Interviews

রিফাত হাসান

মানতিকুত তায়ের: ইন্টারভিউ উইথ বানান

July 6, 2020   2 comments   1:36 am
রিফাত হাসান, Rifat Hasan

কবিতা জিনিসটার ব্যাপারে আমাদের এখানে অনেকরকম স্বপ্ন-কল্পনা আছে। ধরেন, একটা ফর্ম কল্পনা করে নিই, যে, আমরা এখানে না যাওয়া পর্যন্ত কবিতা হবে না। তো, মানুষের, মানে, মানুষ যদি কোন একটা গন্তব্যে পৌঁছে যায়, সেইটারে আর কবিতা বলা যাবে না। আপনি দেখবেন, এটা একটা বিখ্যাত, ফরিদুদ্দিন আত্তারের একটা বিখ্যাত বই আছে, মানতিকুত তায়ের, তো এইটা হচ্ছে একটা জার্নি, অনেকগুলা পাখির একটা জার্নি, তো তারা যখন তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়, তারা আসলে এই জার্নির কথাই ভুলে যায়। তাদের তখন যেটা হয়, সেটা হচ্ছে, তারা টের পায় যে -তারা নিজেরাই সী-মোরগ! তারা যায়ই কিন্তু সি-মোরগের জন্য। সি-মোরগের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু ওরা ঐ পাখির কথা ভাবে না আর, শেষ পর্যন্ত। এটা তাদের নিজেদের ভেতরে জিনিসটা এসে গেছে তখন। মানে, গন্তব্য নিয়ে যখন আপনার ভেতরে কোনরকম দ্বিধা থাকবে না, আপনার সাধনা থাকবে না কোন কিছু নিয়ে, তখন আপনি কবিতা কেন লিখবেন?

Share

ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২০, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্র, পরিবাগ, ঢাকা। বানানের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কে এম রাকিব, রায়ান আহমেদ অর্ক, মিলু হাসান, শোয়েব আব্দুল্লাহ, আব্দুল্লাহ কাফি ও মোহাম্মদ রোমেল। সাক্ষাৎকার ট্রান্সক্রাইব করেছেন ইবনে শামস।

রাকিব: আমাদের সাথে আজকে আছেন রিফাত হাসান, কবি, বুদ্ধিজীবি, ক্রিটিক । তার সাথে আমরা আজকে নানান বিষয়ে কথা বলবো। আমি এখানে রাকিব আছি, এখানে আছে অর্ক ভাই, শোয়েব আব্দুল্লাহ, মিলু হাসান। ক্যামেরার পেছনে আছেন মোহাম্মেদ রোমেল এবং কাফি ভাই। আমরা তাহলে আড্ডা শুরু করি। রিফাত ভাই, এবার যেহেতু বইমেলা আসছে, বইমেলায় আপনার বই আসছে। আমরা বইমেলার বই থেকেই আলাপ করি।

রিহা: শিওর

রাকিব: রিফাত ভাই, বইমেলায় যে আপনার বইটা আসছে, বইটার ব্যাপারে যদি কিছু বলেন। কী ধরনের বই? নামটা তো হচ্ছে জল্লাদখানায় বইসা..

রিহা: ‘কবিতা পাঠ’। এইটা একটা কবিতার বই, এটা তো বুঝাই যাচ্ছে।

রাকিব : কবিতার বইয়ের নাম সাধারণত ‘কবিতা পাঠ’, আবার ‘বইসা’, এইটার ব্যাপারে একটু বলেন। নামটা এরকম কেন?

রিহা: নামটা এরকম বলতে, আসলে ওখানে আমার একটা কবিতাই আছে, কবিতার নাম ‘কনসেনসাস’। ওখানে একটা লাইনই আছে, ‘জল্লাদখানায় বইসা কবিতা পাঠ’। ঐ লাইনটা থেকে তুলে দিলাম।

রাকিব: বাট, বইসা কেন?

রিহা: বসার মানে হচ্ছে যে, একটা পরিস্থিতির ভেতরে আমরা থাকি। জল্লাদখানার ভেতরে বইসা থাকা মানে হচ্ছে যে, এই পরিস্থিতির একেবারে ভেতরে আমরা আছি। এর ভেতরে থেকে আমি বসে বসে কবিতা পাঠ করছি। এটা কেমন পরিস্থিতি? ধরেন, আপনার সামনে কসাইখানা। এখানে মাংস কাটা হচ্ছে। এমন কি আপনাকেও কাটা হচ্ছে, আপনার মাংস কাটা হচ্ছে। এইটা অনুভব করতে পারছেন। আপনি পেইনটা অনুভব করতে পারছেন, চিৎকার করে উঠতে হচ্ছে আপনাকে কখনো। তার ভেতরে বইসা বইসা আপনি কবিতা পড়ছেন। দিস ইজ।

অর্ক: কিন্তু জল্লাদখানায় তো ধরেন, শরীর যেগুলা, সেগুলা তো কথা বলে না। এইরকম একটা জায়গা থিকা বলা নাকি? যে জল্লাদখানা মানে এরকম একটা বদ্ধ সিচুয়েশন, যেখানে আসলে আপনি ফ্রি-লি মুভ করতে পারছেন না-

রাকিব: কবিতা হইতে হবে কেন? আরো ইমারজেন্স, আর্জেন্ট এরকম কাজের মধ্যে কবিতা কেন, জল্লাদখানা বইসা কবিতাই কেন পাঠ করছেন?

রিহা: কবিতা পাঠের ঘটনা হচ্ছে, ধরেন, কবিতা পাঠ ব্যাপারটা কীরকম? কবিতা পাঠ ব্যাপারটার দুইটা দিক আছে। একটা দিক হচ্ছে, আমাদের সমাজে যারা কবিতা লেখেন এবং বা যারা লেখক, লে-খক, ছোট করে বলেন আপনি, খুব মোলায়েম করে বলবেন, তাহলে বুঝবেন যে, এইটা একটা ক্লাস-

রাকিব: স্মল লেটারে।

রিহা: মানে, লেখক ব্যাপারটারে যখন খুব মোলায়েম করে বলবেন, একটা পুতুপুতু ব্যাপার হাজির হবে আপনার সামনে। যে ব্যাপার কবিতা লিখতে পছন্দ করে, ফুল পাখি লতাপাতা দেখতে পছন্দ করে, ভাবতে পছন্দ করে।

রাকিব: পাঞ্জাবি পরা থাকতে পারে, কাঁধে ব্যাগ ঝুলানো-

রিহা: হাঁ। ঝোলা থাকতে পারে।

রাকিব: চুল বড়

রিহা: এইধরনের একটা ব্যাপার। এটা হচ্ছে একটা ব্যাপার। আবার একই সাথে কবিতা পড়া একটা বৈপ্লবিক ব্যপারও। আমি মনে করি। দুইটাই আমার ভেতরে আছে।

রাকিব: যেমন?

রিহা: বৈপ্লবিক ব্যাপার হচ্ছে যে, যে কোন শিল্পের সাধনা হচ্ছে, আসলে অধরার সাধনা। যা নেই, যে অবস্থা আপনার ভেতরে হাজির নেই, তার জন্যে সাধনা করা। বিপ্লবও তাই। তো, মানুষ অনেকভাবে সাধনাটা করে। সে হয়তো সে পথটা বুঝতে পারেনা। তার ওয়েটা সে কীভাবে চাচ্ছে সেটা বুঝতে পারেনা। প্রত্যেক মানুষ কোন না কোনভাবে একটা অধরার সাধনার ভেতরে আছে। কখনো সে কবিতা লেখে, কখনো সে শিল্প করে, গান গায়, কখনো সে রাস্তায় দাঁড়িয়ে মিছিল করে। খুব একটা পার্থক্য নাই। আপনি এগুলাকে খুব বেশি আলাদা কইরা লোকেইট করতে পারবেন না।

রাকিব: আপনি এই দুইটাকে কম্পেয়ার করতেছেন এটা অনেক বেশী ইয়া হয়ে যাচ্ছে না? যেমন আপনি যখন বিপ্লবের কথা বললেন, বিপ্লবে তো একটা আর্থসামাজিক, সোশাল স্ট্রাকচারকে নতুনভাবে বিল্ড করার একটা গোল থাকে। একদম অধরা না, তাই না? কবিতার ক্ষেত্রে কিন্তু সেরকম স্পেসিফিক কোন গোল নাই যে আমি এই জিনিস চাচ্ছি।

রিহা: না

রাকিব: ধরেন স্পেসিফিক এখন বাংলাদেশে চাচ্ছে যে, এখানে জন, কি বলে গনতন্ত্র এখানে নাই, ভোট দেয়ার অধিকার নাই। যদি বলি, স্পেসিফিক একটা মানুষের নীড কী? এখানে জনসম্মতি থাকবে। একটা নির্বাচিত সরকার থাকবে। এই ব্যাপার তো? সংসদীয় গনতন্ত্র। এরকম বলা যায়। কিন্তু কবিতার ক্ষেত্রে তো এ ধরনের স্পেসিফিক সাধারণত কিছু থাকেনা।

রিহা: না, এটা হচ্ছে যে, আপনার প্রত্যেকটা সাধনার এক একটা আলাদা চরিত্র আছে। প্রত্যেক মানুষের পথ, সে নিজের জন্যে যে পথটা বেছে নেয়, এবং যেভাবে ভাবে, সে ভাবনার তো ধরেন, একটা ক্রণলজি আছে। আমি কীভাবে ভাবছি, কীভাবে কাজ করছি, কীভাবে কাজ করতে চাই, কোন পথে চলতে চাই। এখন প্রত্যেকটা জিনিসের আলাদা আলাদা চরিত্র থাকা স্বত্ত্বেও কিন্তু, ধরেন, বিপ্লব যেমন, বিপ্লব আসলে কখনোই শেষ হয়না। আপনি যখন বিপ্লব বলেন, ধরেন, বাংলাদেশে বা দুনিয়াতে কোন না কোনভাবে সর্বহারার একনায়কতন্ত্র কায়েম হয়ে গেলো অথবা একটা খেলাফত কায়েম হয়ে গেলো যেটা ইসলামিস্টরা বলে, ওরা যেটা মনে করে। শেষ হয় না এটা। দেখা গেলো, সে একনায়কতন্ত্রের ভেতরে ঝামেলা আছে। আরেকটা দল, তার বিরুদ্ধে প্রতিবিপ্লব করতে হচ্ছে তাকে। খেলাফতের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে একজনকে বলতে হচ্ছে, আপনি উমর যদি আমাকে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে আপনাকে আমরা এখন কতল করবো। প্রশ্নটা হচ্ছে যে, বিপ্লব কখনো থেমে থাকে না। মানে, সবাই আমাদের এখানে-

রাকিব: একই কথা কি সবকিছুর জন্যে প্রযোজ্য? মানুষ মারা যাবে, এই ধরণের দুই একটা বাক্য ছাড়া, দুনিয়ার সব কিছুই তো থেমে থাকেনা, চলতেই থাকে।

রিহা: হুম

রাকিব: তাহলে এখানে আপনি এটাকে, মানে কবিতাকে, স্পেসিফিকেলি বিপ্লবের সাথে কেন রিলেট করছেন? অন্যান্য কিছুর সাথেও করেন।

রিহা: কবিতার সাথে বিপ্লবের আলাদাভাবে রিলেট করছি না। বিপ্লবেরও একটা রিলেশন আছে, সেটা বলছি। আলাদাভাবে রিলেট করছি না, কারণ আলাদাভাবে রিলেট করার কিছু নেই।

অর্ক: আচ্ছা, এই জিনিশটা নিয়া আমার একটা প্রশ্ন আছে। এইরকম একটা ডিসকোর্স চালু আছে যে, জল্লাদখানায়, মানে জল্লাদখানারে যদি আমি রাষ্ট্র কল্পনা করি। রাষ্ট্রটারে যদি আমি বলি যে, জল্লাদখানার দশায় আছে, তো সেখানে আসলে কবিতা বা প্রেম এগুলা হয়না। কারণ রাষ্ট্র সেই সিচুয়েশনই রাখেনা।

রিহা: হু

অর্ক: একজন আর্টিস্টের জন্যে যে, সে যে একধরনের একটা সভারেন আর্ট তৈরী করবে বা একজন লেখক একটা লেখা লিখবে, সেই অবস্থা তো নেই। কিন্তু সেখানে, যেমন বামদের মধ্যে এমন চালু আছে যে, কবিতা এখন হয়ে উঠবে না। কবিতা হয়ে উঠবে তখনই যখন আরকি তাদের যে ইয়াটা হয়ে যাবে,

রিহা: হু

অর্ক: আপনি সেখানে উল্টা একটা জিনিস হাজির করতেছেন যে, না, জল্লাদখানায় বইসাই কবিতা পাঠ। এটা আমি দেখতেছি যে, ঐটারই একটা বিপরীত একটা ইয়া কি তৈরী করার চেষ্টা কি?

রিহা: আপনি দুইটা খুব সিগনিফিকেন্ট কথা বলেছেন, একটা সিগনিফিকেন্ট কথা হচ্ছে সভারেন আর্ট। হু। সভারেন আর্ট, তার মানে বলতে চাচ্ছেন, আর্টের একটা সভারেনটি সম্ভব? চিন্তা হিশেবে অসাধারণ। আমি এই জায়গা থেকেই কথা বলি মূলত। আমি যখন সম্পর্ক, বন্ধুত্ব এবং রাজনীতি নিয়ে কথা বলি, সেটা এই অর্থে বলি যে, মানুষের একটা সার্বভৌমত্ত্ব সম্ভব।

অর্ক: আচ্ছা

রিহা: যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, সে খুবই স্বাধীনভাবে, দাস অবস্থা থেকে উত্তরিত হয়ে, সে স্বাধীনভাবে বাছবিচার করতে পারবে। এটাই হচ্ছে পলিটিক্যাল হওয়া মানুষের, আমি মনে করি।

অর্ক: আচ্ছা

রিহা: এটা হচ্ছে একটা ঘটনা। আরেকটা জিনিস হচ্ছে যে, কবিতা জিনিসটার ব্যাপারে আমাদের এখানে অনেকরকম স্বপ্ন-কল্পনা আছে। ধরেন, একটা ফর্ম কল্পনা করে নিই, যে, আমরা এখানে না যাওয়া পর্যন্ত কবিতা হবে না। তো, মানুষের, মানে, মানুষ যদি কোন একটা গন্তব্যে পৌঁছে যায়, সেইটারে আর কবিতা বলা যাবে না। আপনি দেখবেন, এটা একটা বিখ্যাত, ফরিদুদ্দিন আত্তারের একটা বিখ্যাত বই আছে, মানতিকুত তায়ের, তো এইটা হচ্ছে একটা জার্নি, অনেকগুলা পাখির একটা জার্নি, তো তারা যখন তাদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়, তারা আসলে এই জার্নির কথাই ভুলে যায়। তাদের তখন যেটা হয়, সেটা হচ্ছে, তারা টের পায় যে -তারা নিজেরাই সী-মোরগ! তারা যায়ই কিন্তু সি-মোরগের জন্য। সি-মোরগের সাথে দেখা করার জন্য। কিন্তু ওরা ঐ পাখির কথা ভাবে না আর, শেষ পর্যন্ত। এটা তাদের নিজেদের ভেতরে জিনিসটা এসে গেছে তখন। মানে, গন্তব্য নিয়ে যখন আপনার ভেতরে কোনরকম দ্বিধা থাকবে না, আপনার সাধনা থাকবে না কোন কিছু নিয়ে, তখন আপনি কবিতা কেন লিখবেন? তখন তো বেহেশতে থাকবেন আপনি।

রাকিব: মানে, চিন্তার জায়গা থেকে একধরনের এবসলিউট জায়গায় চলে গেলে-

রিহা: তখন আর কিছু না। তখন হচ্ছে যে, হয় আপনি, ধরেন ফানা ফিল্লা, ফানা ফিল্লা তো না, ফানা ফিল্লা তো এটা দুনিয়াবি ব্যাপার। মানে, আমরা যদি, ধরেন, সুফিদের জার্নিগুলার কথাও চিন্তা করি, এটা তো সবগুলা হচ্ছে যে, আপনি দুনিয়ায় থেকে, দুনিয়ায় বসে যে সাধনা করছেন, তার বিভিন্ন রকম ফর্ম। কিন্তু যখন, আপনি বেহেশতে চলে গেলেন, সেটার ব্যাপারে তো আমরা আসলে কিছুই বলতে পারবো না। বেহেশতে চলে যাওয়া মানে হচ্ছে, ওখানে আপনার দুনিয়ায় যা যা চিন্তা করছেন, করতেন, এসব চিন্তা তো ওখানে থাকবে না।

রাকিব: মানে কনসেপ্ট হিসেবে-

রিহা: একটা টোটাল স্বর্গরাজ্য।

রাকিব: দুনিয়ায় যা যা আছে, এটার এক্সট্রিম অপজিট একটা, এক্সট্রিম ভার্সন-

রিহা: একজাক্টলি। দুনিয়াতে কখনো কোন টোটাল স্বর্গরাজ্য বলে কিছু থাকবে না, এজন্য, কবিতা আসলে, শেষ পর্যন্ত ওরা যেটা কষ্টকল্পনা করে, যে ওখানে গিয়ে কবিতা লিখতে হবে, তার মানে কবিতা কখনোই তাদের হবে না।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এমন কি কোন ফর্ম হবে না। কোন ফর্মকে যদি আপনি এবসলিউট চিন্তা করেন, কোন ফর্মকে, কোন ফর্মই শেষ পর্যন্ত হবে না। কিন্তু ফর্মের ব্যাপারটা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কোন কিছুই এবসলিউট না, ফর্ম হচ্ছে খুব ভঙ্গুর জিনিস। যেমন আমি, মানে আমার পরিচিত এক, মানে বাংলাদেশে একজন বিখ্যাত গল্পকার বা উপন্যাস লিখেন-

বানান : নাম নিশ্চয় বলবেন না?

রিহা: উহম, বলা যায়, মঈনুল আহসান সাবের।

বানান : আচ্ছা আচ্ছা।

রিহা: তিনি, কোথাও কোন একসময় লিখলেন, যে, তার মনে হলো, বাংলাদেশে সবাই গল্পকার হইতে চায়, উপন্যাসিক হইতে চায়। মানে, এই ভাবনাটা শেষ পর্যন্ত, মনে হয় যে, খুব একটা কৈশোরিক ভাবনা, কোন ফর্ম নিয়ে। ফর্ম নিয়ে কৈশোরিক ভাবনা এই অর্থে, যে, কোন একটা ফর্মে একজন লিখছে, আরেকজন লিখবে না, এই ভাবনাটা। মানে, তারে উপন্যাসিক হইতে হবে, তারে কবিতা হইতে হবে, কবি হইতে হবে, তারে গল্পকার হইতে হবে, এর বাইরে তার কোন সম্ভাবনা নেই। মানে, এটা হচ্ছে যে, সে কবি হয়ে উঠলো, সে উপন্যাসিক হয়ে উঠলো। এই যে হয়ে ওঠা, এটা একটা ফর্মকে সে পুজা করছে, পৌত্তলিকভাবে। এই ফর্মের বাইরে, সে মানুষের আর কোন সম্ভাবনাই দেখে না। লেখকের কথা বলছি না, মানুষের আর কোন সম্ভাবনাই দেখে না। লেখক তো হচ্ছে যে আরো-

ছবি: আব্দুল্লাহ কাফি। বানানের সাথে আলাপ শেষে, সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রের বাইরে, রাতে।

অর্ক: আচ্ছা, কিন্তু আমার একটা প্রশ্ন, আপনি যখন বলতেছেন যে, দুনিয়ার মধ্যে, আপনার, যেটা বলতেছেন যে, এবসলিউটের হাজির দেখা যাইতেছে না বা এবসলিউট হওয়া যাইতেছে না, তাইলে, আমার যেইটা হিশাব, সেটা হচ্ছে যে, যদি খোদারে একটা এবসলিউট ধইরা নিই, খোদার আইডিয়া বা খোদাকেই এবসলিউট ধইরা নিই, তাইলে, একমাত্র তার পক্ষেই সভারেন হওয়া সম্ভব।

রিহা: হুম

অর্ক: তার সৃষ্টি কোন কিছুই, আসলে যেহেতু ডিপনডেন্ট একটা দশায় আছে, ফলে তার চিন্তা কাঠামো কিংবা তার আর্ট বলেন কোনটাই আসলে সভারেন পর্যায়ে পৌঁছায় না।

রিহা: হুম

অর্ক: মানে, এই ব্যাপারটা আপনি কীভাবে-

রাকিব: আমি একটা ইনটারেপ্ট করবো?

রিহা: হুম হুম

রাকিব: সেটা হচ্ছে যে, আলাপটা কি এরকম হচ্ছে যে, আর্ট সভারেন হইতে পারে কিনা, এই আলাপ? আমার তো মনে হয় না যে, কেউ হচ্ছে ঐ যে, কলাকৈবল্যবাদী, বা আর্টস্ ফর আর্টস সেইক- এরকম তো নানান ইয়ে আছে। কেউ বলতেছে, পুরোপুরি সমস্ত কবিতাই আর্ট, পলিটিক্যাল, আবার কেউ বলেতেছে, কেউ মনে হয়না দাবি করতেছে, আর্ট একটা সভারেন বিষয়। এরকম আমি আগে কোথাও দেখি নাই।

রিহা: না, আমি কিন্তু এই জায়গায় কথা বলেছি। সেজন্য হচ্ছে যে-

অর্ক : হ্যা, হ্যা এটা নিয়ে কথা বলা হইছে-

রিহা: সভারেন্টির যেটা পপুলার ধারণা, আমাদের একাডেমিয়ায় যেটা আলাপ হয়, সেটা হচ্ছে যে, পিউরলি রাষ্ট্রকেন্দ্রিক এখন পর্যন্ত, বা ব্যক্তিকেন্দ্রিক। কিন্তু আপনারা যদি কেউ সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি পড়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন, এটার আমি ডিটেইল আলাপ করার চেষ্টা করেছি। যে, মানে, পপুলার সভারেন্টি আর আমি সভারেন্টিকে যে অর্থে ব্যবহার করতে চাইলাম এখানে, সেটার আলোচনা। সেটা হচ্ছে যে, মানুষের একটা দাস অবস্থা থাকে, একদম দাস অবস্থা, যেটাকে আমাদের কোরান শরীফে যেটাকে বলেছে হচ্ছে, ‘নফসুল আম্মারা’। মানে, যেখানে আপনি, একটা মানুষ এবং পশুর কোন পার্থক্য থাকে না। মানে, আপনার, আপনার পাশের জন সম্পর্কে, অপর সম্পর্কে কোন সম্বিত থাকে না। আপনি একটা পশুর অবস্থায় থাকেন। এবং এই অবস্থা থেকে উত্তরণ যেখানে হয়, সেটার নাম হচ্ছে ‘নাফসে লাওয়ামা’। নাফসে লাওয়ামা মানে হচ্ছে যে, আপনি আপনার ‘অপর’ সম্পর্কে সচেতন হয়ে কাজ করবেন। এটা হচ্ছে নাফসে লাওয়ামা। এখন, অপর সম্পর্কে সম্বিত হওয়ার মানেটা কী? আমি বলি যে, এটাকে পলিটিক্যাল হওয়া। তো, পলিটিক্যাল হওয়ার অর্থটা কী? পলিটিক্যাল হওয়ার অর্থটা হচ্ছে যে, এখানে, কোরআন শরীফের ভার্স থেকে বুঝায়ে বলি একটু। কোরআন শরীফে বলা হয় যে, মানুষকে পৃথিবীতে আল্লাহ খলিফা হিশেবে পাঠাইছেন। এই খলিফা হিশেবে পাঠানোর মানেটা কী? তো, আমার কাছে, খেলাফতের অর্থটা হচ্ছে যে, সভারেন হওয়া।

অর্ক: মানে খেলাফতের-

রিহা: মানে, খেলাফতের অর্থটাই হচ্ছে সভারেন হওয়া। এখন, এই খেলাফতের অর্থটা কীভাবে সভারেন হওয়া আমি বুঝি? সেটা হচ্ছে, আপনার, দাসত্ব থেকে মুক্তি। মানে, আপনার দাস অবস্থা থেকে মুক্ত হয়ে, স্বাধীনভাবে বাছবিচার করার ক্ষমতা থাকবে তখন।

অর্ক: আচ্ছা।

রিহা: আপনার যখন স্বাধীনভাবে বাছবিচার করার ক্ষমতা থাকবে না, কখনো রাষ্ট্রীয় দাস থাকবেন, কখনো আরেকটা ইমেজের দাস থাকবেন, অন্যসব দাসত্ব থেকে বিদায় নিয়ে, আপনি, যখন পুরোপুরি সভারেন হতে না পারবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি তো স্বাধীন না। আমি সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে বলছি যে, এই সভারেন অবস্থা থেকে মানুষের বন্ধুত্ব শুরু হয়। এটাই হচ্ছে সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও রাজনীতির মূল কথা।

অর্ক: মানে, খেলাফতে যাওয়ার পরে, নাকি আপনার এই সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি-

রিহা: মানে খেলাফত জিনিসটা আমি যেখান থেকে আলাপ করছি, সেটা কোন আসলে, কোন একটা সাম্রাজ্য বা রাষ্ট্র বা এরকম কোন সংগঠন না। এটা হচ্ছে মানুষের একটা অবস্থা।

অর্ক: আচ্ছা আচ্ছা-

রিহা: এটা হচ্ছে মানুষের জার্নির একটা অবস্থা। যে অবস্থায় দাঁড়িয়ে, আপনি স্বাধীনভাবে বাছবিচার করতে সক্ষম হবেন। ধরেন, আমি একদম কোরআন শরীফ থেকে ধরেন, ধর্মীয় পরিভাষা ব্যবহার করেই বলি, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আপনি মুক্ত থাকলেন। মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে বাছবিচার-

রাকিব: বাট, এটাকে আপনি খেলাফত কেন বলতেছেন?

