রোদে ভিটামিন থাকে, শীর্ষেন্দুর উপন্যাসের লাইন।
আমার মজাই লাগত এক সময়। এখন তেমন পড়া হয় না। সেই শীর্ষেন্দুও নাকি এখন তেমন পড়তে পারেন না। বয়স তো হয়েছে। শুধু লেখেন। ভাবেন। বক্তৃতা দেন, সেদিন বললেন।
ইদানীং চট্টগ্রামে প্রায়ই আসেন ওঁরা। মানে, ওপারের লোকজন। আমার ভালই লাগে। সৌভাগ্য বটে আমাদের।
তো, কয়েকদিন আগে, ভদ্রলোককেও পাওয়ার সৌভাগ্য হল।
বাতিঘরে আসছিলেন শীর্ষেন্দু। তাঁর পরিমিত ব্যক্তিত্বে আমি মুগ্ধ। ভাষায় ও ভাবে পুরোপুরি ঋষি একজন। লেখায়ও বটে। আমি লেখালেখিতে শীর্ষেন্দুর এই ঋষি ভাবটির ভক্ত। তাঁর কথাবার্তায়ও এই ভাবটি পেলাম। ভারতীয় লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
ভারতীয়? নাকি কলকাত্তাই? অবশ্যই ওঁরা যখন বলেন, তখন মনে হয় ওঁরা এর কোনটাই নহেন। বরং এ হল সেই ছিন্ন বাঁশ বা বাঁশি, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে যার জন্য ওরা সর্বক্ষণ কান্দেন। যেমন, সেদিন শীর্ষেন্দুও অন্নদাশঙ্করের ছড়া গাইলেন: তেলের শিশি ভাঙলো বলে খুকুর পরে রাগ করো। তোমরা যে সব বুড়ো খোকা–
শুনতে শুনতে আমার হাসি আসল।
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বাংলাভাষি মুহাজির লেখক। মুহাজির, তাঁর এবং তাঁর সতীর্থদের সব লেখাতেই এই বেদনা আছে। সেই বেদনার একটা বৈরাগ্য ও নীতিবাগিশ ভাব আছে। যেমন বুড়ো খোকাদের নীতিশিক্ষা দেওয়া। এই বুড়ো খোকা কারা? এই যোগ-ভাগের দায় কাদের? এর পেছনে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার যে দায় ও লুকোচুরি এবং স্রেফ মুসলমান সম্প্রদায়ের উপরে একক দোষ চাপানোর যে ঘটনা, তার পেছনের ঐতিহাসিক অনুমানগুলি যে মিথ্যা ও ভুয়া, জয়া চ্যাটার্জি তার গবেষণায় দেখিয়েছেন। ১ মূলত, পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের এই নীতিবাগিশ বৈরাগ্য যে ইতিহাস-ভাবনা ও রাজনীতির উপরে দাঁড়িয়ে আছে, তা প্রথমত স্রেফ সাম্প্রদায়িকতা-উদ্ভূত চিন্তা বিশেষ।
তবে, সাম্প্রদায়িকতার বাইরে, এই বৈরাগ্যের মাহাত্ম্য অন্যভাবেও পাঠ করা সম্ভব।
আপনি দেখবেন, ক্ষুদ্র প্রতিবেশীদের উপরে আধিপত্যশীল যে ভারত এবং একই সাথে বাংলাদেশের চাষা-ভুষা নাগরিকদের খুনি হিশেবে যে ভারত সীমান্তে সক্রিয় থাকে, তারে নিয়ে প্রশ্নহীন ভাবে সুখে থাকতে তাদের কোন কুণ্ঠা নেই। ছড়া-কবিতা-উপন্যাসে উদযাপন করেন সেই ভারতকে, বরং বাংলা কেন ভারতের সাথে নেই, এইটিই তাদের বৈরাগ্য আর আফসুস মাত্র। এইটা অখণ্ড ভারত বা অন্য অর্থে সম্প্রসারনবাদি ভারতের কাঙ্ক্ষা বৈ কিছু নয় আমার কাছে। তাই, অন্নদাশঙ্করের ছড়াও আমার কাছে বিএসএফের গান বৈ কিছু নয়। এতে আমাদের আবেগিত হবার কিছু নেই।
