১.
When does an act become moral? When does an act become religious? Can a moral act be religious by the same token? What is meant by the word ‘religious’? /Moral Dilemmas and Religious Dogmas/ Ethics and Epics: The Collected Essays of Bimal Krishna Matilal
তর্কটা অধুনা ভারতীয় পণ্ডিত বিমল কৃষ্ণ মতিলালের। গ্রীক জমানার পণ্ডিত প্লেটোর বরাত দিয়ে আলাপ করেছেন। প্লেটোও তাঁর বিখ্যাত ডায়লগ Euthyphro তে গুরু সক্রেটিসের জবান দিয়ে মোরালিটি বিষয়ে এর কাছাকাছি প্রশ্ন তুলেছেন: ঈশ্বর কি তাই ভালবাসেন যা কিছু মোরাল অথবা বিষয়টি কি এমন, কোন কিছু মোরাল হয়ে ওঠে কেবল ঈশ্বর তা ভালবাসেন বলেই? (Is it that gods love what is morally right? Or, is a thing morally right because gods love it?) দর্শনের ইতিহাসে সক্রেটিসের সাথে য়ুথিপ্রোর এই আলাপ-সন্ধিক্ষণ য়ুথিপ্রো-ডিলেমা বলে খ্যাত। এই য়ুথিপ্রো-ডিলেমার সুত্র ধরেই মতিলাল ভারতীয় পুরানের মোরাল ডিলেমা এবং শাস্ত্রীয় ডগমার আলোচনায় রিলিজিয়ন এবং মোরালিটি বিষয়ে এই প্রশ্নগুলো টেনেছেন। তর্কটা খুব ইন্টারেস্টিং, কিন্তু নতুন নয়। তবে ভারতীয় পুরানের আলোচনায় মতিলাল যেভাবে হাজির করেছেন, সেটি হয়তো নতুন। মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের মহাযুদ্ধের আগে ইন্দ্রপুত্র অর্জুনের মোরাল ডিলেমা তৈরী হয়েছিল। অর্জুনের কি উচিত এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করা যেখানে তার পরম শ্রদ্ধার্হ আপনজন পিতামহ, শিক্ষাগুরু, পিতৃসম পিতার ভাই, ভাতৃবৃন্দ সবার রক্তক্ষয় হবে? নাকি অনুচিত? মানবিক বোধসম্পন্ন একজন হিশেবে অর্জুনের নৈতিকতা এটা থাকাই স্বাভাবিক যে, সে তার কাছের এবং প্রিয়জনদের অনর্থক হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনাগ্রহী বা অন্তর্দ্বন্দ্বে থাকবে। একই সাথে একজন ক্ষত্রিয় হিশেবে, একজন রাজপুত্র হিশেবে তার দায়িত্ব যুদ্ধ করা, অন্যায়ের প্রতিকার করা। যখন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন, হৃত সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারের জন্য লড়াই করা। অর্জুন কোনটা করবেন? যুদ্ধ, নাকি বনবাস?
এই প্রশ্নেরই উত্তরে মহামতি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের প্রতি যে উপদেশ দেন, তাই ইতিহাসে ভগবত গীতা নামে বিখ্যাত। আসুন মহাভারতের গল্পটি পড়ি।
ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির ধৃতরাষ্ট্রপুত্র দুর্যোধনের কুটচালের কাছে ধর্ম বজায় রাখতে গিয়ে একে একে পরাজিত হচ্ছিলেন। এবং এক পর্যায়ে তাদের দীর্ঘ বনবাসে যেতে হল। এবং সর্বশেষ বনবাসের শর্ত অনুযায়ী যখন নিজ রাজ্য ফেরত চাইলেন, তখনও দুর্যোধন প্রমুখ প্রশ্ন তুললেন, এই রাজ্য ফেরত চাওয়া মূলতই ধর্মসম্মত কি-না। আবার, সম্মুখ সমরে উপস্থিত হয়েও বিপক্ষদলে প্রবীন গুরু ও স্বজনদের দেখে অর্জুনের মধ্যেও যুদ্ধ বিষয়ে নানান অন্তর্দ্বন্দ্ব তৈরী হল। যথা: স্বজন হত্যার এ যুদ্ধ উচিত কিনা- এইসব, নাকি বনবাসই শ্রেয়। এই প্রেক্ষিতে প্রভূত ধর্ম ও শাস্ত্রআলোচনা হয়। এই সংশয়ের ভেতরে শ্রীকৃষ্ণ শাস্ত্রের ভেতরে কুপমণ্ডুক থাকার ছল দেখিয়ে দিয়ে ধর্ম-অধর্ম ও পরম্পরার সত্যরূপ অর্জুনের সামনে আনলেন। দেখালেন, যে ধার্মিক নয়, তার সাথে ধর্ম চলে না। ছল চলে। অথবা যুদ্ধ। অবশেষে পঞ্চপাণ্ডব এই ধর্মসম্মতের বা বৈধতার প্রতিকারে যুদ্ধেই মনোনিবেশ করলেন। সেই মহাযুদ্ধের নাম কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ। এই কুরুক্ষেত্রেই নির্ণিত হয় কে বৈধ আর কে অবৈধ।
