটা খুবই সম্ভব। কনসপিরেসি থিওরিও জরুরি বটে। মিথ্যেও যখন জরুরি।
মিথ্যে কনসপিরেসির গুরু ভাই। তাই বিভ্রান্ত হওয়াই নিয়তি।
যেমন, রাতেই যাদের হত্যা করা হইছে বইলা সেনাবাহিনী বলছে, এক কোরিয়ান ভদ্রলোকের আপ করা ভিডিওতে সকালে তাদের হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। এবং পরে সেই ভিডিওগুলো গায়েব। পুলিশ পাঁচটি আজগুবি নাম ও তাদের লাশের ছবি প্রচার করল মিডিয়ায়। কিন্তু ফেসবুক থেকে কীভাবে যেন আম সাধারণ বের করে ফেলল অভিযুক্ত ও গুলশান ঘটনায় ক্রসফায়ারে খুন হওয়াদের প্রফাইল। শ্রদ্ধা কাপুরের হাত, আওয়ামীলীগ নেতা, স্কলাসটিকা, নর্থ সাউথ, এইভাবে যখন তাদের ছবি ও পরিচয় চাওড় হয়ে গেল, এখন একে এক সব প্রফাইল হাওয়া। নিহতের সংখ্যা, নাম, ছবি, গল্প এইসব নিয়া ব্যাপক লুকোচুরি। কে, কী গোপন করতে চায়? এলিট শ্রেণীর ব্যবসা? নাকি আরো কিছু?
অতএব এলিট শ্রেণী ভারসেস গরিব মাদ্রাসা পড়ুয়াদের বয়ান হাজির।
তাইলে কি এখন এইসব এলিট প্রতিষ্ঠান বন্ধ কইরা দেওয়ার আওয়াজ তুলবেন? হাহা, এমন একটা ঠাট্টা মশকরামূলক আওয়াজ নয়, আলাপ উঠেছে বৈকি, যেই আওয়াজ আগে অন্যরা সিরিয়াসলি মাদ্রাসা নিয়া তুলতো। এই আলাপটি বোধ হয় অনায্য না। অন্য যে কোনভাবেই এই আলাপ উঠত। যেমন, মাদ্রাসা বন্ধ করা নিয়া।
এমন একটা প্রপাগাণ্ডামূলক আলাপ ছিল বটে, গরিবি ও মূর্খতা মাদ্রাসার ছেলেদের জঙ্গি কইরা তোলে। কাঠকমিউনিস্টরা এই বয়ানটারে ক্লাসের সমস্যা বানাবার তরে হাজির করেন। ধর্ম নিয়া আলাপের আর জায়গা না রাইখা এইটারে স্রেফ ক্লাসে ডুবায়া দিতে চান। ক্লাস সমস্যার অন্য ডাইনামিকসও যে সম্ভব তার ধারে কাছেও ওরা যান না। মরহুম আহমদ ছফাও বোধ হয় এই ধরণের আলাপে ছিলেন একদা ও তাদেরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করবার ব্রত নিছিলেন। উনি তখন বেশ কিছু মাদ্রাসায় ভ্রমনের ও তাদের সাথে আলাপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন।
২.
ফলত, এ বছরই, এক বন্ধুর সাথে আলাপের শুরু এরকম।
: কী সমস্যা?
: আইএস।
:আইএসে কী সমস্যা?
:বর্বর।
: কেমন?
:ওরা যেইভাবে জবাই করে।
: আপনার জবাইতে সমস্যা?
: হু।
: যদি অন্যভাবে মারা হয়? যেমন, গুলি করল। ধরুন, আপনার পরিচিত আধুনিক রাষ্ট্র, যেমন বাংলাদেশের পুলিশ, ওরা যখন ক্রসফায়ারে মারে?
: দুইটা এক হল?
: আপনার কীসে আপত্তি?
: জংলি ওরা।
: তলোয়ার দিয়ে মারে বলে?
: হু। এত নৃসংশ কীভাবে হতে পারে, ভাইবা দেখুন?
: নৃসংশ বটেই। কিন্তু আপনার বোধ হয় মারাতে আপত্তি নেই? শুধু একটু আধুনিক অস্ত্র ব্যবহারের ঝামেলা!
: উহুহু। তাই কি বললাম। কিন্তু আইন তো দরকার।
: হু। আইন। আইন নিয়া আপনার ভাবনা হচ্ছে ‘দরকার’। আর কিছু?
: দরকার না?
: বটে। তাইলে দেখুন, আপনি আধুনিক রাষ্ট্রে একজন আসামীকে জল্লাদ দিয়ে দম বন্ধ কইরা ফাঁসিও দেন। আইনে।
: হু্। ফাঁসি বন্ধ করা কি সম্ভব?
: হাঁ, আপনি এর সমর্থকও। আপনি তো ফাঁসি চাই বইলাই চিল্লান। এইটা কি নৃসংস বইলা ভাবেন না?