যদি আপনি প্রস্তাব করেন তাদের, আসুন ভারতের অধীনতা অস্বীকার করে আমরা বাঙালিরা একরাষ্ট্র হই, তাদের চেহারা দেইখা আপনি বুঝবেন, কোন মৌচাকে ঢিল ছুঁড়লেন। বুঝবেন, বাঁশির কান্না আর বাংলা প্রেম কাহারে বলে। শাসনক্ষমতায় থাকলে, যেমন মোদি বা মনমোহন, তারা খুনোখুনি চালিয়ে যাওযার হুমকি দেবেন, যেমন সবসময়ই দিয়ে থাকেন। আর যারা সাধুজন, তারা শীর্ষেন্দুর মতই একটা ঋষি ভাব নেবেন। বলবেন, ওসব রাজনৈতিক ব্যাপারে আমাদের হাত নেই গো বাবা। আমরা সাহিত্যিক, নিরীহ।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বাঙালি জাতীয়তাবাদি যে বয়ান এই মুহূর্তে হাজির আছে, তা উপরের এই উভয় ভাব ও বৈরাগ্যকে লালন করে মনে প্রাণে।
শীর্ষেন্দুদের অন্য দুঃখও আছে। ভারতে বাঙালিরা সংখ্যালঘু। যখন ভারত বলি, কলকাতা তার কাছে একটি মফস্বলের মত। এবং ভাষার দিক থেকেও বাংলা একটি প্রান্তিক ভাষা ভারতে। এমনকি খোদ কলকাতাতেই। এইটা আমার মত না, শীর্ষেন্দুই বললেন। অতএব তাঁর উপসংহারটি গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে: সুনীলকে আমি সবসময়ই বলতাম বাংলা ভাষার উপর কোন দুর্যোগ আসলে পশ্চিমবঙ্গ কিছু করতে পারবে না, বাংলাদেশের মানুষই এ ভাষাকে সঞ্জীবিত করে রাখতে পারবে। বাংলাদেশই হবে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রাজধানী। শীর্ষেন্দুর এই বাক্যের পর একজন পাশ থেকে বলে উঠলেন, এইটা একটা পিঠ চাপড়ানো কথা। আমি খেয়াল করলাম, যিনি বললেন, ভদ্রলোক কবিতা লেখেন। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন। আমি বললাম, এইটা পিঠ চাপড়ানো কথা হিশেবে উনি বলতে পারেন। কিন্তু একই সাথে এইটা একটা বাজার তৈরির প্রশ্নও। মানে শীর্ষেন্দুদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন।
বললেন, কেমন? আমি বললাম, ধরুন, বাংলা ভাষায় লিখে যেতেই হবে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা লেখকদেরকে। বা আনন্দবাজারকেও তাদের ব্যবসা চালাতে হবে। কিন্তু ভোক্তা তো সেরকম নেই কলকাতায়। সেক্ষেত্রে, তাদের রেডিমেইড ভোক্তা তৈরি হয়ে আছে বাংলাদেশে। কলকাত্তাই বাংলা ছবির বাজারের অবস্থাও একই। দর্শক সংকটে ভুগছে। এখানেও বাংলাদেশের বাজার ছাড়া তাদের আর কোন গত্যন্তর নেই, আনন্দবাজারে সিনেমাসেবিদের কান্নাকাটি দেখলে বুঝবেন। তবে, এইটা নিয়ে আমাদের এখন বেশ ভাবাভাবি করার ফুরসৎ নেই, বা অন্যরা রাখছে না। তার আগেই ঢেউ এর মত শীর্ষেন্দুগণ আইসা পড়ছেন। ভারতীয় বাংলা ছবিগণও। মহানুভব বাংলাদেশ সরকার ও সংস্কৃতিসেবি সাংবাদিকদের অকৃত্রিম আগ্রহ তাদের নিয়ে।
