‘বন্ধুত্ব মানে হইলো বন্ধের মুক্তি’ এই আলাপ দিয়েই সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির অবজেক্ট এন্ড ওয়ে’রে একটা ফ্রেম করা যায়। সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিজুড়ে এই আলাপের একটা ইন্টারেস্টিং নির্মাণও লক্ষ্য করা যায়। সম্পর্ক, বন্ধুত্ব কিংবা রাজনীতি যাই বলেন এসব তো ব্যক্তি, ধর্ম আর রাষ্ট্রকে নিয়েই, ফলে রিফাত হাসান এ জায়গায় যুগান্তকারী কাজ করেছেন।
গৎবাঁধা তত্ত্বীয় আবহের বাইরে গিয়ে তিনি যেটা করেছেন— পটেনশিয়াল স্টেজ থেকে টেনে রাষ্ট্রের ক্রিটিকাল সিচুয়েশনগুলোর সামনে আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর এটা করতে গিয়ে তিনি করেছেন যেটা, ব্যক্তি, ধর্ম আর রাষ্ট্রের সম্পর্ক এবং তার পরিধিরে আগে নাঙ্গা করেছেন। এতে রাষ্ট্রের সেনসিটিভ ইস্যুগুলোকে নিয়ে আলাপে জড়াতে কোনো ধরনের হীনাবস্থা থাকেনা। ব্যক্তি, ধর্ম আর রাষ্ট্রের গ্রে-এরিয়া এবং লুপহোলগুলোতে টর্চ করার মাধ্যমে রাষ্ট্র, প্রগতিশীল কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর অপরায়নের যে রাজনীতি সেই চর্চা এবং সম্ভাবনাকে তিনি জোরেশোরে ধাক্কা দিয়েছেন। ফলে এই বোঝাপড়া নিয়ে যখন আপনি ধর্মীয় রাজনীতি, শাপলা-শাহবাগ, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল কিংবা স্পর্শকাতর জায়গাগুলোকে পাঠ করতে যান তখন নিঃসঙ্কোচে সত্যরে আবিষ্কার করতে পারেন।
বিশেষ করে আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের হেজিমোনিয়াল সোর্স তালাশ করলে তিনটা ডগমা চোখে পড়ে; ব্যক্তি, ধর্ম আর রাষ্ট্র। কখনও ব্যক্তি, কখনও ধর্ম, কখনও রাষ্ট্রের দোহাই দিয়ে কর্তৃত্ববাদী সরকার কিংবা প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতি পপুলার হয়েছে এখানে। ফলে ব্যক্তি-ধর্ম-রাষ্ট্র পরস্পরের সহমৌলিক না হয়ে একটা চির বৈরি মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পরস্পর বিপরীতমুখী অবস্থান নিয়ে আছে। রিফাত হাসান এই জায়গায় ব্যক্তি-ধর্ম ও রাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতির সম্ভাবনা ও শৃঙ্খলার একটা ক্রিটিকাল পাঠ হাজির করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি’ মুলত আমাদের ভিতরে থাকা জল্পনা, রহস্য ও চিন্তার পাজলগুলোরে খোলাসা করে, মানে অবমুক্ত চিন্তার জট খোলার কাজ করে।
আমাদের পলিটিকাল হিস্ট্রিতে শাপলা-শাহবাগ একটা নাজুক মুহূর্তই বটে। পরিবর্তনশীল বিশ্বব্যবস্থা, ওয়ার অন টেররের হাওয়া কর্তৃত্ববাদী রেজিমগুলোর লব্ধপ্রতিষ্ঠার অনুকূলে সহায়ক হয়েছিল, এর সরাসরি ফায়দা তুলেছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রও। সরকার ক্ষমতাকে দীর্ঘমেয়াদীকরণ প্রকল্পের আওতায় ইন্সটিটিউট এবং পাবলিক মিডিয়াগুলো অধিগ্রহনের মাধ্যমে যে কৃত্রিম যুদ্ধাবস্থা তৈরি করেছিল সেসময় তার সরাসরি ভিক্টিম হয়েছিল বিরোধিরা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে একটা অর্গানাইজড এডভার্সারিয়াল ইন্ডাস্ট্রি সর্বোতভাবে উইচ হান্টিং এ নেমেছিল যেখানে আইন এবং সংবিধানের কোনো বালাই ছিলোনা। এক যুগ আগের সেই নাজুক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে রিফাত হাসান তার বুদ্ধিবৃত্তিক দূরদর্শিতার সাক্ষর রেখেছেন; ভেড়ার পালের মতো স্রোতে গা ভাসান নাই।
কমন ফেনোমেনন থাকতেই পারে। শাহবাগ তো আলাপের একটা অনিবার্য বিষয়বস্তু। তাছাড়া এই কেতাবে সেসব বিষয়ের আলাপ এসেছে যেগুলো নিয়ে বুদ্ধিজীবিরা সচরাচর আলাপে জড়ান না। বা জড়ালেও ডিপে যেতে চান না। এছাড়া ধর্মরাষ্ট্র, ধর্মীয় রাজনীতি, ভাষ্কর্য বিতর্ক, জুরিস্টোক্রেসি, জুডিশিয়াল ক্রাইম, মুক্ত গণমাধ্যম সহ বিস্তর বিষয়ের আলাপ এসেছে যার পর্যালোচনা এই ক্ষুদ্র লেখায় হাজির করা প্রায়ই অসম্ভব।
আনন্দের ব্যাপার হলো, রিফাত হাসানকে পড়ার পূর্বেই উনার সাথে আমার পরিচয় ঘটে। পরিচয়ের সুবাদে যেটা হইল সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিরে বুঝার একটা পূর্বজ্ঞান আগে থেকে পেয়ে যাই। রিফাত হাসানকে প্রথম চিনি সোশ্যাল মিডিয়া ট্যাগিংয়ের বদৌলতে। এইটা খুব খারাপ ব্যাপার যে সোস্যাল মিডিয়া ‘ব্যক্তি’ সম্পর্কে অনেস্ট আইডিয়া দেয়না, একটা শ্যাডো দেয় মাত্র। এই শ্যাডো পরবর্তীতে ম্যাজ তৈরি করে। ফলে রিফাত হাসানের সাথে সরাসরি বাতচিত একটা দারুণ ব্যাপার হলো।
খাঁন আয়্যুব, লেখক।