fbpx
Blogs

রিফাত হাসান

ক্যান অরুন্ধতি স্পিক?

March 6, 2019   0 comments   10:38 pm

অরুন্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি কি ধর্মপ্রবক্তা হিশেবে অরুন্ধতিরে শুনতে যান?

Share

What matters is what Kashmiris want, and how to arrive at that consensus in the most peaceful, democratic and informed way possible. (Azadi: Arundhati Roy)

দুই হাজার উনিশ সালে অরুন্ধতি রায়ের বাংলাদেশ সফররে কেন্দ্র কইরা এই আলাপ তুলেছিলাম। সেই সময়, আমার এই আলাপরে অরুন্ধতির বন্ধুরা নিন্দা, আবার কেউ কেউ বন্দনা ঠাউরেছেন। বন্দনা ও নিন্দা, আমার উভয়ে আপত্তি নেই।

অরুন্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আপনি কি ধর্মপ্রবক্তা হিশেবে অরুন্ধতিরে শুনতে যান?

মনে হয় না। তাহলে কেন অরুন্ধতির ক্রিটিক করা গুনাহ? আমি এই ক্রেজি অরুন্ধতিভক্তদের আত্মবিশ্বাসহীন ও ভণ্ড বইলা পাঠ করি।

কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে অরুন্ধতি আর আমার লড়াই একই। তাই অরুন্ধতি গুরুত্বপূর্ণ, অরুন্ধতির ক্রিটিকও।

‘বুর্জোয়া’, ‘পাতিবুর্জোয়া’ এইসব মুখস্ত পাতিবামপন্থি রেথরিকে আমার আস্থা নেই।

দেখা যাইতেছে, অরুন্ধতি ইস্যুতে বাম, পাতিবাম, ন্যাশনালিস্ট, আওয়ামীলীগ, এনার্কিস্ট, ইসলামিস্ট সবাই এই এক মুখস্ত রেথরিকেই অরুন্ধতিরে নিন্দা করতেছেন।

এই রেথরিকগুলো খেয়াল কইরেন। উনাদের দীনতা টের পাবেন।

লেখকের চাইতেও অরুন্ধতি একটিভিস্ট, তাই অরুন্ধতি স্পষ্ট। অরুন্ধতির অবস্থানরে খুব বৈপ্লবিক কওয়া যায় না, কিন্তু তার লিবারাল পলিটিক্যাল স্ট্যান্ডপয়েন্টরেও এই ভক্তদের প্রায় কেউই সাবস্ক্রাইব করেন না, যদ্দুর দেখা যায়। কিন্তু ‘অরুন্ধতি ভক্ত’। এই ভক্তিরে প্রশ্ন করবেন না কেন?

বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট রেজিমরে সাবস্ক্রাইব কইরাও অরুন্ধতিবন্দনা করা যায়, যদিও ফ্যাসিস্ট রেজিম অরুন্ধতিরে জায়গা দিতে গড়িমসি করেছে প্রচুর। এর কারণ তার একটিভিজম। আরো স্পষ্ট কইরা বললে, শহীদুল আলমের মুক্তি চেয়ে তার বিবৃতি ও চিঠি, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর ছিলো।

বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট রেজিমরে সাবস্ক্রাইব কইরাও অরুন্ধতিবন্দনা করা যায়, যদিও ফ্যাসিস্ট রেজিম অরুন্ধতিরে জায়গা দিতে গড়িমসি করেছে প্রচুর। এর কারণ তার একটিভিজম। আরো স্পষ্ট কইরা বললে, শহীদুল আলমের মুক্তি চেয়ে তার বিবৃতি ও চিঠি, যা সরকারের জন্য বিব্রতকর ছিলো।

কিন্তু দেখেন, আপনি শাহবাগে বইসা ফাঁসির জয়গান গাইতেছেন, আর অরুন্ধতি আফজল গুরুর ফাঁসির বিরুদ্ধে কথা বলতেছেন ইন্ডিয়াতে বইসা। আপনার মত ভালগার জাতীয়তাবাদী আর ‘দেশপ্রেম ব্যবসায়ী’ না অরুন্ধতি। তো, আফজল গুরুরে নিয়া অরুন্ধতির অবস্থানরে আপনি নিতে পারেন না, কিন্তু আইকন হিশেবে অরুন্ধতিরে নিতে আপনার আপত্তি নেই। কেন?

আপনার রাজনীতি ও ভক্তি স্পষ্ট তো?

