fbpx

The
Rifat Hasan
Website

রিফাত হাসানের
অফিসিয়াল সাইট

রিফাত হাসান সম্পর্কিত, সংস্কৃতি-উদ্যোগের আলাপ

তুহিন খান

চিন্তার পরিবনর্তনশীল মিডিয়মের যুগে রিফাত হাসান পাঠ

February 27, 2022   0 comments   10:56 am

যেমন, ‘৫ মে: বন্ধুত্ব, রাষ্ট্র ও মানুষ সম্পর্কের পুনর্বিবেচনা’। এই লেখায় উনি যুক্তি-তর্কের একটা ফ্রেমওয়ার্কে ওনার রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিষয়ক আইডিয়াগুলা জেনারেট।, করছেন। হেফাজত আন্দোলনের গোড়ার ভাবটি কেমন, তা নিয়া দুর্দান্ত কিছু পর্যালোচনা হাজির করছেন; হেফাজতের সাথে আওয়ামী গভমেন্টের বোঝাপড়ারে তিনি যেভাবে দেখছেন এখানে, তাতে ওনার লেখালেখিরে ‘আওয়ামী বিরোধিতা’ হিশাবে যারা দেখেন, তারা নিশ্চিত ফাঁপড়ে পড়বেন। এই লেখায় রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়া রিফাতের কিছু চিন্তা হাজির আছে। পুঁজিতান্ত্রিক বিকাশের হাত ধইরা তৈয়ার হওয়া আধুনিক সেক্যুলার স্টেটের বিভিন্ন ইডিওলজিকাল অ্যাপারেটাস, আইন এবং এর সাথে নাগরিকের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, একত্ববোধ ও আত্মরক্ষাবোধ থেকে জন্ম নেওয়া রাজনীতির স্রেফ ইডিওলজিতে পর্যবসিত ও অপচিত হওয়া— এসব নিয়া রিফাত হাসানের ক্রিটিকের ভাষাটা বেশ ইন্টারেস্টিং। রিফাতের আইন ও ক্ষমতা বিষয়ক ক্রিটিক কিছুটা হবসিয়ানও বটে; আধুনিক রাষ্ট্রের লেভিয়াথনি রুপ বারবার ওনার আলাপের বিষয় হইছে। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে রিফাতের ভোকাবুলারি হইল ‘গণযুদ্ধ’— যেটা একইসাথে এই যুদ্ধরে সর্বাত্মকভাবে ঔন করে, এবং যুদ্ধোত্তর জনবিচ্ছিন্ন সুশীল সমাজ, জাতিবাদি ডগমারে অপোজ করে। রিফাতের লেখালেখির একটা বড় অংশের বিষয়বস্তু ২০১৩-র দুইটা মুভমেন্ট। ১৩-র আগেপরে আমাদের জন্য সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের যেকোন নাগরিকের অধিকার প্রশ্ন। সেখানে যেমন জামাত-শিবির ছিল, তেমনি ছিল নাস্তিক-ব্লগার। এসব ইস্যুতে আমরা কী ভোকাবুলারিতে কথা বলব, বা বলা উচিত— সেই প্রক্রিয়াটা চলমান ছিল দীর্ঘদিন। যারা জনপরিসরে এসব…

Share

সবাইকে ধন্যবাদ। আসলে এখানে যখন আসলাম তখন ফার্স্টে ভাবছিলাম যে, ইনফরমাল আলাপের অবস্থা থাকবে আর কি। ঐটা হলেই বেটার হইত। এখন মাইক টাইক নিয়া একটা হুলুস্থুল কাণ্ড দেখতেছি।