গীতা ভারতীয় পুরান-সাহিত্যগুলোর ভেতরে সবচেয়ে প্রভাবশালী সাহিত্যগুলোর একটি, যা একই সাথে একটি ধর্মগ্রন্থের মর্যাদা পায় হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মাঝে। যদিও আমাদের এই পাঠ ধর্মগ্রন্থ হিশেবে মহাভারত বা গীতার শরণ নেবে না, বরং ইতিহাস ও রাজনীতির ভেতর দিয়ে নীতিশাস্ত্রের আলোচনায় এর প্রাসঙ্গিক আলাপটিকে সামনে আনবে। এই মহাগ্রন্থ গীতা কখনো কখনো ভায়োলেন্ট টেক্সট হিশেবে সমালোচিত হয়েছে বিভিন্ন মহলে। যে বইটি নাকি ভায়োলেন্স এবং খুনোখুনিকে উসকে দেয়। পাঠক, আরো যদি পরিভাষাটারে স্পষ্ট করতে চান, তাইলে বলি, এটি অধুনা মুসলমানি দোষ, যার নাম জেহাদ। ভগবত গীতা কোন কোন মহলে জেহাদি বই হিশেবে সমালোচিত। পাঠক মহোদয়গণ, সে কথা শুনে আপনারা মরমে মরে যাবেন না যেন। গীতা আপনাকে শুধু মানুষ হত্যাই করতে বলে না, আপনার স্বজন ও গুরুজনদের হত্যা করার জন্য উপদেশ দেয়, সমালোচকদের ভাষায়। তারা বলেন, এ আবার কেমন ধর্মগ্রন্থ? এ তো জেহাদি গ্রন্থ! আর জেহাদ, ভায়োলেন্স (সিসটেমেটিক ভায়োলেন্স যেমন রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড, এইটা কিন্তু বেশ ভাল ব্যাপার) এইসব তো ভাল না। যে কোন কায়েমি সভ্যতার জন্য ক্ষতিকর।
যেহেতু জেহাদি গ্রন্থ, তার পরে কী কর্তব্য আপনারা জানেন। আপনার বুকসেলফে ভগবত গীতা থাকুক আর কোরআন শরীফ থাকুক, আপনি সতর্ক থাকবেন। কারণ যেহেতু জেহাদি, সুতরাং একে নিষিদ্ধ করার প্রশ্ন আসবে একসময়। এবং সেই গ্রন্থের প্রচারক হিশেবে আপনাকে হত্যারও আদেশ দেওয়া হতে পারে।
২.
এলা আসি কলিকালের তত্ত্বকথায়। বৈধতা কী? বৈধতা কে নির্ণয় করে? কখন আপনার কোন কর্ম বা মহাভারতের ক্ষেত্রে যেটি অর্জুনের লড়াই, বা যে কোন সময়ের যে কোন ঘটনা বৈধ বলে বিবেচিত হবে? বলা বাহুল্য, এ নিয়ে আইন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পপুলার জায়গাগুলোতে তত্ত্বালাপ বহু আছে। আমার আগ্রহ সে জায়গায় নয়। ধরুন, নীতি ও দর্শনশাস্ত্রের গুলি-ঘুপচি হাতড়ে এর একটি ধর্মসম্মত (প্রাচ্যিয় অর্থে) আলাপ দাঁড় করানো যদি যায়, আমার আগ্রহ সে জায়গায়। তাই, যদিও কলিকালের তত্ত্বকথা, মহাভারতের এথিক্স এখানে স্বতঃস্ফূর্ত হাজির থাকবে, মহামহিম মতিলালও আমার সঙ্গে যথাসম্ভব থাকবেন এই আলাপে।
ধরুন, দুই হাজার চোদ্দ সালে বাংলাদেশের একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান খালেদা জিয়া যখন বলেন, বর্তমান সরকার অবৈধ। বা ক্ষমতাশীন রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যখন বলেন: এই সরকারকে বৈধ উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না।- তখন উভয়েরই ধর্মগ্রন্থ কোনটি? জরুরি নোট: ধর্মগ্রন্থের কথা বলছি, ধর্ম নয়। মানে, আপনি যখন আধুনিক জমানায় বৈধ হওয়ার প্রশ্ন তোলেন, এইটা কোন অর্থে বলেন? সংবিধিবদ্ধ বিধান মানে অধুনা রাষ্ট্রীয় সংবিধান প্রশ্ন বা সেরকম কোন বিধানের (যেমন বৈশ্বিক কনভেনশনের) কথাই তো আপনি বুঝাতে চান? বা আদতেই কি তাই?