ভদ্রলোককে সম্ভবত বোঝাতে পারলাম। বা পারলাম কি-না নিশ্চিত নই। কারণ তিনি নিশ্চুপ।
শীর্ষেন্দুরা কলকাতায় কতটা জনপ্রিয়? শীর্ষেন্দুর মুখেই শুনুন, ‘কলকাতার তুলনায় বাংলাদেশে চার-পাঁচগুণ বেশি বই বিক্রি হয়’ তাদের, পাইরেসি সত্ত্বেও। ২ তারপরও তারা বাংলাদেশে তাদের বইয়ের পাইরেসি নিয়ে নাখোশ। সেদিনের অনুষ্ঠানেও এরকম একটি মৃদু গান গেয়েছেন। অবশ্যই, শীর্ষেন্দুর পরিমিতিজ্ঞান ভালো, অন্যদের তুলনায়। আমি বলি, ঋষিতুল্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই। যাই হোক, এই গানের উত্তরে এক বন্ধুর মন্তব্য: বাংলাদেশে বাবুদের এই জনপ্রিয়তা কিন্তু এই পাইরেসিরই ফল। পাইরেসির ফল খেতে আইসা তারা সেই পাইরেসি বন্ধের জন্য বক্তৃতা পাড়েন। তো, মশাই, ধর্মে সইবে তো? সন্দেহ নেই, বাংলাদেশের মার্কেটটি তাদের জন্য অনেক বড়, গুরুত্বপূর্ণও। তাদের কোন অনুষ্ঠানে কলকাতায় কত লোক সমাগম হয়, আমার জানা নেই। তবে শীর্ষেন্দুর উপরের মন্তব্য থেকে ধারণা করতে পারি, বাংলাদেশের মতো নয়। বাতিঘরের অনুষ্ঠানে দেখলাম, তিল ধারণের ঠাই নেই। বাইরে প্রজেক্টর লাগানো হইছে। এক বন্ধু বলতেছিলেন, বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত গৃহিনীরা সব সুনীল-সমরেশ-শীর্ষেন্দু পড়েন। তাই অনুষ্ঠানে সব গৃহিনীরা এসে ভিড় করবে, এটাই স্বাভাবিক।
এই ঘটনায় শীর্ষেন্দু যেমন খুশি হবেন, আমরাও খুশি হতেই চাই।
কিন্তু আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে, নিজেদের আলোচনার জন্য। এই আলাপটি গত বইমেলার সময়ে কোন কোন আলাপে আমি বলেছি। আবার একটু নোক্তা দিই।
প্রশ্নটি ভারতীয় লেখকের বই নয়, ভারতীয় বই প্রসঙ্গে। ভারতীয় বই মানে ভারতীয় পুঁজি। সে যে কোন বাংলাদেশি লেখকের বই হলেও।
তো, ভারতের পুঁজি মানে কী? আমি বলি, ভারতের পুঁজি মানে ভারতের অবিকশিত সামন্ততান্ত্রিক পুঁজি। অবিকশিত, যে কারণে ভারত তার আশেপাশের ছোট রাষ্ট্রগুলির সাথে কৃপণ ও কূপমণ্ডুক প্রতিবেশী হয়ে থাকে, আমাদের সকল অভিজ্ঞতায়। সেই স্বার্থপর পুঁজির সাথে যে কোনো আদান-প্রদানে আমাদের সতর্কতার সাথে আগানো প্রয়োজন।
বাংলাদেশে শুধু বইমেলাকেন্দ্রিক এরকম একটি দায়সারা গোছের আলাপ হয়। যথা: ভারতীয় বই এর বইমেলায় স্থান হবে কি-না। মানে, সবতাতেই ভারতীয় বই ঢুকবে, কিন্তু বইমেলায় নয়। তো, বছরখানিক আগে কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাআমাদের জানিয়েছিল, এদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রকের প্রধান (আসাদুজ্জামান নুর) সমতার গান গেয়েছেন। তারাই জানিয়েছেন, আগামী বছরই বইমেলায় ভারতীয় বই আসছে। বইমেলায় ভারতীয় বইয়ের এই প্রবেশে অনেকের আপত্তি দেখা গেছে। আমার আপত্তি নেই, যদি সবতাতে সমতা আসে। নীতিমালার ভিত্তিতে আসে।