অন আনফ্রেন্ড
প্রথম নোক্তা, সোশাল মিডিয়ায় আনফ্রেন্ড একটা ফ্রেন্ডলি ব্যাপারই। এইটারে আমি কোন কোন সময়ে ব্যবহার করি, তার একটা হদিস পাবেন, আমার পুরনো আলাপগুলোতে। এর কোথাও ‘ভিন্নমত’ প্রশ্ন নেই। আনফ্রেন্ড আমার কাছে ভিন্নমতের সাথে ‘না-থাকতে চাওয়া’ না।
আমি ভিন্নমতের সাথে থাকারে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। আমি মনে করি, শুধু বন্ধু হওয়ার ব্যাপার না, শত্রু হওয়ার ব্যাপারটাও, শত্রুর সাথে, ভীন্নমতের সাথে একসাথে থাকার ব্যাপারটাও পলিটিক্যাল থাকা। আমি যেহেতু পলিটিক্যাল থাকারে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি, কোন ভিন্নমতকে আনফ্রেন্ড করি না আমি। বরং তার সৌন্দর্য অনুভব করি।
সোশাল মিডিয়ার এই আনফ্রেন্ড একটা ছোট ম্যানেজমেন্ট টুল মাত্র, যারা বাস্তব জীবনের বন্ধু না, পরিচিত নন, চেনা যায় না বা ফেসহীন, তাদের সাথে যেহেতু কোন দরকারি ইন্টারেকশন অনুভব করি না বা দেখি না, না আমার দিক থেকে, না সেই ফেসের দিক থেকে, তারে আনফ্রেন্ড করা দরকার মনে করি। এই সর্বশেষ সিদ্ধান্ত আমার সাম্প্রতিক।
যদিও, পারতপক্ষে আমি আনফ্রেন্ডরেও এভয়েড করতে চাই। কাউরে আনফ্রেন্ড করতে পারা খুব সহজ না। এক্ষেত্রে আমি যখন ইনএকটিভ শব্দ প্রয়োগ করি, সেটি স্রেফ রিফাত হাসানের প্রফাইলে ইন্টারেকশন হয় না অর্থে না, নিজের প্রফাইলেও সপ্রাণ উপস্থিত থাকারে অর্থ করি।
এর বাইরে, হয়তো অনেকেই জানেন, ফেসবুকে আমার ফ্রেন্ড হওয়াটা এত সিম্পল যে, স্রেফ একটা বাটন টিপবেন, হয়ে গেলেন। প্রায় দেখা ছাড়াই গ্রহণ করি, যদি নাম বা চেহারা পরিচিত মনে হয়। যদি দেখি, আপনার প্রফাইলে মোটামুটি তৎপরতা আছে, গ্রহণ করতে একটুও দেরী করি না। কিন্তু প্রফাইলে ফুল পাখি লতাপাতা বা ব্লাঙ্ক ছবি, সন্দেহজনক নাম আর ন্যূনতম একটিভিটি ছাড়া আমারে রিকোয়েস্ট পাঠালে সমস্যায় পড়ি।
এই ধরণের যারা সংযুক্ত হতে চান, তাদেরে আমার পাবলিক পেইজ Rifat Hasan লাইক ও ফলো করে রাখতে অনুরোধ করি। প্রফাইলেও ফলো অপশন খোলা আছে। আর আমার লেখালেখি পড়ার জন্য আপনার ফ্রেন্ড হওয়ার দরকার নেই, আমার সব লেখাই সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া আছে। যারা হোমফিডে আমার লেখা পান না, অথচ দরকারি মনে করেন আমার লেখালেখি, তারা আমারে সি ফাস্র্ট কইরা রাখতে পারেন। নীরব নয়, দরকার আপনাদের সরব উপস্থিতি ও আলাপ। আমি আপনাদের আওয়াজ, তৎপরতা ও সরব হওয়ারে উসকে দিতে চাই।
কেউ কেউ জানাচ্ছেন, ঘোষণা দেওয়াটা কুরুচিকর। স্বভাবতই, দেখা যাচ্ছে, আমার রুচি ধারণা একটু ভিন্ন। তেমন কোন রক্ষণশীলতা নেই। বিনা ঘোষণায় দেওয়াটা বরং সমস্যাজনক মনে করি। যারে করা হল, তিনি প্রতারিত বা অকারণ ইনজাস্টিস হইছে ভাবতে পারেন। বরং আমি নিশ্চিত করতে চাই, স্রেফ ইনএকটিভিটির মত নির্দোষ ঘটনা এর কারণ। ফলত এই আনফ্রেন্ড করাটাও মোটামুটি নির্দোষই।
যে কেউ আবার চাইলেই আমারে রিকোয়েস্ট পাঠাইতে পারেন। তাদেরে আবার গ্রহণও করে নেবো। কারণ কারো নাম তো মনে রাখি নাই। স্রেফ ইনএকটিভিটি। বরং এই রিমোভ আর গ্রহণের মধ্যে পুনরায় একটিভ হলাম আমরা পরস্পরের সাথে। এইটা তো ভালই হল, না?
