fbpx
রিফাত হাসান সম্পর্কিত, সংস্কৃতি-উদ্যোগের আলাপ

মৃদুল মাহবুব

আতঙ্কবাদী কৃষ্ণচূড়ার সময়ে রিফাত হাসান

February 24, 2022   0 comments   9:51 am

আর রিফাত ভাই বাংলা ট্রেডিশনাল কবিতার সাথে একরকম ছেদ তৈরি করেছেন। এটা বড় বিষয়। কবিরা ঐতিহ্যের মায়া, নিজের থেকে নিজে বেরোতে না চাওয়া, নতুন রাস্তায় শহীদ হওয়ার রিস্ক নিতে চায় না। সেই হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, রিফাত হাসানের কবিতার বোধবুদ্ধি সাহসিকতায় পরিপূর্ণ। মানে নিজের মত লিখতে চাওয়ার ও পারার সক্ষমতা ও সাহস তার আছে। সেই হিসেবে আমি গুরুত্বসহকারে তার কবিতা পড়ে থাকি।

Share

ধন্যবাদ। আমি আসলে বক্তা হিসেবে খুব খারাপ। লিখতেও পারি খুব ছোট ছোট করে এবং কবিতাই লিখতে পারি। এটা শত শত লাইন বা কয়েক হাজার লাইন এরকম কিছুও লিখতে পারি । মানে বক্তা হিসেবে ভালো না। তো সেটা আপনারা ধরে নিবেন, খুব খারাপ বক্তব্য দিবো। আর রিফাত ভাইয়ের কথা যদি বলি, রিফাত ভাইয়ের সাথে আমার আসলে আজকেই প্রথম দেখা, প্রথম চোখের দেখা বলে যেটাকে বলে, শারিরিকভাবে দেখা সাক্ষাৎ যদি হয় সেটাও আজকেই। এর আগে রিফাত ভাইয়ের সাথে যেটা দেখা হয়েছে সেটা ফেসবুকের মাধ্যমে, খুব নীরিহভাবে তার ওয়ালেও উপর একটা নজর আামর বরাবরই ছিলো। রিফাত হাসানের লেখালেখি সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহ থাকার কারণে কোন কমিউনিকেশন বা কথাবার্তা বা যোগাযোগ না থাকলেও আমার দিক থেকে এক রকম যোগাযোগ ছিলো তো বটেই। সেই অর্থে তিনি খুব অপরিচিত কেউ না আমার কাছে। লেখক জীবনে এমন গোপন আঁতাত গড়ে ওঠে ও তা ভালো বটে। কিন্তু তিনি কী চিন্তা করছেন তা ফিল করতে কোন সমস্যা হয় হয়নি। এমনকি তার অনেক কিছুর সাথে একমত না হলেও তিনি কী বলতে চাচ্ছেন তা বুঝে ওঠার গুরুত্ব তাকে সব সময় দিয়েছি। অনেক কিছু যা আমাদের মনের মত না তা আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অগুরত্বপূর্ণ ( যদিও তা গুরত্বপূর্ণ হয়ও) ভেবে অ্যাভয়েড করি। কিন্তু রিফাত হাসানের নানা মতের সাথে এক মত হলেও যে যে বিষয় মনে হয়েছে অন্য রকম, সেই অন্য রকম বিষয়গুলোকে অ্যাভয়েড না করে গুরুত্ব সহকারে নিজের মত করে বুঝতে চেষ্টা করেছি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে অনেক লক্ষ্য করেছি, সহমত মূলক মতামত থেকে বিরোধ মত থেকে নিজের জানা বোঝাটা আরো পরিপূ‍‍র্ণ হয়েছে। ফলে, রিফাত ভায়ের সাথে ব্যক্তি সম্পর্কের বাইরে যোগাযোগ সর্বদা ছিলো। বা চেনাজানা কারো সাথে সম্পর্ক রক্ষার গুরুত্ব তিনি ইতোমধ্যে তৈরি করতে পেরছেন। এটা কম বড় কথা নয়।

