দশ বছর পূর্বে অর্থাৎ ২০১৪ সাল। আমি সবেমাত্র ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। সে সময়ে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বুঝে উঠতে পারি নাই। আমি যখন একটু আধটু বোঝা শুরু করছি। মনে হল মানুষের রাজনৈতিক সচেতন হওয়া দরকারি। বই যেহেতু অতীত সময়কে রেকর্ড করার প্রাচীন ও উৎকৃষ্ট মাধ্যম। তাই সময়কে বুঝতে বইপত্র পড়তে শুরু করলাম।
তখন লেখক, এক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য’র বেশ কিছু বই আমার পড়া হয়েছে । ফলশ্রুতিতে তার নামের সাথে পরিচিতি। বছর দুয়েক আগের ঘটনা স্মৃতি থেকে বলছি। এদিক ওদিক হবে। পিনাকী একবার পোস্টে লিখছিলেন, তিনি কাদের বই পড়েন, তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে চান। সেই পোস্টে তিনি রিফাত হাসানের একটি বইয়ের বিজ্ঞাপন শেয়ার করেন।
তার কিছুদিন পর ফেসবুকে আমি রিফাত হাসানরে দেখি। প্রোফাইল কভার ছবিতে তার লেখা বইয়ের নামগুলো দেয়া । সেখান থেকেই নিয়ত করি ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি ও টেক্সট কন্সপিরেসি ও রুপকথা’ বই দুটো পড়বো। কিন্তু শুরু করতে করতে মিথলজি, থ্রিলার, চিরায়ত উপন্যাস গল্প পড়ায় বছর দুই পেরিয়ে যায়। ২ বছর বাদে সম্পর্ক ‘বন্ধুত্ব ও রাজনীতি এবং টেক্সট কন্সপিরেসি ও রুপকথা’ বই দুটো কিনি এবং পড়ি। পড়া শেষ হলে-
কয়েকদিন আগে, রিফাত হাসানকে ফেসবুকে নিম্নোক্ত বার্তা দিই:
‘আসসালামুয়ালাইকুম। আমার মনে হয় আপনার (রিফাত হাসান) লেখাগুলো ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উপযোগী নয়। কারণ ফেসবুকে কোন লেখা টাইম লাইনে আসলে চট করে পড়েই বোঝার চেষ্টা করি। বিশেষ করে বড় লেখা হলে ধৈর্য্য কুলয় না চিন্তার সময়টাও থাকে না। স্ক্রল করে নিচে যাই। ফেসবুকে বহুবিধ উত্তেজনা খবরাখবরে টাইমলাইন ভরপুর হয়ে থাকে। অথচ আপনার লেখা পড়ার সময় একটু স্থির চিন্তাক হয়ে ভাবতে বা চিন্তা করতে হয়। তখনই আমাদের ভেতরে আপনার ভাষা লেখা ক্রিটিক্যাল থিকিংয়ের উদ্যোগ ঘটায়। এজন্য বইয়ের পাতায় আপনার লেখাগুলো প্রতিফলিত হয় ভাবনা চিন্তার খোরাক জোগায়। নতুন দৃষ্টি ভঙ্গি তৈরি হয়।
অবশ্য আপনার অনেক লেখা আমি পড়ে সবটা বুঝি না। হয়তোবা এটা আমার চিন্তার সীমাবদ্ধতা বা ভাষাজ্ঞানের সীমানা।
আমি পিইসি ২০১৩ তে দিয়েছি। শাপলা চত্বর, শাহবাগ আন্দোলন, জামায়াত ইসলাম এই শব্দগুলো বর্তমান সময়েও ঘুরেফিরে আসতে দেখি। বুঝে উঠতে পারি না শব্দগুলোর অতীত মানে। আপনার বইদুটো ইতিহাস আর ক্রিটিক্যাল থিকিংয়ের জন্য ঐ সময়টা বোঝার জন্য আমার বেশ সহায়ক। এখন আমি অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্র।’