রিহা: এটাকে খেলাফত বলছি, কারণ হচ্ছে, মানে, এটা কোরআন শরীফের ভেতরেই আছে, মানে বলা হইছে এরকম, রসুলল্লাহ (সাঃ) কে জিগ্যেস করছে লোকে, ইয়া রাসুলুল্লাহ, মানুষের জীবনটা কি? তখন তাকে বলা হইছে, তুমি তাদেরকে বলে দাও, এটা হচ্ছে আল্লাহর আদেশ, আমার আদেশ। রুহটা কী? সেটা হচ্ছে আমার আদেশ, জীবন না, জীবন না, রুহটা কী? এটা হচ্ছে আমার আদেশ। তো, আপনি আমার এই আলাপটাকে কোনভাবে, ধরেন, মানে আপনি একভাবে প্রশ্ন করতে পারেন, তাইলে আপনি কোরানের শরণ নিলেন কেন এই আলাপটা করার জন্য-

রাকিব: না, না, ঐটা নিয়ে আমাদের কোন কোয়াশ্চেন নেই।

রিহা: না না, কেন করছি সেটার কথা বলছি। কোরআন শরীফে ‘আমার আদেশ’ যেটা বলা হচ্ছে, এটাকে আমরা বলি, বা আমি বলি হচ্ছে যে, ‘বিবেক’। মানুষের ভেতরে যেটা বিবেক, যে বিবেক কখনো, দুনিয়াতে কখনো কোন নবী রাসুল না থাকলেও, আল্লাহ যেটা আদেশ দিয়েছেন, সেটা মানুষের মনে থাকতো, মানুষের রুহটা থাকতো। সেটাই হচ্ছে বিবেক। এই বিবেকটা হচ্ছে খুবই সভারেন একটা জিনিস।

অর্ক: কিন্তু বিবেকটা তো-

রিহা: এবং মানুষকে যেভাবে পাঠাইছে, আল্লাহ, সেটা হচ্ছে, এই সভারেন অবস্থা দিয়ে মানুষকে পাঠাইছে। এবং পরে বলা হচ্ছে যে, মানুষজন দুনিয়াতে এসে তার সভারেনটি হারায়।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এটা হচ্ছে, দুনিয়াতে, তার প্রতিবেশ তার চিন্তাভাবনা চেঞ্জ করে, এটা হাদিসে আছে, অর্থটা এরকম যে, আমি মানুষকে দুনিয়াতে তার ফিতরতের উপর পাঠিয়েছি। দুনিয়াতে এসে কেউ কখনো ইহুদি হয়, কেউ নাসারা হয়, কেউ আরেকটি হয় এরকম।

রাকিব: এবং সে চিন্তাভাবনার দিক থেকে যখন স্বাধীন হয়, তখন আপনি খলিফা হিশেবে না, খেলাফতের জায়গাটা ঐ অর্থে-

রিহা: হাঁ এই অর্থে বলছি।

অর্ক: কিন্তু বাংলায় যদি খেয়াল করেন ওয়ার্ডটা, স্বাধীন, মানে নিজের অধীন, তাইলে তো আর ইংলিশের যে ফ্রিডম, এটার যে একটা বাংলা করে স্বাধীন, এটার মধ্যেই তো আমার মনে হয় যে, কিছু ভুল আছে। কারণ হচ্ছে যে, যদি নিজেরই অধীন থাকে, তাহলে সে আবার কীভাবে মুক্ত? এবং সে তো একটা যেকোন দশাতেই, দুনিয়াতে সে কোন একটা টাইম, কনটেক্সট, বা ইয়া দ্বারা সেও আবদ্ধ। যেমন আমি, এই দেয়ালের ঐ পাশে কি হচ্ছে তা জানিনা, অথবা অনুমান করতে পারি।

রিহা: হুম

অর্ক: সো আমি তো প্রতিনিয়ত যে কোন টাইম, কনটেক্সট বা স্পেস দ্বারা সীমাবদ্ধ। এবং তারপরও বলতেছি কি, আমি স্বাধীন হইতে চাই, কিন্তু স্বাধীন ওয়ার্ডটার মধ্যে আছে যে, স্ব- অধীন, মানে নিজের অধীন, তাহলে নিজের অধীন থেইকা আবার কীভাবে বলতেছি যে, সভারেন।

রিহা: না না, ঠিক আছে, এখানে ঘটনা হচ্ছে যে, আমি যে স্বাধীনতার কথা বলছি, এটা শুধু নিজের অধীন থাকা না-

বানান : আচ্ছা

রিহা: হ্যা, এটা হচ্ছে মুক্ত থাকা। এটাকে বন্ধের মুক্তি বলছি আমি।

বানান : আচ্ছা

রিহা: মানে, এখান থেকে বন্ধের মুক্তি ঘটবে। বন্ধুত্ব শব্দের অর্থ আমি বলছি, বন্ধের মুক্তি। তারপর হচ্ছে যে, শব্দের তো একটা ঝামেলা আছেই। সেজন্য বারবার আমাদেরকে নোকতা দিয়ে কথা বলতে হচ্ছে যে, এই শব্দটাকে আমি এই অর্থে ব্যবহার করছি। বারবার রেফারেন্স দিয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে, এখানে পপুলার অর্থে, একটা পপুলার সভারেনটি আছে, আমাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এটা নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয়। আমি এটাকে এই অর্থে ব্যবহার করতে চাই।

অর্ক: আচ্ছা।

রিহা: তারপর-

রাকিব: আচ্ছা, আপনার মিনিং এতো ব্যান্ড করেন কেন? মানে এলিস ইন দ্যা ওয়ান্ডারল্যান্ডে দেখা যায় যে, লাঠি ধরে, বলছে, এটা হচ্ছে ব্রেড। বলছে, এটা বেডা ব্রেড কেন? বলছে, আমি বলছি এই কারণে ব্রেড। মিনিং তো এরকম ক্রিয়েট করে। মানে আপনি এতো স্বাধীনতা নিচ্ছেন, খেলাফত ব্যবহার করতেছেন এই অর্থে, বা বন্ধুত্ব ব্যবহার করছেন, মানে এরকম স্বাধীনতা নিচ্ছেন কেন? মিনিং এর ক্ষেত্রে? সিমেন্টিক মিনিংকে একেবারে ভেঙে চুরে ফেলতেছেন।

রিহা: আমার বিবেকের জায়গা থেকে।

অর্ক: হ্যাঁ, সেটাতো লেখকের ইয়া আছে যে-

রাকিব: মানে, এখানে আপনি পয়েটিক ফ্রিডমটা নিচ্ছেন। তাইতো?

রিহা: না, এটা পয়েটিক ফ্রিডম না।

রাকিব: যেমন, আপনার বই, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি পড়তে গিয়ে আমার একটা জিনিস মনে হইছে। যেটা হচ্ছে, এটা মূলত আপনার প্রবন্ধের বই বলা যায়। কিন্তু আপনি প্রবন্ধের বইয়ের হচ্ছে যে ফর্ম, দেখা যাচ্ছে আপনার এই বইটা সেই ফর্মেও না আবার। আপনি, অনেকটা ঐ যে, এক কথায় বলা যায়, কাব্যিকতা আসছে, আবার, ফিকশন রাইটারেরা নানারকম র‌্যাথরিক্যাল ট্রুপ ইউজ করে, যে, একটু ইমোশনাল বাক্য ব্যবহার করা থেকে শুরু করে অনেক কিছুই যেগুলো হয়।

রিহা: হুম

রাকিব: নরমালি প্রবন্ধে কী হয়? আরগুমেন্টেটিভ বেশী হয়, রিগোরাস, এইটা আমার স্টেটমেন্ট, এটা আমি ডিফেন্ড করছি, এভাবে আরগুমেন্টের মধ্যে দিয়ে। আপনার বই বা প্রবন্ধের বই আসলে সেরকম না।

রিহা: হুম হুম।

রাকিব: তো আপনি এই ফর্মটা কেন লেখেন? মানে যখন প্রবন্ধকার হিশেবে, বুদ্ধিজীবী হিশেবে সাধারণত এই ফর্মে কেউ, মানে খুব বেশী মানুষে লেখেনা। আপনি এইটা কি কনশাসলি চ্যুজ করছেন?

রিহা: কনশাসলি। অবশ্যই কনশাসলি। এটা হচ্ছে আমি প্রচলিত ফর্মগুলার, মানে, এমন না যে, এটাকে আমি এড়াই যাবো। কিন্তু ধরেন, ফর্মগুলাকে আমি সেভাবে ঔন করিনা। কেন এইটুকু আমি পুরোপুরি গ্রহণ করবো? মানে, ফর্মগুলোকে, যে ফর্ম আকারে যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ধরেন, একাডেমিয়ার একটা ফর্ম আছে, আবার পত্রপত্রিকার কলামগুলার একটা ফর্ম আছে। তো, আবার ধরেন, খুব শর্ট যেসব লেখালেখি হয়, ফেইসবুকে বা অন্য কোথাও, সোশ্যাল মিডিয়ায়, এগুলোরও বিভিন্নরকম ফর্ম হাজির আছে। কোনটারে আপনার, মানে এবসলিউট ফর্ম হিশেবে নেয়াটা কারো জন্য খুব একটা ভালো ব্যাপার না। কারণ-

রাকিব: সেটা হচ্ছে। কিন্তু আপনি স্পেসিফিক এই ফর্মটা চ্যুজ করলেন কেন?

রিহা: এখানেই আমার আলাপ। যে, এটা তো ফর্ম না, এটাতো ফর্মহীনতা। আমারটা কোন ফর্ম না।

রাকিব: তাহলে আপনি বলতে চাইতেছেন এটা ফর্ম না?

রিহা: হ্যা। না, ফর্ম না। আমি, আপনি দেখেন সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে আমি একটা গল্পও ছাপাইছি।

রাকিব: এইটাকে আপনি যদি একটা ফর্ম আকারে চান?

রিহা: সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতিতে গল্প ছাপাইছি, এখন আপনি বলতে পারেন না যে, এটা প্রবন্ধের বই বা গল্পের বই। বলবেন?

রাকিব: এখন যদি নাম তার স্পেসিফিক, তাহলে বাইরে বলে এটাকে যে ‘ক্রিয়েটিভ ননফিকশন’। তো আপনি ক্রিয়েটিভ ননফিকশন ধরণের কিছু-

রিহা: এটাও না আসলে-

রাকিব: বল্লাম, মানুষ তো চায়, চাইবে আপনাকে ফর্মের ভেতরে ফেলে পড়তে?

রিহা: নাহ, মানুষ পড়ুক। কিন্তু আমি তো আসলে নিরন্তর ভাঙার ভেতর দিয়ে যাইতে চাই। ভাঙ্গাটা এমন না যে, আমি শুধু শুধু ভাঙতে চাই। কিন্তু ভাঙ্গাটা জরুরি। কারণ, ফর্মের ভেতর যখন আপনি আটকে থাকবেন, তখন আপনি গল্পই পড়বেন, তখন আপনি কবিতাই পড়বেন, তখন আপনি উপন্যাসই পড়বেন। তখন এই ঔপন্যাসিক, দেখা যাবে যে, যখন তারে জিগ্যেস করা হবে, যে, সীমান্তে ভারত যে, খুনাখুনি করছে, তার বিষয়ে আপনার মতামত, তখন, ‘আমরা বাংলাদেশে বেড়াতে আসছি, আসলে সাহিত্যিক মানুষ আমি, এইসব বিষয়গুলা নিয়ে আমরা কথা বলবোনা। পলিটিক্যাল ব্যাপার এগুলা’, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কথা বলছি। তারে জিগেস করা হইছিল, আমার সামনে, আমি সহ ছিলাম, চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে। জিগেস করা হইছে যে, সীমান্তহত্যা নিয়ে আপনার বক্তব্য কী? বললেন যে, আমার কোন বক্তব্য নাই।

রাকিব: আচ্ছা

রিহা: মানে, ফর্ম যারা পালন করে, তাদের এধরনের একটা ব্যাপার আছে, যে, মানে তাদের মনে আছে যে, আমাকে সাহিত্যিক থাকতে হবে, আমাকে ঔপন্যাসিক থাকতে হবে, আমি কবি, অমুক অমুক বিষয়ে কথা বলবো না। বা কথা বল্লেও এটা হচ্ছে যে, এমন দূরবর্তী একটা ভাষায় কথা বলবো, যেটা শুধুমাত্র আমি এবং আমার আত্মতা ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। হইতে পারে না?

রাকিব: না, এই অর্থে বলি নাই, আমি বলছি যে, ডিকশনারির জায়গা থেকে বল্লাম এই জন্যে, ধরেন, আপনি যখন একটা প্রবন্ধ লিখতেছেন,

রিহা: ওকে-

রাকিব: প্রবন্ধের নরমাল যে ধারা, আপনি স্পেসিফিক আর্গুমেন্ট দিচ্ছেন, চিন্তার জায়গা থেকে, চিন্তার ব্যাপারটা এতো বেশী জোর দেয়া হয় যে, সাধারণত বাক্যাটা অতো বেশী সুন্দর হচ্ছে কিনা বা অতো বেশী স্মুথ হচ্ছে কিনা, খুব আরাম করে পড়া যায় কিনা, এর থেকে বেশী চিন্তার দিক থেকে ক্রিটিক কতোটুকু হচ্ছে, প্রিসাইজ হওয়া যায় কিনা, এরকম একটা চেষ্টা থাকে।

রিহা: হু

রাকিব: তো, আপনি যে ল্যাঙ্গুয়েজে লেখেন, দেখা যাবে যে, অনেক জায়গায়, মানে এটা তো ফিকশন পড়তেছি এরকম মনে হয় কোথাও, কোথাও মনে হয় একটি কবিতার লাইন টাইপের ঢুকে আছে। তো এইটা আসলে কেনো করেন? তো একটা আর্গুমেন্ট আমি আপনাকে ইয়ে করবো, এটা কি, সাধারণত ফিকশন রাইটার, বা কবিরা, তারা তো ধরেন, ইমোশান ক্রিয়েট করার চেষ্টা করে, তো আপনি কি কোনভাবে আপনার চিন্তার জায়গা থেকে, ঘাটতির জায়গা থেকে কোনভাবে ঢাকার জন্যে কি এরকম করেন? যাতে-

রিহা: না। বরং, আসেন আমি এমন একটা জায়গায় আলাপটারে নিয়ে যাই, আমি যেটা, আমি বলেছি যে, আমি খুব কনশাসলি এই ফর্মটা, বা ফর্মহীনতা বা এই ভাষা বা লেখার এই ধরণ ব্যবহার করি। কেন ব্যবহার করি? আমি মূলত, ধরেন, সাহিত্যের পাঠক। এবং আমার পাঠরুচি নিতান্ত খারাপ না। গড়পড়তার চেয়ে একটু ভালো বলতে হবে মোটামুটি। তো, পাঠরুচির জায়গা থেকে আমি যেটা দেখি, আমাদের যে ভাষা, এখন সবাই ব্যবহার করে, এখন পর্যন্ত ধরেন, মানে পপুলার ইন্টেলেকচুয়াল ভাষা থেকে শুরু করে, গল্প কবিতা বা যে ভাষাগুলা ইউজ করে, এ ভাষা আমার সাথে কমিউনিকেট করে না।

রাকিব: আচ্ছা

রিহা: আমি চাই, কমিউনিকেট করতে। আমি একটা সাহিত্য সৃষ্টি করতে চাই না। এটার জন্যে যদি সাহিত্য হয়ে যায়, এটা খুব ভালো ব্যাপার। কিন্তু আমি চাই, আপনার সাথে কথা বলতে।

বানান : কিন্তু প্রবন্ধের বই অনুসারে আপনারটারে বেশী সাহিত্য সাহিত্য লাগে আর কি।

রিহা: হতেই পারে।

রাকিব: তখন তো অবশ্যই-

রিহা: আমি আপনার সাথে কথাটাই কইতে চাই, এটা কখনো সাহিত্য হয়ে যায়, কখনো গদ্য, কখনো কবিতা হয়ে যায়, কখনো আর কোন কিছু হয়ে যায়, কিন্তু কথাটাই কইতে চাচ্ছি আমি। এই কথা বলতে চাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ, আমি মনে করি। এবং হাঁ, এগুলার নানানরকম, মানে, ফর্মের নানান রকম দৃশ্য হাজির আছে আপনার কাছে, নন্দনের নানান প্রতিষ্টিত ফর্ম, এগুলি নিয়ে কথা বলতে গেলেই আপনার মাথায় আসছে যে, এটা তো অমুক নন্দনের ওখানে পড়ছে, ওটা তো আরেক নন্দনের অইখানে পড়ছে। আসলে আমি তো নন্দন করছি না। আমি তো ওই জায়গায় ঘুরছি না।

রাকিব: মানে তার মানে আসলে, আপনি এটা কনশাসলি ডিসাইড করেন নাই আসলে, মানে কোন ফর্ম চ্যুজ করেন নাই।

রিহা: রাইট। না, আমি ফর্ম চ্যুজ করিনা। তবে আমি যেটা চ্যুজ করি সেটা হচ্ছে, আমি ডায়ালগ করছি কিনা। আপনাকে এটা নিয়ে আরেকটা কথা বলি, এটা খুব মজার। ডায়ালগ করা মানে হচ্ছে কি, মানে আমি যখন লিখি তখন কেন লিখি? নরমালি সবাই তো লেখে না। হ্যাঁ, আপনি লেখেন, আমি লিখি, উনি লেখেন, উনি লেখেন, আমরা লিখি, তার মানে হচ্ছে, আমাদের বাইরে যারা আছে তারা লেখেন না। আমরা লিখি। আমরা কেন লিখি? তো, এই লেখার ব্যাপারটা হচ্ছে, আমি যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে, আসলে যে কারণে আমি কথা বলি, সে কারণে লিখি। যে কারণে আমার সম্বিত ব্যাপারটা আছে, আমার তো সম্বিত আছে একটা, যে সম্বিতের কারণে আপনার সাথে কথা বলতে আসলাম। আপনাকে একটা ঘুষি দিলাম না। যেটা করলাম, সেটা হচ্ছে হেসে কথা বল্লাম, যে সম্বিতের কারণে, এটার কারণেই লিখি। এবং এটার কারণেই, যেহেতু কথা বলার কারণে আমি লিখছি, তো আমার কথাটাকে আমি বেস্ট ওয়েতে কীভাবে আপনার সাথে কমিউনিকেট করতে পারবো, সেটাই আমি চাইবো। আরেকটা ঘটনা হচ্ছে, এটার ব্যাপারে আমি একটা রেফারেন্স দিই, আমাদের একজন উস্তাদ আছেন, মঈনুদ্দীন আহমেদ খান।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: উনি আমাদেরকে কোন এক সময়ে, একটা তাফসির পড়াতেন। কোরআন শরীফের তাফসির পড়াতেন। আমাদের একটা হাউজ ছিলো। এটার নাম হচ্ছে ‘সংস্কৃতি ও বিদ্যা চর্চাপিঠ’। এই তাফসিরের ক্লাসে, উনি আমাদেরকে, আলহামদু শরীফের তাফসির পড়ানো শুরু করলেন একদিন। এর আগে স্যার সম্পর্কে আমার অতবেশী আগ্রহ কখনোই ছিলোনা। কারণ স্যার সম্পর্কে যেসব পপুলার প্রবাদ, পপুলার প্রবাদগুলার একটা হচ্ছে, ‘এই লোক, শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে জানে না।’

বানান : আচ্ছা

রিহা: বলতে জানেনা বলতে, স্যারের ভাষা খুবই অসাধারণ। তো, ধরেন, মানে, যে কারণে একটা লোক প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাককে নিতে পারবে না-

রাকিব: এখানে শুদ্ধ ভাষা বলতে হচ্ছে, ছায়ানট বা ইয়ের ভাষা-

রিহা: একজাক্টলি, রবীন্দ্র ভাষা, প্রমিত ভাষা, ছায়ানট এগুলা। আর, স্যার তো হচ্ছে যে, কখনোই চেষ্টা করেন না যে, আমার সাথে ‘শুদ্ধ’ ভাষায় কথা বলবেন বা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলবেন না, একেবারে চাটগাঁইয়া ভাষা এবং ‘শুদ্ধ ভাষা’ মিক্স একটা কথা বলেন। যে ভাষাটা নিয়ে এখানের লোকেরা হাসি ঠাট্টা করেন। তো স্যার যখন, আমাদেরকে ঐ তফসিরটা করছেন, দেখা যাচ্ছে, স্যার শুরু করছেন অদ্ভূতভাবে। আমাদেরকে ইন্ট্রোডাকশনটা দিচ্ছেন এভাবে, আমি আলহামদু শরীফটা পড়েছি অনেকবার, পড়ার পরে, এটার বিদ্যামান যেসব তাফসীর আছে-

রাকিব: হুম

রিহা: সবগুলো তফসির ঘাটলাম। ঘাঁটার পরে, আমি আলহামদুর অর্থটা কোনভাবেই বুঝতে পারলামনা। সব তফসীরকারকরা আমাকে বিভ্রান্ত করেছেন। তো এখন, আলহামদুর তাফসীরটা, আলহামদুর অর্থটা আমি কীভাবে বুঝলাম? আল্লাহরে বল্লাম, যে, আল্লাহ আমি বুঝতে পারছিনা, তুমি আমারে বুঝায়ে দাও। তো আল্লাহ আমারে বললেন যে, তুমি তো বই পড়া লোক। তোমাকে এটা বুঝতে হলে মূর্খের কাছে যাইতে হবে। কোরআন তো তোমার মতো জ্ঞানী মানুষের কাছে পাঠাই নাই আমি। মূর্খের কাছে যাও। তখন, আমি মূর্খের কাছে গিয়ে জিগেস করলাম, তুমি আলহামদুলিল্লাহ কখন পড়ো? মূর্খ বলে যে, আমি ভাত খাওয়ার পর আলহামদুলিল্লাহ পড়ি। তো, এখন ভাত খাওয়ার পর যদি আপনি আলহামদুলিল্লাহ পড়েন, স্যার বলেন যে, তাইলে ভাত খাওয়ার পরে আলহামদুলিল্লাহ কওয়ার অর্থ কী হয়? অর্থটা হচ্ছে যে, নরমালি আমরা, বা তফসীরকারকরা যেরকম অর্থ করেন, ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর’, এখন আপনি আমারে ভাত খাওয়াইলেন, আমি আপনাকে প্রশংসা করার যোগ্য তখন? তখন সর্বোচ্চ আমি যেটা করবো, সেটা হচ্ছে যে, আপনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবো। প্রশংসা করবো না। প্রশংসা করা হচ্ছে তাই, একটা হচ্ছে যে, আমি আপনার প্রশংসা করার যোগ্য। দ্বিতীয়ত হচ্ছে যে, প্রশংসা তো অতিরিক্ত একটা ব্যাপার। যা নয়, তা।

রাকিব: তো এটা মডিফাই করে, সকল কৃতজ্ঞতা তার-

রিহা: তো স্যার বললেন যে, এটার অর্থ আসলে প্রশংসা হবে না, এটা হবে যে শোকর। মানে, এটা যে ডায়লগের ভঙ্গিতে বুঝায়ে দেওয়া, এই জিনিসটা আমি, মানে অসাধারণভাবে, মঈনুদ্দীন স্যারের কাছ থেকে পেয়েছি।

অর্ক: তাফসীরের কথাটা যেহেতু আনলেন, আমি একটা জিনিস, আপনার বইয়ে, সম্ভবত নোটেও রাখছেন, সেখানে দেখলাম আপনি বলতেছেন যে, তালাল আসাদ বা শেখ হাসিনা যে লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়াদ্বীন, এইটার যে মীনিং, সেখানে বলতেছে যে, ঐ যে, যার ধর্ম যার যার, এরকম আরকি, সেকুলার যে রিডিং, সেই আকারে নিছে। কিন্তু আপনি বলতেছেন যে, এইটা ঐরকম না। এটার অর্থ হচ্ছে যে, আমি আপনার রাজনীতির সাথে আপোষ করি না। তার মানে এখানেও আমি দেখতে পাইতেছি যে, আপনি একটা সম্বিতের কথা বলতেছেন।

রিহা: হুম

অর্ক: অপরের ব্যাপারে, এবং নিজের ব্যাপারেও। এবং সম্বিত রাইখেই আপনার দূরত্বের ঘোষণা জানাইতেছেন। এটাকেই বলতেছেন, আপোষ করতে চাই না। তো, এই বোঝাপড়াটা আপনি কি আপনার ওস্তাদের ভেতর থেকে পাইছেন, নাকি নিজের জার্নিতে পাইছেন?

রিহা: না, এখানে কথা হচ্ছে, মানে, আমরা তো আসলে সবার কাছ থেকেই কোন না কোনভাবে শিখি। আপনার থেকেও শিখি আমি। শোয়েবের কাছ থেকেও শিখি। রাকিবের কাছ থেকে শিখি। মানে এই শেখার তো কোন শেষ নাই। আলাদাভাবে কোন উস্তাদ, মানে কার কাছ থেকে শিখেছি, এটা বলা খুবই কষ্টকর। সম্ভব না সহজে।

রাকিব: তারপরও কিছু কিছু মানুষের বেশী ইম্পেক্ট থাকে। ইনফ্লুয়েন্স থাকে। অনেকভাবেই।

অর্ক: আপনার এই ডিফারেন্ট মিনিংটা হইলো কেমনে? আপনি বলতেছেন যে, তালাল আসাদ তো বলতেছে যে-

রিহা: এটা ডিফরেন্ট রিডিং না; এটা পপুলার রিডিংই। এই জিনিসটা, কোনভাবেই, ডিফরেন্ট রিডিং না।

অর্ক: মানে আপনার-

রিহা: মানে, লাকুম দ্বীনিকুম ওয়ালিয়াদিনের ব্যাপারে আমি যেটা বলেছি, এটা কোনভাবেই ডিফরেন্ট রিডিং না, এটা হচ্ছে, তফসিরকারকদের ভেতরে খুবই পপুলার, প্রচল রিডিং। এটা আমার, মানে আলাদাভাবে আমার কোন নতুন রিডিং করতে হয় নাই। হিস্ট্রিকাল ব্যাপার। জাস্ট, হয়তো, আমি বা আপনি এওয়ার নই এই রিডিং নিয়া। এইটা হইতে পারে।

অর্ক: আচ্ছা আপনার

রিহা: হিস্ট্রিক ব্যাপারটা হল, এখানে রসুলকে বলে দেওয়া হচ্ছে, তুমি তাদেরে বলে দাও যে, তোমাদের ধর্ম নিয়া তোমরা থাকো, তোমরা নিজেদের ধর্ম করো, তোমাদের সাথে আমাদের কোন আপোষ নাই। এটা হচ্ছে একদম হিস্ট্রিকাল ব্যাপার।

অর্ক: তার মানে তালাল আসাদ এটা মিস করছে।

রিহা: হ্যাঁ, তালাল আসাদ মিস করতে পারে। আসাদ যেটা করছে, সেটা হচ্ছে যে, আসলে, মানে আমি যে রেফারেন্সে বলছিলাম, এটা মনে হয়, তার পিতাকে নিয়ে তার একটা লেখা ছিলো।

অর্ক: হাঁ হাঁ।

রিহা: ঐটাতে এরকম কিছু একটা কথা আছে।

রাকিব: আচ্ছা, আমরা একটু টপিক চেঞ্জ করে অন্য টপিকে যাচ্ছি, আপনার

অর্ক: প্লিজ শেষ একটা, সভারেনটি নিয়া, লাস্টে একটু পেছনে হাঁটতেছি।

রিহা: আচ্ছা

অর্ক: আমি আপনার আলাপটা শুনে বুঝলাম যে, আপনি যে পশ্চিম, পশ্চিমা বা এনলাইটেনমেন্টের যে সভারেন্টির ধারণা-

রিহা: হু

অর্ক: সেখানে একটা ডিফরেন্ট সভারেন্টির ধারণা হাজির করতেছেন।

রিহা: হুম

অর্ক: এটা কি তার সাথে, মানে পশ্চিমের সাথে একটা ডায়লগ করার জন্য, নাকি –

রিহা: না না না, আমি আসলে, আলাদাভাবে পশ্চিমের সাথে ডায়লগ করতে হবে, সেটা মনে করিনা। কিন্তু পশ্চিমের ব্যাপরে তো, পশ্চিমকে তো, আপনাকে কনফ্রন্ট করতে হবে।

অর্ক : হাঁ কনফ্রন্ট করতে-

রিহা: কোনভাবে তো কনফ্রন্ট করতে হবে। তো, এটা স্রেফ ডায়লগ করার প্রশ্ন না।

অর্ক: আচ্ছা

রিহা: জিনিসটা হচ্ছে, আমি আমার পথ বুঝে নিতে চাই।

অর্ক: ও আচ্ছা, আচ্ছা।

রিহা: মানে, পথটাকে পরিষ্কার করে বুঝে নিতে চাই, আমি কী করতে চাই, কী ভাবতে চাই। রাষ্ট্র নিয়ে কী ভাবতে চাই।

অর্ক: আচ্ছা, বুঝতে পারছি।

রাকিব: রিফাত ভাই, আপনার হচ্ছে যে ওয়েবসাইট, রিফাতহাসান.ইনফো মনে হয়, ওখানে আমি দেখলাম যে, আপনার পরিচয় আপনি এভাবে দিছেন যে, আধুনিকতার পরিসরে ক্ষমতা, রাষ্ট্র, নাগরিকতা ও আত্মপরিচয়ের রাজনীতির প্রশ্নে ক্রিটিকাল। তো, আসলে, এখানে ঠিক কী অর্থে ক্রিটিকাল? মানে হচ্ছে, আপনি ফেনোমেনন হিশেবে আধুনিকতাকে, সমস্যা হিশেবে দেখেন কিনা? মানে কী অর্থে ক্রিটিকাল আপনি?