যাই হোক, রিফাত ভাইয়ের জন্মদিন পালন করতে আইসা একটা ঘটনা মনে পড়ল। ইসমাইল ভাইয়ের সাথে একদিন একটা আড্ডায় বইসা ছিলাম। উনি বলতেছিলেন যে, আপনি চল্লিশের নীচে বয়স, এরকম একজন বিদেশি বুদ্ধিজীবির নাম বলেন। তো, আমি অনেক চিন্তাভাবনা করে দেখলাম যে, পাইতেছি না আসলে। চল্লিশের নীচে বুদ্ধিজীবি কে আছেন, বাইরের দেশে? তো, পরে উনি গুগল সার্চ করে কার কার জানি নাম দেখাইলেন। তো আমাদের দেশেও এই ব্যাপারগুলা আছে আর কি। এই যে ধরেন, এখন রিফাত ভাই তো চল্লিশের উপরে চইলা গেছে। তারপরও বয়সের হিশাবে ওনারে বুদ্ধিজীবি ধরা মুশকিলই হয়ে যায় আমাদের চালু সিস্টেমে। মানে উনি হইতেছে বা হবে এ রকম বুদ্ধিজীবী। আরো চুলটুল পাকলে বা আরো কিছু কাজটাজ করলে তখন যায়া বুদ্ধিজীবিতা হবে। আবার অ্যাকাডেমিশিয়ানও তো না উনি, সেটা আরেক ঝামেলা; অ্যাকাডেমিশিয়ান হইলে হয়ত আরেকটু তাড়াতাড়ি বুদ্ধিজীবী ব্যাপারটা হয়ে ওঠা যাইত। এইটা একটা ব্যাপার আরকি, মনে পড়ল হঠাৎ।

তো মাহবুব মোর্শেদ ভাই এই যে নিউ মিডিয়ার কথা বললেন, আমাদের সময়ে এটা একটা বড় ব্যাপার, অন্তত ট্রেন্ড চেঞ্জিং অর্থে। এখন আর বয়সের জন্য বইসা থাকা লাগতেছে না আর কি কারুর, বা উল্টায়ে বলেন, বয়েস দিয়াই বুদ্ধিজীবী হয়ে যাওয়া যাচ্ছে না। আপনার বয়স হবে, আপনি হইল গিয়া অনেকের সাথে মিশবেন টিশবেন, ছবি টবি তুলবেন, মেইনস্ট্রিম মিডিয়া একনলেজ করবে, দেন একটা বুদ্ধিজীবিতা। এই যে টপ টু বটম এপ্রোচ, এখন ঐটা তত কাজ করতেছে না। দেখা যাইতেছে যে, সবাই যার যার জায়গা থেকে কাজ করে; কে চিটাগং আছে, কে ঢাকা আছে, কে সিলেট আছে, এটা ম্যাটার করতেছে না অত। সবাই যার যার জায়গা থেকে যখন একটা ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতেছে, বিশ্লেষণ করতেছে, একটা ঘটনায় ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া করতেছে, ইভেন দেখা গেছে যে, কমেন্টেও ইন্টারেকশন করতেছে, কমেন্টবক্সে রিপ্লাই ইত্যাদি ইত্যাদি। তো সেগুলা একটা আর্কাইভের মতো হয়ে যাচ্ছে। এগুলো একধরণের আর্কাইভ তৈরী করতেছে মানুষের চিন্তার বা আমরা কীভাবে ভাবতেছি, চিন্তাগুলা কোনদিকে শেপ নিতাছে সেগুলার একটা আর্কাইভ তৈরী করতেছে। সেখান থেকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়াও ধরেন তাদের স্ট্রাটেজি চেঞ্জ করতেছে। একটা বটম টু টপ এপ্রোচ বলব আমি এইটারে।

রিফাত ভাইয়ের চিন্তা ও এক্টিভিজমের আলাপে, এই নিউ মিডিয়া একটা কী ফ্যাক্টর। ওনার সাথে আমার ফার্স্ট পরিচয়ের ব্যাপারটা বলি। কীভাবে উনারে চিনলাম এটা মনে পরতেছে না এই মুহূর্তে। কিন্তু যোগাযোগটা ছিল এই নিউ মিডিয়া সিস্টেমেরই অবদান। কোন একটা ইস্যুতে দেশের ‘চিন্তকসমাজ’ কী ভাবতেছে, এইটা পত্রিকা পইড়া জানা যাইত একদা। কিন্তু এখন তো আর ওই জিনিশ নাই, আগের মত। মানুশ বিশ্লেষণ পড়ে না বা খোঁজে না তা না। কিন্তু মিডিয়ম পাল্টাইছে, পাল্টাইছে এঙ্গেজমেন্টের ধরন। পত্রিকায় পালটা কলাম লেখার মত সুযোগ ও সুবিধা না থাকা লোকেরাও শেয়ার দিয়া ইন্টার অ্যাক্ট করতেছে, ক্যাপশনে বা অন্যত্র। এরকম কোন শেয়ার থেকেই ওনার সাথে পরিচয় হওয়ার কথা। কীভাবে, কোন লেখা থেকে বা কী সূত্রে, এইটা এই মুহূর্তে ঠিক মনে পড়তেছে না। সোশাল মিডিয়ার ভাস্ট ও মাল্টিলেয়ারড মেমোরি এর একটা কারণ হইতে পারে। আমি ব্লগের যুগে অনলাইনে ছিলাম না। তখন কোন স্যোশাল মিডিয়া বা কিছুই ব্যবহার করতাম না। ব্লগ আমলটা এই জেনারেশনের লেখা, চিন্তাপদ্ধতি, ভোকাবুলারি, ভাষিক ও ‘উন্নাসিক’ প্রবণতা ইত্যাদি বোঝার জন্য আমার গুরুত্বপূর্ণ মনে হইছে সবসময়। ফলে পরবর্তীতে ব্লগের নানান আলোচনা, আলাপ, তারপর তর্ক এগুলা আমি সার্চ দিয়া সার্চ দিয়া পড়তাম। এখন তো মনে হয় ব্লগট্লগও বন্ধ কইরা দিছে। আর লেখা পাওয়া যায়না ওভাবে। রিফাত হাসানেরও চিন্তাচর্চার একটা প্রধান প্লাটফর্ম ছিল এই ব্লগ, যেটা মাহবুব ভাইর আলাপে জানা গেল। রিফাত হাসান এবং ওনার জেনারেশনের লোকেদের চিন্তা বোঝার ক্ষেত্রে, আমার ধারণা, এই পরিবর্তিত মিডিয়মটা একটা গুরুত্বপূর্ণ টুল হইতে পারে।

