কী লিখতে চাইতেছি তা নিয়া আসলে আমি এখনও নিশ্চিত নই। রিফাতরে নিয়া, উনার বহি, নিয়ত পাঠোত্তর প্রতিক্রিয়া, চিন্তা নিয়া আলাপ করতে চাইতেসি অনেকদিন ধরে। কিন্তু ঐ-যে পারসোনা নন গ্রাটা ফিলিং— আচ্ছা এইটা কি জেনারেশন এক্সের ডিজিজের আলাপ(?), অকে রিফাত তিলাওয়াতোত্তর এইটারে পলিটিকাল বা ফ্যাসিবাদের গুলতত্ত্বের ভেতরকার আলাপ ভ্রম হবে। ভ্রম ব্যাপারটা আসলে ভ্রম নয়, রিয়ালিটি যেমন সত্তার ভ্রম ঘটনা।— এসবের কারণে রিফাতের লগে বা অন্তর্জালের পাবলিক স্ফিয়ারে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। কিন্তু কিছুদিন আগে রিফাতের লগে চট্টগ্রামে অল্প আলাপ হওয়া— তখনও এই মুহূর্তের মতো (উইড-গ্রহণ পরবর্তী আলাপের মতো) অনুভব করছিলাম— আর পরে বহি নিয়া পাঠ-প্রতিক্রিয়ার মতো যখন কিছু লিখতে বললেন, এরপরে তো আর বইসা থাকতে পারতেসিলাম না।
এদ্দিন আলাপ শুরুর বা রিফাতের মতো কমিউনিকেটের মাধ্যমে সম্পর্কশাস্ত্র খুলে বন্ধের মুক্তি লাভ এবং ক্রমাগত এই লোপ থেকে পলিটিক্যাল হয়ে ওঠার তত্ত্ব ধারণ করার যেসব বিসমিল্লাহ মাথায় উইপোকার মতো বাসা বেঁধেছিল সেসব লিখতে বসে যেন হাওয়া হই গেছে বোধ করি। সো, এতোসব বোহেমিয়ান কচড়া পাড়তে হচ্ছে।
আচ্ছা আমরা প্রথমে ‘টেক্সট, কন্সপিরেসি ও রুপকথা’ বহির ক্যারেক্টার হই, বিশেষত বিসমিল্লাহ অঞ্চলে ফ্যাসিবাদের গুলতত্ত্ব বিষয়ক আলাপের। এইখানে আমরা টেক্সট, ভার্স দেখি না। টেক্সট বিষয়ক রুপকথা, কন্সপিরেসি, ইমেজ ইত্যাদি ধারণ করে সাব-কনশাসলি কনশাস টুলে পরিণত হই। আমাদের কনসেনসাস হারায়। টুল ‘এবং’ মানুষ, দ্বৈত অবস্থায় লীন হই। যদিও রিফাত মানুষ ‘নাকি’ টুল বলে লঘু বা কম সিরিয়াস করলেন মনে হলো। নাকি মানুষ বাদ দিয়ে শুধু টুল হয়ে ওঠার কথা আরও স্ট্রংলি বললেন কি-না। ‘ফ্যাসিবাদের রাষ্ট্রতত্ত্ব আমাদের এরকমই একটি রুপকথা ও গুলতত্ত্বে নিয়ে যেতে চায়। আমরা সেই কন্সপিরেসি ও রুপকথা থেকে বেরুতে চাই।’ বেরুনোর আগে আমরা টুল-মানুষের আলাপে প্রবেশ করি। আমরা এখানে টুলরে চিনতে পারতেছি। ক্যারেক্টার থেকে বের হয়ে রিফাতের পাঠক যখন হই। কিন্তু ‘মানুষ’রে ঠিক চিনতে পারতেছি না। রিফাতের মানুষ কি আব্দুল্লাহ বা আ’বদিয়্যাত-কারী ইনসান না কান্টের অটোনোমাস, সেল্ফ-ডিটারমাইন্ড(right to ‘define’ good and bad) হিউম্যান? ফুকোর অর্ডার অব থিংকসের ‘ওয়াট ইজ এনলাইটেনমেন্ট?’ থেকে যদি ধার নিই, … man is only a recent invention, a figure not yet two countries old…।
বানানের ইন্টারভিউতে দেখা যায়, রিফাত বলছেন (সংক্ষেপে), ‘মানুষের একটা দাস অবস্থা থাকে, ‘নফসুল আম্মারা’। যেখানে অপর সম্পর্কে কোন সম্বিত থাকে না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ যেখানে হয়, সেটার নাম হচ্ছে ‘নাফসে লাওয়ামা’। যেখানে ‘অপর’ সম্পর্কে সম্বিত হবেন। এখন, অপর সম্পর্কে সম্বিত হওয়ার মানেটা কী? আমি বলি যে, এটাকে পলিটিক্যাল হওয়া। এভাবেই খলিফা হিশেবে পাঠানোর মানেটা কী? খেলাফতের অর্থটা হচ্ছে যে, সভারেন হওয়া। মানে দাসত্ব থেকে মুক্তি। স্বাধীনভাবে বাছবিচার করার ক্ষমতা থাকা।’