রাকিব: ক্রিটিকাল এমনিতে বোঝায় যে, বাছ বিচার করা। বাট আপনার হচ্ছে-

রিহা: মূল কথা হচ্ছে, এই লেখা আমার না। তারপরও এইটা আমার উপর বর্তায়। এগুলা, যখন এটা হইছে, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি যখন প্রকাশ হচ্ছে, আমাদের কয়েকজন বন্ধু মিলে এটা ড্রাফট করে দিলো। কিন্তু, এর দায় তো আমার উপর বর্তায়। ক্রিটিকাল তো বটেই। মানে, ক্ষমতা জিনিসটার ব্যাপারে যে ক্রিটিক, এটা তো হচ্ছে, এই সময়ের সবচেয়ে পপুলার আলাপ। মানে, পপুলার এবং ফান্ডামেন্টাল আলাপ এটা। ক্ষমতার ক্রিটিক।

রাকিব: আধুনিকতার পরিসরে বলতেছিলেন।

রিহা: হাঁ, ক্ষমতা জিনিসটা আধুনিকতার পরিসরের ব্যাপারই। আপনি যখন এখনকার ক্ষমতা বলবেন, এখন কোন ক্ষমতাকে চিন্তা করবেন, এই ক্ষমতায় আধুনিকতার ক্রিটিক ছাড়া ক্ষমতার ক্রিটিক করতে পারবেন না। এখন যখন আপনি স্টেট ভাববেন, মানে ক্ষমতার মানেটা কী? ক্ষমতা হচ্ছে যে, ধরেন, ক্ষমতার আমি হেজিমোনিয়াল ইয়াটা বাদ দিলাম। আপনি যখন এখন-

রাকিব: জনকে প্রভাবিত করতে পারার যোগ্যতা।

রিহা: হ্যাঁ, এই জিনিসটার তো, মানে, আধুনিক যেসব ভ্যালু ব্যাবস্থা আমাদের ভেতরে হাজির আছে, তার বাইরে ক্ষমতাকে আমি পাঠ করতে পারবো না কোনভাবেই। আধুনিকতার যেসব ভ্যালু ব্যবস্থা, তা কী? ব্যাক্তি হচ্ছে আধুনিক ভ্যালু ব্যাবস্থা। তারপর হচ্ছে যে, রাষ্ট্র আধুনিক ভ্যালু ব্যাবস্থা, রাষ্ট্রের সভারেনটি আধুনিক ভ্যালু ব্যবস্থা। আইন একটা আধুনিক ভ্যালু ব্যাবস্থা। যেগুলা আগে যেভাবে হাজির ছিলো, এখন যেভাবে হাজির আছে, সম্পূর্ণ আলাদা একটা জিনিস।

রাকিব: যেমন? আপনি আগে কীভাবে আলাদা, এখন কীভাবে আলাদা আছে? আগে বলতে কি আপনি চারশ বছর আগের কথা বলতে চাচ্ছেন?

রিহা: হতে পারে। হবেনা? এগুলা তো হিস্ট্রিক্যালি ডেভলপড হইছে। এখন যেমন আমরা রাষ্ট্র বলি, তখন এই রাষ্ট্র কি, একই অর্থে একজিস্ট করত? আপনি কি মনে করেন, রোম সম্রাজ্যের সময় যে রাষ্ট্র ছিলো

রাকিব: অবশ্যই একই না।

রিহা: বা রাসুলুল্লাহর সময় যে রাষ্ট্র ছিলো

রাকিব: হাঁ-

রিহা: দুইটাতো একই না। মানে, ফর্ম এবং কন্টেন্ট নিয়ে যদি আমরা বলি, কন্টেন্ট, মানে এইটা নিয়ে, আমাদের একটা সময় বেশ পপুলার আলাপ ছিলো। ধরেন, আলাপটা যদি আমরা ফর্মে নিয়ে যাই, তখন ঝামেলা হচ্ছে যে, ফর্মটা আপনার বিভিন্ন হিস্ট্রিকাল পজিশনে বিভিন্ন রূপ ধারণ করে এটার বিভিন্নরকম চরিত্র তৈরী হইছে। সেজন্য আমি সাধারণত ফর্মগুলো নিয়ে কথা না বলে এটার ভ্যালু এবং এগুলার আপনার, বাকি, ধরেন, প্রভাবগুলো নিয়ে আলাপ করার চেষ্টা করি। ফর্মগুলি না। যেমন ধরেন, আমি যখন রাষ্ট্র বিষয়ে বলি যে, না, রাষ্ট্র আসলে, আমার কাজ হচ্ছে যে, মানে, একটা, ধরেন, বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা অথবা রাষ্ট্রের বিলয় ঘটানো। আমি বলি না যে, আমার এখানে রাষ্ট্রে বন্ধুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বলি যে, বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের জন্য কাজ করতে হবে। সম্ভব না হলে-

রাকিব: অথবা বিলয় করতে হবে

রিহা: হাঁ। বিলয় করতে হবে।

বানান : বিলয় করতে হবে কি, মানে, এনারকিস্ট পজিশন থেকে বলতেছেন? মানে আপনি যে-

রিহা: না।

রাকিব: বর্তমান যে পলিটিক্যাল, ফিলোসফিক্যাল যে, অ্যানার্কিজম, এটাতে আপনি কোন প্রকার সিম্পেথেটিক?

রিহা: না, এনার্কিজম-। সিম্পেথেটিক শব্দটা তো প্রবলেমেটিক। সিম্পেথেটিক কেন বলবো আমি? কিন্তু কথা হচ্ছে, ধরেন, আপনি যখন রাষ্ট্র, মানে, কোন একটা জিনিসের কাউন্টার করবেন, সেটা তো আসলে কাউন্টারই। মানে এনার্কিজম জিনিসটারে আমি যদি দেখি যে-

বানান : মানে, পলিটিক্যাল ফিলোসফি হিশেবে এনার্কিজমকে আপনি কীভাবে দেখেন? আর এভাবেই বলছি।

রিহা: আলাদাভাবে, এনার্কিজম নিয়ে আলাদাভাবে, তেমন কোন ইয়ে নাই আমার, মানে আলাপ নাই, মানে আমার কনসার্ন নেই তেমন। কারণ এখানে, আমাদের এখানে এনার্কিজম নিয়ে তেমন কোন কাজ নেই। তো ধরেন, আমি-

রাকিব: আমাদের এখানে কিন্তু কোন বিষয় নিয়েই তেমন কোন কাজ নেই। এই কথা বলতে পারেন না।

রিহা: না, আছে, সবকিছু নিয়েই আছে। সবকিছু নিয়ে আছে এই অর্থে যে, মানে আমরা সবাই প্রায় সব বিষয় নিয়া আমরা ঘাটি, বলি, কথা বলি, পড়ি এবং ভাবার চেষ্টা করি অনেকভাবে। কিন্তু, মানে এনার্কিজম, জিনিসটা আমাদের এখানে কোন একটা পলিটিক্যাল পাওয়ার আকারে হাজির নেই কোনভাবে। ইভেন, ইন্ট্যালেকচ্যুয়াল পাওয়ার আকারে কোথাও হাজির নাই এটা। যারা পাঠ করে, এরা হচ্ছে যে, আসলে পপুলার, কালচারাল যেসব ইয়ে আছে, ফেনোমেনা আছে, এগুলার মতো করে পাঠ করে। এর থেকে বেশী কিছু না।

রাকিব: কিছু কিছু ডেডিকেটেড লোকজন আছে, অরাজ করতেছেন। এফবিতে অরাজ নামে একটা ইয়ে করে, অনলাইন প্যানেল। রাজশাহীর বখতিয়ার আহমেদ, বা সেলিম আলী নিউটন-

রিহা: আমি আলাদাভাবে অরাজটা ফলো করি নাই। কিন্তু খেয়াল করেছি। আমি এটার ব্যাপারে, একটা কথাই বলি। প্রথম কথা হচ্ছে যে, মানে, আমি বলি যে, যে কোন একটা পাল্টা জিনিস, হচ্ছে যে, একটা প্রতিক্রিয়া।

রাকিব: হুম

রিহা: মানে, এটা নিজেই কোন সৃষ্টিশীল ঘটনা না। এক। দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে, আমাদের এখানখার, আমি বলি যে, ধরেন, আমাদের এখানে একটা কল্পনা তৈরী হয়েছে, রাষ্ট্র, সমাজ এগুলা, সবগুলা নিয়ে একটা কল্পনা ব্যবস্থা হাজির আছে।

রাকিব: আমি একটু ইন্টারেক্ট করি।

রিহা: বলেন।

রাকিব: প্রতিক্রিয়ার কথা আসল না?

রিহা: হু।

রাকিব: প্রতিক্রিয়া হিশেবে-

রিহা: হুম।

রাকিব: মানে, মার্কসিজমকেও একইভাবে বলতে পারেন আপনি।

রিহা: বলতে পারি।

রাকিব: এনার্কিজম নিয়ে যদি এটা বলতে পারেন, মার্কসিজম নিয়েও বলতে পারেন।

রিহা: মানে, একটা জিনিসের, একদম পুরোপুরি একটা পাল্টা প্রতিক্রিয়া হচ্ছে যে, শেষ পর্যন্ত ঐটারই একটা কাউন্টার পার্ট। কোন না কোনভাবেই, এটা কাউন্টার পার্ট। কারণ কাউন্টার পার্টটা দেখে, মার্কসিজমের কথা আপনি বললেন। সর্বহারা হওয়ার পরে, তারপর দেখবেন যে, আপনি সর্বহারার রাজা হয়ে গেলেন। এটাতো, এরকম একটা ব্যাপার হতে পারে। হতে পারেনা? আচ্ছা, আরেকটা বলতেছিলাম যে, আমাদের এখানে ধরেন, মানে এই যারা অরাজ করছে বা অন্যান্য জিনিসগুলা নিয়ে যারা ভাবেন আমাদের এখানে, খুব ক্রিটিকাল চিন্তাভাবনাও যারা করেন-

রাকিব: রাষ্ট্রচিন্তা, রাষ্ট্রকে নিয়ে, কথাবার্তা বলতেছে আর কি। আপনি বলছিলেন বোধ হয় একবার ফেইসবুকে, রাষ্ট্রচিন্তার হচ্ছে, হাসনাত কাইয়ুমকে নিয়ে, কিছু একটা বলছিলেন-

রিহা: না, ঐটা অন্য জিনিস। বলছি আমি, কথা বলছি। ওটা হচ্ছে ব্যাক্তিগত ব্যাপার।

রাকিব: আপনি-

রিহা: কথা তো বলাই যায়। এটার ব্যাপারেও। কথা হচ্ছে, আমাদের এখানে, বলছিলাম যে, কমিউনিস্টদের একটা পপুলার ধারণা আছে, রাষ্ট্র নেই। মানে রাষ্ট্র হচ্ছে, মানুষের উপর বল প্রয়োগের হাতিয়ার। এই ধরনের, এদের একটা ধারণা হাজির আছে, রাষ্ট্রসম্পর্কিত। এইটারে আমি বলি যে, ধরেন, কল্পনা। রাষ্ট্রসম্পর্কিত কল্পনা। এটা কেমন, কল্পনাটা কেমন? কল্পনাটা হচ্ছে ধরেন, যারা এসব কথাবার্তা বলছিলো আমাদের এখানে, এদের কল্পনা বলছি, ইটসেল্ফ কল্পনা সেটা বলছি না। এটা হচ্ছে ,এদের একটা কল্পন। কল্পনার প্রতীক। যেমন, মানে যারা এসব কথা বলছিলো, তারাই দেখা যাবে যে, রাষ্ট্রকে অটোক্রেটিক করার জন্য সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রেখেছে, ইতিহাসে। আমাদের বাংলাদেশে। যেমন, ধরেন, বাকশালের সবচেয়ে বড় প্রবক্তা ছিলো তারা, আবার ২০২০ সালেও দেখা যাচ্ছে, তারা সবচেয়ে এগিয়ে, সবকিছুতে। কমিউনিস্টরা। কারণটা কী? তখন, যখন বলছিলো যে, রাষ্ট্র বল প্রয়োগের হাতিয়ার, তখন দেখা যাচ্ছে যে, জাসদের গণবাহিনীকে ধরে ধরে মেরে ফেলা হচ্ছে। প্রচুর মানুষ মারা হয়েছে তাদের। তো, তাদের লোক যখন মারা হয়, সেটা হচ্ছে যে, তখন এটা বল প্রয়োগের হাতিয়ার। যখন জামাত শিবির মারা হয়, তখন এটা বল প্রয়োগের হাতিয়ার না, এটা হচ্ছে যে, জাস্টিস এনশিওরড হল, তখন।

অর্ক: রাষ্ট্র বল প্রয়োগের হাতিয়ার তো এদের তৈরী না। রাষ্ট্র বল প্রয়োগের হাতিয়ার যদি বুইঝা থাকি, তাহলে এটা তো ওয়েবারের আমল থেকে বলতেছে, রাষ্ট্র বল প্রয়োগের হাতিয়ার। এইটা জামাতের ক্ষেত্রেও বল প্রয়োগের হাতিয়ার।

রিহা: না, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু, আমার কথা হচ্ছে যে, আপনি, পলিটিক্যালি কোন জিনিসটা গ্রহণ করছেন? মানে এইটাকে আইডিওলজি আকারে গ্রহণ করছেন। আপনি এইটাকে আইডিওলজি হিশোবে গ্রহণ করছেন না? এরা কিন্তু, এইটা ওয়েবারের রেফারেন্সে বলে না, এরা এইটা বলে, লেনিনের রেফারেন্সে। লেনিনের রেফারেন্সে বলে না?

শোয়েব: হাঁ। রাষ্ট্র বিপ্লবে একটা ইয়া আছে।

রিহা: রাইট।

শোয়েব: হাঁ, লেনিনের রাষ্ট্র বিপ্লবে একটা ইয়া আছে।

রিহা: এখন মানে, আমরা কোন জায়গায় ছিলাম আমরা-

অর্ক: মানে, ঐ যে, রাষ্ট্র বিলয়ের প্রশ্নে।

রাকিব: এনার্কিজম নিয়ে কথা বলতে গিয়ে।

রিহা: এটাই আরকি, মানে হচ্ছে যে, এটা তো আমাদের এখানে একটা কল্পনা আকারে হাজির আছে বা একরকম প্রতিক্রিয়া আকারে হাজির আছে।

রাকিব: মানে, আপনি এটাই কি মনে করেন যে, এখানে যারা হচ্ছে, এনার্কিস্ট বলে, বা এই ধরণের কাজ কর্মসূচির মধ্যে আছে, বিভিন্নরকম একটিভিটিজে, তাদের একটিভিজমে ইউটোপিয়ান মনে হয় আপনার কাছে?

রিহা: মনে হয়, আমি মনে করি।

রাকিব: মনে করেন?

রিহা: অবশ্যই মনে করি। এবং, তাদের রাষ্ট্রবিষয়ক ধারণা এতো দুর্বল এবং রাষ্ট্র নিয়ে তাদের কোন ক্রিটিক নেই। তারা, ধরেন, আমি আপনাকে একটা উদাহরণ দিই, তাহলে আপনি বুঝবেন, আমি নাম নিচ্ছি না। নাম নেয়াটা খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না।

রাকিব: নাম নিলে ভালো হয়, আমাদের।

রিহা: নাম নেয়াটা গুরুত্বপূর্ণ না যে, আপনি অলরেডি-

রাকিব: লেখার নাম বল্লে বুঝতে পারবো।

রিহা: না, আপনি অলরেডি বলছেন। আমাদের আলাপে আসছে তো এরা।

রাকিব: হ্যা, আচ্ছা আচ্ছা।

রিহা: একটা সময়ে দেখলাম, মানে, আমাদের এক বন্ধুর লেখা, লিখলেন যে, ইহাই রাষ্ট্রবিধি। আমি এইটা নিয়ে লিখেছিলাম, ইহাই রাষ্ট্রবিধি শ্রেণীর উদ্ভব।

বানান: আচ্ছা।

রিহা: এটা হচ্ছে যে, জামাত নেতা মুজাহিদ বা কারো ব্যাপারে। সে, যুদ্ধাপরাধ বিচারে আদালতের একটা রায়ের ব্যপারে সমালোচনা করেছে। পুরো কথাটা, এই মুহূর্তে খেয়াল নাই। এই সমালোচনার উত্তরেই ইহাই রাষ্ট্রবিধি ওয়াজ। দেখলাম যে, তাদের পুরোপুরি ঈমান আছে রাষ্ট্রের উপর। ইহাই রাষ্ট্রবিধি জানিয়ে বলছেন, না, ইহাই আপনার ভবিতব্য, এটা মেনে নিতে হবে, এ ধরনের একটা ভাব।

রাকিব: না, ঐটা মনে হয় এভাবে বলে নাই। এটা বলছে, এরকম যে, রাষ্ট্র থাকলেই তো এগুলা হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে হয়ে আসে, এই অর্থে বলতে পারে।

রিহা: শুনেন, হ্যাঁ, এই অর্থে যখন বলবেন, আর ভাষাটা যদি এমন হয়, এই রাষ্ট্রের এসব, ধরেন, নানা রকম আকাম কুকাম এগুলার প্রতিবাদ করা যাবে না, তখন এইগুলারে আপনি জায়েজ করার জন্যে এগুলা বলছেন। মানে-

বানান : হাঁ, এই বিষয়টাতে একটা প্রবলেম আছে-

রিহা: রাষ্ট্র নিয়ে ক্রিটিকের দুইটা ইয়ে আছে, একটা হচ্ছে, কাল্পনিক আলাপ। ধরেন, মানে একজনের ফাঁসি হচ্ছে, ভিক্টিম তার ব্যাপারে কথা তুললেন। এই আপত্তির বিপরীতে আপনি পাল্টা বললেন যে, হ্যাঁ, ইহাই রাষ্ট্রবিধি। তো, এটার অর্থ এমন দাঁড়ায় না, যে, আসলে রাষ্ট্র থাকার কারণে এটা হচ্ছে। এটার অর্থ এটাই দাঁড়ায় যে, কাজেই তোমার এটা মেনে নিতে হবে, যেহেতু, রাষ্ট্র আছে। এখানে, আপনার এই মতামত ফাঁসির জাস্টিফিকেশনের টুলস হিশেবে ব্যাবহার হচ্ছে। আমি বলতেছি, কখন কল্পনা এগুলা? একটা বায়বীয় ব্যাপার। বুদ্ধিজীবিতা একটা বায়বীয় ব্যাপার, তখন হয়ে যায়, যখন আপনি বাস্তবের সময়টাতে এসে সারাজীবন যেসব তত্ত্ব কপচাইছেন, তারে ভুইলে গিয়ে, যখন কথা বলার সময় হলো রাষ্ট্র বিষয়ে, তখন দেখা যাচ্ছে আপনি রাষ্ট্রের দালালি করছেন।

অর্ক: তাহলে বিষয়টা হচ্ছে, তার দালালির কারণে, এখানে সে তার নিজের অবস্থানই কন্ট্রাডিক্ট করছে।

রিহা: কথাটা হচ্ছে, আমরা তো নিজের, ব্যক্তির অবস্থানের কথাই বলছি শেষ পর্যন্ত। আসলে, এবসলিউট এনার্কিজম বলে কিছু নাই।

অর্ক: কিন্তু এই যে-

শোয়েব: আমার একটা কোয়েশ্চন আছে।

রিহা: হ্যা করেন।

শোয়েব: সেটা হচ্ছে যে, যেহেতু ব্যাক্তিগত প্রতিষ্ঠানের কথাই বারবার আসতেছে-

রিহা: হু

শোয়েব: আপনি কি আসলে রাষ্ট্রকেই, ইটসেল্ফ, কোন হাতিয়ার, মানে, হাতিয়ার, ইন্সট্রুমেন্টের আকারে, এটা হচ্ছে হাতিয়ার, মানে মার্কিস্ট পাঠ থেকে আসে।

রিহা: হু

শোয়েব: আর হচ্ছে, কোন বল প্রয়োগের শক্তি মনে করেন কিনা বা রাষ্ট্রকে, আসলে রাষ্ট্রকে কীভাবে দেখেন?

রিহা: রাষ্ট্রকে-

রাকিব: যেমন, গান্ধী বলছে, রাষ্ট্র হচ্ছে, সবচেয়ে বড় সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসের নাম হচ্ছে রাষ্ট্র। গান্ধীর এই ধরনের কথাবার্তা আছে।

রিহা: গান্ধীর কথা আছে?

রাকিব: গান্ধীর কথাবার্তা আছে

রিহা: আচ্ছা, বেশ ভালো তো।

রাকিব: আচ্ছা, বাকুনিনেরও কথা আছে, এনার্কিস্টদের মোটামুটি এরকম কথাবার্তা আছে। একারণেই নিউটনরা গান্ধীরে ইয়া, মানে, এনার্কিস্ট মনে করে।

রিহা: আচ্ছা

রাকিব: সেটা অন্য ব্যাপার। মূল ব্যাপারটা হচ্ছে, ওখানে এরকম আলাপ আছে আরকি। অনেকের মধ্যে জিনিসটা।

রিহা: ওকে। রাষ্ট্র ব্যাপারটারে আমি কীভাবে দেখি। আমি দেখি হচ্ছে, আমরা যদি আমাদের আগের জায়গায় ফিরে যাই, যেখান থেকে আমরা কথা শুরু করেছিলাম, সভারেন্টি নিয়ে। আমি বলি যে, রাষ্ট্র একটা ছদ্ম, সিওডো সার্বভৌমত্ব ধারণ করে, সিওডো সভারেন্টি। এই সিওডো সভারেন্টির অর্থটা হচ্ছে যে, মানুষ বা ব্যক্তি, আদতে যে সভারেন্টির অধিকারী, সেটা হরণ করে রাষ্ট্র।

শোয়েব: হু

রিহা: আপনি তো একটা সভারেন মানুষ। কখন রাষ্ট্র হয়? রাষ্ট্র, রাষ্ট্রতত্ত্বে, রাষ্ট্রের অভ্যুদয়ের একটা তত্ত্ব এরকম আছে যে, একটা স্যোশাল কন্ট্রাক্ট অনুমান করা হয়, যার মধ্য থেকে রাষ্ট্র তৈরী হইছে। মানেটা কী? আমি তো এই রাষ্ট্র তৈরী করার জন্যে কোন কন্ট্রাক্টে সই করি নাই বা আমাদের কনসেন্ট দিই নাই। দিয়েছি আমি? দিই নাই। তো, এখন, মানে, এটার ইয়েটা কি? এটা হচ্ছে যে, আমি চাইলেও, শেষ পর্যন্ত আমি রিফাত হাসান এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বাইরে যেতে পারবো না। আমি খুবই অধীন এই রাষ্ট্রের ব্যাপারে। আমার সার্বভৌমত্ত্ব হরণ করছে রাষ্ট্র। করে বলছে, যে, এখন উল্টা আমিই সার্বভৌম কিনা। এই যে, আমার, ব্যক্তির সার্বভৌমত্ত্বকে হরণ করছে, এটাই হচ্ছে রাষ্ট্র। তো আমার সার্বভৌমত্ত্ব উদ্ধার করাটাই আমার কাজ। মানে সার্বভৌমত্ত্বকে, মানে রাষ্ট্র যেটুকু হরণ করার চেষ্টা করছে-

শোয়েব: হুম

রিহা: তার বিরুদ্ধে লড়াই করাটা আমার কাজ।

রাকিব: এনার্কিস্টরা এই পয়েন্টেই বলতেছে, যে, এইটা সার্বভৌমত্ত্ব করতে গেলে, যে, রাষ্ট্রের যে সার্বভৌম অবস্থা এটাকে চ্যালেঞ্জ করে, নতুন হচ্ছে এই ব্যাবস্থা, পরিবর্তন করতে হবে।

রিহা: আমি-

রাকিব: ধরেন, চমস্কির আছে, যে, ভবিষ্যতে, ফিউচার গভর্ণমেন্ট বলে একটা লেকচার আছে। বা এই ধরনের। তারা নানাধরনের প্রস্তাবনা দিচ্ছে। তো আপনি ঐটাকে-

রিহা: না, আমি আলাদাভাবে-

রাকিব: আপনি পুরো রাষ্ট্রটাকেই বড়জোড়, আরেকটু মেরামত করা দরকার, এরকম ভাবছেন?