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক লেনদেনের জায়গা অনেক। ভূমির ভাগ ও পানির নায্য হিস্যার প্রশ্ন। বাণিজ্য। আকাশ। কোথাওই সমতা নেই। ভারতের সীমান্তরক্ষীবাহিনী শুধু দশ বছরে প্রায় সাড়ে নয়শ বাংলাদেশি খুন করেছে আমাদের সীমান্তে। এটা মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য। সমতা আনতে হলে আমাদেরও হয়তো খুন না হওয়ার সমতা, নয় তো খুন করার সমতা অর্জন করতে হবে। এইসব না ভাইবা ভারতীয় পুঁজির বইমেলা বা বাংলাদেশের বাজারে কীভাবে স্থান হবে, তার গদগদে আলাপ ক্ষতিকর। সেটি এ পক্ষের হোক, বা ও পক্ষের হোক।
তার আগ পর্যন্ত আমি ইণ্ডিয়ার বই পাইরেসিকে ছাড় দেওয়ার পক্ষে। আবারো নোক্তা, ইণ্ডিয়ান লেখকের বই নয়। বাংলাদেশি কোন লেখকের বইও যদি ইণ্ডিয়া থেকে বের হয়, তারও পাইরেসি হবার দরকার আছে। পাইরেসি হতে বাধ্য, যদি তার বাংলাদেশে পাঠক থাকে। শুধু ইণ্ডিয়ান বই নয়, যে কোন ভিনদেশি বই পাইরেসির পক্ষে আমি।
আমরা তো অনেক কিছুকেই ছাড় দেই। পাইরেটেড সফটওয়ার বা আরো কত কিছু। ইণ্ডিয়ার বই অবশ্যই এক্ষেত্রে জরুরি খাত মনে করি। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সাথে আমাদের সুনির্দিষ্ট কোন বাণিজ্যবিনিময় চুক্তি না থাকছে। যেমন ধরুন, আমি ইণ্ডিয়ার যে কোন বই দ্বিগুণ দামে কিনতে আগ্রহী না। যাদের ভাল দাম দিয়ে কেনার আগ্রহ এবং পয়সা দুটোই আছে, তারা দ্বিগুণ দাম দিয়ে ইমপোর্টেড বইপত্র কিনুন। নায্যমূল্যে, সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অধীনে না আসার আগে যে কোন বাহিরের বই-ই আমরা পাইরেসি করতে চাই। বা এই বহিটি বাংলাদেশি কোন প্রকাশনী থেকেই বের করতে বাধ্য হোন শীর্ষেন্দু গং, যদি বাংলাদেশি পাঠকদের পড়াতে চান। আর, বাংলাদেশ যেহেতু অনেক পটেনশিয়াল বাজার ইণ্ডিয়ান সাহিত্য, সিনেমা ও অন্যান্য দ্রব্যের জন্য, এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারও এইসব সুবিধার বিপরীতে বাংলাদেশের সাথে ইণ্ডিয়ার বাণিজ্যবৈষম্য, সীমান্তের খুনোখুনি বিষয়ে দরকষাকষির পর্যায়ে যেতে পারে। যেমন বাংলাদেশে শীর্ষেন্দুগণ এবং তাদের বইসকলের জন্য দুয়ার বন্ধ করে দেওয়া হল, যতক্ষণ না অন্য বিষয়সমূহের সমতা বা সমাধান আসে। হতে পারে না?
এই প্রশ্নটিই বা তার কাছাকাছি প্রশ্ন একজন কর্কষ কণ্ঠে করলেন। তার চেহারা দেখা গেল না। যেমন, এই যে আপনাদের বই বাংলাদেশে আসছে, আমাদের লেখকদের বই ওখানে পাওয়া যায় না কেন? এই যে একটা অবস্থা এইটা নিয়ে প্রয়াত আহমদ ছফার বেশ খেদ আছে। আপনি এইটারে কেমন মনে করেন?