কোন কিছু ঠিক কি বেঠিক এটি তো মূলতই নীতিশাস্ত্রের আলোচনা। এবং তারো আগে ধর্মের আলোচনা। তাই আপনি যখন বৈধতার প্রশ্ন করেন, তখন আপনার ভাবটা এমন, আপনি ধর্মসম্মত হওয়ার প্রশ্নেই তর্ক চালাচ্ছেন। কারণ ধর্ম, নীতিশাস্ত্র, আইন- এইসব একই সমতলের ও আন্তঃসম্পর্কিত। প্রখ্যাত পণ্ডিত ইমাম গাজ্জালিও এই সম্পর্কসূত্রটির কথা বলেছেন (Al-Munqidh min al-dalal)। সাংবিধানিক বৈধতার তর্কে আপনার এই ধর্মভাবের কারণে ধর্মের সাথে এই বৈধতার সূত্রগত সম্পর্ক তৈরী করার জন্য বিরাট যুক্তি তর্কের দিকে যেতে হয় না। সূত্রটা আপনিই নির্মাণ করে দিচ্ছেন বা আপনিই নির্মাণ হয়ে আছে। আর একটা জিনিশ স্পষ্ট: আমি বলি, সবকিছুর ধর্ম হয়ে ওঠা, ধর্মের স্থান নিয়ে নেওয়া। এবং ধর্মের নামে জাস্ট ওয়ার মানে বৈধতার ঘোষণা দেওয়া (দ্রষ্টব্য: এই সরকারকে বৈধ উপায়ে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না।)।
তা না হয় হল। কিন্তু ধরুন, আপনি যখন বলেন, আগে বৈধতা দিন, তারপরে সংলাপ (ক’দিন আগে সরকারদলীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা মোহাম্মদ নাসিমের মন্তব্য), তখন গুবলেট পাকে। আমরা তো এতক্ষণ, বৈধতা কোন সূত্রে আসে তার বিষয়ে কথা বলছিলাম, যা নীতিশাস্ত্রের আলাপ। কিন্তু বৈধতা দেওয়া, সেটি আবার কীরকম? বৈধতা কে দেবে, কোন অথরিটি? খেয়াল করুন পাঠক, নাসিম বৈধতা দিতে বলছেন অপর একটি দলের নেতা খালেদা জিয়াকে। নীতিশাস্ত্র নয়, এইটা এমনকি যুক্তিশাস্ত্রেরও অগম্য দুরূহ বিষয়। এইটা অবশ্যই আদৌ কোন ঘটনা বৈধ কি অবৈধ সেই আলাপের বাইরে একটা শালিসি মীমাংশার ব্যাপার হতে পারে। কারণ এটাও হতে পারে যে, নীতিশাস্ত্র দূরঅস্ত, সাংবিধানিকভাবে বৈধতার প্রশ্নেও তাদের ভিত্তি বা আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে। তাই বৈধতা খুঁজছেন এমন এজেন্সির কাছে, যার বৈধতা দেওয়ার কোন ক্ষমতা না সংবিধান, না ধর্ম, কোন ভাবেই নেই। এইটাও একটা ডিলেমা বৈকি। তবে মোরাল ডিলেমা নয়। সম্ভবত এ হল টিকে থাকতে না পারার ভয় থেকে উদ্ভূত ডিলেমা। তাই এপার ওপার সব যাতে রক্ষা হয় তার জন্য একটি বালখিল্য প্রস্তাবনা। আপাতত এই প্রসঙ্গটিরে আলাপে একটি প্রসঙ্গান্তরের নোক্তা আকারেই রেখে যাই। পরে কখনো সুযোগ পেলে এই জাগা থেকে আলাপ পাড়া যেতে পারে।
যাই হোক, সত্য, ধর্ম, নীতি ও শাস্ত্রসম্মত হওয়ার সাথে যেমন বৈধতা-অবৈধতার (জায়েজ বা নাজায়েজ) সম্পর্ক করেন শাস্ত্রজ্ঞগণ, সংবিধান সম্মত হওয়ার সাথেও বৈধতা অবৈধতার সম্পর্ক করেন আইনজ্ঞগণ। ক্যাটাগরি হিশেবে যদিও উভয়ই একই বা কাছাকাছি ভাষা-পরিভাষা ব্যবহার করেও বেশ আলাদা, তবুও প্রশ্নটি তো বৈধতার। আপনি যাই করুন, সবতাতেই করতে হবে বৈধ উপায়ে। ধর্মসম্মত, শাস্ত্রসম্মত বা আইন ও সংবিধানসম্মত উপায়ে। আমরা একটা ধারাক্রম সাজাতে পারি। যেসব প্রশ্নের সমান্তরালে বৈধতারে নিয়ে আসা হয়।