রিফাত ভাইর সাথে ফেসবুকে যুক্ত আছি দীর্ঘদিন এবং উনার লেখাপত্র পড়ি। এর ভিতরে একবার চিটাগং গেছিলাম। সেটা সম্ভবত ২০১৭/১৮ তে হবে। তো ঐ সময় রিফাত ভাইয়ের সাথে দেখা হয়, উনার বাসায় যাই। বাসায় যাওয়ার পরে উনার সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয়। উনার একটা বই, দুইটা বই, না একটা বই, তখন উনার কাছ থেকে হাদিয়া পাই। তো পাওয়ার পরে যেটা হইল, দূর্ভাগ্যের ব্যাপারই বলা লাগবে। আমি ঐ রাত্রে ঢাকা ফেরার পরে বইটা হারায়ে গেছে। মানে, আমি ছিলাম টিএসসিতে সারারাত। বন্ধুবান্ধবদের সাথে একটু মওজ মস্তি করছি আর কি! তো মওজ মস্তি করার পরে দেখি যে, বইগুলা আর নাই। বই এবং আমার অনেকগুলা শিট ছিলো, সবই হারায় গেছে। কিন্তু এই কথাটা বলার একটা অর্থ বা কারণ এই যে, ভাবলে দেখি, রিফাত ভাইয়ের কোন বই আসলে ওভাবে পড়ি নাই। এই বইটা (সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি) হারায় গেলো, পড়তে পারলাম না পুরাটা। তারপরে জল্লাদ খানায় বইসা কবিতা পাঠ, যেটা উনার কবিতার বই বেরুলো, গত দুই মেলা আগে মনে হয়, সেটা কিছু পড়ছি। তারপরে এই সময়টি আপনি কিভাবে উদযাপন করবেন, এটা উনার বাসায় বইসা একটু দেখছিলাম বাট এটা পড়া হয়নাই। দেন একদম লাস্ট যেটা বের হইল (টেক্সট, কন্সপিরেসি ও রুপকথা), একটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার আছে এখানে, বানান থেকে রোমেল ভাইয়ের উদ্যোগে যে সাক্ষাৎকারটা নেওয়া হইছিল। তো ঐ উদ্যোগটার সাথে আমিও ছিলাম। যদিও রিফাত ভাইয়ের সেশনটায় আমি থাকতে পারি নাই। তো ঐটা পড়া আছে। স্টিল আশ্চর্যজনক ব্যাপার এইটা যে, ধরেন রিফাত ভাইয়ের কোন বই পড়ি নাই ঐ অর্থে, তারপরও উনার চিন্তার সাথে পরিচয় আছে; এবং আমি বলব, বেশ ভাল পরিচয়ই আছে। কারণ, ওনার সাইটে ওনার অনেকগুলা লেখা আছে; আর ফেসবুকেও তো পড়ছি অনেক লেখা। চিন্তার ধরন বা ভোকাবুলারিগুলা বুঝি। তো এইটা ইন্ডিকেটর যে আসলে কীভাবে চিন্তা হইতেছে এখন বা কীভাবে চিন্তা উৎপাদিত হইতেছে, বা চিন্তা কীভাবে মানুষ করতেছে, কীভাবে সেটা রিসিভড হইতেছে, ডিস্ট্রিবিউট হইতেছে। আমি যে কোন বই না পইড়াও উনার ব্যাপারে বক্তব্য দিতে দাঁড়াইতে পারতেছি এখানে, সেটাও এই নিউ মিডিয়া প্রযোজিত একটা ঘটনা এবং আই শুড সে, একটা মজার ঘটনা।