সমাজ যাদের দ্বারা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শাসিত হয় তারা সমাজের ক্ষুদ্র একটা অংশ। বিরাট এটা অংশ সব কিছুর প্রতিনিধিত্ব করলেও তাদের কোন সন্মিলিত কন্ঠস্বর নাই। এরা সমাজের বিগ আদার। আমাদের সমাজের ভিতরে, আমরা এখানে যারা বসে আছি তারা আসলে মানে ঐ মানে বিগ আদারের প্রতিনিধি। আমাদের কথা ক্ষুদ্র, ক্ষমতাশালীরা শুনতে মানতে নারাজ। আমি বলছি না এই বিগ আদারের সব কথাই ঠিক। কিন্তু আদান প্রদানটা চিরতরে বন্ধ। শাসক গোষ্ঠি ঈশ্বরের মত সকল বিষয়ে মানুষের উপকারে নিবেদিত। ফলে, স্বর্গ থেকে ছিটকে পড়া আদম হাওয়ার সত্যিকার দুনিয়ার কোন বিষয় নিয়েই আমরা আর স্বর্গী‍য় দেবতারদের সাথে কথা বলতে পারছি না। কথা বললে সুবেহ সাদিকের আগ দিয়ে জল্লাদ বা মৃত্যুর দেবতা দরজায় কড়া নাড়ছে। তো এমন একটা পৌরাণিক বাস্তবতার ভেতর দিন যাইতছে আমাদের। যে বিগ আদারে কথা বলতেছিলাম, ঐ বিগ আদারের কণ্ঠস্বর যদি তৈরি হইতে চায়, তাইলে বলা যাইতে পারে যে রিফাত ভাই সেই বিগ আদারের একটা কণ্ঠস্বর, যিনি নানারকমভাবে আমাদের ভাবাইতে পারে। আমরা ভাববার জায়গা থেকে আরো একটু সামনে দেখতে পারি। মানে আর কীভাবে আরো বিস্তৃতভাবে চিন্তা করা যায়, সময়টাকে চেঞ্জ করা যায়, লাইফের অর্থ, অভিজ্ঞতাগুলা কীভাবে চেঞ্জ করা যায় এগুলোর একটা চিন্তাগত রিপ্রেচেনটেশন আছে তার লেখালেখিতে। যেমন এইযে এক্টিভিজের কথা উঠতেছে, সবাইতো আসলে এক্টিভিস্ট না। বাট সবাই ফিল করে। সেই ফিল করার জায়গাগুলাকেও আবার রিফাত ভাই উন্মোচন করতে পারে এইজন্য আমি তার, বলতে পারি আমি তার ফলোয়ার, তাকে ফলো করি, সে কি বলছে, দেখছে। আমি অনেকটা দর্শক। নিজের মতো করে একটা বুঝাবুঝির জায়গায় যেতে চাই আরকি তার সাথে। এক্ষেত্রে রিফাত ভাই সফলই বলবো। যেহেতু সে অনেক বড় একটা সময়ের সাথে ডিল করতেছে এবং খুব ভালোভাবেই ডিল করতে পারছে বলে মনে হয়।

রিফাত ভাইয়ের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাই।

আমি আমার বিরাট একটা দীর্ঘ কবিতার খুব সামান্য একটা অংশ বলি, যেহেতু কবিতাই লিখি। রিফাত ভাইও কবিতা লেখে। রিফাত ভাইয়ের জল্লাদখানায় বইসা লেখা কবিতা, বইটা আমি সংগ্রহ করছি, পড়ছি। পড়ার পরে আমার যেটা মনে হইছে, আমাদের এখানে তো আসলে কবিতার ভিতরে মেকি বিষয় থাকে। মানে কবিতার ফরম্যাটটা এরকম, এই শব্দ, এরকম সুন্দর ফুল, এরকম গাছপালা, পশুপাখি বসায় দিয়া কবিতার ডেলিভারি দেয়ার একটা বিষয় আছে আমাদের ভিতর, আমাদের অনেকের ভিতর আছে। কিন্তু রিফাত ভাইয়ের মধ্যে সেটা নাই। রিফাত ভাই যেটা ফিল করে, যেটা সে, সে যে জীবন যাপনটা করে আরকি, সমাজটাকে বা তার চারপাশটাকে যেভাবে দেখে সেই দেখাটাই কবিতায় লিখতে চায়। প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তা ও যাপন আলাদা আলাদা। কেউ যদি তার চিন্তাকে, যাপনকে নিজের কবিতায় তুলে আসতে চায় তবে কবিতার যে ফর্মেট আমরা তৈরি করেছি ঐতিহাসিক ভাবে তার অনেক কিছুই বাদ দিয়ে লিখতে বসতে হয়। আর রিফাত ভাই বাংলা ট্রেডিশনাল কবিতার সাথে একরকম ছেদ তৈরি করেছেন। এটা বড় বিষয়। কবিরা ঐতিহ্যের মায়া, নিজের থেকে নিজে বেরোতে না চাওয়া, নতুন রাস্তায় শহীদ হওয়ার রিস্ক নিতে চায় না। সেই হিসেবে আমার কাছে মনে হয়, রিফাত হাসানের কবিতার বোধবুদ্ধি সাহসিকতায় পরিপূর্ণ। মানে নিজের মত লিখতে চাওয়ার ও পারার সক্ষমতা ও সাহস তার আছে। সেই হিসেবে আমি গুরুত্বসহকারে তার কবিতা পড়ে থাকি। তো আমি কথা বেশী বাড়াবো না। সামান্যই বলবো। নিজের ‘ মানুষ এককী এক মিথ’ কবিতার বইয়ের একটা কবিতার সামন্য একটা অংশ পড়ি রিফাত ভাইয়ের উদ্দেশ্যে:

“ফুল, নাকি লরি—কে যে আজ
জ্বলে উঠবে সহসা রাজপথে,
অথবা বড় রাস্তার ধারে
দাঁড়ানো আতঙ্কবাদী এই কৃষ্ণচূড়া,
তার পাপড়ির ভেতরে লুকানো
আবরুখোলা ধাতুর পরাগধানী
সে খুলে দেখাবে আমাদের,
ফলের জৈব গ্রেনেড ফুটে যেতে পারে শাসকের সমাবেশে।
আজ ফুলও সন্দেহের তালিকায়
চলে গিয়েছে শাসকের কাছে—
এমনই এক সময় বইছে সহসা এখানে।‘’

থ্যাংকিউ, রিফাত ভাই। রিফাত ভাইয়ের উদ্দেশ্যে কবিতা পড়লাম। ধন্যবাদ।

মৃদুল মাহবুব, লেখক।

Leave the first comment