Blogs

রিফাত হাসান

এই সময়টি আপনি কীভাবে উদযাপন করবেন

September 9, 2014   0 comments   12:20 am
Primary Author: রিফাত হাসান
Deviantart/ Assembler by Kosmur/ 2014

ধরুন, আপনার বিস্তর সময়। বিকেলটা ফাঁকা পড়ে আছে। বন্ধুদের আড্ডায় যাবেন, তারও উপায় নেই। ছবির হাট বন্ধ। আড্ডার জায়গাগুলো সিলগালা করে দেওয়া। ফেসবুকে রাজনৈতিক আলাপ করবেন, তাইলে গ্রেফতার হবেন। মিছিল-মিটিং? প্রশ্নই আসে না।

Share

ধরুন, আপনার বিস্তর সময়। বিকেলটা ফাঁকা পড়ে আছে। বন্ধুদের আড্ডায় যাবেন, তারও উপায় নেই। ছবির হাট বন্ধ। আড্ডার জায়গাগুলো সিলগালা করে দেওয়া। ফেসবুকে রাজনৈতিক আলাপ করবেন, তাইলে গ্রেফতার হবেন। মিছিল-মিটিং? প্রশ্নই আসে না।

অল্প আধটু এনজিওগিরি করতে পারেন। সেনিটেশন ও সৌহার্দ্য প্রোগ্রাম। শিশুদের যৌন সচেতনতা। সাক্ষরতা।- এইসব।

কিন্তু যদি এইসবে আপনার ক্লান্ত হইয়া যান?

রাজনীতিতে অবসরভোগিরা এ সময়টাতে মানববন্ধন কইরা বেড়ান। গেরুয়া কাপড় পরে। উনারা মহাত্মা গান্ধি। তাইতেও মাঝে-মধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। লাঠিচার্জ হয়। তাহলে কী করবেন?

আমি বলি কি, কৌতুক তো করতে পারেন। ননসেন্স।

২.

কারণ এমন কিছু সময় আসে, যখন কৌতুকই ভরসা।

মানে আপনার জিহ্বা। জিহ্বারে সাপের মতো ধারাল কইরা নেন। সূক্ষ্ম এবং বিষাক্ত। এ্রইটা একটা গেইম। আস্তে আস্তে জটিলতরো রূপ নেবে। হোক। এইটা হল নিরন্তর টম এণ্ড জেরির গল্প।

কৌতুককে কি ডিজঅর্ডার হিশেবে দেখা হবে?

সেক্ষেত্রে আপনি সতর্ক থাকুন। ধরুন, আপনি ভীষণ কৌতুকের মধ্যে বসবাস করছেন, কিন্তু হাসতে পারছেন না শব্দ করে।

আমি বলি কি, আপনি হো হো কইরা হাসেন। তবে অন্য সময়ে। অন্য কৌতুকের সাথে। অন্য ভাবে।

৩.

আপনার কৌতুক হতে হবে ননসেন্স।

যার মধ্যে ধাধা আছে, কিন্তু শ্রোতাকে গণ্ডারের মত বইসা থাকতে হয়, মুখ গোমরা করে।

অর্থ খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে যাবেন গোয়েন্দারা।

বহুদিন সময় গড়ানোর পরে, যখন পড়বে দাঁত, নড়বে দেহের ভিত, আর কৌতুকটি বুঝে আসে বইলা মনে হয়, তখন হাইসা ‍উঠবেন শ্রোতা।

কিন্তু সেতো অধরা। তারও বিবিধ মানে তৈরী হবে, কবিতার মতো।

হেনরি বার্গসন নামে এক ফ্রেঞ্চ দার্শনিকের মন্তব্য স্মর্তব্য: যে কোন কৌতুকে একজন সম্ভাব্য কবি বসবাস করে।

তাই সেই হাসিটাওর কিছুদিন পরপর ভিন্ন অর্থ তৈরী হবে।

ধরুন, এক্ষেত্রে শ্রোতা হলেন টিকটিকিবাবু।

তারা তো আপনার আশেপাশেই থাকেন, ছদ্মবেশে।

তাদের বিভিন্ন পোশাক থাকতে পারে, বহুরূপি। কিন্তু আপনি তারে দেখলেই চিনবেন। অথবা চেনার দরকারই নেই, ভাব নেন। ধরুন, আপনি যদি রাস্তা দিয়ে হাঁটেন এবং কোন কুকুরের দিকে মনোযোগ দেন এবং কুকুরজি যদি বুঝতে পারেন, তবে কুকুর মশাই আপনার পিছু নেবেন।

তাই, আপনার কাজ হল, তারে ভুলে থাকা। তার দিকে নজর না দেওয়া।

সোজা ভাষায় ভাড়াটে কুত্তা, যাদেরে আমরা আদর কইরা টিকটিকি বলি, ওদের পাত্তা দেবেন না।

তার উপস্থিতি অস্বীকার করুন। ভুলে যান। জীবনটাকে সহজ কইরা এনজয় করুন। কৌতুক করুন।

৪.