মাহবুব ভাই বলতেছিলেন যে, রিফাত হাসানের লেখা পড়ে উনারা ফার্স্টে ভাবছিলেন, এটা ফরহাদ মজহারের লেখা। কবি রওশন আরা মুক্তার ব্যাপারটাও বললেন মাহবুব ভাই। ‘ছদ্মনাম’ ফেনোমেনাটা আগেও ছিল। কিন্তু নিউ মিডিয়া বা,সোশাল মিডিয়ায় এই ফেনোমেনা যত ‘ইফেক্টিভ’ হয়ে উঠছে, মানুশের চিন্তা বা চিন্তাপদ্ধতি নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, সেটা একটা গুরুতর ব্যাপার। বাজারে এখন অনেক বই আছে, যেগুলাতে ফেসবুকের ফেক নিকটাই ইউজ করে অনেকে। রিফাত ভাইরে ফরহাদ মজহার ভাবা দিয়া আপনি ব্লগ আমলের কালচারাল ক্যাচাল এবং এর ভিতরে তৈয়ার হওয়া চিন্তার ধরনগুলা শনাক্ত করতে পারবেন। রিফাত হাসান নামে চিটাহংয়ের কোন রিয়েল ক্যারেক্টার এইগুলা লেখতেসেন, বা রওশন আরা মুক্তা নামের কোন রিয়েল ক্যারেক্টার কবিতা লেখতেসেন, এগুলা নিয়া মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যুগে অত অস্পষ্টতা থাকার সুযোগই ছিল না। এখন সে সুযোগ থাকতেসে, এবং এই থাকা চিন্তার সাথে ব্যক্তিবিশেষের সম্পর্করে এক ধরনের ডিস্টর্শনের মধ্যে ফেলে দিছে। ‘ডেথ অব অথর’র সবচাইতে ভাল এক্সাম্পল হইতে পারে এইটা।

যাহোক, আমি তখন বইসা ভাবতেছিলাম, যে এটা তো অনেক আগের কথা। তখন রিফাত ভাই কিভাবে লেখতেন এটা আমি ঠিক জানি না। মানে যেহেতু আমি পড়ি নাই তার ঐ সময়ের লেখা। বাট আমি উনার একদম আর্লি রাইটিংস এর ভিতরে যদি এটা ধরি, ঐ যে, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি, তাইলে আমার মনে হয় যে, ফরহাদ মহজহারের গদ্য আর রিফাত ভাইয়ের গদ্যে একটা দূরত্ব আছে। দূরত্বটা কি সেটাও একটু বলি, সেটা হইছে যেমন ধরেন, ফরহাদ মজহারের গদ্যে আপনি বড় বড় বাক্য পাবেন। মানে দেখবেন যে উনি পজ দিতেছেন কম, বাক্যগুলা ছোট ও সরল না। এবং ওনার প্রথম বই ‘প্রস্তাব’র পরে, ওনার চিন্তামূলক গদ্যভাষায় ‘লিটারারি টোন’টা কম। মানে চিন্তা করানোর জন্য লেখা যেহেতু, সেজন্য বড় বড় বাক্য লেখেন। একটু কমা দিয়া, দাঁড়ি দিয়া, তারপর টাইনা বাক্যটাকে একটু লম্বা করা, তার ভেতর চিন্তার হাজিরা তৈরি করা, এটা ওনার লেখায় আছে। সলিমুল্লাহ খানের লেখায়ও টু সাম এক্সটেন্ড এই ব্যাপারগুলা আছে। তো সে জায়গায় রিফাত ভাইয়ের গদ্যের স্টাইলটা একটু ভিন্ন। মানে উনার একটা বক্তব্যে উনি যেমন বলছেন যে উনি ফর্ম, বা কাঠামো বা ক্যাটেগরিরে এড়াইতে চান এই যে বা আর্টফর্মের ভেদরেখাগুলা মানেন না। তো সে জায়গায় উনি যখন গদ্য লিখতেছেন, তখন দেখা গেছে যে, একটা চিন্তামূলক গদ্য বা প্রবন্ধের মধ্যেই উনি ইঙ্গিতে আলাপ সারতেছেন, বা প্রশ্ন তুলতেছেন রুপকের আশ্রয়ে, একটা ছোট শ্লেষরেই বড় করে তুলতেছেন হয়ত একটা প্যারাজুড়ে, মনে হচ্ছে এগুলা ঠিক যেন চিন্তার উপাদান না, এগুলা লিটারেচারের উপাদান, হয়ত একটা কবিতার লাইন হইতে পারত এটা। ওনার ভঙ্গিমা বা ফর্মের মধ্যে একটা তন্ময় ভঙ্গির ভিতরে মন্ময় কোন জিনিশরে ধরার কসরত আছে। সেটা ওনার শক্তি না দুর্বলতা, তা নিয়া হয়ত আরো আলাপ চলতে পারে।