সত্য হওয়া> ধর্মসম্মত হওয়া> নীতিসম্মত (মোরাল) হওয়া> শাস্ত্রসম্মত হওয়া> আইনসম্মত হওয়া> সংবিধান সম্মত হওয়া> এইসবেরই সমান্তরালে বৈধ হওয়ার ব্যাপারটিরে ফলাফল হিশেবে আনা হয়।
আধুনিক বৈধতা জ্ঞানের সর্বোচ্চ মানদণ্ড রাষ্ট্রের সংবিধিবদ্ধ বিধান বা কনস্টিটিউশন। আমরা উপরে জেনেছি, আধুনিক জামানায় কেউ আপনারে প্রশ্ন করলো, আপনি বৈধ বা অবৈধ কাজ করছেন। এর ভিত্তি হলো অবশ্যাম্ভাবিভাবেই সংবিধান বা সংবিধিবদ্ধ আইন-কানুন। এমন কি অধিকারব্যবস্থা হিশেবে ধর্মশাস্ত্রীয় প্রশ্নও সংবিধিবদ্ধ আইন-কানুনই মীমাংশা করে। যেমন: মুসলিম আইন, হিন্দু আইন। ধরুন, জুরিসপ্রুডেন্সের আলাপে আপনি এখান থেকেই প্রশ্ন শুরু করতে পারেন: রাষ্ট্রের সুপ্রিম আইন সংবিধান। সকল আইন এই সংবিধান থেকেই বৈধতা পায়। তো, ভদ্রে, সংবিধানের বৈধতা কোত্থেকে আসে? এইটা জুরিস্প্রুডেন্সের জনপ্রিয় প্রশ্ন। জনপ্রিয় উত্তরও আছে এর: কনসেন্ট, মানে সম্মতি বা গণ-সম্মতিই সংবিধানের বৈধতা। এই জাগা থেকেই আমরা বলি, এই সংবিধানে গণ-মানুষের আস্থা নেই বা এই সংবিধান গণ-সম্মতিতে তৈরী হয় নাই। এ পর্যন্ত এসে ভাবি।
আচ্ছা, গণ-সম্মতি কীভাবে বৈধ হয়? ধরুন, হস্তিনাপুরের রাজসভায় এক পাল লোক সকলেই সমসম্মতিক্রমে অগ্নিকন্যা দ্রৌপদির বস্ত্রহরণ করতে উদ্যত হলো। মহাভারতে যেমন ঘটেছে। ধরুন কেবল উহারাই হস্তিনাপুর, আর কোন জনগণ নেই। বা সব জনগণই সম্মতি জ্ঞাপন করেছে সেই ঘটনায়। সেই সম্মতির বলে তা বৈধ হবে? নীতিশাস্ত্র অনুযায়ী, যতই জন-সম্মতি থাকুক, এই ধরণের ঘটনা অবৈধই থাকবে। সে বিস্তর লম্বা আলাপ। উপরে আমরা একটি ধারাক্রম দেখিয়েছি যেখানে প্রত্যেক প্রশ্নই বৈধতার সাথে নিজেরে সমান্তরাল বানিয়ে প্রশ্ন করে। যদিও সব প্রশ্নই ক্যাটাগরিক্যালি এক নয়। আলাদা। আমি বলি, ইন্টাররিলেটেড। একে অপরের উপরে নির্ভরশীল। যদি শেষ থেকে ধরি, সংবিধিবদ্ধ সংবিধানসম্মত হতে হয় আইনকে। আর খোদ সংবিধান? বা শাস্ত্র? বা ধর্ম, বা নীতি> এই সবকিছুরই সম্পর্কসূত্র হল সত্য। অথবা মতিলালের প্রশ্নের ধরণে প্রশ্ন করতে পারি, যে, সত্য কি মোরালিটি বা ধর্ম বা শাস্ত্র বা সংবিধিবদ্ধ বিধান সম্মত বলেই সত্য? নাকি সত্য থেকেই এইসবের বৈধতা তৈরী হয়? মোদ্দাকথা, বৈধতার ফ্রেম অব রেফারেন্স কী? শাস্ত্র, নাকি সত্য? মতিলালের প্রশ্ন ছিল: কোন একটি নির্দিষ্ট কর্ম নৈতিক, এর কারণ কি এটাই যে, এইটা শাস্ত্রসম্মত? নাকি কর্মটি নৈতিক বলেই শাস্ত্রসম্মত।
৩.