রিহা: না, আমি তো বল্লাম, যে, দরকার হলে রাষ্ট্রের বিলয় ঘটাতে হবে। কারণ হচ্ছে, যে, আমি বলেছি, মূলত, আপনার, মানুষের সার্বভৌমত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। মানুষের সার্বভৌমত্ত্ব, যেটার কারণে, সে সক্ষম। আধুনিক রাষ্ট্রে মানুষ তার সক্ষমতা হারায়। আমি সেটা মনে করি। মানে, আপনি তো, এখন আসলে, আপনি বাংলাদেশী ছাড়া নিজেরে ভাবতেই পারেন না।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এখন তো, আপনি, বাংলাদেশী ছাড়া নিজেরে ভাবতে পারেন না। সক্ষম না, আপনি সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন, ভারতে যান, পুশ ব্যাক করবে আপনারে। আপনি স্রেফ বাংলাদেশী, এ ছাড়া ভাবতে পারেন না। এই ঘেরাটোপ তৈরী করে দিয়েছে, শুধু এটা না। আরো, মানে, মানুষের সব ধরনের সভারেন্টিকে রাষ্ট্র নিজে ডিফাইন করে দেয়ার চেষ্টা করে।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এটা। তো, রাষ্ট্র হচ্ছে, এখনকার সময়ের জন্যে, একটা আপাত ব্যবস্থা মনে করি আমি। এটা কোন এবসলিউট ফর্ম না আমার জন্য, এবসলিউট গোলও না। তো কী গোল হইতে পারে? সেটাও, আমি আপনাকে, বা আমি নিজেকেও এখনো বলতে পারি না।

শোয়েব: এইটা কিন্তু এনার্কিস্টের মতোই শুনাচ্ছে।

রাকিব: হা হা, এইটা এনার্কিস্টের মতো কথা বলতেছেন রিফাত ভাই।

অর্ক: আমি যতোটুকু বুঝছি আপনার ইয়াতে, আপনি যেহেতু বলছেন যে, এনার্কিস্টদের আপনি ইউটোপিয়ান দেখেন। সেটা হইতেছে যে, এই যে কন্ট্রাক্টের বাইরে থাকলে, তারা মনে করতেছে যে, কোন ধরণের বেইনসাফি ঘটবে না।

রিহা: হুম

অর্ক: যে কারণে আমিও-

রাকিব: না, এখানে, কন্ট্রাক্টের বাইরে না, এখানে আমি একটু ইয়া করি, এটা হচ্ছে, এখানে এনার্কিস্টরা রাষ্ট্র জিনিস কল্পনাটাই হচ্ছে একধরনের কন্ট্রাক্ট, সোশাল কন্ট্রাক্ট, মানুষের সাথে। যে আমাদের কনসেন্ট নিয়ে আমরা নিজেদের শাসনব্যবস্থা তৈরী করবো। এনার্কিস্টরা কিন্তু, এই কন্ট্রাক্টকে তারা ডিনাই করে না। তারা, কথা হচ্ছে যে, রাষ্ট্র যে থাকবে তো এই ফরম্যাটে, রাষ্ট্র এরকম সব জায়গাতে পলিটিসাইজ করতে পারবে (৪৫.৪৬)। এটা করা যাবে না। বরং প্রত্যেকটা রাষ্ট্রের মধ্যে আমার এরকম সেল তৈরী হবে, কমিনিটি তৈরী হবে। তারা সার্বভৌম হবে। রাষ্ট্রের মধ্যে যেমন বাংলাদেশে। অনেকগুলা জেলা আছে, অনেকগুলা উপজেলার মধ্যে তাদের নিজস্ব অফিস থাকবে। এখানে কেউ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এবং সার্বভৌম তার ইয়েতে, মানুষের ডিরেক্ট ডেমোক্রেসির চর্চাতে যাইতে হচ্ছে। এনার্কিস্টরা এরকম কিন্তু। সোস্যাল কন্টাক্টকে তারা কিন্তু ডিনাই করতেছে না।

অর্ক: ও আচ্ছা, তাহলে যদি সোশাল কন্ট্রাক্ট সে ডিনাই না করে, তাইলে তো তার এক ধরনের প্রতিষ্ঠান থাকবে, তাইনা? সে প্রতিষ্ঠান হইতে পারে, রাষ্ট্র না দিয়ে আপনি যদু মধু যে কোন যেই নামেই বলেন।

রাকিব: কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠান সার্বভৌম হবে না। কথা হচ্ছে এটা। তাদের একটা ইয়া এটা, এবসলিউট সার্বভৌম হইতে পারবে না, এনার্কিস্টদের একটা প্রস্তাব এরকম।

অর্ক: মানে, সার্বভৌম কি প্রতিষ্ঠান হইতে পারবে না? কিন্তু ব্যাক্তি হতে পারবে?

রাকিব: ব্যাক্তি কেন হবে? রিফাত ভাইয়ের অর্থে না। নরমাল অর্থে। আমি পাওয়ার এক্সারসাইজ করার কথা বলছি। ধরেন, এখানে এই জিনিস দরকার হচ্ছে। ডেনমার্কের কিছু কিছু অঞ্চলে হচ্ছে, এনার্কিস্টদের কিছু কিছু জায়গায় হচ্ছে। তো, সেখানে হচ্ছে, তারা এই ডিসিশানটা নিবে, এখানে এই রাষ্ট্রে ইলেক্ট্রিসিটি লাগবে এই অঞ্চলে, বা নানা জিনিস লাগবে, এটা তারা হচ্ছে, ডিরেক্টলি তারা ডিসকাস করে, আল্টিমেট সিদ্ধান্তে আসতেছে। দেখেন, ওখানেও কিন্তু আল্টিমেট একটা সার্বভৌম ব্যাবস্থা হয়ে যাচ্ছে, না চাইলেও। তাইনা?

অর্ক: ধরেন, আপনার সাথে আমার কন্ট্রাক্টের মধ্যে কেবল তো ইলেক্ট্রিসিট বসানোও নাই, আপনি যদি আমারে মানে, কোন ধরনের বেইনসাফি করেন, বা ধরেন, রিফাত ভাইয়ের জমিটা খাইয়া দিলেন। তাইলে তো ধরেন, তাইলে এখানে তৃতীয় একটা জোর লাগবে। এখানে কি আমি, তার বিচার মাইনা নিবো কিনা? বা উনি আমার বিচার মাইনা নিবে কিনা?

রাকিব: এখানে, তাদের প্রস্তাবনা হচ্ছে, এরকম ওরাল যে সিস্টেমটা, রাষ্ট্র যখন খুব বেশী অপরেসিভ, শোষণমুলক সার্বভৌম না হবে, তখন মানুষের হচ্ছে ঐ পরবর্তীগুলা, তাকে আরেক জনের শাসন করা লাগবেই না। কারণ সিস্টেমটাই এরকম, যে আপনাকে ক্রাইম করতে বাধ্য করছে। একটা ভালো একজাম্পল দিই। আপনি দেখবেন যে, একসময় যে গ্রাম ব্যবস্থা ছিলো, যেটা হচ্ছে স্বনির্ভর গ্রাম বলে একটা মুটামুটি একটা জিনিস ছিলো। ঠিক আছে তো? ওখানে দেখবেন যে, ওখানে কিন্তু পাগল যে, গ্রামে একটা পাগল থাকলেও তার একটা ব্যবস্থা থাকত, গ্রামের মধ্যে কোন ঝামেলা হচ্ছে, অনেক গ্রামে থানা ছিলো না, পুলিশ ছিলো না। তারা কীভাবে জিনিসটাকে মিটমাট করছে?

অর্ক: সালিসি ব্যাবস্থা ছিলো।

রাকিব: এই যে, এখন দেখেন, সালিসি ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু সালিসি হচ্ছে, আপনাকে বিচার করতো, ওখানে গিয়ে মুরব্বিরা বসতো, নানান রকম সমস্যা, তারা নিজেরা হচ্ছে ইন্টারনালি ইয়া করতো। কিন্তু এখান থেকে একজন র‌্যাব গিয়ে, ফোর্স করে, এই সিস্টেমটা ছিলো না।

অর্ক: কিন্তু সালিসি ব্যাবস্থার যে মুরব্বিয়ানা

শোয়েব: রিফাত ভাইয়ের-

রিহা: না, বলেন, ঠিক আছে।

অর্ক: সালিসি ব্যাবস্থাপনায় তো মুরব্বি যারা আছে, তাদের প্রতি এক ধরনের, ধরেন, উনার যে প্রশ্নটা, কনসেন্টের প্রশ্ন, যে কনসেন্ট যদি না থাকে তাইলে আস্তে আস্তে আবার দাসত্বের ইয়েতে আসতেছে।

রাকিব: কিন্তু এখানে একটা বড় ডিফরেন্স হচ্ছে, আপনি রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা যদি আপনি না মানতে চান, আপনাকে তখন রাষ্ট্র জেলে নিতে পারে। আপনি দেখেন, একটা মুরব্বি বিচার করতেছে, ধরেন আপনি রেগে গেলেন, এই মুরব্বির বিচার আমি মানি না। আপনাকে মুরব্বির ঐ পাওয়ার ফেইস করার যে ক্ষমতার লেভেলটা রাষ্ট্রের মতো মুরব্বিদের নাই। কারণ তাকে আমরা বসাইছি। তাকে আমরা বসাইছি। একপক্ষ না মানলে এটা হয়।

মিলু: আচ্ছা, রিফাত ভাই, আমার একটা প্রশ্ন আছে, সেটা হচ্ছে যে, আপনি কেমন রাষ্ট্র চান?

শোয়েব: হা হা, রাষ্ট্র চান, এইটা আমরা ধরে নিচ্ছি। আপাতত রাষ্ট্র চাচ্ছেন আর কি।

রাকিব: কিউট কোয়েশ্চেন।

মিলু: অথবা আপনি যদি রাষ্ট্র নাও চান, তাহলে আপনি এটার বিকল্প হিশেবে কী চান?

রিহা: না, আমার রাষ্ট্র চাওয়া বা না চাওয়ার কিছু নেই, আলাদা ভাবে। এবং কেমন রাষ্ট্র চান ধরনের প্রশ্নগুলোকে আমি আসলে প্রবলেমেটিক মনে করি। মানে, এটা প্রবলেমেটিক এই কারণে, যে, তাইলে মনে হয়, আমার রাষ্ট্রই চাইতে হবে, এধরনের একটা ব্যাপার হাজির থাকে।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: রাষ্ট্রের সবগুলা অর্গানকে, আপনাকে, ধ্রুব মানতে হবে। যেমন ধরেন, আইন। আমাদের এখানে, এই যে কিছুক্ষণ আগে, আপনি রেফারেন্স দিচ্ছিলেন, যে, রাষ্ট্রচিন্তা নামক একটা গ্রুপে, তাদের যাবতীয় চিন্তা চেতনার মূল হচ্ছে, আইনকে সংস্কার করতে হবে।

রাকিব: সংবিধানকেও-

রিহা: সংবিধানকে চেঞ্জ করতে হবে। মানে, এটা হচ্ছে যে-

রাকিব: এটা সমস্যাজনক?

রিহা: সমস্যাজনক, অবশ্যই। মানে, আইন সংস্কার করলে দুনিয়া মানে রাষ্ট্র সংস্কার হয়ে যায় না। সংবিধান সংস্কার করলে রাষ্ট্র যে সংস্কার হয়ে যায় না, সেটা আমরা বর্তমান অবস্থায় যেটা দেখি, সেটা হচ্ছে ,আমাদের একজিস্টিং সংবিধান আমাদের যে রাইটগুলা দেয়, একজিস্টিং আইন যে রাইটগুলো দেয়, এগুলা তো আসলে সংবিধান বা আইনের কারণে ফলো হচ্ছে না সেটা না। সমস্যা তো অন্য জায়গায়। এবং, ঐটা দিয়ে, কারণ হচ্ছে কি, আইন দিয়ে দুনিয়া চেইঞ্জ করার ব্যাপারটা, এটা হচ্ছে অনেকটা জামাতের, জামাত যেভাবে চিন্তা ভাবনা করে, জামাত কীভাবে চিন্তা ভাবনা করে? দুনিয়াটারে তারা কীভাবে বদলাইতে চায়? তারা দুনিয়াটাতে

রাকিব: সংসদীয় আইন ব্যাবস্থা, পার্লামেন্টারি-

রিহা: তারা আইন ব্যবস্থা চেইঞ্জ করতে চায়, মানুষের আইন ব্যবস্থা বাদ দিয়ে, তারা আল্লাহর একটা আইন কল্পনা করে, সেটা দিয়ে চেইঞ্জ করতে চায়।

রাকিব: এবং তাও সেটা আবার তাদের ইন্টারপ্রিটেশন অনুযায়ী।

রিহা: সেটা হতেই পারে। মানুষের ইন্টারপ্রেটেশন ছাড়া, আসলে, আইন সম্ভব না। আইন ব্যাপারটাই হচ্ছে মানুষের ইন্টারপ্রেটেশন। আইন, আল্লাহ মানুষের জন্যে আইন দিবে কেন শুধু শুধু। আইন হচ্ছে খুবই ইহজাগতিক, পার্থিব ব্যাপার। আমি আপনাকে একটা থাপ্পড় মারলাম, আপনি আমাকে একটা পাল্টা থাপ্পড় মারবেন, নাকি আপনি আমাকে মাফ করে দিবেন, সেরকম ব্যাপার। এতো বেশি প্রেক্টিক্যাল জিনিশ যে, আল্লাহ আমাকে বিধান দিবে কেন এটা নিয়ে? আল্লাহ আমাকে বিধান দিতে পারেন খুব প্রিন্সিপাল জায়গাগুলোতে। তুমি তার হক নষ্ট করবা না, সে জায়গা থেকে আল্লাহ আমাকে বিধান দেবেন। এটা। মানে, এমনকি ইসলামিক হিস্ট্রিতেও এই জিনিসটা আছে। আইনগুলা হচ্ছে খুবই ভেরিয়াবল; যার চরিত্রগুলা। যেমন, কীরকম ভেরিয়েবল, বিভিন্ন সময়ে আমাদের ইসলামিস্টরা যেগুলা বলে। বিভিন্ন, মানে আইনের বিধানগুলো, মানে, আমাদের যারা ইসলামী রাষ্ট্র কল্পনা করে, তারা যেসব আইনের কথা চিন্তা করে। যেমন, চোরের হাত কাটা। দেখা যাচ্ছে যে, ইসলামের যারা বিখ্যত খলীফা আছেন, হিস্ট্রিকেলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেমন হযরত ওমর, তিনি তার সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, চোরের হাত কাটা কিছুদিন বন্ধ রেখেছিলেন। কোন ডিভাইন বিধান তো বন্ধ রাখা যায় না। এটা মানুষের আয়ত্তে নাই আর কি। মানুষ কেন বন্ধ রাখবে? কীভাবে বন্ধ রাখবে?

রাকিব: আচ্ছা আপনি জামাতের প্রসঙ্গে কি যেন বলছিলেন তখন?

রিহা: ও, এটা বলছিলাম যে, জামাত যেভাবে আইন ব্যাপারটাকে এবসলিউট ধরে নিয়ে সমাজ চেইঞ্জের কথা চিন্তা করে, রাষ্ট্রচিন্তার এরাও আইন ব্যাপারটাকে এবসলিউট ধরে নিয়ে সমাজ চেইঞ্জের কথা চিন্তা করে। দেয়ার ইজ নো সমাজবিষয়ক, তাদের অন্য বোঝাপড়া। কোন বোঝাপড়া আমি দেখি নাই সমাজবিষয়ক। হতে পারে তাদের কাজটা খুবই ইম্পর্টেন্ট। বাংলাদেশের আইন নিয়ে কাজ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সংবিধান নিয়ে কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধান নিয়ে আমাদের অনেক ক্রিটিক আছে। আমরা যেটা বলি, সবসময়, সেটা হচ্ছে যে, আমাদের যেটা সংবিধান এডপ্ট করা হইছে সেই সংবিধানটা হচ্ছে, আসলে, পাকিস্তানের কন্সটিটিউয়েন্ট এসেম্বলিতে যারা নির্বাচিত, তাদের দ্বারা প্রণীত, তাদের দ্বারা এডপ্ট করা সংবিধান। এটা বলি। তো, এটা হচ্ছে টেকনিক্যাল ব্যাপার। টেকনিক্যাল এবং নৈতিক ব্যাপার যে, তাদের অধিকারটা থাকে কিনা। যেখানে, অলরেডি, এই কন্সটিটিউয়েন্ট এসেম্বলির সদস্যদের একটা বড় অংশকে, বৈরী হিশেবে ভোট দিতে পারবে না বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো। কারণটা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধী ছিলো। আওয়ামীলীগের এমপিদের কথা বলছি। এমপিদের একটা বড় অংশ, যারা স্বাধীনতার বিরোধী ছিল, বিরোধী থাকার কারণে তাদের ভোট দেয়ার ক্ষমতা ছিলো না। তার মানে হচ্ছে, এইভাবে জোড়াতালি দিয়ে একটা ঘটনা ঘটিয়ে দেয়ার চেষ্টা হইছে, সংবিধানের ক্ষেত্রে।

মিলু: আচ্ছা, তাহলে রিফাত ভাই, রাষ্ট্রে কি আইন থাকবে না?

রিহা: অবশ্যই থাকবে।

মিলু: আচ্ছা সেটা তাহলে-

রিহা: আইনের চরিত্র কীরকম হবে? আইনের চরিত্র কীরকম হবে, সেটা নিয়ে আলাপ করা দরকার। মানে আইনের চরিত্র, সংবিধানের চরিত্র এবং রাষ্ট্রের চরিত্র, যদি আমরা পপুলার জিনিসগুলা দেখি, পাশাপাশি আমরা যেগুলা নিয়ে চিন্তা করতে হবে মনে করি, সেটা হচ্ছে আমাদের এখানে যেধরনের একটা ডিভাইডেশন হইছে। যেমন আমাদের এই মুহূর্তে আমরা দেখি, রাষ্ট্র তো নেই-ই নেই, আমাদের এখানে কোন সমাজ নাই। মানে, আমি ঐ কালকে একটা লেখা পড়ছিলাম, এটা হচ্ছে আশীস নন্দীর লেখা। সেটা হচ্ছে যে, ভারতে যেটা দাঙ্গা হচ্ছে, হচ্ছিলো, সে দাঙ্গায় দেখা যাচ্ছে, ধুতি পরা একটা ছেলেও নেই।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: সবগুলা হচ্ছে শার্টপ্যান্ট পরা ছেলে। তো, বাবরি মসজিদ যে এলাকায় ছিলো, সেই এলাকাটা আসলে, সেটা হচ্ছে একদম অজপাড়াগাঁ।

শোয়েব: আসলেই

রিহা: তো, অজপাড়াগাঁয়ে, এইসব লোক কোত্থেকে আসলো? দাঙ্গা করার জন্য, ভাঙ্গার জন্য। উনার ইয়েটা হচ্ছে যে, মানে, এই ধরনের সা¤প্রদায়িক দাঙ্গাগুলাতে দেখা যাচ্ছে যে, গ্রামের লোকেরা কোথাও অংশগ্রহণ করে নাই। সাধারণভাবে, সব জায়গায়। উনার এ ধরনের একটা পর্যবেক্ষণ ছিল। তার মানে হচ্ছে, একটা শক্তিশালী ব্যাপার আছে গ্রামের। যেটা আমাদের আরবান, যেটা-

রাকিব: কমিউনিটি বিল্ডিং এর একটা ব্যাপার-

রিহা: একজাক্টলি। সেটা নষ্ট করে দিয়েছে। আরবান মানে, আমরা তো, শহরের ঘটনাটা এরকম যে, ধরেন, আমি আর আপনি পাশাপাশি থাকলেও, কখনো কারও নাম পর্যন্ত জানি না। এটা হচ্ছে শহর, আর গ্রামের ব্যাপারটা হচ্ছে, সম্পূর্ণ অন্যরকম ব্যপার। মানে, চাইলেই এখানে একটা সোসাইটি থাকা সম্ভব, যদি ধরেন, হিন্দু এবং মুসলমান, যদি উভয় গ্রুপে একটা সদভাব থাকে। একটা ইয়ে থাকা সম্ভব।

মিলু: তাহলে শহরের এই সমস্যা আপনি কিভাবে ইয়ে করবেন।

রিহা: এটা তো হচ্ছে আধুনিকতার সমস্যা।

মিলু: হ্যাঁ হ্যাঁ আধুনিকতার সমস্যা।

রিহা: আধুনিকতার সমস্যা, মেট্রোপলিটন, নগরায়নের সমস্যা, দুনিয়ার সব ধরনের সমস্যা এখান থেকে আসে। সমস্যা হচ্ছে যে, আপনি এগুলোকে যখন, ধরেন, আপনি যখন উন্নয়ন করছেন, আপনার কোন উন্নয়ন ফিলসফি নাই। আপনি জাস্ট একটা রিপ্লেস করছেন। যে আমাদের ওখানে মেট্রোরেল হইছে, আমাদের এখানেও মেট্রোরেল হইতে হবে, ওখানে ফ্লাইওভার হইছে, আমাদের এখানেও ফ্লাইওভার হইতে হবে। এই যে উন্নয়ন নিয়ে আপনার নিজস্ব কোন ভাবনা নাই, আপনার নিজস্ব একটা হিস্ট্রি আছে, নিজস্ব একটা প্রতিবেশ আছে, আপনার ভূখন্ডের একটা ইয়া আছে, মানে, এগুলা নিয়ে কোন ভাবনা যে নাই, এই না থাকাটাই হচ্ছে যে, নগরের এইসব বড় বড় অসুখগুলা আমাদেরকে গ্রাস করবে। স্বাভাবিক। তাইলে, ধরেন, অন্যদেরকে গ্রাস করছেনা? আমেরিকাকে গ্রাস করছে না? সেটার চরিত্র অন্যরকম। সেটাও গ্রাস করছে। ধরেন, সেটার চরিত্র তো হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে, ওখানে সোসাইটি নেই ঠিক আছে, কিন্তু ওখানে আইন আছে, রাষ্ট্র আছে। ওখানে আমি, আপনার সঙ্গে, দেখা হলে, জিগেস করছি না যে, আপনি কেমন আছেন? মানে, আপনার নাম জানি না ঠিক আছে। কিন্তু আপনি যে মুহূর্তে কোন একটা অধিকার প্রশ্নে সমস্যায় পড়বেন, দেখা যাচ্ছে, সবাই এগিয়ে এসে এখানে কথা বলছে, তাকে তার রাইটটা দিতে হবে। এটা বলছি। বাংলাদেশে কিন্তু এটা নাই। আমি, যখন, আপনি বিপদে পড়বেন, আমি বলছি, তাকে মেরে ফেলতে হবে। ভিন্ন জিনিস এটা।

রাকিব: রিফাত ভাই, আমার একটা, একটু, অন্যরকম কোয়াশ্চেন আছে।

রিহা: বলেন

রাকিব: সেটা হচ্ছে, যখন অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে আসছিলেন, তো, তখন হচ্ছে ঐ যে তাকে অনুষ্ঠান করতে দেয় নাই।

রিহা: আচ্ছা

রাকিব: তো, আপনি ঠিক যখন অনুষ্ঠানটা সরকার করতে দেয় নাই তাকে, ঐ মুহূর্তে আপনি স্ট্যাটাস দিছিলেন যে, অরুন্ধতি রায় কি কাশ্মীর নিয়ে কি বলছে? কাশ্মীর প্রসঙ্গে তার পজিশন কি? এরকম একটা কোয়েশ্চন করছিলেন।

রিহা: হুম হু। আমার প্রশ্নটা ছিল, কাশ্মির নিয়া অরুন্ধতির কি অবস্থান কি বিপ্লবী?

রাকিব: জাস্ট এক দুই লাইনের মধ্যে একটা স্ট্যাটাস দিছিলেন। আপনি কি আসলে অরুন্ধতির কাজের সাথে পরিচিত ছিলেন না?

রিহা: একটা কথা বলি, মানে, এই ধরনের প্রশ্নগুলো হচ্ছে যে, ছোট ছোট এই প্রশ্নগুলো-

রাকিব: এবং ঐ মুহুর্তে যখন সরকার তার বক্তৃতা থামাল-

রিহা: এই প্রশ্নগুলো তোলা হচ্ছে খুবই জরুরী। মানে তোলাটা জরুরী, এটার উত্তর পাওয়ার চেয়ে। আমি যখন প্রশ্নগুলা তুললাম, এটার কোন উত্তর পাওয়ার জন্যে আমি জিগেস করি নাই। উত্তরটা হচ্ছে যে, আসলে প্রত্যেকে যার যার মতো এটা কল্পনা করে নেবে। কারণ এটার আসলে সুনির্দিষ্ট কোন উত্তর নেই। অরুন্ধতী কাশ্মীর নিয়ে কিছু-

রাকিব: না কিন্তু-

রিহা: অরুন্ধতীর কোন রেডিক্যাল অবস্থান আছে কি নাই

রাকিব: আছে তো।

রিহা: বল্লাম তো, অরুন্ধতীর কোন রেডিক্যাল অবস্থান আছে কি নেই, সেটা আমি একভাবে ডিফাইন করতে পারবো, আপনি একভাবে ডিফাইন করতে পারবেন।

রাকিব: না, সেটা আপনি রেডিক্যালিটিকে কীভাবে দেখবেন সেটার উপর নির্ভর করছে। কিন্তু ওভারল অরুন্ধতী যদি বলেন, কাজকর্ম, কাশ্মীর নিয়ে বা ওখানকার মাওবাদী লোকজনকে নিয়ে তো সারাজীবন তো ঐটা নিয়েই কাজ করতেছে। ধরা যাক হচ্ছে, রিফাত হাসানকে কেউ ধইরা নিয়ে গেলো। তার একটা অনুষ্টান থেকে ধরে নিয়ে গেলো। এখন আপনি যদি, বা আপনার অনুষ্টান ব্যান করে দিলো। তখন আমি কোয়েশ্চেন করলাম, রিফাত হাসান কি হেফাজত বিষয়ে কোন কোয়েশ্চেন বা কথা বলছে? বা শাহবাগ বিষয়ে কোন কথা বলছে? এইটা একটা অড ব্যাপার না? মানে, আপনি এটা ইন্টারনেশনাল জায়গা থেকে

রিহা: না, এটা একটা অড ব্যাপার ঐ অর্থে না, যখন অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে এসে, ধরেন, আমাদের এ প্রশ্নের ইয়েটা কি? অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে এসে, যেসব, যাদের, মানে যাদের সাহচর্যে, একসাথে বসে, যাদের সাথে প্রোগ্রাম করছে। তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রশ্নে কোন ধরণের প্রশ্নগুলো ডিল করে। যেসব প্রশ্নগুলো অরুন্ধতী ডিল করে অনেকভাবে, ইন্টেলেচুয়ালি ডিল করে, এমনকি সে এক্টিভিস্টও, এক্টিভিজমের জায়গা থেকেও ডিল করে, তার কোন ঘটনা নাই কিন্তু তাদের। কিন্তু অরুন্ধতী, দেখা যাচ্ছে, তাদের সাথে এসে প্রোগ্রাম করছে এবং খুব স্বস্তির সাথে প্রোগ্রাম করছে। এই স্বস্তির সাথে, তাদের সাথে প্রোগ্রাম করতে পারাটা, এটারে প্রশ্ন করা দরকার বলে আমি মনে করেছি। আমি প্রশ্ন করেছি, ক্যান অরুন্ধতি স্পিক? এক. কাশ্মীর বিষয়ে তার-

রাকিব: এবং যারা হচ্ছে, বাইরে, এই যে বললেন, বাংলাদেশে যেসব লোকজন এগুলা নিয়ে কোন প্রশ্নই তুলে না

রিহা: হুম

রাকিব: বা মেনে নিয়েই কাজ করে

রিহা: হুম, এবং আরেকটা ঘটনা আছে,

রাকিব: এমন হতে পারে-

রিহা: আপনার আরেকটা তথ্য বা উদাহরণ মিসলিডিং, যেখানে রিফাত হাসানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার সাথে তুলনা করলেন। ঘটনা হচ্ছে, অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে এসে কোন বিপদে পড়েন নাই। এটা আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। অরুন্ধতী রায় বাংলাদেশে আসার পরে, তাকে প্রস্তাব রাখা হয়েছিলো, আপনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করেন, উনি আপনার লেখার ভক্ত। এটা হচ্ছে যে আমার কথা না, এটা হচ্ছে সাংবাদিক, সম্ভবত নঈম নিজাম কি, উনি পত্রিকায় লিখেছেন, যে, আমার মাধ্যমে এরকম একটা প্রস্তাব আসছিলো তার কাছে। তার মানে হচ্ছে যে, উনি, বাংলাদেশের ক্ষমতা কাঠামো এগুলার ব্যাপারে কোনরকম কোনভাবেই কোন ক্রিটিক্যাল অবস্থানে যারা থাকে, তাদের সাথে কোন যোগাযোগ রাখেন নাই। যাদের সাথে লিংক রেখেছেন

রাকিব: এখন সে রাখবে কেন? বরং এখানে যারা খবর রাখে, কাজ করে, তাদেরই তার সাথে কানেক্ট করা উচিউ না?