উনার যে লেখাটার কথা সালাউদ্দিন শুভ্র ভাই বলছেন, হেফাজতের ৫ই মে’র অবরোধ বা ছয়ই এপ্রিলের যে মার্চ, লংমার্চ, ঐ দিনটা নিয়া একটা লেখা আছে ওনার। কি জানি লেখার শিরোনাম, ‘ভ্রমণ’ শব্দটা আছে শিরোনামে। মানে ওদের রাজধানীর দিকে যাওয়ার এই ‘ভ্রমণ’টাকে উনি কিভাবে দেখতেছেন আর কি, সে জায়গা থেকে লেখা। ঐ লেখাটায় উনি মূলত চিন্তা করতে চাইতেছেন, বা লোকজনরে চিন্তা করাইতে চাইতেছেন যে, আসলে কীভাবে এই ব্যাপারটা দেখতে পারে মানুষ বা কীভাবে মানুষের দেখা উচিৎ। কিছু সাজেশন মেক করতে চাইতেছেন উনি, কিছু পর্যবেক্ষণ দিতে চাইতেছেন। কিন্তু হেফাজতের চিন্তার জায়গাগুলা নিয়া সরাসরি আলাপে যান নাই উনি ওই লেখায়, কারণ এতে লেখাটার উদ্দেশ্য ব্যাহত হইত। লেখাটার উদ্দেশ্য ছিল হেফাজতের এই লংমার্চরে একটা ফ্রিডম ও অধিকারের জায়গা থেকে দেখা। তো, উনি একটা ফিকশনের মতো করে ঐ ঘটনাটা লেখলেন; একটা মিছিলের ভেতরে যেসব মানুশ, তাদের মানবিক দিকটারে ফোকাস করলেন, একটা রোজনামচার মত। ওই লেখার গদ্যটা খুব দারুণ। তো যোগাযোগের এই যে ব্যাপারটা, যে কানেক্ট করানোর ব্যাপারটা, এটা উনার অলমোস্ট প্রায় মানে সবগুলা গদ্যের ভিতরে থাকে আর কি। যে আপনি, ইডিওলজিরে পাশ কাটায়া একটা চিন্তার সাথে এক্সচেইঞ্জ বা এঙ্গেজ করতে পারার মত একটা ভাষা কীভাবে আপনি তৈরি করতে পারেন, এটা উনার লেখার একটা দিক। আমার কাছে মনে হইছে।

