Blogs

রিফাত হাসান

বন্ধুত্ব নিয়া জরুরি এলান

March 5, 2013   0 comments   12:53 am
সলিমুল্লাহ খান, চট্টগ্রাম। ফটো: রিফাত হাসান। জানুয়ারি ১৮, ২০১৩

এইসব ভণিতা। আসল আলাপ হলো, আমার বন্ধুর সংখ্যা কমতেছে আবার বাড়তেছে। বাড়তেছে, কারণ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিই আমার কাজ। আবার কমতেছেও। যেমন, সম্প্রতি ফেসবুকে সলিমুল্লাহ খান নামের একজন লেখক ও বুদ্ধিজীবী আমারে ব্লক করেন। আমি সলিমুল্লাহ খানসহ সবার লেখালেখি পাঠ করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক। বর্তমান নোটটা এই গণতান্ত্রিক পাঠের অভিজ্ঞান।

Share

হিংস্র পশু ও ইনসানরূপী পশু (beast and unjust men) থিকা আত্মরক্ষার তাগিদেই রাজনৈতিকতার (আসাবিয়াত) জন্ম। কথাটা পণ্ডিত ইবনে খলদুন এর। জর্মন পণ্ডিত কার্ল স্মিথ এইটারে বলতেছেন, শত্রু মিত্রের বিভাজন জ্ঞান। আমি বলি, বন্ধুত্ব দিয়েই রাজনৈতিকতার শুরু। তাই সবার আগে, বন্ধুত্বটারেই পরিস্কার করা জরুরী।

এইসব ভণিতা। আসল আলাপ হলো, আমার বন্ধুর সংখ্যা কমতেছে আবার বাড়তেছে। বাড়তেছে, কারণ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিই আমার কাজ। আবার কমতেছেও। যেমন, সম্প্রতি ফেসবুকে সলিমুল্লাহ খান নামের একজন লেখক ও বুদ্ধিজীবী আমারে ব্লক করেন। আমি সলিমুল্লাহ খানসহ সবার লেখালেখি পাঠ করার ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক। বর্তমান নোটটা এই গণতান্ত্রিক পাঠের অভিজ্ঞান।

গুরুগম্ভির আলাপ হিশেবে যাতে না নেন, আগে বলে দেই, এইটারে আপনারা স্যাটায়ার হিশেবেও পাঠ করতে পারেন, অথবা সিরিয়াস হিশেবে। এইটা আপনার গণতন্ত্র। সিরিয়াস নয়, কারণ ফেসবুকে এইসব বন্ধুত্বের ঘনঘটা নেহাত বাজারি, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। এইটা বিষয় হিশেবে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। কিন্তু আমি এই আলাপে বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুত্বের সমস্যা নিয়া আলাপ করতে চাহি। তাই খান সাহেবের বন্ধুত্বের দোহাই প্রাসঙ্গিক, আলাপে আসতে পারে। উনি আমাদের তরুণদের একটি অংশের প্রতিনিধিত্বশীল বুদ্ধিজীবী।

২.

উপরে দোহাই দিলাম। আলাপের এ অংশে, খান সাহেব যে কেহ একজন। এই ভাবে ভাবতে সমস্যা নেই। এইটুকুতেই আমাদের আজকের আলাপ চালানো যায়। ধরা যাক, উনার নাম, মিষ্টার ক্ষ। খান সাহেবরে মি. সলিমুল্লাহ খান নামে এই পর্বের আলাপে আর দরকার নেই। উনি একটি ঘটনা হিশেবে এসেছিলেন। এখন উনার জাগায় কোন এক মিষ্টার ক্ষ বা যদু বা মধু নামে আলাপ চালানো যায়। ব্যক্তিরে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার লঘুত্ব এড়াতে।

যে কোন একাত্তরের আগ পর্যন্তই রাষ্ট্র।

সত্যি কথা হল, এই মধু সাহেব আমারে আর দেখিতেও চাহেন না, নিজেরে আমার কাছ থেকে পর্দা-পুশিদায় রাখতে চান। তাই আমি ব্লকড। ব্লক্ড হবার এই অবশ্যাম্ভাবি ফলাফল ফেসবুক ব্যবহারকারী মাত্রেই জানবেন, আমাকে আর তফসির করে বুঝাতে হবে না, আশা করি। এইটাতে আমি খুশি হইতে পারি। কারণ, বন্ধু এবং শত্রু স্পষ্ট হওয়ার ব্যাপার আছে, যেইটা আমি শুরুতেই বলেছিলাম, রাজনৈতিকতার শুরুর নোক্তা। মি. মধু নিজের বন্ধুত্ব বা রাজনীতি স্পষ্ট করেছেন।