‘আপনার যখন স্বাধীনভাবে বাছবিচার করার ক্ষমতা থাকবে না, কখনো রাষ্ট্রীয় দাস থাকবেন, কখনো ইমেজের দাস থাকবেন, অন্যসব দাসত্ব থেকে বিদায় নিয়ে, আপনি, যখন পুরোপুরি সভারেন হতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তো স্বাধীন না। আমি সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে বলছি যে, এই সভারেন অবস্থা থেকে মানুষের বন্ধুত্ব শুরু হয়। এটাই হচ্ছে সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও রাজনীতির মূল কথা।
তো আমরা দেখতে পাচ্ছি, রিফাতের মানুষ হলো, ‘ability’ to choose between good and bad. বাছবিচারের সক্ষমতা সম্পন্ন মানুষ। যেটা খলিফা হিসেবে উবুদিয়্যাতের মাধ্যমে আল্লাহর সভারিনিটি ধারণ করে।
মানে, খলিফা বা সভারিন বা সম্বিত বা পলিটিক্যাল হইতে পারতেছেন বা সক্ষমতার পাওয়ার হাউজ হইতেছে মূলত আবদিয়্যাত। এই সম্বিত বা বিবেক বা সক্ষমতা বা এই ইনসানিয়াত হলো আবদিয়াত প্রকাশের মাধ্যম বা টুল মাত্র।
সো এখানে সম্বিত বা কনসেনসাসের মাধ্যমে দাস-অবস্থা থেকে যে মুক্তি, তা হলো freedom as resource. আর আধুনিক জ্ঞানকাণ্ডে তা freedom as value.
তো দেখা যাচ্ছে, রিফাতের বা ইসলামি জ্ঞানকাণ্ডে যেটা ‘ability’ to choose’ পশ্চিমা জ্ঞানকাণ্ডে সেটা ‘right to define’ good and bad’।
রিফাত যেই ভ্যালু ব্যবস্থা ভাঙতে চাইতেসেন সেটা এই মানুষের বা পড়ি, ফ্যাসিবাদী গুলতত্বের ‘রাইট টু ডিফাইন’ বা সেল্ফ ডিটারমিনেশনের এই লাইন, ‘values are not recognize by you, values are determined by you.’ (The human person in contemporary philosophy, Frederik C. Copleston, PHILOSOPHY, 1950)
ফরহাদের মতো যেমন উলুহিয়্যাত আর উবুদিয়্যাতরে লঘু এবং প্রচ্ছন্ন করে অনলি রবুবিয়্যাত ধারণ করা ইনসানও লিটল বিট আধুনিক ইনসানিয়াত। উলুহিয়াত আর উবুদিয়াত প্রতিষ্ঠার জন্য হাকিমিয়াত কায়েম হলো ইনসানিয়াতের উদ্দেশ্য।
এতক্ষণে আমরা নিশ্চয়ই বুঝে উঠতে পারছি যে, আল্লাহর আবদিয়্যাতের বা দাসত্বের বাইরে স্বাধীন থাকা যায় না, নতুন নতুন ভ্যালু ব্যবস্থা, নৈতিকতা, মতবাদ ইত্যাদির দাস হয়ে থাকতে হয়। তাই রিফাত যেই ভ্যালু ব্যবস্থার দিকে আমাদের নিয়ে যাইতে চান তা আল্লাহর আবদিয়াত প্রতিষ্ঠার জন্য হাকিমিয়াত কায়েম করা। কিন্তু রিফাত এই জায়গায় আসতে নারাজ, মনে হয়। ইকামাতে দ্বীনের আলাপের পথ তৈরি করে তিনি উদ্দেশ্য-গন্থব্য-জার্নি নির্ধারণ(?) করেন ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, রাজনীতি’র ইউটোপিয়া। যদিও আমি এই সম্পর্ক-বন্ধুত্ব-রাজনীতির একজন মুগ্ধ ভক্ত।
রিফাতের বিসমিল্লায় আমার বিসমিল্লাহ আটকে গেলো। এখন টায়ার্ড লাগতেছে। অন্যদিন আরও বিশদ আলাপ করার আশা রাখি। তামাম সুদ।
সুরঞ্জন আহমেদ, লেখক।