রিহা: আমি উচিত অনুচিতের প্রশ্ন না।

রাকিব: ধরেন আপনি, ইন্ডিয়াতে অরুন্ধতি রায়কে কীভাবে-

রিহা: আমি এখানে অরুন্ধতি রায়কে কোনভাবেই, ডেমনাইজ করার চেষ্টা না, এটা হচ্ছে যে, প্রত্যকের একটা এলিট অবস্থান যে তাকে, সেটা ধরে দেয়া দরকার। এটা এমন না যে, এলিট অবস্থানের কারণে সে খোদ এলিট হয়ে গেলো, তার যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে গেলো, সেটা এরকম না। এটা যদি ধরে না দেন শেষ পর্যন্ত, এই অবস্থাটাই লেজিটিমেসি পায়। এটার মানে অরুন্ধতিরে নাকচ করে দেওয়া না। নাকচ করে দেওয়া না এই অর্থে, অরুন্ধতী রায় যদি, ধরেন, আমি বল্লাম যে, সে বাংলাদেশে এসে কোন বিপদে পড়ে নাই। একটা বিপদ তো হয়েছে, তার প্রোগ্রামটা বন্ধ করা হয়েছে। এবং অরুন্ধতী রায়ের কারণে না। এটা হচ্ছে যে, শহীদুল আলমের কারণে, অরুন্ধতী রায়ের কারণে না। শহীদুল আলমের কারণে কেন হইছে? শহীদুল আলম একটা রেডিক্যাল অবস্থান নিছিলেন, একটা সময়ে। সেটার কারণে বিপদে পড়েছেন। এটা হচ্ছে, আমাদের একটা ঘটনা। তো, আমার প্রশ্ন তোলাগুলা, এই যে প্রশ্নগুলা তোলা, এটার মানে হচ্ছে তারে একেবারে সর্বেসর্বা বাতিল করে দেয়া না। এটা কিন্তু মনে রাখতে হবে।

বানান : এবং আপনি এইমাত্র নিজেই বললেন, এখানে যারা, তাদের সাথে অরুন্ধতির সাথে-

রিহা: হাঁ, এটাই তো প্রশ্ন। এই প্রশ্ন তোলার

রাকিব: অরুন্ধতীর সাথে বাংলাদেশের যারা মিশছে, তারা হচ্ছে, রেডিক্যাল অবস্থানে নেই, কিন্তু আপনি বললেন, শহিদুল আলম কিছু একটা রেডিক্যাল অবস্থানে ছিলেন।

রিহা: শহীদুল আলম ছিলেন। নিশ্চয় এমন না যে, শহীদুল আলমের সাথে প্রধানমন্ত্রী যোগাযোগ করে বলেছেন যে, আমাকে অরুন্ধতীর কাছে, অরুন্ধতীকে আমার কাছে নিয়ে আসো।

রাকিব: না না।

রিহা: আমার কথা হচ্ছে, অরুন্ধতি এই লিঙ্কগুলার যেটা মর্যাদা, সেটা নষ্ট করেন নাই। পাওয়ার। এই পাওয়ারগুলোকে নষ্ট করতে চান নাই বা নষ্ট করেন নাই। অরুন্ধতীর ব্যাপারে ভারতের ভেতরেও একধরনের একটা কথা আছে যে, উনি একটা এলিটিস্ট অবস্থান নেন। সেটা অন্য জিনিস। কিন্তু ধরেন, আপনি যে কথার রেফারেন্স দিচ্ছেন, আমি সেই আলাপের আগে পরে আরো বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলাম। বাংলাদেশে, আমরা, ইন্ডিয়ান যেসব একাডেমিয়ার খোঁজখবর পাই, তারা খুব একটা বাংলাদেশ নিয়ে কখনো, বাংলাদেশে ইন্ডিয়ান নীতি নিয়ে কখনো, খুব একটা কথাবার্তা বলেছেন, এরকম আমরা কোথাও দেখি না। কাশ্মীর হচ্ছে তাদের নিজস্ব ব্যাপার। একধরনের। এইটা তো ইন্ডিয়ার দাবীই। বাংলাদেশ বিষয়ক ইন্ডিয়ান নীতি নিয়ে তারা কখনো কথা বলেছে, সেরকম খুবই কম লোক আছে। খুবই কম। অরুন্ধতিও না। এখন আমরা এসব ঘটনা নিয়ে কথা বলবো না কেন? এগুলা তো, প্রশ্নগুলা তো করবো। প্রশ্নগুলা তো করতে হবে। তার অন্য ফোকাসড বড় কাজ থাকতে পারে, বা এক্টিভিস্ট হিশেবে, অনেকগুলা জায়গায়, তো, এগুলা তো, প্রশ্নগুলা যদি না করি, এগুলা তো আসলে নিষিদ্ধ প্রশ্ন হিশেবে থেকে যাবে। এগুলো, প্রশ্নগুলোও, একটা এলিট প্রশ্ন হিশেবে থেকে যাবে। এটা তো কোন এলিট ব্যাপার না, প্রশ্নগুলো। আমি যে সীমন্তে মার খাচ্চি, এটা তো এলিট ব্যাপার না। অনেকেই, ওরা তো, এই সীমান্ত দিয়েই আসছেন। যে সীমন্ত দিয়ে আমি মার খাচ্ছি প্রতিদিন। এই সীমান্ত নিয়ে, মানে সীমান্ত অতিক্রম করার সময়, অরুন্ধতীর কি মাথায় আসে নাই বা আর কারো মাথায় আসে নাই যে, এই সীমান্তে এরকম এরকম ঘটনা ঘটেছে, এটার ব্যাপারে আমার অবস্থান কী? বাংলাদেশে যাচ্ছি। এটা একটা ব্যাপার তো আছেই।

মিলু: আচ্ছা, আমার একটা প্রশ্ন রিফাত ভাই

রিহা: হুম

মিলু: সেটা হচ্ছে যে, বুদ্ধিজীবীর সৎ হওয়ার দায় আছে কি-না? আর যদি সে সৎ না হয়, তাকে আপনি কীভাবে ডিল করবেন? তার কাছ থেকে কিছু নিবেন কিনা? যদি নেয়ার থাকে।

রিহা: সততা তো, মানে, ধরেন, সততারে তো আমাদের এখানে-

রাকিব: এবসলিউট ফর্ম?

রিহা: হা হা। না, এবসলিউট ফর্মের ব্যাপার না। সততারে আমাদের এখানে যেভাবে ডিল করা হয়, আমাদের এখানে যেভাবে ডীল করা হয় সততা জিনিসটাকে, এটার অনেকগুলা প্যারামিটার আছে, ধর্ম আছে। তারপর হচ্ছে পলিটিকস আছে। আপনি আওয়ামীলীগ করলেন, আপনার একটা সততার প্যারামিটার আছে। বিএনপি করলেন, সততার একটা প্যারামিটার আছে। আওয়ামীলীগের প্যারামিটারটা কি? আপনি একাত্তরে, ইতিহাসের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন, তাইলে আপনারে নিয়া হবে না। দিজ ইজ আপনার সততা। জামাতের প্যারামিটার কী? আপনি ইসলামের দোশমন। এরকম ব্যাপার। সততা জিনিসটাকে আপনি কীভাবে ডিফাইন করছেন? তার চেয়ে এ ধরনের আলাপগুলোতে না যাওয়া ভালো বলে আমি মনে করি। মানে, সততার আলাপে না গিয়ে আপনি যেটা করবেন, আপনি আপনার পলিটিকসটা পরিষ্কার করতে পারছেন কিনা? এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে পলিটিকস পরিষ্কার করা। সততা টততা এগুলা তখন অনেক দূরে চলে যাবে।

রাকিব: তাইলে রিফাত হাসান-

রিহা: সততার ব্যপারটা আরেকটা কথা বলি, এটা হচ্ছে যে, সততা ব্যাপারটা, ধরেন, আমাদের এখানে একটা পপুলার স্লোগান আছে, মানে, এই যে, ইসলামি পলিটিকস করতো জামাতে ইসলামী, ওদের একটা স্লোগান ছিলো, আল্লাহর আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই। মানে, এটা হচ্ছে, একটা বদ্ধ ব্যাপার। আইন যেরকম একটা বদ্ধ ব্যাপার, এখানে এই প্যারামিটার দিয়ে বিচারের চেষ্টাটা একটা বদ্ধ ব্যাপার। মানে, ধর্ম নিয়েও যখন আপনি চিন্তা করেন, ধর্ম তো একটা বিশাল ব্যাপার, অনেক বড় ব্যাপার। তারা যখন ধর্মকে পাশে রেখে সততা ব্যাপারটা চিন্তা করে, এই সততা হচ্ছে তাদের হৃদয়ের মতই, বা তার চেয়ে অনেক ছোট ব্যাপার। মানে, এটা তো একটা কল্পনা, সে জায়গা থেকে।

রাকিব: আপনি বললেন যে, পলিটিকসকে পরিষ্কার করাটাই হচ্ছে কাজ, তো, রিফাত হাসানের হচ্ছে পলিটিকসটা কী আসলে? ইন্টেলেকচ্যুয়াল হিশাবে।

রিহা: রিফাত হাসানের পলিটিকসটা? হা হা। আ, প্রশ্নটা আপনি আরেকটু, বড় করে বলেন দেখি।

রাকিব: আপনি বললেন না যে, একজন ইন্টেলেকচুয়ালের কাজ হচ্ছে, তার পলিটিকসটাকে পরিষ্কার করা, বললেন না আপনি, সততার থেকে বেশী দরকারি হচ্ছে পলিটিকসটাকে পরিষ্কার করা। যে, আমার ভাবনা এই, আমি এইরকম চাই, আমার চাওয়াটা হচ্ছে এরকম। রাষ্ট্র বা সমাজে আমি এটা এস্টাবলিশ করার জন্যে এই এই দরকার হবে, এই ধরনের ব্যাপার স্যাপার।

রিহা: আচ্ছা।

রাকিব: তো, রিফাত হাসানের এখানে চাওয়ার ব্যাপারটা কী? পলিটিকস বা ইন্টেলেকচুয়াল হিশেবে। তার পলিটিকসটা কী আসলে? সে তো আদর্শবাদী পলিটিকস করে না-

রিহা: করে না

রাকিব: সে তো মার্ক্সবাদী পলিটিকস করে না।

রিহা: হু

রাকিব: বা অমুক না, ইসলামিস্ট না।

রিহা: রিফাত হাসানের পলিটিকসটা হচ্ছে, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি।

রাকিব: উম?

রিহা: রিফাত হাসানের পলিটিকস হচ্ছে সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি

রাকিব: এটা তো রিফাত হাসানের বইয়ের হেডলাইনও। এমনে, আরেকটু যদি-

রিহা: মানে, পলিটিকসটা হচ্ছে যে, আমরা যে আলাপটাতে ছিলাম শুরু থেকে, সেটা হচ্ছে যে, আমার যেটা দাস অবস্থা, তা থেকে মুক্ত অবস্থায় উত্তরণ, এটা হচ্ছে প্রথম পলিটিকস আমার। এই আলাপটা নিয়েই, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি শিরোনামেই আমার একটা লেখা আছে, এই বইয়েই। তারপর, তো এই জায়গায় আসতে গিয়ে আমি যেসব সমস্যাগুলো ফেইস করি, সেটা হচ্ছে যে আসলে, তার, মানে ধরেন, সাব ডালপালা।

রাকিব: হুম

রিহা: ধরেন, আমি এটা করতে গিয়ে কোন কোন সমস্যার সম্মুখীন হই। এটা করতে গিয়ে, যেসব সমস্যার সম্মুখীন হই, দেখা যাচ্ছে, আমাদের এখানে কতোগুলো ভ্যালু ব্যবস্থা আছে, আমার মনে হইলো যে, ভ্যালু ব্যবস্থাগুলো ভেঙে দিতে হবে।

রাকিব: যেমন?

রিহা: যেমন, হিস্ট্রিক্যালি আমরা যেসব ভ্যালু ব্যবস্থাগুলো আছে, যেমন আমাদের সামনে একদম মহা একটা, মূর্তি হয়ে, একটা পাথরের মূর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাষ্ট্র। বা বাঙালি জাতীয়তাবাদ বা মুক্তিযুদ্ধ। যা নিয়ে কোন কথা বলা যাবে না। আমাদের এখানে এই মুহূর্তে মহা ইয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ধরেন, গত আট বা দশ বছর ধরে আমাদের উপর যে রেজিমটা বসে আছে, সে রেজিম বিষয়ে আপনি কোন রকম প্রশ্নও করতে পারবেন না। তো, মানে, এগুলার মূল জাগাটা কী? তো, আমি একটা কথা বলতাম, সেটা হচ্ছে যে, একটা টোটালিটারিয়ান স্যোসাইটি যখন, মানে একজিস্ট করে, তখন আসলে তারে আপনি স্রেফ একটা হেজিমনি দিয়ে, হেজিমনিয়াল পাওয়ার দিয়ে, তারে চেইঞ্জ করতে পারবেন না। কারণ হচ্ছে যে, তখন এই টোটালিটারিয়ান স্যোসাইটির অংশ হিশেবে আমি, আপনি, কবি, লেখক, সহিত্যিক, আইনজীবী বা আর যারা যারা আছে, সবাই আসলে এই ভ্যলু ব্যবস্থার অংশ হিশেবে আমরা বিরাজ করি। তো, তখন দেখবেন, আমাদের বুদ্ধিজীবীরা বলে, প্রচুর বলে যে, না আমাদেরকে একটা হেজিমোনিয়াল পাওয়ার ক্রিয়েট করতে হবে, যার কারণে এরকম, কিন্তু দেখা যাচ্ছে হেজিমনি কোন কাজ করছেনা। তার নিজের ভেতরেই কাজ করছেনা, হুম? কারণ, সে নিজেই যখন এটার কথা বলে আবার সে নিজেই যখন আরেকজনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যায়, আরেকটা ফ্যাসিস্ট অবস্থার পক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। মানে, এ ধরনের কিছু কিছু ভ্যালু ব্যাবস্থা আছে। তখন দুইটা জিনিস, একটা জিনিস হচ্ছে, এই কাজটা একই সাথে ধর্মীয়ও। এই কাজটা, ধর্মীয় কোন অর্থে? ধর্ম তো আসলে, শুধুমাত্র আপনার, একটা সমস্যা সলভ করার ব্যাপারটা ডিল করেনা। ধর্ম আপনাকে যেটা ডিল করে, যে, আপনার বিয়ন্ডে আরো কী কী ঘটনা হইতে পারে, আপনাকে এমন সব কথা বলে, যে কথাগুলোর পরে আপনি একটু ভাবতে বাধ্য হবেন, যে, না, আরো কিছু যদি থাকতে পারে, এটাই যদি শেষ না হয় আমার জীবন, তাহলে তো না, আমি এখানে পার পেয়ে যাবো না। আমি যে, এখন আপনারে একটা ঘুষি মারলাম, এটার উত্তর আপনি না হয় দিতে পারলেন না, আমাকে পাল্টা একটা ঘুষি মারতে পারলেন না। কিন্তু ধর্ম বলছে, ডোন্ট ঔরি, তুমি আখেরাতে এটার ফল পাবা।

রাকিব: না, এটা তো হচ্ছে, ধরেন, মানুষের হিস্ট্রিক রিলিজয়নগুলা যেগুলাতে আখেরাতে বিশ্বাস আছে, ধরেন, যাদের এরকম বিশ্বাস নেই, বৌদ্ধ ধর্মের একটা অংশ আছে, যারা হচ্ছে ঈশ্বরের সেবা, পরকালের প্রশান্তি লাভ করা, তারা ইয়াই করেনা

মিলু: অনেকেই আবার এই জিনিসটা বিশ্বাসই করেনা।

রিহা: না, শুনেন। ধর্মগুলা বিভিন্নভাবে এটা ডিল করেছে।

রাকিব: তাদেরকে কিন্তু পরকালকেন্দ্রিক এইটা করতে হয় নাই

মিলু: পরকাল অনেকেই বিশ্বাস করে না।

রিহা: পরকাল, না শুনেন, পরকালের ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলছি না, এটা হচ্ছে নিছক, মানে একদম পিওরলি ধর্মের জায়গা। কিন্তু যখন ধর্মগুলা বলে যে, তোমাকে এই ভ্যালু ব্যবস্থার ব্যাপারে কথা বলতে হবে। যেমন, ধর্ম না, আমি বলি যে, ধরেন, কমিউনিজম যখন বলে, যে, আমরা ফসলের সুষম বন্টন চাই। পপুলার যে কথাটা। তো, সুষম বন্টন কেন করতে হবে? আমি, আমার পাওয়ার আছে, আমি, আপনার অংশটা আমি খেয়ে দেবো। এবং এটাতে কেন আপনি আলাদা ভাবে একটা ভ্যালু আরোপ করতে চান? এই যে, ভ্যালু যে আরোপ করতে চান, এটা হচ্ছে ধর্মের জাগা। এটা অন্য কোন জাগা না। যে কোন জাগায় একটা ভ্যালু যখন আরোপ করতে যাবেন-

রাকিব: আমি আপনার পয়েন্টটা বুঝি নাই।

মিলু: আমিও বুঝিনাই, আরেকটু ক্লিয়ার যদি করেন।

রাকিব: আপনার হচ্ছে সুষম বন্টন, বা আপনাকে আমি বললাম যে, একটা রাষ্ট্রে এরকম চাওয়া, তখন তো আপনি, এটা তুলনামূলকভাবে একটা ভালো সমাজব্যবস্থা চাচ্ছেন। যে, এখানে কেউ না খেয়ে থাকবে না, ঐ যে সুষম বন্টনটাই থাকা তো দরকার আসলে সোসাইটিতে।

রিহা: কেন দরকার?

রাকিব: দরকার না?

রিহা: যখন দরকারের কথা বলেন, এই পলিটিকসটা আপনার কখন হাজির হয়? আপনি যখন বলেন যে, ঠিক আছে, আমাদের এখানকার বিদ্যমান পলিটিকসটা আছে, এই পলিটিকসটার এই এই সমস্যা। এই সমস্যাগুলো কেন? এটা কি প্রাক্টিক্যাল ব্যাপার? মানে আমরা শান্তি, আমরা শান্তি না শান্তি না, শান্তি তো হচ্ছে যে একটু ইয়ে ব্যাপার। আমরা ধরেন, ঝগড়া না করে থাকবো শুধু এই ব্যাপার?

রাকিব: আমি একটা কথা-

রিহা: আমরা ঝগড়া না করে থাকবো, বা আমরা আইনকানুন মেনে চলবো। কেউ আমাকে ডাকাতি করবে না। আমার ভাগ আমি পাবো, শুধু এই ব্যাপার?

রাকিব: না না, এটা তো আর বলছে না, তারা বলছে যে, সোসাইটিতে কিছু সিস্টেম কিছু বৈষম্য তৈরী রাখে, যেটা হচ্ছে-

রিহা: বৈষম্যের এই ধারণাটা কেন?

রাকিব: আমি বলছি এই অর্থে, ধরেন আপনি যতো, আপনি যদি একটা বস্তিতে জন্মান, আরেকটা লোক হচ্ছে ধরেন, খুব বড়সড় ব্যাবসায়ী পরিবারে জন্মাচ্ছে, খুব টাকাপয়সা ওয়ালা পরিবারে জন্মাচ্ছে, আপনি যতোই চেষ্টা করেন না কেন, আপনার অবস্থান আর তার অবস্থান আপনি জানেন যে, আপনি তিন পুরুষ গিয়েও তার সমান হতে পারবেন না। সিস্টেমেটিক আপনি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

রিহা: হু

রাকিব: তো এই ধরনের এই অবস্থাটা, এটার তো চেইঞ্জ, মানুষ চাওয়াটাই স্বাভাবিক।

রিহা: না, কেন স্বাভাবিক হলো? বা, আপনার কেন মনে হচ্ছে মানুষ একটা স্বাভাবিক কাজই করবে?

রাকিব: আপনি যে-

রিহা: না, মানুষ একটা স্বাভাবিক কাজ কেন করবে? সে অস্বাভাবিক কাজ করতে পারেনা?

রাকিব: আমি বলি, ধরেন, আপনি যে আর্গুমেন্টটা চাচ্ছে

রিহা: না, আমি তো চাচ্ছিনা। আমি আপনারে, আমি তো প্রথমেই বল্লাম।

রাকিব: মানে বেসিকেলি আপনি অধিকার হরণ করছেন। আমি যদি ধরেন, আমি আপনাকে বল্লাম, আমি আপনাকে খুন কইরা ফেলবো। সে বলতে পারে, খুন করছে এটা স্বাভাবিক। খুন করবে না কেন? আপনার আর্গুমেন্টে যাচ্ছি যদি-

রিহা: না, আমার আর্গুমেন্ট সেরকম না। আমি বরং আপনারে এই তর্কে নিয়ে আসলাম। আমার আর্গুমেন্টটা হচ্ছে, আমি চাই, যে আমি আমার অধিকারটা পাই, আপনি আপনার অধিকারটা পান আমি চাই যে, আমার ফসলটা সুষম বন্টন হোক। আমার অধিকার, কেউ হরণ করতে না পারুক। এটা আমি চাই। আমি বলছি, এই যে চাওয়া, এইটা কেন? কেন হঠাৎ কইরা আপনার মনে হল, স্বাভাবিক বইলা একটা ব্যাপার থাকা উচিত। স্বাভাবিক, মানে ফিতরতের ব্যাপার। ধর্ম যেটা বলে। এটা হচ্ছে একটা ভ্যালু, এই ভ্যালুটা-

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এই ভেল্যুটা ধর্মীয় ব্যাপার। আমি বলছি। এই যে আমি চাচ্ছি, এই প্রশ্নটা মূলত ধর্ম ডিল করে। আমি যে, যে জিনিসটা নাই, যে জিনিসটা নেই, সেটা আমি কেন চাইবো? এটার বিপরীতে ধরেন, একটা-

রাকিব: এই চাওয়াতে সমস্যাজনক দেখেন আপনি?

রিহা: নাহ। বরং প্রশ্ন করছি, কেন চাইতেছেন। রেশনাল, আপনি এটাকে একটা রেশনাল মাইন্ড হিশেবে চাচ্ছেন, এরকম কিছু?

রাকিব: না না, আমি যদি আপনি।

রিহা: আমি চাই যে, আমি জানি যে, এটা রেশনাল মাইন্ড শুধু না। দার্শনিকেরা এখানে সেকুলার মোরালিটির কথা বলে। আমার কাছে, এটা হচ্ছে যে একটা বুভুক্ষা মানুষের। মানুষের খিদা, যে, আমি চাই যে, জাস্টিস হোক।

রাকিব: হুম

রিহা: যেমন ধরেন,

রাকিব: আপনি জি যাস্টিস চান না?

রিহা: অবশ্যই চাই।

রাকিব: এটা কি একটা রিলিজিয়াস ব্যাপার?

রিহা: অবশ্যই রিলিজিয়াস ব্যাপার।

রাকিব: রিলিজিয়াস?

রিহা: অবশ্যই।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: রিলেজিয়াস ব্যাপার ছাড়া, মানে, রিলিজিয়ন নিয়ে আমাদের পপুলার যে সব চিন্তাভাবনাগুলা আছে-

রাকিব: ডিসকোর্স আছে

রিহা: ডিসকোর্স আছে, এগুলার অংশ না আমি। মানে, পপুলার ডিসকোর্স বলতে, যেমন আপনি প্রশ্ন আমাকে করতে পারবেন যে, আপনি ইসলামের অংশ কিনা? আমি অবশ্যই ইসলামের অংশ মনে করি, নিজেরে। কিন্তু বলছি, মানে, ইসলাম নিয়ে যে পপুলার ডিসকোর্সগুলো, এগুলা নিয়ে আমি বলবো যে, আমি এগুলার অংশ না। আপনি যদি আমাকে বলেন যে, আপনি, ধরেন, হিন্দুত্ব নিয়ে যেগুলো পপুলার ডিসকোর্স, এগুলোর অংশ কিনা। আমি বলবো যে, অংশ না। কিন্তু আপনি যদি আমাকে বলেন যে, ঠিক আছে, হিন্দুত্বের ঐ অংশটা আপনি কীভাবে দেখেন? আমি বলতে পারবো যে, ঐ অংশটা আমি এভাবে দেখি, বলতে পারবো। ইসলামের এই জিনিসটাকেও, এভাবে বলতে পারি।

রাকিব: হু

রিহা: কিন্তু, মানে, আপনি যে একটা অর্থহীন জিনিস, আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন জিনিস, একটা পাথর, আপনি তো একটা, ধরেন, পাথর বা মাটি ছাড়া কিছুই না। এটার উপর মানুষ আরোপ করছেন তো আপনি।

রাকিব: হু

রিহা: এবং, এই মানুষ হয়ে বলছেন যে, না, সমতা থাকা দরকার। আরো আরো অনেক কিছু। এই যে, আরোপ করাটা, এটা ধর্মীয় ব্যাপার। এটা, ধর্ম ছাড়া আর কেউ এটা ডিল করে নাই।

রাকিব: কিন্তু আপনার ডেমোক্রেসির ধারণা বা ইনডিভিজুয়াল ধারণা

রিহা: এগুলা তো হচ্ছে-

রাকিব: এগুলা, হিউম্যান রাইটসের ধারণা, এগুলা কি সব ধর্মের ইয়া করা? মানে, আপনি বলতে চাচ্ছেন?

রিহা: মানে, এগুলা, এগুলা তো হচ্ছে যে একেকটা হিস্ট্রিক্যাল ডেভেলপমেন্ট। বিভিন্ন চিন্তা, মানুষের হিস্ট্রিক্যাল চিন্তার ডেভেলপমেন্ট। এখানে, মানুষ যখন ভ্যালু আরোপ করে, এটাকে আমি বলছি ধর্মীয়।

রাকিব: এখন আপনার আমি, ভ্যালু আরোপ করার কোয়েশ্চনটা, আমি একটু কনফিউজড হয়ে গেছি এজন্য। আমার মনে হচ্ছে যে, আপনি ভ্যালু আরোপ করাটাকে আপনি প্রবলেমেটিক মনে করেন। কিন্তু আপনার সমস্ত কাজকর্ম-

রিহা: না না না, আমি প্রবলেমেটিক মনে করি না।

রাকিব: মানে ইন্টেলেকচুয়াল হিশেবে আপনার এগুলা ভ্যালু ক্রিয়েট করে তো?

রিহা: আমি প্রবলেমেটিক মনে করিনা। না, ভ্যালু আরোপ করাটাকে প্রবলেমেটিক মনে করি না। প্রবলেমেটিক মনে করি যে, আপনি যখন নিজে ধর্ম হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন। এটা ভ্যালু আরোপ না। আমি বলেছি, যখন আপনি, ব্যক্তি নিজে খুব সার্বভৌম একজন মানুষ, আপনার সার্বভৌমত্বটা দখল করে নিয়ে রাষ্ট্র বলছে, তুমি না, আমি সার্বভৌম। হুম?