মধু সাহেব আমারে শত্রু ভাবেন, এইটা বুঝে নিতে পাইরা আমি আনন্দিত হলাম। কারণ শত্রুর শত্রু হিশেবে স্বীকৃতি পাওয়াটা আনন্দের বৈকি। মানে, আমি আমার রাজনীতি স্পষ্ট করতে পারলাম। তাই মধু বা ক্ষ সাহেব আমারে শত্রু বইলাই মেনে নিলেন। আমাদের মধ্যে আর কোন বন্ধু বন্ধু খেলা নাহি। এইটাতো আনন্দেরই।

দ্বিতীয়তঃ আমি আরো বুঝতে পারলাম, উনি আমারে মাঠে রাইখা তৎপরতা চালাইতে স্বস্থি বোধ করেন না। এবং আমারে মোকাবেলা করতে চাহেন না। যাহা চাহেন, তাহাই করিয়াছেন। মানে, নিষিদ্ধ।

এইটারে আমরা ফ্যাসিস্ট আচরণ কইতেছি রাজনীতির বেলায়, যেমন আপনারা যখন জামাতরে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা না কইরা নিষিদ্ধ এবং হত্যা করতে চাইতেছেন।

উনি সেই দলেই আছেন, যেই দলে থাইকা আপনারা ক্রমাগত জামাত নিষিদ্ধ এবং হত্যার প্রস্তাব ও আয়োজনগুলোরে সমর্থন করতেছেন। উনার এই দল পছন্দের ব্যাপারটা স্পষ্ট হইল। ফেসবুক উনারে সেই অপশনও দিছে। ফেসবহির এই বিধিবদ্ধ সংবিধান তাহাই, যাহা আমরা রাষ্ট্রে সংবিধান বইলা পুজো কইরা থাকি এবং যুগে যুগে যদু মধু সাহেবদের সুবিধামত পাল্টাতে পছন্দ করি। এইটাতে উনার কোন ভণ্ডামি নাই।

তৃতীয়তঃ উনার আর একটা অভণ্ডামি হল, উনি আমারে এমন কোন শর্ত দেন নাই যে, আপনি অমুকের সঙ্গ ছাড়েন, নইলে আমি কিন্তু যামুগা। উনি কোন ঘোষণা ছাড়াই চইলা গেছেন। মানে, উনি বুইঝা নিছেন, লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন। আমার ধর্ম আমার, তোমার ধর্ম তোমার। বিএনপিরে যেমন, আপনেরা বহুবার জামাতের সঙ্গ ছাইড়া খেলায় নামার জন্য আজান দিছেন, বা বিএনপি যেমন আপনাদিগকে এসলাম বিরোধীদের সঙ্গ ছাইড়া পলিটিকসে নামার আহ্বান জানাইতেছে, উনি এমন তরো ভণ্ডামি করতেছেন না। উনি সরাসরি বলতেছেন, খেলুম না। আমি একা একা খেলুম, আমার নিজের সাথে আমার নিজের জীবনের মধু।

৩.

পবিত্র কুরআনের আয়াত, লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন। আমি এই আয়াতটা মানি। মানে, তোমার খেলা তুমি খেলো, আমার খেলা আমি। এখানে আপোষ নেই। শুধু শেখ হাসিনা নয়, তালাল আসাদও এইটার অনুবাদ করেছেন ধর্মনিরপেক্ষতা। দুটোই ভুল অনুবাদ। সত্য মর্মকথাটি হল, তোমার রাজনীতির সাথে আমার রাজনীতির কোন আপোষ নেই, তোমার ও আমার পথ সম্পূর্ণ আলাদা। তাই বন্ধুত্ব স্পষ্ট করো।

৪.

আমি বন্ধুত্ব স্পষ্ট করার কথা বলি। কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক পরিস্থিতির কথাও কহি। রাষ্ট্রে, আলাপে ও কারবারে। তাই, শত্রুর সাথে, ভিন্ন মতের সাথে বসবাস করতে, আমি আপত্তি করি না। যতক্ষণ না একাত্তর আসে। যে কোন একাত্তরের আগ পর্যন্তই রাষ্ট্র। কিন্তু তার আগে বা পরে যে বা যাহারা আলাপের এই গণতান্ত্রিক পরিস্তিতি চাহেন না, রাষ্ট্রের দালাল ও লেফটেনেন্ট জেনারেল হয়ে আমার কথা কওয়ার কণ্ঠ গুম কইরা দিতে চান, তারা তো চুড়ান্ত শত্রুই। এই চুড়ান্ত শত্রুর সাথে সহাবস্থান সম্ভব নহে, ব্যাকরণগত কারণেই। লড়াই অনিবার্য। এইটা যারা ফেসবহিতে আমার বন্ধু হইতে চাহেন, উড়াল বার্তা পাঠান প্রতিদিন, তাদের জন্য জরুরী এলান। এলাহি ভরসা।

পুরনো দিনের গান। সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে সংকলিত। ব্যবহৃত ছবি: সলিমুল্লাহ খান, চট্টগ্রাম। রিফাত হাসানের তোলা। জানুয়ারি ১৮, ২০১৩

Leave the first comment