তবে, রিফাত ভাইয়ের কিছু লেখা এই ক্যাটেগোরির বাইরে থাকবে। যেমন, ‘৫ মে: বন্ধুত্ব, রাষ্ট্র ও মানুষ সম্পর্কের পুনর্বিবেচনা’। এই লেখায় উনি যুক্তি-তর্কের একটা ফ্রেমওয়ার্কে ওনার রাষ্ট্র ও রাজনীতি বিষয়ক আইডিয়াগুলা জেনারেট।, করছেন। হেফাজত আন্দোলনের গোড়ার ভাবটি কেমন, তা নিয়া দুর্দান্ত কিছু পর্যালোচনা হাজির করছেন; হেফাজতের সাথে আওয়ামী গভমেন্টের বোঝাপড়ারে তিনি যেভাবে দেখছেন এখানে, তাতে ওনার লেখালেখিরে ‘আওয়ামী বিরোধিতা’ হিশাবে যারা দেখেন, তারা নিশ্চিত ফাঁপড়ে পড়বেন। এই লেখায় রাষ্ট্র ও রাজনীতি নিয়া রিফাতের কিছু চিন্তা হাজির আছে। পুঁজিতান্ত্রিক বিকাশের হাত ধইরা তৈয়ার হওয়া আধুনিক সেক্যুলার স্টেটের বিভিন্ন ইডিওলজিকাল অ্যাপারেটাস, আইন এবং এর সাথে নাগরিকের সম্পর্ক, বন্ধুত্ব, একত্ববোধ ও আত্মরক্ষাবোধ থেকে জন্ম নেওয়া রাজনীতির স্রেফ ইডিওলজিতে পর্যবসিত ও অপচিত হওয়া— এসব নিয়া রিফাত হাসানের ক্রিটিকের ভাষাটা বেশ ইন্টারেস্টিং। রিফাতের আইন ও ক্ষমতা বিষয়ক ক্রিটিক কিছুটা হবসিয়ানও বটে; আধুনিক রাষ্ট্রের লেভিয়াথনি রুপ বারবার ওনার আলাপের বিষয় হইছে। এছাড়া, মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে রিফাতের ভোকাবুলারি হইল ‘গণযুদ্ধ’— যেটা একইসাথে এই যুদ্ধরে সর্বাত্মকভাবে ঔন করে, এবং যুদ্ধোত্তর জনবিচ্ছিন্ন সুশীল সমাজ, জাতিবাদি ডগমারে অপোজ করে। রিফাতের লেখালেখির একটা বড় অংশের বিষয়বস্তু ২০১৩-র দুইটা মুভমেন্ট। ১৩-র আগেপরে আমাদের জন্য সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার ছিল নাগরিক অধিকারের জায়গা থেকে বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের যেকোন নাগরিকের অধিকার প্রশ্ন। সেখানে যেমন জামাত-শিবির ছিল, তেমনি ছিল নাস্তিক-ব্লগার। এসব ইস্যুতে আমরা কী ভোকাবুলারিতে কথা বলব, বা বলা উচিত— সেই প্রক্রিয়াটা চলমান ছিল দীর্ঘদিন। যারা জনপরিসরে এসব নিয়া আলাপের ভোকাবুলারি নির্মাণে সক্রিয় ছিলেন, আমি দাবি করব যে রিফাত হাসান তাদের একজন। এবং রিফাত হাসান অন্যান্যদের চাইতে তুলনামূলক বেশি জাজড/মিসজাজড হওয়ার ঝুঁকি নিয়াই এটা করছেন।

আরেকটা ব্যাপার হইল, রিফাত ভাই যখন একটা লেখা লেখতেছেন, সোশাল মিডিয়ায়, উনি খুব লং লেখা কম লেখেন। মানে অনেক লম্বা, দীর্ঘ এরকম লেখা স্যোশাল মিডিয়ায় কম লেখেন। তো, উনি আসলে যেটা চেষ্টা করেন, সেটা হইছে কিছু কোয়েশ্চন তৈরী করা। এই জায়গায় উনাকে অনেক আটকাইতে পারবেন আর কি, যে আপনি বললেন এই কথাটা, ঠিকাছে। কিন্তু এটার সমাধান কি আপনি বলেন। এরকম একটা কোয়েশ্চন আপনি করতে পারবেন, অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু উনি আসলে ঐ আলাপটাতে যান না। উনি যেটা করেন, যে ধরেন, একটা ঘটনা ঘটছে, সংবিধান, বা আইন নিয়া, বা ধরেন বিচারপতিরে নিয়া। রিফাত হাসান যেটা করেন সেটা হইছে যে, এই আইনের ভিতরে যেই ঝামেলার কারণে আসলে ঘটনাটা ঘটলো, সেই ঝামেলাটাকে কোশ্চেন করার ট্রাই করেন। এইটা ফিলোসফি বা ক্রিটিসিজমে ট্রেন্ড হিশাবে পুরাতন। কিন্তু রিফাত হাসানের ক্ষেত্রে এইটা বিশেষভাবে বলার কারণ ভিন্ন। মাহবুব ভাই যে এক্টিভিজম আর বুদ্ধিজীবিতার বড় তফাত দেখাইলেন, এক্টিভিস্টদের তুলাধুনা করলেন অনেক, এটা কি আমার কাছে অত পছন্দ হয় নাই। কিন্তু রিফাত ভাইয়ের যে চিন্তা চেতনার ধারা, সেটা অনেকটাই মাহবুব ভাইয়ের এই আলাপের সাথে মেলে। রিফাত ভাই মূলত কোয়েশ্চেন তৈরি করতে বেশি আগ্রহী। একটা জিনিস নিয়া যে, এক্টিভিজমে নাইমা যাওয়া, বা একটা জিনিস ঘটছে সেটা নিয়া সাথে সাথে কোন একটা হৈচৈ হাঙ্গামা তৈরি করা যে, আসো, সবাই মিলে যায়া অমুক করি, তমুক করি, অমুক ভাই ইত্যাদি, ইত্যাদি। এই জায়গা থেকে উনি একটু মানে ডিফারেন্ট রাখেন নিজেরে। ওনার আলাপের মধ্যে রেজিম বিরোধিতাও একটা সার্বিক বুদ্ধিবৃত্তিক ক্যাটেগোরি হিশাবে হাজির হয়, স্রেফ বিরোধিতা হিশাবেই না।