বৈধতা আর সত্য কি এক? বৈধতা কি অভেদ্য, অলঙ্ঘনীয়? কখনো কি এমন হয় না যে, বৈধতা নিয়ে গোল পাকে এবং বৈধতার প্রশ্নটি ঝুরঝুরে হয়ে যায়, কর্তব্য প্রশ্নটিই সত্য হয়ে সামনে আসে? আপনার প্রচলিত বৈধতা জ্ঞানকে সত্যের মুখোমুখি করে দেয়? মহাভারতে যেমন এসেছিল? মহামতি শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের অন্তর্দ্বন্দ্বকালে নীতিনিষ্ঠ ব্রাহ্মণ কৌশিকের গল্প বলেছেন। নিশ্চয় আমরা অন্যান্য পুরানেও এর কাছাকাছি গল্প পড়ে থাকব। আসুন মতিলালের জবানেই শুনি:
‘কৌশিক নামে এক মুনি সত্য কথা বলার ব্রত নিয়েছিলেন আজীবন। বিপদ হলো একদিন। দস্যুরা হত্যার মানসে কয়েকজন পলায়মান পথিকের অনুসরণ করছে। কৌশিক বসে আছেন তপোবনে। পথিকেরা বলে গেল- প্রাণভয়ে পালাচ্ছি, দস্যুদের অন্য রাস্তা দেখিয়ে দেবেন। কৌশিক নিরুত্তর। দস্যুরা এল। সত্যবাদী কৌশিক মিথ্যা বললেন না। দস্যুরা ফলত ঠিক পথে গিয়ে পথিকদের প্রাণবধ করল। এরপরে কৃষ্ণ বললেন- কৌশিক কিন্তু মৃত্যুর পর তার চির আকাঙ্খিত সর্গে যান নি। নরকেই তার স্থান হয়েছিল। কারণ নিজের সত্যরক্ষা বা প্রতিজ্ঞারক্ষার চেয়ে নিরপরাধের প্রাণরক্ষা আরো বড় ধর্ম।’..(নীতি, যুক্তি ও ধর্ম: কাহিনী সাহিত্যে রাম ও কৃষ্ণ/ ১৯৮৭)
মতিলাল তাঁর মহাভারত বিষয়ক আলাপে ইমানুয়েল কান্ট ও রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা করেছেন শ্রীকৃষ্ণের পক্ষ হয়ে। কান্ট এর মতে, ‘সত্য আনকনডিশনাল। তা কখনো লঙ্ঘিত হতে পারে না। সে যে অবস্থাতেই হোকনা কেন’ (ক্রিটিক অব প্রেক্টিক্যাল রিজন/ ১৭৮৮)। রবীন্দ্রনাথও একই কথা বলেছেন, বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাথে এক বিখ্যাত বিতর্কে: ‘কোনখানেই মিথ্যা সত্য হয় না। শ্রদ্ধাস্পদ বঙ্কিমবাবু বলিলেও হয় না। স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ বলিলেও হয় না’ (‘একটি পুরাতন কথা’/১২৯১ বাংলা)। উভয়ের উদ্ধৃতিই আমি বিমল কৃষ্ণ মতিলালের থেকে নিলাম।
উভয়ের উত্তরে মতিলালের মতামত হল, এই লিনিয়ার ধারণা রামায়নের নীতিচিন্তার সমান্তরাল। যা অনেকটা ‘প্রাথমিক স্তরের যুক্তিতর্ক’ (প্রাইমাফেসি ইনটুইটিভ রিজনিং)। অন্যদিকে মহাভারতে অবতারিত যুক্তিতর্ক অনেকটা দ্বিতীয় স্তরের অথবা ক্রিটিক্যাল লেভেল থিংকিং। ধর্মবিচারে রামকথার সাথে কৃষ্ণকথার এখানেই হয়ত প্রভেদ। কৃষ্ণের মতে, যে কোন সত্য এবং তার থেকে উদ্ভূত বৈধতা সর্বতোভাবে অলঙ্ঘনীয় নয়। কখনো কখনো অসত্যই সত্য হয়ে ওঠে। শ্রীকৃষ্ণের কথাটা একটু রূঢ়, যুধিষ্ঠিরগণ নড়ে-চড়ে বসবেন, সহজে মেনে নিতে পারবেন না। দুযোধনগণও হতাশ হবেন হয়তো। কারণ তারা অসম যুদ্ধের আশা করছিলেন। তারা নিজেরা নীতিভ্রষ্ট হবেন, কিন্তু সত্য-সংবিধান হবে বিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্রহ্মাস্ত্র। মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের কুটনীতি প্রচুর সমালোচনার সম্মুখিন হয়েছে, ভগবত গীতার ভায়োলেন্ট টেক্সট প্রশ্নের বাইরেও। এমন কি অর্জুনও শ্রীকৃষ্ণের সত্য প্রশ্নের তুমুল সমালোচক ছিলেন। এইটা আপনি পাবেন, যখন কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে মহাগুরু দ্রোণ বধের প্রশ্ন আসল। ‘অশ্বত্থামা ইতি গজ’ নামে ঘটনাটি বেশ প্রসিদ্ধ। মতিলালের বিবরণের চুম্বকাংশ পাঠ করি:
কৃষ্ণ যুদ্ধের পঞ্চদশ দিবসে দেখলেন দ্রোণ একাই বোধ হয় সমগ্র পাণ্ডবকুলকে নিহত করবেন। তিনি ভীষণ মূর্তিতে যুদ্ধ আরম্ভ করেছেন, ব্রহ্মাস্ত্র ছেড়ে হাজার হাজার সৈন্য মারছেন। কৃষ্ণ প্রধান নট না হয়েও নাট্যপরিচালক, ভাবলেন- পুত্র অশ্বত্থামার মৃত্যু হয়েছে এ সংবাদ শুনিয়ে দ্রোণকে বিশ্বাস করাতে পারলে তিনি অস্ত্র পরিত্যাগ করতে পারেন, তখন ধৃষ্টদ্যুম্নের পক্ষে তাঁকে বধ করা সহজ হবে। ভীম অশ্বত্থামা নামে এক হাতী বধ করে প্রথমে নিজে দ্রোণের কাছে মিথ্যা প্রচার করলেন যে অশ্বত্থামা হত হয়েছেন। দ্রোণ তাকে উপেক্ষা করে যুদ্ধ চালিয়েই যাচ্ছেন।.. অশ্বত্থামার উড়ো খবরে একটু তিনি বিচলিতও বটে। তাঁর সংহারমূর্তি ক্ষণিকের জন্য শান্ত হল। একমাত্র প্রিয় পুত্র অশ্বত্থামা। যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করলেন দ্রোণ- কথাটা সত্য কি-না। জানতেন যুধিষ্ঠির জীবনে মিথ্যা বলেন না। কৃষ্ণ ঠিক জায়গায় আগাত করেছেন। আগে থাকতেই তিনি যুধিষ্ঠিরকে বুঝিয়ে রেখেছেন- দ্রোণ এইভাবে আরো কিছুক্ষণ যুদ্ধ করলে সমগ্র পাণ্ডবকুল রসাতলে যাবে, পরাজয় ও নিধন অবশ্যম্ভাবী, কাজেই এটা প্রাণাত্যয়ের কেস। জীবন রক্ষার জন্য মিথ্যা বললে পাপ হয় না।.. যুধিষ্ঠির মরাল ডিলেমায় পড়লেন। গ্রন্থে বলা হয়েছে- তার মিথ্যা ভাষণের ভয়ও ছিল অথচ জয়লাভের আগ্রহও ছিল। যুধিষ্ঠির অর্ধসত্য উচ্চারণ করলেন: জোরে বলা হল ‘অশ্বত্থামা হতঃ’ আর অস্ফুট স্বরে ‘ইতি কুঞ্জরৎ’’।.. গ্রন্থে বলা হয়েছে- যুধিষ্ঠিরের রথ নাকি আগে ভূমি থেকে চার আঙুল উপরে থাকত, এটা নাকি ছিল দেবতাদের আশীর্বাদ, এখন মিথ্যাভাষণের পর তাঁর সকল বাহন ভূমি স্পর্শ করল।.. অর্জুন বলছেন, ‘বালিবধে রামের যেরকম অকীর্তির কালিমা দ্রোণবধের জন্য যুধিষ্ঠিরের অকীর্তির কালিমা সেই রকম চিরকালই থাকবে।.. আচার্য দ্রোণ নিজে যাঁর সত্যবাদিতার উপর অগাধ বিশ্বাস স্থাপন করে নিজের জীবন বিপন্ন করতে প্রস্তুত, সেই যুধিষ্ঠির স্বার্থবসে এই বিশ্বাসের চরম অবমাননা করেছেন।’ (নীতি, যুক্তি ও ধর্ম: কাহিনী সাহিত্যে রাম ও কৃষ্ণ/ ১৯৮৭)