তখন রিফাত হাসান বললেন, আপনার কমেন্টরে গুরুত্ব দিলাম। এক কাজ করতে পারেন? সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির দশ বছর পূর্ণ হবে জানুয়ারিতে। এই উপলক্ষে আপনার এই অভিজ্ঞতাটা লিখুন, আর একটু বিস্তারিত।
আমি বললাম, লিখবো ইনশাআল্লাহ। তবে আমার লেখার হাত ততোধিক ভাল না। আগে কখনো লেখা হয় নাই। চেষ্টা করবো। তিনদিনে যতটা পারি লিখতে।
রিফাত ভাই উত্তরে বললেন, এই ধরনের লেখাই ভাল ব্যাপার। লেখেন নাই, এইটা একটা এডেড ভেল্যু আপনার লেখার। আপনার নিজের যে ভাষা, সেই সহজ ভাষাতেই লিখুন। কোন সমস্যা নেই।
এই হল এই বই সম্পর্কে লেখার সূত্রপাত।
‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব রাজনীতি’ বইটি অতীত আর বর্তমান সময়কে বুঝতে প্রবোধ দেয় । চিন্তার দুয়ারে কড়াঘাত করে। সমাজে চাঁপা পড়ে থাকা কন্ঠের প্রতিধ্বনি। ইতিহাস পূণজাগরণ করে। সায়ানের যে গণতান্ত্রিক অধিকারের গান। রাহাত শান্তানুর “আই হেইট পলেটিক্স” গানের যে মেসেজ। আমাকে করে আরও বেশি রাজনৈতিক সচেতন। আমি এইবার ভোটার হয়েছি। জনমের পর জ্ঞান হওয়া থেকে কখনও আমি আমার আব্বা মাকে ঠিকঠাক ভোটকেন্দ্রে যাইতে দেখিনাই। এইবার আমি ভোট দিতে পারবো কিনা। ভোট কাকেই দেব! অধিকার কতটুক আছে? সে যাই হোক। কেন এই পরিস্থিতি। এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই সামনে আসে ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব রাজনীতি’ বইয়ের ফিরিস্তি। কেন গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। ফ্যাসিবাদী রুপ কি। সম্পর্ক, বন্ধুত্ব রাজনীতিতে শুনতে থাকি। স্বৈরাচার, ফ্যাসি-বাদ নামক শব্দের প্রতিধ্বনি।
বাংলাদেশের ইতিহাস, যুদ্ধ পরবর্তী গুরুত্বপূর্ণ সময়ের যে ধারা বিবরণী ফ্যাসিবাদের যে সত্তা, লেখক ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব রাজনীতি’ বইটাতে ভালভাবে নোকতাসহ টুকে রেখেছেন । আমরা না চাইলেও , বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শাহবাগ, হেফাজত, জামায়াতে ইসলাম, সেকুলাজিজম, ফ্যাসিবাদ শব্দগুলোর যে দাবি, অতীতের ঘটনাগুলো আমাদের প্রভাবিত করবে কোনো না কোনোভাবে।
বন্ধুত্বের রাজনীতি, রাষ্ট্র কিভাবে ধর্মে জায়গা দখল করে নিজেই ধর্মের প্রতিরূপ আচরণ করে, কিভাবে একটি রাষ্ট্র পুরুষ তান্ত্রিক আচরণ করে মিডিয়া টুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়, শাহবাগে যে আন্দোলন তার যে ফ্যাদিবাদি রূপ, বুদ্ধিজীবর কাজ কী, এইসব নিয়েই রিফাত হাসান বিস্তারিত কথা বলেছেন এই বইয়ে। বইটা পড়া আনন্দজনক ঘটনা আমার জন্য।
৩১ ডিসেম্বর ২০২৩
আমিনুর ইসলাম, ছাত্র