অন ব্লকিং
সোশাল মিডিয়ায় আনফ্রেন্ড বা ব্লক তো অসহিষ্ণুতাই, সাদ রহমান এরকম একটা আলাপ তুলেছেন, আমার আনফ্রেন্ড নিয়া পোস্টের প্রেক্ষিতে। আনফ্রেন্ড নিয়া তো উপরে লম্বা আলাপ করলাম। এইবার ব্লক নিয়া। কিছুটা অসহিষ্ণুতা তো বটেই। যেহেতু আমি আলাপে উদার ও গণতান্ত্রিক থাকতে চাই, সাদের তোলা এই প্রশ্নটার কৈফিয়ত দিতে চাই।
ব্লক নিয়া আমার প্রথম নীতিমালা হল, কেউ ব্যক্তি আক্রমণ করলে বা অফলাইনে অন্যান্য আক্রমণের সম্ভাবনা তৈরী করলে, তাদেরে ব্লক করা।
এর দুটি কারণ।
প্রথমত, ব্যক্তি আক্রমণ মানে ব্যক্তির উপর আক্রমণ, এই আক্রমণ শরীরের উপর হোক বা না হোক। ব্যক্তি আক্রমণ অপিনিয়ন বা লেখালেখির ক্রিটিক না। এমন না যে, সবাই ক্রিটিকই করবেন, কিন্তু ব্যক্তির উপর আক্রমণ করবেন না, এইটা যে কোন পাবলিক স্পেসে কথাবার্তা ও আলাপ আলোচনার জন্য আমার প্রিজিউমড নর্ম। যেহেতু আলাপ মানে যুদ্ধপরিস্থিতির বিপরীত ঘটনা ও অন্তত এই আলাপের পরিসরে ও ভেতরে একটি গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি আছে, এই ধরনের পূর্বানুমান। এই গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি যাতে বহাল থাকে, আলাপ ও আলাপকারীর মর্যাদা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয়, এই ধরনের ক্ষেত্রে ব্লক করা বেটার হয়। বা এই আক্রমণ যাতে স্রেফ আলাপের পরিসরের বাইরে আমার বা অন্যের শরীরের উপরে আসার সুযোগ না পায় কখনো।
দ্বিতীয়ত, গালাগালি ও ব্যক্তি আক্রমণ গ্রাম্য ও আনস্মার্ট ব্যাপার। এটি আলাপরে বিভ্রান্ত ও বিপথগামি করে। তাই আমি গ্রাম্য ও আনস্মার্টদের সাথে ফেসবুকে আলাপে থাকতে বা কথা কইতে অনিচ্ছুক। এই সমস্যা এড়াতে, প্রথম কর্তব্য হিশেবেই আমি তাদেরে ব্লক করে থাকি। এইটারে আমার সময়সচেতনতা ও অহেতুক অস্থিরতার প্রতি অনাসক্তি বলতে পারেন।
এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে আরো যেসব কারণে আমি ব্লক করেছি ও ব্লকের ঘোষণা দিয়েছি, তার একটা তালিকা প্রণয়ন করা যেতে পারে।
বিভিন্ন সময় একটিভিস্ট আর কিশোর গোয়েন্দাদের জন্য আমি আমার প্রফাইল বন্ধ ও সীমিত রাখতে চেয়েছি। কোন এক সময়, এরকম একজন কিশোর গোয়েন্দা কাম একটিভিস্ট কাম বুদ্ধিজীবী আমারে শিবির ট্যাগিং দিয়া তার ব্যক্তিআক্রমণযুক্ত আলাপ শুরু করল। তখন শাহবাগের কিছুদিন পর। আমার কমেন্ট ছিল এমন:
[perfectpullquote align=”full” bordertop=”false” cite=”” link=”” color=”” class=”” size=””]‘বর্তমান ক্ষমতাব্যবস্থা মতে, শিবির বইলা খুন খুনের বৈধ তরিকা বটে। এইটা আমার বই সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির উৎসর্গপত্র। আমি তাই বলতে চাইতেছিলাম, কমিউনিস্টরা এই অবৈধ ক্ষমতার অংশিদার শুধু নয়, থিওলজিও যোগান দেয়। আপনার এই বক্তব্য ভাল উদাহরণ হতে পারে। ফলত দেখুন, আপনার এই মন্তব্যে ভালগার ব্যক্তি অনুমান ও আক্রমণের বাইরে কথা নেই। আলাপে ঢুকতে না পারার হীনমণ্যতা আছে। আমারে ছোট করার চেষ্টা আছে। পুঁজি নিয়া আধ খেঁচড়া অনুমান আছে। চট্টগ্রাম বা ঢাকাই বুদ্ধিজীবী নিয়া প্রিজুডিস আছে। এইটারে ঘিরেই আপনি আমারে সমঝদার বইলা ভুল ঠাওরালেন। কিছু ধর্মীয় শব্দও ব্যবহার করলেন: প্রবৃত্তিতাড়িত। হা হা। মূলত এইসবের বিরুদ্ধেই আমার লড়াই। আপনি কে জানি না, জানার ইচ্ছেও নেই, কিন্তু আমারে যদি ফলো করেন, নিশ্চয় জেনে থাকবেন ব্যক্তি আক্রমণরে আমার ওয়ালে জায়গা দিই না এবং ব্লক করি। আপনারেও ব্লক করা হবে অল্প কিছুক্ষণ পর, যদি এর মধ্যে এই কমেন্টটা না মুছেন। সেক্ষেত্রে কমেন্টটা রেখেই আপনারে ব্লক করা হবে।’[/perfectpullquote]
বলা বাহুল্য, উনারে ব্লক করা হল তার কিছুক্ষণ পর। উনার মন্তব্য থাকল। যেহেতু উনি মুছলেন না।
এইটা পলিটিক্যাল এ্যাক্ট।
ইনবক্সে রাজনৈতিক প্রচারণাকারী বাচ্চা বা স্টুপিড লোকেদের জন্যও কখনো কখনো আমার প্রফাইল বন্ধ ও সীমিত রাখতে চেয়েছি। কারণ এই নুইসেন্স থেকে দূরে থাকা আমার লেখালেখির নির্বিঘ্নতার জন্যই দরকার। তারপর, যারা আপনি যা লেখেন নাই, তা আপনার নামে প্রচার করেন, আর আপনি যা লিখেছেন, তা নিজের নামে প্রচার করেন, তাদেরে। যারা ব্যক্তিগত কুৎসা প্রচার করে, তাদেরে। ইনবক্সে অনাহূত টীকা-টিপ্পনীদাতা জ্ঞানী-গুণীদের আমি ব্লক করার পক্ষে কথা বলেছি বিভিন্ন সময়।
আমার পোস্টে আইসা হেড মাস্টার ও পাঠের বড়াইকারিদেরও আমি ব্লক করি। কোন কোন সময় সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের উদ্দেশ্যে প্রচারিত এডিটেড ভিডিও ও এর বক্তব্যের সমর্থনে কথা বলতে কাউরে দেখলে আনফ্রেণ্ড ও প্রয়োজনে ব্লক করার ঘোষণাও দিয়েছিলাম।
2 comments
আহমাদ সাব্বির
খুবই ভালো লাগলো৷ এবং আপনার এ ‘বিধি’ আমার কাছে যৌক্তিকই লাগতেছে৷ ব্যক্তি আক্রমণকারীদের প্রশ্রয় দেয়াটা পলিটিক্যাল না৷ আপনার চিন্তার ‘নিরপেক্ষতা’ আমাকে মুগ্ধ করে৷ শুকরিয়া৷
Rifat Hasan
Thanks a lot!