অবশ্যই, আমি এইটারে যুদ্ধবিজ্ঞান হিশেবে দেখি। শ্রীকৃষ্ণর নীতি যুদ্ধক্ষেত্রের জন্য। সংসারক্ষেত্রের জন্য নয়। আবার, প্রশ্নটি ঠিক সত্য প্রশ্ন নয়। কর্তব্য প্রশ্ন। সত্যমতে কী কর্তব্য তা ঠিক করা। সত্য অলঙ্ঘনীয়ই। সত্য কখনোই মিথ্যা হয় না। শ্রীকৃষ্ণও সেটি জানেন। অর্জুনও যার কারণে ভ্রাতা যুধিষ্ঠিরকে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বিপক্ষ হয়ে ভর্ৎসনা করছেন। কিন্তু বৈধতার প্রশ্ন স্থানভেদে বিভিন্ন হয়। কখনো কখনো অবৈধই বৈধ হয়ে ওঠে। যখন আর কোন পথ খোলা থাকে না। যেমন ব্রাহ্মণ কৌশিকের প্রশ্নটি। বা স্বজনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ প্রশ্নে অর্জুনের যে অন্তর্দ্বন্দ্ব, সেই মুহূর্তটি।
তাহলে নব্য এই বৈধতার নির্ণায়ক কী হবে? কোন শাস্ত্র কিম্বা সংবিধান এখানে আপনার সহায় নেই। এই জায়গায় ইসলামের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন শরীফের শরণ নিই। কোরআন শরীফে আছে: মানুষের ভেতরে যে রুহ বাস করে তা হল আল্লাহর আদেশ। প্রখ্যাত পণ্ডিত মুঈন উদ্দিন আহমদ খান এই আদেশ এর মানে করছেন বিবেক। যা প্রতিটি জন্মের সাথে ফিতরত হিশেবে মানুষের সাথে আসে। আর সত্য তাই, যা বিবেক সম্মত হয়। মানুষ যখন ইন্দ্রিয়সর্বস্ব ও আত্মমগ্ন জীবসত্তা মাত্র, তখন তার বিবেক থাকে ঘুমন্ত। এই বিবেক এর জাগরণ-মুহূর্তই সত্য। এই সত্য কোন শাস্ত্রমুখি নয়। বরং সকল শাস্ত্র এই সত্যমুখি।
কায়েমি বৈধতার সাথে শাস্ত্রবিমুখী সত্য বা ন্যায়ের বোঝাপড়ার যে কর্তব্য দর্শন, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে তাই পাণ্ডুপক্ষের সারথি হয় শেষ পর্যন্ত। কুরুক্ষেত্রে অর্জুন-শ্রীকৃষ্ণের পক্ষে এই যুদ্ধ কোন জাস্টওয়ার বা ধর্মযুদ্ধ ছিল না। ছিল ন্যায়যুদ্ধ। সংবিধিবদ্ধ বিধানসম্মত জাস্টওয়ার বা শাস্ত্রসম্মত ধর্মযুদ্ধের আহ্বানের বিরুদ্ধে অর্জুন-শ্রীকৃষ্ণের জেহাদ। মহাভারতের কৌরবপক্ষ সংবিধিবদ্ধ জাস্টওয়ারের ঘোষণা দিয়েছিলেন পাণ্ডবদের রাজ্য হরণ করে। আর পাণ্ডবদের আহ্বান জানিয়েছেন, তোমরা সংবিধিবদ্ধ বিধি অনুসারে বনবাসে যাও। আর পাণ্ডবগণ জেহাদ করেছেন সেই জাস্ট ওয়ারের ঘোষণার বিপরীতে। সংবিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় বৈধতা অস্বীকার করে। মানে, সংবিধান অস্বীকার করে।
শাস্ত্র বা সংবিধান বা রাষ্ট্রর ধর্ম হয়ে ওঠা, অলঙ্ঘনীয় হয়ে ওঠার চেষ্টা যখন ঘটে, যে কোন কেতাব যখন নিজেরে আসমানি কেতাবের মত অলঙ্ঘনীয় ঘোষণা করে, সেটাই কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের মূল প্রশ্ন ছিল। যখন কেউ বলেন, এই কেতাব অনুযায়ী বৈধভাবে আমাকে পরাজিত করতে পারবেন না, তখন সেই কেতাবের পরিবর্তন দরকার হয়। কেতাবের অলঙ্ঘন নয়। শ্রীকৃষ্ণ দেখিয়েছেন, কেতাবের সেইরকম অটোক্রেটিক ব্যবহার রুখতে প্রয়োজনে কেতাব লঙ্ঘন করতে হয়। আপনি যারে বৈধতা বলেন।
৪.