নাইন ইলেভেন ও তার প্রতিশোধে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা নিয়া অরুন্ধতির ক্রিটিকগুলো বা কাশ্মির নিয়া অরুন্ধতি ধরনের যে কোন লিবারাল ও বুদ্ধিবৃত্তিক অবস্থানরেও ‘জঙ্গি’ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী বইলা মনে করেন অরুন্ধতির এই লোকাল ভক্তদের বড় অংশ, কাশ্মীরে ইন্ডিয়ান ইউনিয়নের আধিপত্যবাদ ও বৈষম্যের সাথে কৌশলগত বন্ধুত্বের সুরে। কাশ্মীরের স্বাধীনতা প্রশ্নরে স্রেফ মৌলবাদ দিয়া দেখতে পছন্দ করেন।

আদালত অবমাননা ও আদালতের অভিজাততন্ত্র (জুরিস্টোক্রেসি) নিয়া অরুন্ধতির আওয়াজরে আপনি কীভাবে দেখেন? দেখা যাচ্ছে, এই আপনারাই বাংলাদেশে একদা আদালতের মাস্তানতন্ত্রের সবচেয়ে বড় লাঠিয়াল ও এডভোকেট ছিলেন ও মাহমুদুর রহমানের কনটেম্পটের সাজা নিয়া উৎফুল্ল ছিলেন।

নাইন ইলেভেনের ঘটনায় অরুন্ধতি দেখেন ‘অসীম ন্যায়বিচারের বীজগণিত’ আর আপনি তো কেবল ‘জঙ্গি’ দেখেন। আর অরুন্ধতিতে প্রেম।

দেখা যাচ্ছে, আপনি শুধু তার ইমেইজরে বাউ করেন। আইকন।

অরুন্ধতি বর্ণে খ্রীষ্টান। ভাল ইংরেজিতে কথা কন ও লেখেন। আধুনিক মহাভারতের লোক। তাইতেই কি আপনার ভক্তি? কারণ, এমনকি ফটোগ্রাফার শহিদুল আলমরেও আপনি নিতে পারেন না। কারণ সে আপনার বোধগম্য ভাষায় আপনার পছন্দের রেজিমের সমালোচনা করেছে।

কাশ্মীর প্রশ্নে অরুন্ধতির বক্তব্য, একটি পত্রিকার কোট, ওদেরও কথা কইতে দিতে হবে। অরুন্ধতি ‘মোস্ট পিসফুল, ডেমোক্রেটিক এবং স্বচ্ছ পথে (most peaceful, democratic and informed way possible) কাশ্মীরের আজাদী নিয়া আলাপ ও সমাধান চান।

কথা কওয়ার স্বাধীনতা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন ব্যাপার। এইটা লিবারাল আদর্শবাদ। এই লিবারালিজমও আমাদের দরকার। খুবই জরুরি আলাপ তো। তাই রাষ্ট্রেরও দরকার বুদ্ধিজীবী। তাই অরুন্ধতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কোনটা লিবারালিজম, কোনটা আজাদি, আর কোনটা এলিটিজম তা জেনে রাইখাই আপনার আগ্রহরে বাছবিচার করা দরকার।

অরুন্ধতির আজাদি কোন আজাদি?

লিবারাল আর গণতন্ত্রচর্চার আন্দোলন/তৎপরতা আর স্বাধীনতা আন্দোলনরে আলাদা কইরা পড়ার, দেখবার ব্যাপার আছে। একাত্তরে শেখ মুজিবের কথা কওয়ার, ক্ষমতা হস্তান্তরের অধিকারের প্রশ্নে পাকিস্তানের সংহতি নিয়া দুশ্চিন্তাকারীদের বিবৃতি পাওয়া যায়। কথা কওয়ার অধিকার অনেকটা এরকমই।

ভারতের বাংলাদেশ নীতি বা সীমান্তে বিএসএফের খুনোখুনি নিয়ে অরুন্ধতির অবস্থান জানতে পারা যায় না তেমন। এমন কি বাংলাদেশে আইসাও। কেন?

কলকাতার বাঙালি লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মত অরুন্ধতিও নিশ্চয় বলবেন না যে, এইসব রাজনৈতিক ব্যাপার, কথা কওয়া বারণ।

চট্টগ্রামে, এক অনুষ্ঠানে, কলকাতার শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়রে কওয়া হইছিল, যে সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশ আসছেন, তাতে হাজার হাজার বাংলাদেশীর রক্ত লাইগা আছে। আর আপনি মিষ্টি মিষ্টি কথা কইবেন, আর তার কথা আসলে বলবেন, রাজরাজড়ার ব্যাপার, তা কীভাবে হয়? কেন আপনি ইন্ডিয়ারে বাংলাদেশের সীমান্তহত্যা নিয়ে কথা কইতে পারেন না? অরুন্ধতি পাবলিক ইন্টালেকচুয়াল বটেন। একটিভিস্টও। শীর্ষেন্দুর মত গোবেচারা সাহিত্যিক নন।

তাহলে কেন এইসব প্রশ্ন হাজির করব না? কেন জানতে চাইব না, ক্যান অরুন্ধতি স্পিক? আপনার অরুন্ধতি কি কথা কইতে সক্ষম?

পুনমুদ্রিত। লেখকের টেক্সট, কন্সপিরেসি ও রূপকথা বহি থেকে। পৃষ্ঠা: ১৮৮। দুয়েন্দে পাবলিকেশন্স। প্রথম প্রকাশ: ২৫ মার্চ, ২০২১।

Leave the first comment