ভাবতে গিয়ে আমি মাঝেমধ্যে শিউরে উঠি যে, এক অদ্ভূত ফ্যাসিবাদের কবলে পড়ে যৌবন যাচ্ছে আমার। আমি পরম্পরা মিলাইতে বসি, আমাদের দাদারা গল্প বলছে পাকিস্তানের, বাবারা এরশাদ আমলের, আর আমরা বলবো আওয়ামীলীগের। এই বাংলার ইতিহাসে ফ্যাসিবাদ কি তাইলে জয়া আহসান আর পূর্ণিমার মতোই অনন্তযৌবনা? রিফাত হাসান একেই কি রূপকথা বলতেছেন? তাই তো।
সাহিত্য পড়তে এসে কমবেশি বাংলাদেশী সব লেখককেই তো ফ্যাসিবাদের কথা বলতে দেখছি। তাদের সেই বলাকে আমি সবসময় বিশ্বাস করতে পারি নাই, বেশিরভাগই ফ্যাসিবাদ গল্প হয়ে ওঠার পরের বলা বলে। এমন বলা কি আজকের আওয়ামীলীগও বলেনা? এই জায়গা থেকে রিফাত হাসান আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে, একই কারণে গুরুত্বপূর্ণও।
নির্বিবাদ সাহিত্য করতে এসে, করতে শুরু করার পরও, একদিন আবিষ্কার করলাম কবিতা আর গল্প-উপন্যাসের সমস্ত রোমান্টিকতা আমার বিবেকের ভিতর ভেঙেচুরে যাচ্ছে, অর্থ হারাই ফেলতেছে। সম্বিত ফিরে পাবার মতো করে লক্ষ্য করলাম, এই হইলো আমার রাজনৈতিক হয়ে ওঠা। এই হয়ে ওঠাতে আমার পরিবার, আমার বিশ্বাস আর ফ্যাসিবাদের সাথে সাথে রিফাত হাসানের এক্টিভিটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
রিফাত হাসান বইয়ের বিসমিল্লাহর শেষে বলেন, ‘এই বইয়ে ডায়ালগ, আড্ডা ও আলাপের সংখ্যা বেশি। কোন কোনটা স্রেফ বন্ধুদের সাথে কথাবার্তা। এইটা সচেতন ঘটনা। আমি মূলত আমাদের কথাবার্তাগুলোকে একত্রিত করতে চেয়েছি, বই না।’ এইটাই মূলত রিফাত হাসানের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব আর রাজনীতি৷ মানে কেবল ভাজে কাঠগোলাপ গুজে রাখা এস্থেটিক বইয়ের জগত আপনাকে ফ্যাসিবাদের কবল থেকে রেহাই দিতে পারবে না আর। সমস্তকিছুই কাজ করবে এইখানে, ডায়ালগ, আলাপ আর বন্ধুদের সাথে কথাবার্তাও। সেই কারণেই রিফাত হাসানকে অন্যদের মতো, বই লাগেনাই বুঝতে আমার। সেই কারণেই রিফাত হাসান এই ফ্যাসিবাদের যুগে, আড্ডা, আলাপ আর বন্ধুদের সাথে কথাবার্তার মতোই দরকারি।
প্রায় দুইযুগ পার হয়ে যাবার পরে, একদিন যখন ফ্যাসিবাদ পাড়ার মোড়ে দাড়ায়ে থাকা ইভটিজারের মতো আচমকা আমাদের ঘরেই ঢুকে পড়লো, এমনকি প্রেমেও, আমি বাপ মরা একটা ছেলের হঠাৎ বড় হয়ে ওঠার অস্বস্তি অনুভব করতে বাধ্য হলাম, সেই সময়ে এসে ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’ একটা ছোটখাটো চাকরির মতোই আমার কাছে, যেইটা আমার বোঝাপড়াকে আরো পরিষ্কার ও মিনিংফুল করে তুলতে পারে।
সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির পর আমার হাতে এইটা রিফাত হাসানের দ্বিতীয় বই। বেশ অনেকদিন থেকেই উনার আরেকটা বই ‘এই সময়টা আপনি কিভাবে উদযাপন করবেন’ কিনার কথা ভাবতেছি। এই ফ্যাসিবাদের যুগে রিফাত হাসানের মতো লোকের বইয়ের এমন শিরোনাম, কিছুটা লোভনীয় তো বটেই।
এইটুকুই।
কাজী ওয়ালী উল্লাহ, লেখক।