অবশ্যই, টিকটিকগুলো গণ্ডারের মতই। তাই, আপনার এই নিরবতা ওদের জন্য আতঙ্কও নিয়ে আসতে পারে।

ধরুন, মহান টিকটিকিবাবু আগ্রহ নিয়া বইসা আছেন, কখন আপনার ঠোঁট নড়ে। কখন আপনি কথা কয়ে ওঠেন, কোন ভাষায়। কী বিষয়ে কথা কন। কোন শব্দবন্ধ ব্যবহার করেন, তার কোন কোন গন্ধ। কার নাম উচ্চারণ করেন। কারে নিয়া মশকরা করেন। হাবে ভাবে প্রধানমন্ত্রীরে গালি দ্যান নাকি ভ্রুকুটি করেন। টিকটিকির চোখে ঘুম নেই, কিন্তু দেখা গেল, যে বিষয়ে তার মহামহিম আগ্রহ, সেই তিনিই নেই আপনার কৌতুকে। তার মুখ, হাসি, অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, শরীর, ভাষা এই সব নিয়ে আর কোন আলাপ নেই আপনাতে। ধরুন, আপনার বিষয় হল আকাশ। এবং পাখি। এবং হনুমান। এবং কুকুর। এবং বড়জোড় আপনি নিজে।

যেন তার কোন ইতিহাস্ই নেই আপনাতে। তিনি অনেতিহাস। মরা একটা ঘটনা।

Resurection 2 by Alex Kozhanov/ 2013
Resurection 2 by Alex Kozhanov/ 2013

৫.

এইটা একটা আতঙ্কই বটে। পুরো টিকটিকিব্যবস্থা অনর্থ হয়ে যায়। ধরুন, টিকটিকিবাবুর আতঙ্কের চেয়েও তিনি যার দাস, তার আতঙ্ক আরো বেড়ে যেতে পারে।

এমন কি আতঙ্কে মরতে থাকবেন। কারণ, ধরুন আপনি যখন তার ব্যাপারে কথা বলবেন না, তখন তার অস্তিত্বই তো থাকে না। মানুষকে যেমন নিজের শরীরে চিমটি কেটে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হয়। একটা অনন্য দার্শনিক মুহূর্ত। কিন্তু তার শরীর এখন নিরুপদ্রব, অস্তিত্বহীন। কারণ আপনার কোন আগ্রহই নেই তার সম্পর্কে। অস্তিত্ব না থাকা মানে, তার ক্ষমতারও অস্তিত্ব না থাকা। তার ক্ষমতার অস্তিত্ব না থাকা মানে একটা অনর্থব্যবস্থা। এর ভেতরে বইসা বইসা তার আত্মহত্যার কথা মনে হবে। এমন কি আত্মহত্যাই করে ফেলতে পারেন।

আর আপনি হাসবেন। আর কৌতুক করে যাবেন।

আপনি তো নিছক কৌতুকই করছেন। অন্য কিছু না। আর কৌতুক মানে তো কবিতাই, যেমনটি উপরের ফ্রেঞ্চ সাহেব বলেছেন। যার প্রচুর অর্থ করা যায়। আইন দিয়ে আটকানো যায় না।

প রি শি ষ্ট:

১.

টেলিফোন বেজে উঠলো ঘরে। কিন্তু বাসায় কেউ নেই কুকুর ছাড়া। এগিয়ে গিয়ে সে রিসিভার তুললো:
– ঘেউ
– হ্যালো, কে বলছেন?
– ঘেউ!
– হ্যালো, একটু স্পষ্ট করে বলবেন?

– ঘ-য়ে এ-কারে ঘে, আর হ্রস্ব উ!

(রাশিয়ান কৌতুক। এইটা সবচেয়ে নিরাপদ কৌতুকের উদাহরণ হতে পারে। এরকম কৌতুক নিরন্তর করতে থাকলে এক পর্যায়ে শ্রোতা বিভ্রান্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে উদ্যত হতে পারে। কিন্তু কৌতুক বলিয়ের বিরুদ্ধে তার কোন আইনি টুলস নেই। তাই আত্মহত্যাই শ্রেয়। এবং বলতে পারেন সবচেয়ে কার্যকর এই সময়ের জন্য।)

২.

জাপানের প্রধানমন্ত্রী ডার্ক রসিকতা করেন। এইটা সেদেশের মানুষ পছন্দও করে। তারা তাদের প্রধানমন্ত্রীকে ভালবাসে।

কিন্তু সেদেশের প্রধানমন্ত্রী অন্যের রসিকতা একদম পছন্দ করেন না। কারণ জাপানের মানুষ হালকা রসিকতা করেন।

(এইটা ইশারামূলক, পারতপক্ষে এই ধরণের কৌতুকও না করাটা উত্তম। এই কৌতুকটা সম্ভবত জাপানে প্রচলিত। নট শিওর। )

৩.

প্রধানমন্ত্রী একবার একটি শুয়োরের খামার পরিদর্শনে গেলেন। শুয়োরের খাচার সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন। কিন্তু সাংবাদিকরা পড়লো মহা বিপদে। কাল সকালে পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রীর ছবি আসবে কিন্তু ছবির ক্যাপশন কি লিখবে?
“শুয়োর পরিবেষ্টিত প্রধানমন্ত্রী” – না হলো না।
“শুয়োরদের সাথে প্রধানমন্ত্রী” – না এবারো হলো না।
পরদিন পত্রিকায় ছবি এল, ছবির ক্যাপশন হলো; “প্রধানমন্ত্রী ক্রুশ্চেভ, বাম থেকে তৃতীয়”!

(এ্ইটা রাশিয়ান কৌতুক। তারপরও ভয়ঙ্কর। রাশিয়ান হলেও, এই রকম কৌতুক এই প্রস্তাবনা অনুযায়ী পুরোপুরি নিষিদ্ধ।)

Leave the first comment