নিজের প্রথম বইয়ের ভূমিকার নাম দিছেন রিফাত ভাই ‘বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের রবীন্দ্রগ্রহণ’। রবিঠাকুরের লিটারারি বা কালচারাল ক্রিটিক অনেকে করছেন। অনেকে তার পলিটিকাল আইডিয়ার ক্রিটিক করছেন। বাঙলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে ঠাকুররে ইফেক্টিভলি গ্রহণই ডমিন্যান্ট আইডিয়া। ঠাকুরের একেশ্বরবাদ, এবং ধর্মীয় সিম্বল ও বার্তার সফল সেকুলারাইজেশন থেকে হিম্মত নিতে চাইছেন অনেকে। কিন্তু ষাটের দশকে এদেশে ঠাকুররে সামনে রেখে যে মুভমেন্ট হইল, তৎজাত ইডিওলজিগুলা পরবর্তীতে যে বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের অপ্রেসিভ ইডিওলজিকাল স্টেট অ্যাপারেটাস হয়ে উঠল, কালচার ও জাতিবাদের যেসব আইডিয়া দেশে বিপুল অপর তৈয়ার করল, তার সাপেক্ষে, এই বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের সাপেক্ষে, ঠাকুররে কী আমরা ভিন্নভাবে দেখতে পারি না? পারি। পারলেও, এইটা ঠিক মেইনস্ট্রিম চিন্তার ধারা না এদেশে। রিফাত তার ‘বাঙলাদেশ রাষ্ট্রের রবীন্দ্রগ্রহণ’ শিরোনামের মধ্যেই এ ব্যাপারে বেশ শক্ত কিছু পর্যালোচনা হাজির করছেন। রাজনীতিরে পেছন থেকে ফুয়েল দেয় যে কালচারাল ও সোশাল রাজনীতি, ডিস্কোর্স, সংজ্ঞায়ন ও অপরায়ন, এস্থেটিক পাটাতন— সেসবের সাপেক্ষে ঠাকুরের এই ধরনের পর্যালোচনা করছেন এই সময়ের আরেকজন চিন্তক রক মনু।