ডটডটডট।
অবশ্যই, বছর শেষে আইসা ভদ্রলোক ভিড়মি খাবেন। উনি এক দোজখে বইসা আর এক দোজখের নিন্দা করতেছিলেন ও তার থিকা মুক্তি পাইতে চাইছিলেন। কিন্তু দোজখ তো দোজখই ডাইকা আনে। ফলত, এখন আর দোজখও হাজির হয়ে গেল। এখন গল্পে ঢুইকা পড়তে হবে, অতো ভাববার সময় কই। নয়তো আপনি খুন হয়ে যাচ্ছেন। কে জঙ্গী, এই প্রশ্ন অবান্তর। পুলিশ রেস্টুরেন্টের শেফরেও সুযোগ পাইলে জঙ্গী বইলা খুন করে প্রেস রিলিজ দেবে। ফলত, প্রকৃতই জঙ্গের কথা যখন হচ্ছে, পুলিশও মরলো বৈকি। খুব জমজমাট টেক্সটের ভেতরে বইসা আমরা টেক্সটের গুনাহ ভাবি। হা হা, টেক্সটে কেমন গুনাহ? অধুনা জ্ঞানীরা এইটা নিয়া ব্যাপক গুরুগম্ভির আলাপ পাড়েন। গুনাহ ব্যাপক বড়। কিন্তু আমরা এখন টেক্সটের ভেতরে ঢুইকা পড়েছি, আর রক্ষে নেই।
গল্প যদিও ধোঁয়াটে, কনসপিরেসিতে ভরপুর, এর ইশারা স্পষ্ট।
Any criminal must be judged by a tribunal before being punished./ Habeas Corpus act, 1679, England
গুলশান ঘটনার পরের বাংলাদেশের সাথে তার আগের বাংলাদেশের ব্যাপক তফাত থাকবে। নাইন ইলেভেনের পরের দুনিয়া যেমন আলাদা, ঠিক তেমনই। এই চিহ্ণ ও ইশারা বহুত দিন ধইরা আকেলমন্দরা দিয়া আসছিলেন, এখন জগদ্দল হাজির নাজের হইয়া বিদ্যমান হল। এর ফল সম্পর্কে যারা বুঝতে সক্ষম নন, বা রাজি নন, তাদের জন্য নিশ্চয় জেগে থাকার চেয়ে ঘুম ভাল। বা আপনার জন্য এই আলাপ নয়।
ফলত, আগের চেয়েও সতর্কতার সহিত আমি জঙ্গী ইত্যাদি শব্দে ব্যাপক আপত্তি রাইখা কথা বলতে চাই।
এইটা একটা অর্ধেক দেখতে পাওয়াদের পরিভাষা। কারণ, রাষ্ট্র নিজেই জঙ্গি ব্যাপার।
জঙ্গী প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া বলতে চাইবেন সংবেদনশীলরা। আদতে তা নয়। বরং এই ব্যাপারটি মোকাবেলার জন্যই সবার আগে এই পরিভাষা এবং রাষ্ট্রের জঙ্গিপনা নিয়া প্রশ্ন করা দরকার। নাগরিকের জায়গা থিকা।
আধুনিক রাষ্ট্র নানানরকম উপায়ে খুন করে ও তার পরিভাষা ঠিক করে। ফাঁসি তো আইনের ব্যাপার। আইনের বাইরেও যারে খুন করতে হবে, রোমানরা তার আইনি নাম দিছিল হোমোসাকার, যেখানে কাউরে আউট ল ঘোষণা কইরা নির্বিচারে খুন করত। এখনকার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডগুলোর ধরণ প্রায় একই, যারে খুন করতে হবে তার নাম জঙ্গী, অপারেশনের নাম বন্দুকযুদ্ধ। সর্বশেষ, গুলশানের সেই মানবিক বিপর্যয়, দুর্যোগ ও কনসপিরেসির রাতেও বাংলাদেশ রাষ্ট্রের পুলিশ ঝিনাইদহে এক শিবিরকর্মীকে ক্রসফায়ারে খুন করেছে। আমরা বলেছি, গল্পের কথা। এখানেও পুলিশ চমৎকার গল্প হাজির করেছে। মিডিয়াও সেই গল্প ছাপিয়েছে। পুলিশ ও মিডিয়া, খুব সযত্নে পরস্পর এই ধরণের একটা লয়ালিটির সম্পর্ক মেনে চলে।
ফলত, আরো কনসপিরেসি তৈরী হবে। যেহেতু রাষ্ট্র আপনারে সত্য বলবে না।
যেমন, কেউ কেউ এইটারে স্টিং অপারেশন বইলাও সন্দেহ করা জরুরি বলতেছেন।
বোধ হয়, যুক্তরাষ্ট্রের নাফিস থিওরি তাদের তাড়া করে থাকবে। অবান্তর প্রশ্ন? অথবা, মুক্তদের মুক্তভাবে কথা বলতে দেওয়া হবে কি আদৌ?
অবশ্যই এ ভাবনা বাতুলতা বিশেষ, যে, রাষ্ট্র সত্য বলবে বা বলার স্পেস তৈরী করবে। কারণ, আমরা যে রাষ্ট্রে বাস করছি, এইটা মূলত খোদা হয়ে ওঠা রাষ্ট্র, একটা ছদ্ম ধর্মের স্পেস নিয়ে টিকে থাকে, একমেবা দ্বিতীয়ম। গোপনিয়তাই এর মুকুট। এর থেকে মুক্তি নেই।
ফলত, কনসপিরেসি ও রূপকথা আপনাকে গিলে খাবে।
আপনি যতই এর থেকে বেরুতে চেষ্টা করবেন, ততই এর গভীরে ঢুকে পড়বেন।