বানান : হুম

রিহা: এটা হচ্ছে একটা ছদ্ম সার্বভৌম। এই ছদ্ম সার্বভৌম মানে হচ্ছে, সে নিজেই ধর্ম হয়ে ওঠা। মানুষের ধর্মভাব খুবই গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। কিন্তু, আপনি নিজে ধর্ম হয়ে উঠার চেষ্টা, এটা হচ্ছে, অটোক্রেটিক হয়ে ওঠা। আমি সে জাগা থেকে বুঝি।

রাকিব: আচ্ছা। এইবার বোধ হয় বুঝেছি।

রাকিব: তো রিফাত ভাই, আমাদের হচ্ছে আলাপের খুব বেশী মনে হয় দেরী করবো না আর। আপনার এখন কোন নতুন বই বা সামনে কোন প্রজেক্টে কাজ করছেন কি বইয়ের? আপনার একটা বই যেমন হচ্ছে, সম্পর্ক বন্ধুত্ব ও রাজনীতি বই যেটা, ঐটা দেখা যায় যে, অনেকগুলা ফেসবুকের নোট-টোট এরকম ধরে। কোন প্রজেক্ট ধরে কাজ করার প্লান আছে সামনে?

রিহা: আমি প্রজেক্ট ধরে কখনোই কাজ করিনা। সম্ভবত সামনেও করার চিন্তা নাই।

রাকিব: সামনেও কি এরকম পাবো যে, ফেইসবুকের কিছু নোটটোট, ওগুলা থেকেই হচ্ছে-

রিহা: হইতে পারে, ফেইসবুকের কিছু নোটও হইতে পারে। আলাদাভাবে কোন নোটও থাকতে পারে। এমনকি দেখা গেলো যে, পুরাটা একটা বই থাকবে। মানে এই জিনিসটা এরকম, কোন নির্দিষ্ট আমার, মানে প্লান নাই যে আমি এভাবে করবো। তবে আমি এই ফর্মটা কন্টিনিউ করবো, সম্পর্ক বন্ধুত্ব রাজনীতি যেরকম।

মিলু: আপনি ইসলামিক রাষ্ট্র চান কিনা? বাংলাদেশে?

রিহা: চাই না।

মিলু: যদি চান না, তাহলে কেন চান না?

রিহা: আলাদা ভাবে ইসলামিক রাষ্ট্র সম্ভব না।

মিলু: আচ্ছা

রাকিব: আপনি চান কিনা? ধরেন, সম্ভব না হোক, সম্ভব যদি থাকতো, আপনি ঐদিকে যাইতেন কিনা?

রিহা: মানে, যেটা সম্ভব না সেটার ব্যাপারে, কীভাবে আলাপ করবো। সম্ভব না কোন অর্থে বলি, সেটা হচ্ছে, ধরেন, মানে আমি যখন কোন একটা জিনিস নিয়ে আলাপ করবো, আলাপটা কী হবে? এইটার একজিস্টিং ফর্মগুলা নিয়েই তো আলাপ হবে।

রাকিব: হু

রাকিব: ওরা এভাবেও বলে, বাংলাদেশে ডেমোক্রেসিও হবার খুব একটা চান্স নাই। হবেনা, এটা নিশ্চিত।

রিহা: যেহেতু একজিস্টিং ফর্ম নেই, এর বাইরে তো আছে স্রেফ ইউটোপিয়া। আপনি ইউটোপিয়া নিয়ে আলাপ করবেন কেন? ইভেন ইউটোপিয়া স্বত্ত্বেও, ইউটোপিয়ার ভেতরে ইসলামী রাষ্ট্রের যেসব ধরনগুলো নিয়ে আলাপ আছে, সেগুলারেও আমি ঔন করি না। সুতরাং চাই না।

শোয়েব: সুতরাং এই প্রশ্নটাও থাকেই না।

রিহা: রাইট।

শোয়েব: এই প্রশ্নটা ইনভেলিড তখন।

রাকিব: হাঁ, রিফাত ভাইয়ের বক্তব্য ক্লিয়ার হইছে।

অর্ক: আচ্ছা, আমি একটু প্রশ্ন করি। আমি যেটা নিয়ে-

মিলু: তার আগে আমি একটু এক্সপ্লেইন করতে চাচ্ছি। একটা কাজ বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তো ঐটা ইউটোপিয়াই থাকে।

রাকিব: ধরেন একসময়, দাস ব্যাবস্থা, ধরেন গ্রীস বলেন, এমনকি ইসলামের প্রথম দিককার ব্যবস্থা। পৃথিবীতে দাসপ্রথা থাকবে না, এটা কিন্তু একসময় মানুষের কাছে ইউটোপিয়া ছিলো।

রিহা: হু।

রাকিব: ফলে ইউটোপিয়া থাকাটা, মানে ইউটোপিয়ান চিন্তা হওয়াটাও কিন্তু সমস্যাজনক না।

রিহা: না, সমস্যাজনক না।

রাকিব: বাট আপনি এনার্কিজম নিয়ে বা-

রিহা: ইউটোপিয়ান চিন্তা থাকা সমস্যাজনক না কোনভাবেই। আমি ইউটোপিয়ারে সমস্যাজনক আকারে হাজির করে আলাপটা করছি না। কিন্তু ধরেন, আপনি আমাকে বলছেন যে, অমুক চিন্তাটা নিয়ে আপনার ধারণা কী? আমি বলছি যে, ইউটোপিয়া আকারেও যেসব হাজির আছে চিন্তা, সেগুলোও আমি ঔন করিনা। তার মানে হচ্ছে যে, ইউটোপিয়া ইটসেল্ফ তো ঔন করার ব্যাপার না। ঐ চিন্তাটাকে ঔন না করার ব্যাপার। ইউটোপিয়া তো খুব জরুরী জিনিস মানুষের। বরং এটা, কল্পনা নাহলে তো আপনি কবিতা লিখতে পারবেন না। বিপ্লবের স্বপ্ন দেখতে পারবেন না।

রোমেল: ইমাজিনেশন বলাটা বেটার হইতে।

রিহা: রাইট, ইমাজিনেশন শব্দটা হেল্পফুল।

অর্ক: আচ্ছা, আমি আপনার কথা থেকে যেটা বুঝলাম, যে, আপনি জাস্ট লেখা না, মানে লেখক হিশেবে, (অরেটর) হাজির হইতে চান না, ডায়লগ, এক ধরনের অনেকটা যেন বা, সেটা কি একটা পলিটিশিয়ান অর্থে, নাকি একটা রিসার্চার অর্থে, অথবা এমন একজন মানে যে ডায়ালগ করে করে আগাইতে চায়। অরেটর তো আসলে সে নিজে হয়তো বা ডায়ালগ করতেছে না লোকের সাথে।

রিহা: হু

অর্ক: কিন্তু আপনি বলতেছেন যে, আপনি আপনার লেখার প্রতিটিতে আপনি ডায়ালগ করতেছেন।

রাকিব: ডায়ালেগটিক জায়গা-

রিহা: এমনি হচ্ছে, মানে শেষ পর্যন্ত আমি ধরেন, আমার কাজটা হচ্ছে লেখালেখি করা। লেখালেখি করছি। অরেটর না। মানে, কোন না কোন ভাবে আমি আসলে, এই ফর্মের সাথে কোন না কোনভাবে আটকেই আছি। কিন্তু এই কাজটা, মানে এই কাজটার আমাদের এখানকার যেসব পপুলার ফর্ম আছে, এই ফর্মের যেসব চরিত্র আছে, এই চরিত্রগুলো নিয়ে আমার, মানে যেহেতু ঔন করিনা, আপনাকে বলতে পারছি না যে, ধরেন আমি কবি, আমি গল্পলেখক, আমি অমুক, এটা বলতে পারছি না। কিন্তু আমার যেটা লেখার চরিত্র দাঁড়াচ্ছে, সেটা নিয়েই আমি, আমি মনে করি।

রাকিব: আপনি ধরেন কবি এবং আপনি কি কোন না কোনভাবে নিজেকে এন্টারটেইনার মনে করেন?

রিহা: হু?

রাকিব: এন্টারটেইনার

রিহা: এন্টারটেইনার কি শুধু ডায়লগ করে?

রাকিব: না না, আমি বলছি, ধরেন একজন হচ্ছে রাইটার, দেখবেন, তার, হুমায়ূন আহমেদ যেমন পপুলার রাইটার-

রিহা: হু

রাকিব: কিন্তু দেখবেন তার শুধু এন্টারটেইমেন্টের বাইরেও তার কিছু পলিটিক্যাল পজিশন থাকে, চিন্তা থাকে, অনেক কিছু ভাবার থাকে। তো অনেকেই হচ্ছে এন্টারটেইনার বললে অনেকের হচ্ছে ইয়ে লাগে, আমি তো সস্তা বিনোদন দিই না। এরকম ব্যাপার না। ধরেন, আপনি কবিতা লেখেন, এটা তো একধরনের এন্টারটেইনমেন্টও আসলে।

রিহা: আচ্ছা। আছে। এটা, মানে, ধরেন এক অর্থে তো এন্টারটেইনারও। তবে আমি যেটা করি এবং আমি যখন লেখা ব্যাপারটারে ভাবি, আমি একটা কথা সব সময় বলি যে, কথা যখন আপনি বলেন, এটা হচ্ছে, বলা মাত্রই এটা একটা পলিটিক্যাল ঘটনা। আপনি যখন কোন একটা কথা ছুঁড়ে দেন, বলা মাত্রই এটা পলিটিক্যাল ঘটনা।

রাকিব: না বলাও অনেক সময় পলিটিকাল ঘটনা। এরকম কিছু ঘটনা ঘটছে, কিছু বলবো না, বাংলাদেশের লেফটদের-

রিহা: আপনার এই না বলাটা হচ্ছে, বলা।

রাকিব: আচ্ছা।

রিহা: এটা একটা ল্যাংগুয়েজ।

রাকিব: আপনার এই আরগুমেন্ট ধরেই আপনার মতো যদি বলে দেন, দুইন্যার সবকিছুই পলিটিক্যাল। কোন কিছুই পলিটিক্যালের বাইরে না।

রিহা: আমি পলিটিক্যাল হওয়াটারে যেভাবে দেখি, যে জাগা থেকে দেখি, সে জাগা থেকে পলিটিকাল তো অবশ্যই। সে জাগা থেকে আমি তো, মানে, পলিটিকস বিষয়ে এবং পলিটিক্যাল হওয়া বিষয়ে আমার একটা স্ট্যান্ড পয়েন্ট আছে।

রাকিব: কিন্তু সবকিছু যদি পলিটিক্যাল হয়, মানে এটা তো বারবার বলারও দরকার নাই যে, এটা পলিটিক্যাল। এটাতো পলিটিক্যাল এমনিতেই।

রিহা: এইটা তো সম্বিত। বলাটাই তো আমার কাজ। আমি তো বারবার বলছি না, শুধু বললাম, মানে স্টেইটম্যান্ট। আমি কি বারবার বলছি আপনাকে, যে, আমি পলিটিক্যাল এক্ট করছি?

রাকিব: না না, এই ধরেন, এই কথা বলাটা একটা পলিটিক্যাল, ডায়লগ নিয়ে কথা বলাটাও-

রিহা: না, ঐটা বলছি, ঐটা হচ্ছে যে, আমি তো মূলতই যেটা করছি সেটা হচ্ছে যে, পলিটিক্যাল হওয়া বা না হওয়া না, মানে পলিটিকাল, বা আমার পলিটিকস করা না করা, এটা আমার এখতিয়ার বহির্ভূত ঘটনা। যেহেতু আমি কথা বলছি।

রাকিব: হুম

রিহা: আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি কথা বলবো। আমি লিখছি। এই যে লেখা, এই লেখার ঘটনাটা এমন কোন নিরীহ ব্যাপার না যে, আমি নিজের মনের আনন্দে লিখছি এন্ড মানে রাকিব কোন ঘটনাই না আমার আশেপাশে, আমি আসলে নিজের মনের আনন্দে লিখছি। বা এটার কোন প্রভাব নেই। আমি আপনাকে প্রভাবিত করতে চাই। খুবই প্রভাবিত করতে চাই।

রাকিব: হু

রিহা: একটা উদাহরণ দিই। আমি কয়েকদিন আগে বলছিলাম, আমার এক বন্ধুর কাছে। আমি বলছিলাম কি, এই ভদ্রলোক শাহবাগের ঘটনার উপর তার একটা পিএইচডির কাজ চলছে, তো তারে বল্লাম যে, আমি আসলে আপনার পিএইচডি থিসিসের অবজারভেশনটা চেঞ্জ করে দিতে চাই। আপনি আমার সাথে বসেন।

রাকিব: কার?

রিহা: আমাদের এক বন্ধু। কারণ হচ্ছে, মানে, আপনার সাথে অনেক ডায়ালগ আছে, অনেক বিতর্ক আছে।

রাকিব: হুহ

অর্ক: কিন্তু ডায়লগে গেলে তো প্রভাবিত হওয়ার চান্সও থাকে আবার।

রিহা: তো আমার তো প্রভাবিত হতেও বাঁধা নাই।

অর্ক: আচ্ছা

রিহা: আমার তো, আমি মনে করি যে এটা একটা জার্নি, আমারও জার্নি আপনারও জার্নি। আপনার সাথে যে কথা বলছি, সেটা এমন না যে, শুধুমাত্র আমার জার্নি। আমি তো কর্তা হিশেবে থাকছি না এখানে।

অর্ক: সেটাই আমার জানার বিষয় যে-

রিহা: কর্তা না

অর্ক: মানে, আপনি কর্তা হিশেবে হাজির হইতে চাইতেছেন কিনা?

রিহা: না না, কোনভাবেই আমি কর্তা না।

মিলু: আচ্ছা, রিফাত ভাই, আমার একটা প্রশ্ন ছিলো। সেটা হচ্ছে যে, বুদ্ধিজীবী কি সরকারের দালাল হতে পারবে কিনা? আর যদি সে সরকারের দালাল হয়, তাকে আপনি বুদ্ধিজীবী মনে করেন কিনা?

রিহা: এই বুদ্ধিজীবি শব্দটাতে একটা ঝামেলা আছে। এটা আমরা যে ইউজ করি, আমাদের এখানে পপুলার হয়ে গেছে, তাই। আমরা বিনা কষ্টে এটা ব্যবহারের সুবিধাটা নিই। এটা নিয়ে আমাদের আর কোনরকম, ধরেন, আমি যদি আলাদাভাবে কোনদিন বয়ান হাজির করতে চাই, বুদ্ধিজীবি শব্দটা তখন বাদ দেবো।

মিলু: আচ্ছা।

রাকিব: তখন কী বলবেন?

রিহা: না, তখন কী বলবো তখন এটা ভাববো।

রাকিব: আমার মনে হয় যে, পুরা আলাপের মধ্যে, আমরা যে সমস্যাটা করছি, এটাকে বলে যে, ভিটগেন্সটাইনিয়ান প্যারাডক্স। যে শব্দটা বলতেছি, এটা কোন অর্থে বলতেছি। এটা নিয়ে একটা ধাধা।

রিহা: এটা তো থাকবে।

রাকিব: বাট এই ধরনের আলাপে ধরেন, বুদ্ধিজীবী নর্মাল যে কথা বলে, বুদ্ধিজীবী বলতে কি এই যে, তারা হচ্ছে রাষ্ট্র বা দেশ নিয়ে বিভিন্ন দার্শনিক-

রিহা: আচ্ছা মিলু, রাষ্ট্র বা দালাল এই শব্দগুলোরে আপনি কীভাবে দেখেন? ধরেন, আপনি যে বলছেন, বুদ্ধিজীবীর রাষ্ট্রের দালাল হওয়া সম্ভব কিনা, রাষ্ট্রের দালাল হওয়া।

রাকিব: না, এরা সে হয়তো বুঝাচ্ছে যে-

মিলু: না না, রাষ্ট্র না, সরকারের দালাল বলছি

রিহা: সরকারের দালাল, আচ্ছা।

মিলু: এখানে পার্থক্য আছে। মানে যে দলীয় সরকার আছে, যারা পাওয়ারে আছে তাদের দালাল।

রিহা: না না, পাওয়ারের ব্যাপারে আমার কোন সমস্যা নেই। আমি নিজেও পাওয়ারে যেতে চাই কোন না কোন সময়। এবং পাওয়ারে গিয়ে অনেক পাওয়ার এক্সারসাইজও করতে চাই। মানে পাওয়ারের ব্যাপারে আমার যাবতীয় ক্রিটিক সত্বেও পাওয়ারের ব্যাপারে আমার কোন ঘৃণা নেই।

মিলু: আচ্ছা

রিহা: মানে সেই অর্থে যদি আপনি কখনো বলেন যে, না, আপনি তো আসলে ওমুকের দালাল হয়ে গেছেন। আমার, মানে, এটা নিয়ে কোন কেয়ার করি না। অইটারে পাত্তা দেওয়ার কিছু নেই।

মিলু: আচ্ছা।

অর্ক: রাষ্ট্র এবং ভাষার প্রশ্নে আমি খেয়াল করছি আপনি মাঝে মাঝে রবীন্দ্রনাথরে হাজির করেন।

রাকিব: আচ্ছা, রবীন্দ্রনাথকে তো আমাদের এখানে আনাই হয় নাই আসলে।

অর্ক: এবং রবীন্দ্রনাথরে এক ধরনের ক্রিটিক করতে চান।

রিহা: হু

অর্ক: এবং ভাষাও, যেহেতু আপনি বলতেছেন যে, আপনি মানুষের সাথে কমিউনিকেট করতে চান, ঐ অর্থে। কিন্তু আপনার ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি দেখছি যে, মানে এরকম শব্দ আছে-

রাকিব: অরুন্ধতী স্টাইলে এলিটিস্ট বলা যায়।

অর্ক: আপনি ধরেন, এলিটিজম, নাহ এই টার্মটা বরং না বলি। আমি বরং এটা বলি যে, আমি আরো স্পেসিফিক বলি, ধরেন যে, এরকম শব্দ যেটা আসলে কমনারদের ভেতরে নেই। মানে কমন পিপলের মধ্যে নেই।

মিলু: হাঁ হাঁ

অর্ক: ধরেন, মিনার কার্টুনের ভাষারে একটা যদি কমন হিশেবে ধরি-

রিহা: এটা কমন হিশেবে ধরা যায়না।

অর্ক: আপনি বলতেছেন-

রিহা: এটাকে কমন হিশেবে ধরা যায় না, এটা তো কনস্ট্রটাকটেড ভাষা। এটাকে কমন হিশেবে কেন ধরবেন আপনি? এটাও একটা প্রমিত ভাষাই।

অর্ক: এই মিনার কার্টুন আপনি যদি খেয়াল করেন।

রাকিব: কিন্তু সবকিছু তো কন্সট্রাকটেড ভাষা।

রিহা: মানে এটা হচ্ছে যে, একেবারে খুবই সতর্কভাবে কনস্ট্রাকটেড ভাষা। মিনার কার্টুনটা।

অর্ক: আচ্ছা।

রিহা: মিনার কার্টুনটা এমন না যে, কোন একটা ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ এখানে তৈরী হয়ে গেছে নরমালি। এটা না। এই ভাষাটা হচ্ছে লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা।

রাকিব: বরং ন্যাচরাল ল্যাংগুয়েজের এলিমেন্ট থেকেই ওটা করা হইছে।

রিহা: এটা করা হইছে কমন ইলিমেন্টগুলো নিয়ে।

রাকিব: কিন্তু, কিন্তু যদি আপনি বলেন যে, এটা হচ্ছে কনস্ট্রাকটেড ভাষা। তাহলে হচ্ছে, বর্তমান যে এগজিস্টিং ভাষাটা প্রমিত ভাষা বলে বা স্ট্যান্ডার্ড ভাষা বলে চালু আছে, ঐটা আরো বেশী কনস্ট্রাকটেড।।

রিহা: মানে, সেটাই বল্লাম তো, আলাদাভাবে, মিনার কার্টুনকে যদি বলেন যে, কমন বা আপনি কিসের ভাষা বলছিলেন অর্ক?

অর্ক: আমি বলতে চাচ্ছিলাম যে, এটা কমন বা ডেমোক্রেটিক ভাষা বলা যাইতে পারে কিনা।

রিহা: না, আমি আলাদাভাবে মিনার কার্টুনকে। আচ্ছা, কোন ডেমোক্রেটিক, ডেমোক্রেটিক ভাষার অন্য অনেক-

অর্ক: না রেফারেন্স আকারে তারে আপনি, বলতে পারেন কিনা-

রিহা: ডেমোক্রেটিক ভাষা কোন একটা ভাষাকে বলা যেতে পারে। এটা কোন সমস্যা না। ডেমোক্রেটিক হচ্ছে যে একটা টেকনিক্যাল শব্দটা।

অর্ক: ফোর্ট উইলিয়ামের ভাষারে কি ডেমোক্রেটিক হিশেবে চিহ্নিত করেন আপনি?

রিহা: না, আমি বল্লাম তো। ভাষা জিনিসটাকে বোঝাতে নরমালি হচ্ছে যে একটা টেকনিক্যাল শব্দ যখন ইউজ করেন, যেমন লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা, একটা কন্সট্রাকটেড ব্যাপার, তখন এই টেকনিক্যাল শব্দের যাবতীয় অর্থ ওখানে হাজির থাকার ব্যাপার থাকতে পারে। কিন্তু আমি তো ডেমোক্রেটিক এবং ডেমোক্রেটিক না, এটা নিয়ে ভাবি নাই যেহেতু, আমি বলতে পারবো না যে, কোনটা ডেমোক্রেটিক কোনটা ডেমোক্রেটিক না।

অর্ক: না, আমি কেন জিগেস করলাম আপনারে, আপনি বলতেছেন যে, আপনি কমিউনিকেট করতে চান, কিন্তু এমন কারো সাথে কমিউনিকেট করতেছেন এবং যে ভাষায় কমিউনিকেট করতেছেন, সে হয়তো এটা জানে না।

রিহা: হু

অর্ক: এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখছি যে আপনার, ধরেন, যেটা বাংলায় হাজির আছে, যেটা আমাদের মধ্যে খেয়াল করি যে, কেউ হয়তো বা ফার্সি শব্দ দিয়ে ঢুকতে চায়, কেউ ঐটারে খারিজ করার জন্যে সংস্কৃত বা তৎসম দিয়ে ঢুকতে চায়। এইটা, এইটারে, এইটা যখন ঘটে, তখন আসলে যেখানে পাবলিকের মধ্যে একটা শব্দ চালু আছে সেটারে না নিয়াই বরং একটা বাইরে ত্থেকে জোর পূর্বক ঘটে।

রিফা : এই যে

অর্ক: এই জোরপূর্বক ঘটনা তো ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের ভাষা পয়দা করারও ঘটনা।

রিফা : হুম হু

অর্ক: তো, যদি আপনি কমিউনিকেট করতে চান, তাইলে ধরেন কোথায় কোথায়, বা কমন পিউপলের লেঙ্গুয়েজে নয় কেন?

রিহা: আমি একটা ঘটনা বলি, ভাষা যখন আপনি ব্যবহার করেন, সেটা খুব একটা সচেতন ঘটনা যদি হয়ে ওঠে, এটা ঝামেলার।

অর্ক: কীরকম?

রিহা: মানে, ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে, এটা হবে যে খুবই, মানে স্বতঃস্ফূর্ত একটা ঘটনা। আমি যখন লিখি, আমি এ লেখার ভেতরে, হ্যাঁ, আমার মাথায় এটা আছে যে, আমাকে কমিউনিকেটিভ হইতে হবে, কিন্তু এটা নিয়ে কোন ভাষা নির্মাণের চেষ্টা করি নাই, আলাদাভাবে। এটা হচ্ছে একটা মুড, এটা কোন ভাষা না। আমি যেটা বলি, এটা কোন ভাষা কনস্ট্রাক্ট করি নাই আমি। কিন্তু যদি আপনার ভেতরে এই ভাষাটা থাকে, আপনি বলবেন না কেন? আপনার ভেতরে যদি মিনার ভাষাটা থাকে-

অর্ক: আপনি যে ভাষা ইউজ করতেছেন, এটা কি আপনি সচেতন ভাবে করতেছেন না? যেমন, আমি আপনারে এরকম বাতাসে না ঘুইরা আরো একটা স্পেসিফিক প্রশ্ন করি। ধরেন আপনি এই যে এলাহি শব্দটা ইউজ করতেছেন।

রিহা: হুম

রিহা: এলাহি শব্দটা, আমরা আমাদের ভাষায়, একটা সময় ইউজ করতাম। আমাদের ভেতরে ইউজ করতাম। আমরা তো ছোট বেলায় আমাদের বইপত্রে এলাহি ভরসা লিখতাম। এলান লিখতাম। কতো কিছু লিখতাম। এগুলা আমাদের ভাষা। আমরা ব্যবহার করেছি। আমাদের অভিজ্ঞতার বাইরে আমি কোন শব্দ ইউজ করি নাই।

অর্ক: আমার প্রশ্নটা সেখানেই, আপনি যখন-

রিহা: আমার বড়ভাই এখনো পর্যন্ত এলান শব্দটা এলাহি ভরসা শব্দটা কোন কিছু লেখার ক্ষেত্রে ইউজ করে।

রাকিব: মানে আপনারা ব্যবহারের ভেতরে আছেন? এই প্রশ্নটাই সে করছে।

অর্ক: সেটা বলতেছি, এই যে ব্যবহারটা, এই যে ব্যবহারটা আপনার, এবং আপনার গইড়া ওঠার মধ্যে শব্দটার ইউজ আছে।

রিহা: ছিলো, ছিলো

অর্ক: এই এলান শব্দটা, ঢাকায়, ধরেন কোরান আমি পড়ছি, সেন্ট জোসেফে। এলান শব্দটা তারা হয়তো চিনেও না। এরকম একটা স্পেইস । তো আপনি যখন কমিউনিকেট করতেছেন, আপনি কিন্তু এলানটা ইউজ করছেন। সেও এমন মতো, বাংলা ভাষায় অবস্থান করে যে, আসলে এটা পরিচিত না। তো আমার প্রশ্ন সেখানেই। আপনি কমিউনিকেটের কথা বলতেছেন তো আপনি নিশ্চয় শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে সচেতন। আপনি বললেন সচেতনতা আসে না।

রাকিব: সচেতনতা না ভঙ্গিও আছে।

রিহা: আমি শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়াটাকে এতো বেশী জরুরি মনে করি না। মানে আমি মনে করি যে, শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আপনি কোন কিছু চাপিয়ে দেবেন না, নিজের উপর চাপিয়ে দেবেন না । কিন্তু আপনি ধরেন..