যাহোক, অন্য আলাপ করি। আমি অনেকদিন ধরে চিন্তা করতাম যে, রিফাত ভাই আসলে করেন কী? মানে উনি কি পেশায় বিলং করেন? উনার প্রফেশনটা কী? কারণ উনি তো অ্যাকাডেমিশিয়ান না। ওই অর্থে লিটারারি সার্কেলেরও লোক না। উনার বয়স এখন হলো গিয়ে চল্লিশ আপ। তো এই বয়সে আইসাও আসলে এইভাবে বুদ্ধিজীবিতা বা লেখালেখির কাজ চালায়ে যাওয়া, এসবের সাথে থাকা, কোন উপলক্ষ ছাড়াই, এই যে যে বিষয়বস্তু নিয়া উনি কথা বলতেছেন সে বিষয়গুলা নিয়ে কথা বলা, এটা সৌভাগ্য বলি বা দূর্ভাগ্য বলি, সবার তো আসলে হয় না লংরানে। তো আমি চিন্তা করতেছিলাম যে, রিফাত ভাই আসলে করে কী? উনার প্রফেশনটা কী? এই অর্থে প্রফেশনটা ভাবতেছিলাম, যে এই ধরনের এক্টিভিজম চালায়া যাওয়ার জন্যে অবশ্য মানুষের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা দরকার। তো, আমার ধারণা, সেটা রিফাত ভাইয়ের আছে কোন একভাবে। দ্যান হলো গিয়ে, আরো একটা জিনিস দরকার, সেটা হইছে একটা পলেটিক্যাল, কি বলে এটাকে, একটা সাপোর্ট সিস্টেম ও দরকার মানুষের, কথা বলার জন্যে। নাইলে কথাটা বলবেন কীভাবে? জোরটা কই পাবেন? তো রিফাত হাসান বা অন্য আরো অনেকের ক্ষেত্রে সেই জিনিসগুলা কি? এটা নিয়ে আমি অনেক চিন্তা করছি একটা টাইমে। কারণ আমি মনে করি, যারা এখন তরুণ আছেন, মানে যারা চিন্তা-ভাবনার লাইনে আছেন, মানে এটা তো একটা লাইন আসলে, চিন্তাভাবনার লাইনটা একটা লাইনই। মানে আমি যদি একদম র অর্থে বলি, আপনি যদি মুচির কাছে যান তাইলে জুতা বানানো শিখতে পারবেন, আপনি হলো গিয়া যে নৌকা বানায় তার কাছে যায়া নৌকা বানানো শিখতে পারবেন, ঠিক সেই রকমই চিন্তাও একটা লাইন, একটা কাজ। আমরা যারা কমবেশি এই লাইনে আছি, তারা জানি যে, আমরা এভাবেই হয়ত জিনিসগুলা শিখছি আরকি। এই প্রথমে আসছি, আইসা অমুক ভাইয়ের সাথে একদিন, তমুক ভাইয়ের সাথে আরেকদিন, এভাবে আস্তে আস্তে একটা পরিচয়ের ভিতর থেকে আমাদের চিন্তাভাবনাগুলা গ্রো করে। আবার ইন বিল্ট আর্জ তো থাকেই, কোন কোন ক্ষেত্রে সহবত আর্জ তৈরিও করে। তো আমি মনে করি যে, এই জিনিসগুলা নিয়ে সবার চিন্তা করা দরকার যে, লং টার্মে আপনি কীভাবে আসলে আপনার বুদ্ধিজীবিতার লাইনে থাকতে পারবেন। সে ব্যাপারগুলা নিয়ে আপনার চিন্তা করা দরকার। নাইলে দেখা যাবে যে, আমাদের দেশে, শর্টটার্ম ‘বুদ্ধিজীবি’ তৈরী হইতেছে এখন দেদার (তার একটা মূল্যও হয়ত আছে), কিন্তু লংটার্মে তারা কীভাবে বুদ্ধিজীবিতা চালায়ে যাবে এ ব্যাপারগুলা নিয়ে কনশাস না থাকার কারণে দেখা যায় যে, বুদ্ধিজীবিতা একটা পর্যায়ে যায়া থাইমা যায়। তো আমার মনে হয় যে, এই জিনিসগুলাও রিফাত ভাইয়ের কাছ থেকে আমাদের শেখা দরকার। এবং রাইসু ভাই বা ফরহাদ ভাইর কাছ থেকেও অবশ্যই। যে কীভাবে আসলে আপনি, আপনার বয়স হয়া যাইতেছে ধরেন যে ৫০, আপনার বয়স চল্লিশ আপ, স্টিল আপনি কিভাবে, আপনার সমসাময়িক জামানা বা তার আগের জামানা, আপনার পরের জামানা, এই যে জেনারেশনগুলা, এদের সাথে আপনি কীভাবে লিংক আপ করতেছেন, কি ভাষায় লিংক আপ করতেছেন, কি কি শর্তের কারণে আপনি কাজগুলা করতে পারতেছেন, সেই জায়গাগুলা আমার মনে হয় যে, একটা প্রাক্টিক্যাল জ্ঞান আর কি, যেটা আমরা রিফাত ভাইয়ের কাছ থেকে এবং উনার আরো বন্ধু যারা আছেন উনাদের জেনারেশনের, তাদের কাছ থেকে, আমার মনে হয় যে, আমরা নিতে পারি আর কি। তো যাই হোক, এই হলো গিয়ে একটা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিলাম, জানিনা, কার কেমন লাগলো, তো সবাই, রিফাত ভাইকে আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা, এবং শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি এখানে।

তুহিন খান, লেখক, অনুবাদক।

Leave the first comment