পাঠক, আসুন আমরা এবার বঙ্গদেশের কুরুক্ষেত্রে হাজিরা দেই। ধরুন, আপনি এখন মহাভারত পাঠ করছেন। প্রায় খ্রীষ্টপূর্ব চারশত অব্দের কাছাকাছি সময়ের এই কাহন পড়তে পড়তে আপনি ২০১৪ সালের এই বঙ্গদেশকে মিলিয়ে দেখতে পারেন। তখন খেয়াল করতে পারবেন, পাঠক হিশেবে যেন ঠিক এই মুহূর্তে আপনি এবং পুরো ২০১৪ সালের বাংলাদেশও কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত। বা কুরুক্ষেত্র এই বঙ্গালয়েই তার পুরো চেহারাসমেত হাজির। নাহ। ঠিক যুদ্ধ নয়, যুদ্ধশুরুর আগে যেসব বয়ান তৈরীর আয়োজন, এখন আমরা ঠিক সেই অংশে আছি। ধর্মরাজ যুধিষ্টির ও প্রতিপক্ষ দুর্যোধন-শকুনি সমেত।
প্রতিপক্ষের ধর্ম মেনে চলার এমত আহ্বানে আমাদের সভায়ও ধর্ম ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনা চলছে। প্রতিপক্ষের ধর্মের পুরোত হিশেবে হাজির সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সম্পাদক ও মন্ত্রী। আমরা ইতোপূ্র্বেই জেনেছি, তিনি প্রশ্ন তুলছেন, যুদ্ধ (আন্দোলন) তো করবেন, সেটি বৈধ হবে তো! আমাদেরে তো বৈধ ও ধর্মসম্মতভাবে নামাতে পারবেন না। আমরা হৈ হৈ উৎসাহী। ঠিকই তো। ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ। পুরুতের সাথে রাজাও কণ্ঠ মেলালেন। হে পাপী যুধিষ্ঠির, আমারে ধর্মসম্মতভাবে নামাও তো দেখি! আর তুমি তো ধর্মরাজ, ধর্মের বাইরে কিছু করা তোমার অসাধ্যও বটে।
আমরা চঞ্চল। ধর্ম কী বলে? সেকালের সেই ধর্ম মানে পরম্পরা। কৃষ্ণ যার প্রতিবাদ করে ক্ষুদ্ধ হয়ে যুধিষ্ঠিরকে বলছিলেন: সব পরম্পরাই ধর্ম নয়। সেকালে যেমন পরম্পরা, একালেও এই নতুন কায়েমি ধর্মের সহায় পরম্পরা। তাই দিয়ে সব কিছুর বৈধতা ও অবৈধতা ঘোষিত হয়। রাজাগণ সংবিধিবদ্ধ জাস্টওয়ার ঘোষণা করেন। একালের নতুন পরম্পরাগুলোর লিখিত ফর্ম হচ্ছে: সংবিধান। পরম্পরার অপর নাম ধারাবাহিকতা। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা। আমরা প্রকৃতই চঞ্চল হয়ে পড়ি, অর্জুনের মত। যুদ্ধ, নাকি বনবাস? কী কর্তব্য? এই চঞ্চলতা আমাদেরও এক নৈতিক ডিলেমাই বটে। মহাভারতেরই মত। তাই, মহাভারতেরই গল্প। মূলত আমরা মহাভারতেরই পাত্রপাত্রি এখন। আমাদের রাজা যুধিষ্ঠির কে হবেন, আল্লাহ মালুম। যদিও আমাদের প্রত্যেকেরি ভেতরে এক একটা যুধিষ্ঠির লড়াইরত, দুর্যোধন-শকুনির যুক্তিবিদ্যার সাথে। শুধু মহামতি শ্রীকৃষ্ণ অনুপস্থিত, যিনি ধর্ম-অধর্ম ও পরম্পরার সত্যরূপ নির্ণয় করে ধার্মিকের সংশয় দূর করবেন।
নিন্দুকগণ বলবেন, এ হল মহাভারতের একটি জেহাদি পাঠ। তা হোক না। এ অঞ্চলে অন্তত দুটি জেহাদি গ্রন্থ থাকলে সাম্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ধর্ম শুধু শান্তিতে নয়। অসুর বলেন, শয়তান বলেন, সবতাতেই ধর্ম তরবারি নিয়েও হাজির হয়। অসুরবধের জন্য। অন্যায় নিবারণের জন্য। আমাদের শুধু শান্তিকামি মহাভারতবাদীগণ আমার এই পাঠ গ্রহণ করবেন কিনা ভেবে দেখুন।