রাকিব: কিন্তু আপনি যে ইকজিস্টিং ফর্মের মধ্যে আছেন, সেটা তো আগে থেকে চাপিয়ে দেয়া একটা ফর্ম। তখন আপনি কী করবেন, যদি এরকম সিচুয়েশন হয়? বাংলা যেহেতু বলতেছেন, বাংলার ক্ষেত্রেই দেখেন-

রিহা: হু

রাকিব: ফোর্ট উইলিয়ামের ঐ সময় থেকে, ১৮০১ সাল থেকে যে হইছে, আপনি দেখেন না, প্রথম বিশ পঁচিশ বছরে ঐ সময়, বাংলাভাষায় প্রায় শতাধিক ডিকশনারি লেখা হইছে। এবং ডিকশনারিগুলোর কাজ, আপনি ভূমিকা যদি পড়েন, তো স্পষ্ট তারা বলতেছে এই শব্দ মানে হচ্ছে লুফে মারা, লুফে নেওয়া এটা ব্রাকেটে দিয়ে দিছে, এটা লিখতে হবে কি ‘শূন্যে নিক্ষেপ করিয়া পুনরায়.. ‘ এরকম ঘরাণার একটা লেখা আছে। এবং এটা ব্যবহার করতে হবে। তারা বলছে। আরবী ফার্সি শব্দ এগুলা বাদ দিতে হবে। এই প্রজেক্টে হয়ে কিন্তু এই ফর্ম আসছে।

রিহা: হা, এই যে বাদ দিতে হবে যেটার কথা বলছেন

রাকিব: কিন্তু আপনি একজিস্টিং সিলসিলার মধ্যে থেকে-

রিহা: এমন তো হতে পারে, এমন হইতে পারতো যে, আমি যদি আসলে, সচেতনভাবে ফোর্টউইলিয়ামের ঐ সিলসিলার ভেতরে থাইকাও, থাকার সিদ্ধান্ত নিয়াও কখনো ভাষা চর্চা, মানে সাহিত্য চর্চা করা শুরু করতাম, সে ভাষাও আমার অবিকল ঐটার মতো হইতো না কখনো। এর ভেতরে আমার ভাষা থাকতো। মানে, আমার কথা হচ্ছে, আমি কোন ভাষা বিপ্লব করতে বসি নাই। ভাষা বিপ্লবটা হয়ে যাওয়ার ব্যাপার। মানে ভাষা বিপ্লবটা কোন সাহিত্যিক আলাদা ভাবে করে না। এটা হচ্ছে যে, এটা হচ্ছে যে একটা, ধরেন, কেউ কেউ হয়তো খুব সচেতনভাবে লিখলো যে, আমি এখন থেকে আওলাইয়া যাবো লিখবো, এধরনের, ধরেন, স্রেফ একটা ট্রেন্ডি ব্যাপার হইয়া ওঠার বাইরে, বানান, ভাষা বিপ্লব আলাদা কইরা কোন বিপ্লব না, নিজের পলিটিকস হাজির করতে না পারলে।

রাকিব: না, কিন্তু পৃথিবীর বুকে প্রচুর পলিটিকস আছে তো এরকম।

রিহা: হাঁ, আমি থাকাগুলাকে

রাকিব: ইজরাইল? ইজরাইলের হিব্রু ভাষা একটা মৃত ভাষা, আবার তারা পুনরুত্থান করছে। এখন অনেক সাহিত্যটাহিত্য হচ্ছে।

রিহা: তাই তো বলতেছিলাম। পুনরুত্থান প্রজেক্ট থাকতে পারে, পুনরুত্থান প্রজেক্ট, এটা তো হচ্ছে যে, আসলে একটা পলিটিক্যাল প্রজেক্ট এবং ভাষা নিয়ে এরকম পুরা পলিটিক্যাল প্রজেক্ট থাকতেই পারে। যেমন আমাদের একটা সময় ছিলো, একটা মুসলমানি ভাষা তৈরী করার চেষ্টা ছিলো আমাদের ভেতরে, হিন্দুয়ানি ভাষার বিরুদ্ধে, বাইরে। এগুলা কোনটাই খুব বেশী সফল হয় নাই। কিন্তু, ওগুলোতে অনেক অসাধারণ অসাধারণ সাহিত্যও লেখা হইছে, আপনি খেয়াল করবেন। আমি, আপনি শাহেদ আলীর গল্প পড়েছেন কখনো? শাহেদ আলীর গল্প যদি পড়েন, তাহলে তো আমি মনে করি যে, দুনিয়ার ইতিহাসে এধরনের গল্পলেখক খুবই কম।

রাকিব: একই সমতলে বা এ ধরনের

রিহা: খুবই কম। মানে এরকম লেখক খুব নাই। তো, শাহেদ আলীর গল্পগুলো তো এধরনের ভাষাতেই লেখা হয়েছে। এবং আমি খুব বুঝতে পারি যে, তার ভাষাটা এতো বেশী, মানে, কনস্ট্রাকটেড ভাষা, সে আমি মনে হয়না, সে বাস্তবে এ ভাষায় কখনো কারো সাথে কথা বলেছে, কমিউনিকেট করেছে। কিন্তু সম্ভব, এগুলাতে মহৎ সাহিত্যও সম্ভব।

রাকিব: এটা তো সাহিত্যের ভাষা, সাহিত্যের ভাষা তো পুরা কমিউনিকেশনের খুব ছোট একটা অংশ।

রিহা: হু

রাকিব: তাহলে-

রিহা: আমি তো, এখন পর্যন্ত আমরা যেটা আলাপটা করছি, সেটা হচ্ছে আমার সাহিত্যের ভাষা নিয়ে। আপনি কিন্তু বলেন নাই যে, আপনি কোন বোল বলছেন, সেটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে, বা এটা নিয়ে কথা আছে। বলছেন কি?

রাকিব: না

রিহা: আমি কিন্তু এখনো এক ধরনের ফোর্ট উইলিয়ামের ভাষায় কথা বলছি। এটা নিয়ে আমার কোনরকম ইয়ে নেই। কী বলবো-

রাকিব: না, আমরা তো বলছি না।

রিহা: গ্লানি নেই।

অর্ক: কিন্তু আপনি যে সচেতন হওয়া, সম্বিত হওয়া, অপরকে চিহ্নিত করার কথা বলতেছেন, আবার আপনি যদি বলেন ভাষার ক্ষেত্রে যে, এটা নিয়ে নিজের ইয়া করার দরকার নাই, এটা হয়ে যাবে, কিন্তু আপনি তো এটার অংশ হিশেবে আছেন-

রাকিব: পলিটিক্যাল কীভাবে হলেন আপনি?

অর্ক: আপনি এটার, এটারে যদি একটা সেট কল্পনা করি, আপনি তো এই সেটের বাইরে না। আইদার আপনি এইটার অংশ হইতেছেন, অথবা এইটার মধ্যে এটার যে গতিপ্রকৃতি, সেখানে আপনি কোথাও কোন অবদান রাখতেছেন, অথবা নিজেই এটার অংশ হইয়া ভাসমান থাকতেছেন। আমার কথা ওখানেই যে, এখানে যদি দেখেন, আপনার লেখার মধ্যে শব্দ ইউজগুলা যদিও আপনি বলেন, যেহেতু বলতেছেন, রাজনীতি, কোন কিছুই নিরীহ ব্যাপার না। শব্দচয়নও তো নিরীহ ব্যাপার না।

রিহা: একদম, মোটেই নিরীহ ব্যাপার না।

অর্ক: তাহলে আবার প্রশ্ন হইতেছে কি

রিহা: এবং বরং, আমি, এই যে, আপনার এ কথাটাই বলছি। মোটেই নিরীহ ব্যাপার না কোন জায়গায়? যখন আপনি এটা কন্সট্রাক্ট করেন। এটা খুবই নিরীহ ব্যাপার না। শাহেদ আলী যখন লিখলেন, একটা মুসলমানি ভাষায় গল্প লেখার চেষ্টা করলো, তো, কোনভাবেই এটা নিরীহ ব্যাপার না। এর রাজনীতিটা গুরুত্বপূর্ণ।

মিলু: আচ্ছা আমার একটা প্রশ্ন আছে

রিহা: বা রবীন্দ্রনাথ যখন বলেন যে, এই ভাষা, আমাদেরকে অনেকদিন ধরে এই ভাষাতেই লিখতে হবে। এটা কিন্তু কোন নিরীহ ব্যাপার না। কিন্তু আমি যখন বলি যে, না আমি রিফাত হাসান যখন লিখছি, আমি এই ভাষা নিয়ে আমার, মানে শুধুমাত্র ভাষা নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা নাই। এটাও কোন নিরীহ ব্যাপার না। ভাষা নিয়ে এই দুই প্রপোজিশনটাকে আমি অপোজ করছি তো।

রাকিব: কিন্তু রিফাত ভাই, ভাষাও তো বৃহত্তর পলিটিক্সের অংশ।

রিহা: অবশ্যই অংশ

রাকিব: ভাষার ব্যাপারে তো আপনার বড়ো পলিটিক্সের চিন্তা করলে, ঐটাও একটা ইনফ্লুয়েন্সার হিশেবে আসে।

রিহা: না, ভাষা ইনফ্লুয়েন্স হিশেবে আসবে। এবং ভাষার ব্যাপারে, ভাষার পলিটিক্সের ব্যাপারে, আমরা যেটা সবচেয়ে বেশী সচেতন হওয়া জরুরি মনে করি, সেটা হচ্ছে যে, সেটা অলরেডি আমি মনে করি যে, ভেঙে গেছে। সেটা হচ্ছে যে, আমাদের এখানে যেটা রাবিন্দ্রিক ভাষার কথা বলি, আমি এটার সাথে যুক্ত করি যে, রাবিন্দ্রিক রাষ্ট্র। তো, একটা পুতু পুতু সাহিত্যভাষা, যেটা তৈরী হয়েছিলো। এই, মানে, এই সাহিত্য ভাষা কিন্তু নিজে আলাদাভাবে কোন একটা নিরীহ ভাষার ব্যাপার ছিলো না। এটা একটা আদর্শ প্রস্তাব, মানে, আদর্শ, মতাদর্শ প্রস্তাব করে। কোন একটা জিনিস যখন কোন একটা মতাদর্শ প্রস্তাব করে, তার ব্যাপারে কিন্তু খুবই ক্রিটিকাল হওয়া, তারে ইয়ে করা, এটা খুব জরুরি। এটা যদি শাহেদ আলীও করে থাকেন, তার ব্যাপারেও। শাহেদ আলী এমন একটা ভাষা এখানে প্রপোজ করার চেষ্টা করেছেন, ধরা যাক, যে ভাষার শব্দ ও বোল মুসলমানি ছিল বটে, কিন্তু কোনভাবেই, এমনকি নিতান্ত কেজো ব্যাপারও ছিলো না, যে, আমাদের, যেসব মুখের আমরা বোল বলি, সে মুখের প্রাত্যহিক ভাষার, পুরোপুরি, মানে, কিছুটা কাছাকাছি কোন বোলও ছিলো না।

রাকিব: অর্থাৎ ধরেন, সাহিত্যের ভাষা হিশেবে সে অনেক হিন্দু শব্দও আনল। একজন কবি লেখার সময় এরকম অনেক কিছুই করতে পারে। কিন্তু অর্ক যে প্রশ্নটা তুলছিলো

রিহা: হু হু

রাকিব: মিনা কার্টুনের ভাষাটা নিয়ে, সে বলছিলো যখন একটা কমন গ্রাউন্ডে আমরা কাজ করবো, একটা দেশে ঢাকার, নোয়াখালী, কুমিল্লা, বরিশাল

রিহা: এরকম হতে পারে,

রাকিব: সে জাগা থেকে সে

রিহা: এটা হচ্ছে অনেকটা ল্যাংগুয়া ফ্রাংকা বলে না? তখন বলছিলাম। অনেকটা সেরকম ব্যাপার। এর থেকে বেশী কিছু না।

রাকিব: হাঁ ল্যাংগুয়া ফ্রাংকার কাছাকাছি

রিহা: হয়তো আমাদের বাঙালি অঞ্চলের জন্য এটা একটা ল্যাংগুয়া ফ্রাংকা বলা যেতে পারে।

অর্ক: আপনি যে বলতেছেন যে, রাবিন্দ্রিক ভাষা এবং রাবিন্দ্রিক রাষ্ট্র-

রিহা: রাবীন্দ্রীক রাষ্ট্র

অর্ক: রাবিন্দ্রিক রাষ্ট্র এটার ব্যাপারে আপনার একটা ক্রিটিক, অবস্থান হাজির করে। কিন্তু আপনার ব্যাপারেই এটা চালু আছে যে, আপনার ভাষা ব্যাবহারের মধ্যে রাবিন্দ্রিক ইয়া-

রাকিব: অনেকবেশী ইলিমেন্ট আছে।

অর্ক: ইলিমেন্ট আছে। আমার সেখান থেকেই প্রশ্নটা। আপনি বলতেছেন, আপনি এটার বিরুদ্ধে একটা অবস্থান রাখেন।

রিহা: হু

অর্ক: কিন্তু আপনার ব্যাপারেই তাহলে কেন এই কথাটা চালু আছে? আপনার রাবিন্দ্রিক ভাষার যে এস্থেটিক্যাল ইউজ যেটা, সেটা আপনার ভেতরে তো আছে।

রিহা: মানে, এটা থাকাটাকে আমি কোন ভাবেই সমস্যাজনক মনে করি না। আমি এটাকে বরং ইয়ে করি। কারণ হচ্ছে যে, মানে, ভাষা নিয়ে যখন আমি কথা বলি, শুধুমাত্র আমি কোন শব্দ ব্যবহার করছি, কোন এ-কার, ও-কার ব্যবহার করছি, কোন প্রত্যয় ব্যবহার করছি, ভাষা শুধু এটা না। ভাষা হচ্ছে একটা মুড। যে পলিটিকসটা ভাষাটা হাজির করছে, সেটা।

রাকিব: আচ্ছা

রিহা: যে মুডটা হাজির করছে সেটা। ভাষা ইটসেল্ফ কোন সমস্যাকর জিনিস না।

অর্ক: কিন্তু ভাষা তো একটা চিন্তার হাজিরা না? মনে করেন-

রিহা: মানে ভাষাটা যখন চিন্তা-

অর্ক: ভাষার কোন মুক্তি কি আপনি চান না? ধরেন, আপনি যেহেতু বলতেছেন যে, দাসত্ব, দাসত্ব

রিহা: ভাষার মুক্তির ব্যাপারটা-

রাকিব: ভাষার মুক্তি হয়তো, ভাষা যে দাসত্ব অবস্থায় আছে, সেটাই হয়তো তিনি পারসিভ করেন না, হয়তো এ কারণেই তিনি বলতেছেন

রিহা: না, ভাষার মুক্তির ব্যাপারটা, কোনভাবেই, আলাদাভাবে স্রেফ ভাষার মুক্তি না।

অর্ক: হাঁ।

রিহা: ভাষার মুক্তির ব্যাপারটা হচ্ছে, ধরেন, আমরা যে গত চল্লিশ-পয়তাল্লিশ বছর ধরে আমাদের যেটা সংগ্রাম, সে সংগ্রামটা কী? আলাদাভাবে ভাষার সংগ্রাম ছিল না কিন্তু। কিন্তু আমরা ভাষা, আমাদের ভাষার একটা রেডিক্যাল চেইঞ্জ আসছে। আমাদেরকে কি আলাদাভাবে ভাষা আন্দোলন করতে হয়েছে সেটার জন্যে? আমাদেরকে বরং যেটা করতে হয়েছে, সেটা হচ্ছে, আসলে আমাদের যেটা, আমি বলি যে রাবিন্দ্রিক ভ্যালু ব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধে আমাদেরকে লড়াই করতে হয়েছে। একটা সময় আমাদের টিভি নাটকগুলোতে ছিলো যে, ধরেন, মানে, কোন একটা কথা বলবেন, এই কথাটা শুদ্ধ প্রমিত ভাষায় ঠিকভাবে উচ্চারণ না করে যদি আপনি কথাটা বলেন, তাহলে এই কথাটা এক ধরণের ধর্ম অবমাননার মতো ব্যাপার হাজির ছিলো। এই ধর্ম অবমাননার ব্যাপারটা-

রাকিব: এখনো অনেক মানুষের ক্ষেত্রে আছে ব্যাপারটা-

রিহা: এখন কিছুটা এটা

রাকিব: কিছুটা কমছে।

রিহা: কিছুটা কমছে। ধর্ম অবমাননা ব্যাপারটা কেমন? আর কিচ্ছুই না, এই ভাষাকে একটা পবিত্র রূপ দিয়েছে রবীন্দ্রনাথ। তার থেকে আমরা আলাদা হইতে পারবো না এটাই, আর কিছুনা। তাইলে কিন্তু এটা খুব, মানে, ভাষার-

মিলু: আমার দুইটা কোয়েশ্চন একসাথে কইরা ফেলি। কোয়েশ্চন করার সময় পাইতেছি না। যাই হোক, সেটা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে আপনি কীভাবে বিচার চাইবেন? এক। দ্বিতীয় হচ্ছে, আপনি কোন ইজম ধারণ করেন কিনা।

রিহা: না, আমি কোন ইজম ইয়ে করি না। আর ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে হচ্ছে যে, বিচারের ব্যাপারটা হচ্ছে যে, আমরা তো, যতোই ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র হোক না কেন, আমরা তো তার ভেতরেই বসবাস করি শেষ পর্যন্ত। এবং বসবাস যে করি, সেটা আমরা, আমি তো বারবার বলি যে, আমি একটা, আমি যে একটা ভয়ের কিংডমে বসবাস করছি, সেটা, মানে, স্বীকার করেই আমাদেরকে কাজ করতে হয়। নইলে তো আরো অনেক কথা বলতাম, আরো অনেক কথা তো বলছি না, এক। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে যে, এই রাষ্ট্র বিষয়ে আমি কথা বলবো কীভাবে? কথা বলবো হচ্ছে যে, এই রাষ্ট্রের ব্যাপারে আমার অধিকারের জাগা থেকে। রাষ্ট্র আমাকে কী করছে সে জাগা থেকে না। রাষ্ট্রটার চরিত্র কী সে জাগা থেকে না। আমার চরিত্র কী রাষ্ট্রে? এটা হচ্ছে নাগরিকের কনসেনসাসের প্রশ্ন বা নাগরিকের নেসের প্রশ্ন।

রাকিব: হু

রিহা: রাষ্ট্র আমার উপর নিপীড়ন চালাচ্ছে। তার মানে, আমি রাষ্ট্রকে বলতে পারবো না যে, আমার উপর নিপীড়ন চালায়ো না? বলতে পারতে হবে। কারণ হচ্ছে, এই রাষ্ট্র কোন না কোনভাবে, আমার কনসেন্টের উপর দিয়ে, আমার আরো অনেক রকম, ধরেন, রাষ্ট্র যে, যে টাকা পয়সা খরচ করে, এই টাকা পয়সা তো আমার টাকা শেষ পর্যন্ত। কীভাবে বলেন, আপনি শেষ পর্যন্ত হয়তো মনে করতে পারেন যে, মানে পপুলার ঘটনাগুলো এরকম যে, তুই আবার কত টাকা দিছিস রাষ্ট্রকে?

রাকিব: না না, ট্যাক্স থেকে শুরু করে অনেক কিছুই তো-

রিহা: ঘটনা হচ্ছে যে, রাষ্ট্রকে আপনাকে প্রশ্ন করতেই হবে এবং বিচার চাইতেই হবে। বিচার যদিও রাষ্ট্র পুরোপুরি ইয়া করবেনা।

মিলু: বিচারটা তো ধরেন, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের ভেতরের ব্যাপার।

রিহা: না, প্রতিবাদ, শেষ পর্যন্ত প্রতিবাদ তো বিচার হয়না। প্রতিবাদটা হচ্ছে আপনার পলিটিক্যাল মুভমেন্টের একটা প্রসেস মাত্র।

মিলু: হুম

রিহা: বিচারটা চাইতে হবে। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের কাছে চান বা নন ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের কাছে চান।

মিলু: ফ্যাসিস্টের কাছে কীভাবে ফ্যাসিস্টের বিচার চাই

শোয়েব: আরো স্পেসিফিকভাবে যদি বলি যে, রাষ্ট্রকে শুধুমাত্র রাষ্ট্র আকারে দেখতেছি না আর কি, রাষ্ট্র বা প্রতিষ্টানগুলারে যে আমরা রাষ্ট্রভাবাদর্শ যেখানে বলি

রিহা: আচ্ছা

শোয়েব: প্রতিষ্ঠানগুলার উপর তো রাষ্ট্রের অলরেডি মানে যখন

রাকিব: নিয়ন্ত্রণে আছে

রিহা: হু হু

শোয়েব: তার ভাবাদর্শটা অলরেডি সে স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, আদালত এখানে পৌছাইয়া দেয়। অথবা ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়া নেয়।

রিহা: হু

শোয়েব: ভাবাদর্শটা।

রিহা: হু

শোয়েব: তো তাহলে তো যখন আমি যখন বিচার চাচ্ছি, তখন বিচার চাওয়ার মধ্যে তো

রাকিব: ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো আগেই ফ্যাসিস্টঅনুগামী

শোয়েব: ঐ প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে বিচার করবে, এরা তো রাষ্ট্রের ভাবাদর্শের বাইরের কিছু না

রিহা: আমরা যখন কথা বলি, আমরা যখন রাষ্ট্রের ব্যাপারে কথা বলি, রাষ্ট্রের কাছে কোন কিছু চাই, তখন একটা শব্দ বলি, দেখবেন যে, ন্যূনতম নাগরিক অধিকারের জাগা থেকে আমরা মনে করি, রাষ্ট্র চাইলেই এই কাজ করতে পারে না। আমার উপর এ কথা বলতে পারে না। আমরা সীমিত করে নিয়েছি নিজেকে যে, আমি আসলে শুধুমাত্র নাগরিক অধিকারের জাগা থেকে কথা বলছি। আর কিছু না। রাষ্ট্র আমারে যে অধিকার দিয়েছে, এই রাষ্ট্র যতোই আমার উপর ইয়া করুক না কেন, আমাকে অধিকার দিয়েছে। আমি যদি তোমার উপর নিপীড়ণ চালাই, তোমার অধিকার আছে, তুমি গিয়ে হাইকোর্টে এটা বলবা। আমি রাষ্ট্রের কোন কিছুর বাইরে যাচ্ছি না তখন।

মিলু: আচ্ছা, আপনি যে আলাপ করতেছেন ফেইসবুক পোস্টে, যে, আমি কোট করি, ওখান থেকে আলাপ হইতে পারে। জাস্ট মূল টোনটা শুনি। সেটা হচ্ছে যে, এরকম যে, হাইকোর্টের কথা বললেন, মানে হাইকোর্টে তো আপনি ঈমান আনতেছেন না, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের। এরকম একটা ব্যাপার।

রিহা: আমি কখনো এরকম আলাদাভাবে বলিনাই। এরকম বলা আমার পলিটিক্সের ইয়াতে যায়না। আমি বলি না। তবে হাইকোর্টে আমি ঈমান আনতেছিনা, এটা, আমি হয়তো হার্কোর্টের উপর মানে-

মিলু: ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের

রিহা: ঈমান তো আনা না আনার প্রশ্ন না। ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের হাইকোর্টের উপর তো ঈমান আনা না আনার প্রশ্ন না। হয়ত ঠাট্টাস্বরে কারো ব্যাপারে, হয়তো কোন একটা কমেন্ট করতে পারি। এটা মানে

অর্ক: স্পেসিফিকভাবে

রিহা: স্পেসিফিকভাবে এটা হচ্ছে যে কি হাইকোর্টের ব্যাপার

অর্ক: আমি একটা জিনিস ধরাই দিই আপনাকে

রিহা: জ্বি, প্লিজ

অর্ক: সেটা হচ্ছে আপনি মামলা করার ক্ষেত্রে

রিহা: হু

অর্ক: আপনি একটু আগে বললেন যে, এইটা রাষ্ট্রটা যদি এরকমও হয়, ফ্যাসিস্টও হয়, তারপরও আমার তার কাছেই ন্যূনতম অধিকারের জায়গা থেকে চাইতে হবে। কিন্তু আপনি মামলা করার ক্ষেত্রে বলতেছেন যে, এই রাষ্ট্র মামলাবাজ রাষ্ট্র, ফলে মামলা করতে আমি ডরাই। তাইলে যদি একটা নাগরিক, তার যেহেতু অন্য জায়গায় রাষ্ট্র ছাড়া আর কোন পৃথিবীতে, দুনিয়ায় কোন জায়গা নাই

রিহা: হু

অর্ক: তো এখন আমরা দেখতেছি যে রাষ্ট্র ছাড়া যারা আছে তারা আসলে রাষ্ট্রের ভেতরে যারা আছে তার থেকেও খারাপ দশায় আছে।

রিহা: হু

অর্ক: তো এই যে, মানে এইরকম রাষ্ট্রের মধ্যে থেইক্যা, মামলাবাজ রাষ্ট্রের মইধ্যে থেইকা, মামলাবাজ রাষ্ট্র দেখা গেলো যে, নিরীহরেই মামলা দিয়া রাইখা দিতাছে। সেরকম একটা জায়গায় আপনি বলতেছেন যে, কোথাও কোন যদি ধরা যাক, আসলেই প্রবলেমে পড়লো, কোন নাগরিক, তো সেটা মামলার ব্যাপারে আপনি ইয়া করতেছেন।

রিহা: এটা হচ্ছে কি ধরেন, মানে মামলাবাজ রাষ্ট্ররে তো ডরানোর ব্যাপার আছেই। এবং আমি তখন

অর্ক: যে রাজ্যে মামলাতে এড়ানো-

রিহা: মামলা তো এড়ানো সবার উপরে, মামলা এড়ানো, শুধু এড়ানো না, এই যে আমাকে রাকিব কিছুক্ষণ আগে একটা কথা বলছিলো যে, একটা অল্টারনেটিভ ডিসপিউট রিজল্যুশন সিস্টেম, যেটা ছিলো আমাদের ভেতর, এটার ব্যাপারেও যাবতীয় আলাপটা হচ্ছে, মামলাগুলোকে ডরানোর একটা ব্যাপার। মানে শুধুমাত্র রাষ্ট্র মামলাবাজ হওয়ার ব্যাপার না, মামলা ইটসেল্ফ একটা ডরের ব্যাপার শেষ পর্যন্ত। কিন্তু এই প্রসেসের ভেতর দিয়ে যেহেতু আপনাকে যেতে হবে, তখন তো আপনার নিজের ন্যায্য অধিকারটা চাইতে হবে। আপনি যদি বলেন যে, না, আপনি গেলেন, আপনি তো জননেত্রী পরিষদে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করবে, আপনি চান বা না চান। তাহলে কী করবেন?

অর্ক: কিন্তু তাইলে নিজের হাতে আইন তো তুলে নিতে আপনি

রিহা: আপনার দুইটা পথ আছে। আপনার দুইটা পথ আছে এইটা নিয়ে। একটা পথ হচ্ছে যে, আপনি পলিটিকস করবেন, যে এটার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করবেন। আরেকটা পথ হচ্ছে যে, ঠিক আছে, মামলা হয়েছে, আপনি এইটারে ফেস করলেন, মুখোমুখি হলেন। তো এই দুইটা পথ তো আসলে কোনটাই খুব একটা পারফেকশন নিয়ে আসতে পারবে আপনার জন্যে সেটা না, বরং প্রশ্ন হচ্ছে যে, কোনটাকে আপনি প্রয়োরিটি দিবেন? কোনটা এই মুহূর্তে কেজো? যেমন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে, ধরেন, যতোরকম মামলা হইছে, বলা হয়, এটা তো হচ্ছে একটা পপুলার নোশন আমাদের ভেতরে, সবাই জানে, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলাগুলো হচ্ছে যে, পলিটিক্যাল। তো, এটাকে আইন দিয়ে, বিএনপির মতো একটা বড় দল যখন এটাকে আইন দিয়ে মোকাবেলা করতে চায়, আমি বলি যে, এটা পলিটিক্যাল হলো না। ঘটনাটা পলিটিক্যাল হলো না। ওরা পলিটিক্যালি এইটারে সলভ করতে পারলো না। রাজনীতিকে রাজনীতি দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়। এ ধরনের ঘটনাগুলো সাধারণত সলভ হয় মাঠে।

রাকিব: মাঠে কি মানে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে?