উপস্থিত অনেকেই তার কর্কষ কণ্ঠকে একটু থামিয়ে দেওয়ার ভাব নিয়ে হাত তুললেন। মনে হল অসংস্কৃত লোকজনের কথা, থামিয়ে দেওয়াই দরকার। বা এই মহান অতিথি এমন প্রশ্নরে যদি অপমান মনে করেন। তবে শীর্ষেন্দু এখানেও ঋষির মতোই উত্তর দিলেন। বললেন, এই ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি আমরা সবসময়ই হই। বাংলাদেশে যখনই আসি। এর নায্য ভিত্তিও আছে। যেমন বাংলাদেশের চ্যানেলগুলোও আমরা দেখতে চাই। কিন্তু দেখতে পাই না। এতে আমাদের কিছু করার নেই। এইটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রশ্ন। হুমায়ূন আহমেদেরও এই অভিযোগ ছিল। ইমদাদুল হক মিলনেরও এই অভিযোগ আছে। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। বাংলাদেশী কোন লেখকের বই কলকাতার পাঠকেরা আদৌ পড়বে কিনা বা কতটা পড়বে, তা হয়তো তখন দেখা যেতে পারে। কিন্তু আমি মনে করি, এই প্রশ্নের নায্যতা আছে। কিন্তু আমরা তো রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করি না।
আমার ইচ্ছে হল বলি: হায় ঋষি। কেবল বঙ্গদেশে ভক্তপরিবেষ্টিত হয়েই চলে যাবেন? কোন অভিযোগ নেই। অপরের অভিযোগের ব্যাপারেও কোন রা নেই। এইটারে অবশ্যই শীর্ষেন্দু কলিযুগ বলেছেন। অনুষ্ঠানে শীর্ষেন্দুরই কওয়া একটি গল্প, শুনুন তাহলে। তিনি একবার বাসে উঠতে গিয়ে বাসের পাদানি থেকে পড়ে যাচ্চিলেন। কেউ ধরছে না। তিনি আর্তস্বরে ডাকলেন আমাকে একটু ধরুন দাদা। কেউ ধরতে এগিয়ে আসল না। বরং বাসের ভেতর থেকে একজন খেঁকিয়ে উঠে বললো, আপনার পড়েই যাওয়া উচিত। এভাবে উঠতে গেলেন কেন বাসে? শীর্ষেন্দুর ভাষায়, লোকটার উপর তার কোন রাগ হয় নাই। কারণ সময়টি কলিযুগ।
এই গল্পের রেশ ধরেই বলি, শীর্ষেন্দুর জবাবে আমাদের রাগ করার কিছু নেই। আমি কলিযুগ বলি না, বলি, তিনি তো মহাভারতেরই অংশ। মহাভারতের রাজনীতি, আধিপত্য, ধর্মকথা ও পুরাণ দিয়েই তিনি আমাদেরে দেখবেন। তাই, কলিযুগ কেবল তখনই দেখতে পাবেন, যখন ব্যক্তি শীর্ষেন্দু পাদানি থেকে পড়ে যেতে থাকেন। মহাভারতের যে অপর, তারে নিয়ে তাদের ভাবতে নেই। হয়তো।
সূত্র
১. [Bengal Divided: Hindu Communalism and Partition, 1932-1947/ Joya Chatterji/ Cambridge South Asian Studies / Cambridge University Press (June 30, 2002)]↩
২. [শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার: মাসউদ আহমাদ: আপনার বইয়ের বিশাল একটি মার্কেট বাংলাদেশের নীলক্ষেত, যেখানে বিখ্যাত যেকোনো বইয়ের পাইরেট কপি বিক্রি হয়। ওখানে কখনো গিয়েছেন? কিংবা পাইরেট বই নিয়ে আপনার বিবেচনা কী? শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়: পাইরেট হওয়া তো একদমই উচিত নয়। কারণ বাংলাদেশে, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে আমার বই যা বিক্রি হতো, বাংলাদেশে তার পাঁচ-ছয় গুণ বেশি বিক্রি হতো। আগে ছোট বইগুলো পাইরেট হতো, বড় বইগুলো হতো না। কিন্তু আমার পার্থিব বেরোনোর পর বছর দুয়েকের মধ্যেই বড় বইগুলোও পাইরেট হতে শুরু করে। এখন পাইরেসিতে বাংলাদেশ ভরে গেছে। এমনকি কলকাতায় বই বেরোনোর আগে এখানে বই বেরিয়ে যায়। এখন অসুবিধা হচ্ছে এই যে, সেসব বইকে আর আমরা রিকগনাইজ করতে পারি না। এটা বন্ধ করার জন্য কিছু একটা তো করা উচিত। http://forum.banglalibrary.org/topic2195-view.html]↩