রিহা: রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের দরকার নাই। শুনেন-

মিলু: হাঁ হাঁ

রিহা: জগতের সব জিনিস যে শুধুমাত্র রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যে শেষ হয় সেটা না। মানুষ যখন

রাকিব: বাট এই ধরেন, এই ক্ষেত্রে আপনি-

রিহা: মানুষ যখন তার অবস্থান বুঝাই দিতে সক্ষম

রাকিব: এই ক্ষেত্রে মাঠে কীভাবে হতে পারে, ধরেন?

মিলু: আচ্ছা, আমি মাঝখানে একটু বলি

রিহা: হা

অর্ক: এই আলাপের সাথে রিলেটেড?

মিলু: হাঁ, এই পর্যায়ের সাথে লিংক আছে সে জন্য বলা। একজন নির্যাতিত নাগরিক, যখন ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রের সাথে বিচার চায়, ধরেন, আইন আদালত কোর্ট কাচারিতে চাইতেছে। সেখানে আবার তার নির্যাতিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

রিহা: সম্ভাবনা আছে; হানড্রেড পারসেন্ট আছে।

অর্ক: হাঁ, এই ক্ষেত্রে আপনি তাকে কীভাবে

রিহা: এই ক্ষেত্রে আমার আসলে তার জন্যে কোনরকম সাজেশন নাই। আমি জানি যে, আমার আবার ওখানে নির্যাতিত হওয়ার সুযোগ, মানে সম্ভাবনা আছে, সেই সম্ভাবনা সহ আমরা ভয়ে ভয়ে ওখানে যাবো, অথবা ওখান থেকে আমরা পালিয়ে বেড়াবো। আপাতত আমার জন্য দ্বিতীয় বা তৃতীয় কোন পথ নাই।

রাকিব: আচ্ছা, আপনি মাঠের ইয়াটা বললেন, বিএনপির ক্ষেত্রে, মাঠের কোয়েশ্চনটাতে আপনি যদি একটু থাকেন যে, আপনি বললেন না যে, মাঠের সলিউশন। বিএনপির ক্ষেত্রে এখন আসলে মাঠের পলিটিকসরে পলিটিক্যালি কীভাবে আসলে ডিল করা সম্ভব? আপনি বলেন।

রিহা: আলাদাভাবে বিএনপি কীভাবে ডিল করবে সেটা আমার বলার কাজ না।

রাকিব: না, মানে, বিএনপিকে একটা আলাদা পার্টি হিশেবে দেখেন, বিএনপিকে নট বিএনপি হিশেবে দেখবেন-

রিহা: মানে, পলিটিকস কীভাবে ফাংশন করে, সেটা আমি বলতে পারবো আপনাকে।

রাকিব: হাঁ হাঁ।

রিহা: আলাদাভাবে বিএনপির কাজ হিশেবে বলা আমার কাজও না, আমি বলবোও না এটা। কিন্তু পলিটিকস কীভাবে ফাংশন করে? পলিটিকস ফাংশন করে যে, ধরেন, আমাদের এখানে যে শেখ হাসিনা, আমাদের এখন প্রধানমন্ত্রী। আমরা জানি, মেনে নিয়েছি যে, উনি একজন ভ্যালিড প্রধানমন্ত্রী। ফলত উনি, একজন হচ্ছে যে, বৈধ প্রধানমন্ত্রী।

রাকিব: কীভাবে?

রিহা: কীভাবে সেটা বলছি। বৈধতা ব্যাপারটারে আপনি কীভাবে দেখেন? বৈধতা ব্যাপারটারে আপনি যেভাবে দেখেন, সেটা হচ্ছে যে, ধরেন, মানে সে আইনি ভাবে-

রাকিব: আমার, পাবলিকের কনসেন্ট আছে কিনা

রিহা: এইটা হচ্ছে যে বৈধতার আরেক আলাপ, অনেকটা দার্শনিক। কনসেন্ট আছে কি নেই। সে আলাপে পরে আসছি। কিন্তু বৈধতা বিষয়ক পাবলিকের পপুলার নোশনটা খেয়াল করুন। যেটা পপুলার নোশন, আমাদের এখানে যেটা, আমরা সবাই মানি, বৈধতার ব্যাপারে, সেটা হচ্ছে যে, সে লিগ্যালি বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। সে জাগা থেকে সবাই বলে যে, এটা বৈধ কি বৈধ না। এখন হাসিনা কি লিগ্যালি বৈধ, সে জাগা থেকে? আমরা দেখি যে, শেখ হাসিনা, ধরেন অন্তত যেসব জিনিসগুলা প্রকাশিত হইছে মিডিয়ায়, এগুলার ক্ষেত্রেও সমালোচকরা বলেন যে, শেখ হাসিনা একজন বৈধ প্রধানমন্ত্রী না, সাধারণভাবে। কিন্তু কখন বৈধ প্রধানমন্ত্রী? যখন আমরা এটা মেনে নিচ্ছি। আমাদের কনসেন্ট আছে শেখ হাসিনার প্রতি। আমাদের যদি কনসেন্ট না থাকতো, আমরা তো হাসিনার বিরুদ্ধে বলতাম যে, আমরা আপনাকে মানি না। আমরা সবাই বলছি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।

রাকিব: না, অনেকেই বলছে না।

রিহা: মানে আমরা নিরব থাকি। মানে হচ্ছে যে-

রাকিব: বলছে না

রিহা: মানে হচ্ছে যে, আপনার কনসেন্টটা অতো দৃঢ় না। হাসিনার বিরুদ্ধে আপনার যেটা কনসেন্ট দাঁড়াচ্ছে-

রাকিব: এটা দৃঢ় করতে-

রিহা: এটা এখনো পলিটিক্যালি ভায়েবল হয়ে উঠতে পারে নাই।

রাকিব: এখন আমাদের দৃঢ় করতে-

রিহা: যতোক্ষণ পর্যন্ত এটা পলিটিক্যালি ভায়েবল হয়ে উঠতে পারবে না ততোক্ষণ পর্যন্ত

রাকিব: আপনি এটা জানেন, এরকম একটা পরিস্থিতি আছে, আপনি ডিরেক্ট কেন, আপনি জাস্ট এই পার্টির একজন উপরের নেতার নাম নিয়ে বললেন, তো, ঘুমেও আপনি গুম হয়ে যাইতে পারেন, ব্লাসফেমির মতো অবস্থা হয়ে গেছে। আওয়ামী ঐ যে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা ক্ষ্যাপ এসব ব্লা ব্লা-। তখন আপনি দৃঢ় প্রতিবাদ করা বলতে কী? আপনি হচ্ছে, এটা করাটা, এখানে তো করা সম্ভবই না। আপনি দৃঢ় প্রতিবাদ বলতে, মাঠের রাজনীতিতে মাঠে নেমে প্রতিবাদ করা বলতেছেন? বামরা যেরকম ডাকে, আসো, রাজপথে আসো। রাজপথে নামার কথা বলতেছেন? এর বাইরে আসলে আপনি কী তাহলে-

রিহা: আমাদের পলিটিকসের প্রসেসগুলা তো অনেকরকমের হয়, তার একরকম একটা অংশ হচ্ছে যে, মাঠে নেমে প্রতিবাদ করা। এটা হচ্ছে, খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ঘটনা। কেন বলি, আমাদের এখানে বলা হয়, যেটা বোঝানো হয়, সেটা হচ্ছে যে, মাঠে নেমে যে প্রতিবাদ করার সক্ষমতা দেখাবে, তার পক্ষে বাংলাদেশের মানুষ।

রাকিব: হু

রিহা: এই জিনিসটা হচ্ছে যে, মানে ধরে নেয়া হয় যে, ঠিক আছে, তার জন্যে মানুষের কনসেন্ট দাঁড়িয়ে গেছে। সেজন্য, আপনি দেখবেন, যেদিন খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মাঠে, পঞ্চাশ হাজার লোক জড়ো করে, একটা প্রটেস্ট করতে সক্ষম হবে, সেদিন দেখা যাবে, বর্তমান রেজিম আর আগের বৈধতা নিজেই ফিল করতে সক্ষম না, বা মনে করতেছে না যে, আমি আর বৈধ।

রাকিব: আচ্ছা

রিহা: এটা কোন না কোনভাবে, সে, মানে এটারে সামাল দেয়ার চেষ্টা করবে, সে সামাল দিতে যখন পারবে না, তখন বুঝতে পারবে যে, না, এটা হচ্ছে আমার লাস্ট অবস্থা, যে অবস্থায় আমার অন্য কিছু চিন্তা করতে হবে। এভাবে করলে হবে না।

অর্ক: আমি যদি একটা কথা বলি যে, এই কথা দিয়া আসলে আপনি কনশাসলি হতে পারে বা আনকনশাসলি জনতারে দুষতেছেন।

রাকিব: হাঁ আমারও তাই মনে হচ্ছে

রিহা: আনকনশাসলি জনতা? রেসিস্ট করছে?

অর্ক: মানে, হয় সচেতনভাবে অথবা অসচেতনভাবে জনগনরে দুষতেছেন।

রাকিব: একটা পপুলার কথা আছে, শুনতে ভালো লাগে

অর্ক: সে জনগনরে, যে কিনা ভয়ের রাজত্বের ভেতরে আছে।

রিহা: শুধুমাত্র ভয়ের রাজত্বের প্রশ্ন না।

রাকিব: একটা পপুলার কথা আছে এটার ব্যাপারে, যে দেশের জনগন যেমন, শাসকও তেমন । এরকম একটা পপুলার কথা আছে।

রিহা: এইটা মহাভারতের এরকম একটা কথা আছে।

রাকিব: খুবই ফাত্রা কথা

রিহা: না না, ফাত্রা কথা না, এইটা কোনভাবে ফাত্রা কথা না, এটা খুবই জরুরী কথা এই অর্থে যে, আমি আপনাকে বলেছি যে, একটা সমাজের ভেতরে যখন, মানে, আপনার টোটালিটারিয়ান ভ্যালুগুলা লিড করে, তখন রেজিম প্রধান টোটালিটারিয়ান হইলো কি হইলো না এটার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে, আমরা খোদ টোটালিটারিয়ান। এটা, আমাদের দায়টা কোন জায়গায়? আমাদের দায়টা হচ্ছে যে, এই জায়গায় যে, আমরা কিছু ভ্যালু ব্যবস্থার উপরে, ধরেন, হয় নিজেরা বিশ্বাস করছি অথবা নিজেরা তার দাস। একটা জায়গায় হচ্ছে যে, আমরা বিশ্বাস করছি যে, বাংলাদেশে অমুক অমুক বিষয়ে এভাবে এভাবে যারা যারা কথাবার্তা বলবে, তাদেরকে আমরা গুম করবো, খুন করবো, গ্রেফতার করবো। এটা, আমরা যারা, ধরেন, এই রেজিমের বাইরে আছি, তারাও এইটা মনে করে। আমাদের এখানে ধরেন, একটা পপুলার ইয়া হচ্ছে ধরেন, একটা খুবই জনপ্রিয় ঘটনা হচ্ছে, বাংলাদেশের আলেম উলামারা এখন অনলাইনে খুবই এক্টিভ। ইউটিউব ভিডিও আছে তাদের। মাঠে তাদের লক্ষ লক্ষ লোক হয়, একটা রাজনীতির দলের মতই বা তার বেশি লোক হয়। কিন্তু এই জনগন কারা? যারা তাদের ইয়ে করছে? তারাই, যারা মনে করে যে, অমুক ফেরকা আমাদের বিরুদ্ধে লাগতে আসছে, এদেরকে গ্রেফতার করো, এদেরকে বাইর করে দাও।

রাকিব: এই যে কয়দিন আগে, হেফাজতের সভাপতি ইয়া করছে যে, আহমদ

রিহা: রাইট।

অর্ক: কিন্তু এটাতো

রিহা: এটা তো হচ্ছে যে, শুনেন, আম মানসিকতা যে, আমরা আমাদের প্রতিপক্ষের কাউকে সহ্য করবো না, জাগা দেবো না। স্পেস দিবো না। স্পেস না দেয়ার অর্থে যদি আপনি থাকেন, আপনি স্পেস দেবেন না, তো শেখ হাসিনা কেন আপনাকে স্পেস দিতে বাধ্য? আপনি তো সেই জাগায় নাই, আপনি তো সে ভ্যালু ব্যবস্থার অংশ না। আপনি যদি মনে করেন যে, আমরা এমন একটা কমন কনসেনসাসে আসছি যে, আমরা এই এই জায়গাগুলিতে আমরা মনে করি, আমরা সবাই সবাইকে এভাবে স্পেস দিতে বাধ্য। আমরা এটা মনে করতে যেদিন পারবো, সেদিন শেখ হাসিনাও বাধ্য হবেন আমাদেরকে ভোটের অধিকার দিতে। এখন আমরা সেভাবে মনে করি না প্রত্যেকে।

অর্ক: আমার মনে হয় আপনি দুইটা জিনিস দেখতেছেন, একটা হইতেছে, যে, আপনি একটা বৈধতার যাছাই করলেন, যেইটার ন্যাসেসারি শর্ত হইতেছে, আপনার মাঠে থাকা। অর্থাৎ মাঠে অবস্থান করা। তাছাড়া আমরা বুঝতেছি না যে, কোন প্রকার ডিসেন্ট আছে। ডিসেন্ট মানে হচ্ছে যে, কোনরকম প্রতিরোধ আছে। এটা হচ্ছে একটা।

রিহা: একটা; গুরুত্বপূর্ণ জিনিস

অর্ক: তারপরের এজামপশন, মাঠে থাকা ছাড়া আমরা, যেটা পলিটিক্যাল সাইন্সের যদি কোন টিচাররেও জিগেস করি, সেও কিন্তু একই কথা বলে। বলে যে, নির্বাচন বৈধ হয় নাই, যদি তাই হয় তাইলে তো মাঠে লোক দেখতাম, জনগনের একটা সমাগম দেখতাম।

রিহা: ওকে

অর্ক: আরেকটা বললেন যে, জনগন টোটালিটারিয়ান যার কারণেই আরকি আমরা এই টোটালিটারিয়ান দশায় আসছি।

রিহা: আচ্ছা।

অর্ক: কিন্তু, আপনি যখন এটার উদাহরণ আকারে আনলেন যে, এই এক ফেরকার লোক আরেক ফেরকা দিয়ে, আপনি, জনতার যতোগুলা শরীক আছে, সেটার মধ্যে কোন শরীক যদি রাষ্ট্র যে চালাইতেছে, তার সাথে তারে একটা বেইনসাফি কাজ করায়, সেখানে অন্য শরীকদের, যে রাষ্ট্র চালাইতেছে সে কিন্তু ঐ শরীকের প্রতি দয়া করতো না, সে কিন্তু সকল শরীকের প্রতিই দয়া করতো। যার কারণে সে কেবল এক শরীকের সাথে হাত মিলায়া অন্যদের ব্যবস্থা করে দিবে তা কিন্তু না। ফলে আল্টিমেটলি এই শরীকের দায়টা যে অর্থে অন্যান্য শরীকের উপর পড়তেছে না। বরং এই পুরা শরীকের দায়টা এর থেকেও বেশী এর উপরেই পড়তেছে। মানে ধরেন, আমি এই ঐ না দিয়া আমারে আপনারে সরকার বললাম।

রিহা: হু

রাকিব: ভাই, সংক্ষেপে বলেন

অর্ক: আমি হইলাম ধরেন, হেফাজত। আমি বলতেছি কি ‘ওরে আমার পছন্দ না, ও এই এই ট্যাগটা নিয়া ঘুরে, ও ঐ ট্যাগটা নিয়ে ঘুরতে পারবে না। আপনি এটার ব্যবস্থা করে দেন, নাইলে আমি আপনারে জাগা দিমু না। বা আপনার সুবিধা আমি দিবো না।’ কিন্তু আপনি তো এটার জন্যে এখানে দাঁড়ান নাই। আপনি যখন যেখানে আছেন, মানে রাষ্ট্র ব্যবস্থা চালাইতেছেন তখন আপনি আমার জন্যেও দাড়াইছেন, ওর জন্যে, ওর জন্য, ওর জন্যেও দাঁড়াইছেন। তাই না? কারণ আপনি ওর থেকেও টেক্সট লন, ওর থেকেও লন, আমার থেকেও লন। এখন আপনি যেটা করলেন কি, আপনি আমারে সাথে হাত মিলালেন, মানে মনে করলেন যে আপনি, আমি থাকলে সুবিধা আপনার, আপনি ঐ জায়গায় থাকতে পারবেন। কারণ আপনিও দেখতেছেন যে, এরা দুইজন আসলে মাঠে নাই। এ মাঠে আইতে পারে, ফলে আমার নাইমা যাওয়ার একটা ভয় আছে। তো না আমি, এর লগে একটু হাত মিলাইয়া চলি, এরা তিনজন তো আসলে আল্টিমেটলি মাঠে নাই। তো ফলে আপনি কী করলেন? ওরে বাদ দিয়ে দিলেন, ওরে খারিজ করে দিলেন। তো এখানে তো, এর দোষটা এই তিনটা লোকের উপর পড়ে না। পড়ে তো আপনার উপর। কারণ, আমি তো ওর থেকে ট্যাক্স নিইনা। আপনি লন ওর থেইকা ট্যাক্স। ফলে এই যে বলা যে, জনগন টোটালিটারিয়ান এর কারণেই সরকার টোটালিটারিয়ান। ঘটনা তো তা না। আমরা দেখতেছি যে,

রাকিব: জনগনের ছোট্ট একটা অংশ টোটালিটারিয়ান হইতে সাহায্য করতেছে।

অর্ক: দেখতেছি যে, বিভিন্ন টাইমে টোটালিটারিয়ানের, মানে, প্রভাব হইতেছে। সেখানে যে গভর্মেন্ট সে কোন একটা শরীকের সাথে হাত মিলায়া চলতেছে।

রাকিব: বাকিদের সবকিছু-

অর্ক: এবং ওরই স্বার্থে। এবং আপনি বলতেছেন ঐ লোকগুলারে, যে মাঠে হাজির নাই, ফলে তার মানে তো বৈধতা আছে। তাহলে দেখেন, আপনি যে জুলুমের মধ্যে আছে, তাদের, সে যে ভয়ের মধ্যে আছে আপনি তারেই দোষারোপ করতেছেন।

রাকিব: রিফাত ভাই এবার বলুক

রিহা: হ্যাঁ, মানে

অর্ক: হ্যাঁ এবার আপনি বলেন

রিহা: এটা তো অলরেডি বলে ফেলেছি, যে ভয়ের মধ্যে আছে, তারে অলরেডি দোষারোপ করছি, কারণ হচ্ছে যে, মানে, আপনি যখন, মানে, সক্ষমতা দেখাবেন না, পলিটিকস তো একটা গেইমের ভেতর দিয়ে চলে। ধরেন, আপনি সক্ষমতা কীভাবে দেখালেন? ১৯৭১ সালে ৭ই মার্চ যে ঘটনাটা ঘটলো, এটা কিন্তু একটা সক্ষমতা দেখানোর ব্যাপার। ৭ই মার্চের ঘটনাটা যদি না ঘটতো, এর পরবর্তীতে এতো দ্রুত মুক্তিযুদ্ধ ঘটতো কিনা সন্দেহ আছে। এটা হচ্ছে যে, সক্ষমতা দেখানোর ব্যাপার। রাষ্ট্রে, পলিটিকস তো এভাবে ফাংশন করে। আমি সে গ্রামারের কথা বলছি। আমি, এটা, কোনরকম তারে বৈধ অবৈধ হওয়ার প্রশ্নের ব্যপার না। বলেছি, পপুলার নোশন। এটা হচ্ছে যে, বৈধ অবৈধতার পপুলার নোশনগুলো এভাবেই ফাংশন করে।

অর্ক: তাহলে-

রিহা: আমি তো জানিই যে , ওটা হচ্ছে যে কেজো, কাজের ব্যাপার। কাজটা কীভাবে হচ্ছে আমাদের এখানে। যেমন কাজটা হওয়াটা হচ্ছে যে, ধরেন, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল যদি ধরি বিএনপিকে। নরমালি যেটা, পপুলার ধারণা তো এটাই। তো তারা করতে পারছে না কেন? করতে পারছেনা যে, তারা, মানে ধরেন, নানানভাবে, কোন না কোনভাবে, যারা ভয় পাচ্ছে, যারা মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে, তারা কারা? তারা হচ্ছে কোন না কোন ভাবে সরকারের কোনরকম সুবিধাভোগী হয়ে আছে। আটকা থাকে বিভিন্ন সময়ে। এই সুবিধাভোগী থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করা যায় না। আমাকে প্রটেস্ট করতে পারবেন না। মাঠের নেতাকর্মীরা যদি চায়ও, আপনি নেতা, সে ঠিকঠকই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করতে গিয়ে সে তার ব্যাক্তিগত জিনিসটা সে নেগোশিয়েট করে নিচ্ছে, নিশ্চয়ই আপনারা খেয়াল করবেন। এটা ফাংশন করে এভাবে। আমি এখানে বৈধতা অবৈধতার ব্যাপারটা যেটা বলছি, সেটা হচ্ছে যে, পপুলার নোশনটা এভাবেই ফাংশন করে। এর অর্থ এই না যে, আমি মনে করি শেখ হাসিনা রেজিম, বৈধ অবৈধতার ব্যাপার আমি যেভাবে বলছি, সেভাবে, বৈধ হিশেবে একজিস্ট করছে।

রাকিব: আচ্ছা আমরা মনে হয়-

অর্ক: অল্পতে একটা বুঝাই দেই। তারপর শেষ করছি। সেটা হইতেছে যে, দেখেন আপনি সক্ষমতার প্রশ্ন এমন একটা লোকরে করতেছেন

রিহা: হু

অর্ক: যে একটা জুলুম মানে জুলুমের রাজত্বের মধ্যে ভয়ে আছে। ফলে এই যে একটা মানুষ ভয়ে

রিহা: যে ভয়ে আছে, তার পলিটিক্যাল-

অর্ক: ভয়ে থাকা মানুষটারেই আপনি আবার বলতেছেন যে, তুমি ভয়ে আছো কেন? তোমার তো মাঠ কাঁপায়ে দেয়ার কথা।

রিহা: না না না, যে ভয়ে আছে, আপনি যখন পলিটিকস করছেন, তার কাজটা কী? আপনি একা কোন কথা বলা? নাকি আপনার সংঘটিত হওয়া? পলিটিকস যখন করছেন, তখন আপনি একা কথা বলার ব্যাপারটা না। ধরেন, বিএনপির, বিরোধী দলের লোকজন ভয়ে আছে। বিএনপির লোকজন যদি বাংলাদেশের একটা বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, সমর্থন পায়-

অর্ক: হু

রিহা: তাহলে তারা ভয়ে আছে, এই জিনিসটা হচ্ছে ফাউ ঘটনা। ভয়ে তো থাকবেই। একটা রেজিম, আতঙ্কে রাখছে, ভয়ে থাকবে না? কিন্তু ধরেন, বিএনপির লোকজন যদি দাবি করে যে, আমরা দেশের এতোগুলা মানুষের প্রতিনিধিত্ব করি, তাহলে ততোগুলা মানুষ, অন্তত তাদের কিছু অংশ, তার হয়ে, মানে এটা হচ্ছে যে, ফাংশনালি কথা বলতে হবে। মানে, ফাংশনালি কথা বলার জায়গাটা তো নাই। এটা সরকার করে দিয়েছে তা না, এটা এরাও করে দিয়েছে। মানে হচ্ছে যে, আমি যেটা দেখি, সেটা হচ্ছে, আমি যদি শেখ হাসিনার হিস্ট্রিটা দেখি, যেটা করছে সে, সেটা হচ্ছে যে একদম, মানে পাঁচই মার্চ নাকি পাঁচই মে’র ঘটনা? যেটা

রাকিব: হেফাজতটা?

রিহা: মানে হেফাজতের ঘটনা যেটা মতিঝিলে যে ঘটনাটা ঘটছে

রাকিব: ৫ই মে

রিহা: পাঁচই মে’র ঘটনা। পাঁচই মে’র ঘটনা যেটা মতিঝিলে ঘটেছে। আমি যেটা বুঝি, সেটা হচ্ছে যে, মানে, এটা হচ্ছে একটা, তার আগের ব্যাপারটা এবং এ ব্যাপারটা ছিলো একটা এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাপার ছিলো। একটা এক্সপেরিমেন্টাল ব্যাপার, যখন দেখি যে না, এটা আমরা বিনা বাঁধায় সক্ষমতার সাথে কাজটা করে ফেলেছি। কেউ প্রটেস্ট করছে না। তার মানে হচ্ছে, কেউ প্রটেস্ট না করা মানে, এটা সাধারণভাবে পপুলার কনসেনসাস হচ্ছে, ধরে নেয়া যে, এটা হচ্ছে মানুষের এটার ব্যাপারে কনসেন্ট আছে। আপনি শেখ হাসিনাকে আপনি অভিজ্ঞতা নিচ্ছেন বলে বলতে পারেন। শেখ হাসিনা একটা ইয়েতে আছে। ইরানের ব্যাপারে যখন আপনি কথা বলেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের ভেতরকার প্রটেস্টের খবরগুলা বাইরে না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি মনে করছেন যে, না এদের যারা শাসকগোষ্ঠী, তারা আসলে জনগনের প্রতিনিধিত্ব করে। পপুলারলি। কিন্তু যখন এটা নিয়ে বাইরের মিডিয়াগুলোতে কথা বলা শুরু হইছে, তখন কেবল অন্য বিষয়গুলো খেয়াল করতে পারছেন। শেখ হাসিনার ব্যাপারটাও এরকম। এই যে যেমন ইমরান খান। ইমরান খান, বাইরে যেটা তার স্টেইটম্যানশিপ, বাইরের রাষ্ট্রগুলার কাছে, এটা হচ্ছে খুবই স্মার্ট, পাকিস্তানের ভেতরে সে কীরকম স্মার্টনেস দেখাচ্ছে, জনগনকে হেন্ডেল করার ক্ষেত্রে, এটা আমরা তো বাহির থেকে দেখি না। সে খুব, ধরেন, সে যখন হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার প্রশ্ন আসলো, সে বলল যে, আমাদের এখানে মাইনরিটির উপর কেউ হাত দিতে পারবে না।

রাকিব: হু

রিহা: খুবই স্মার্ট একটা অবস্থান। এ স্মার্ট অবস্থান, স্টেইটম্যানশিপ বলে এটাকে। কিন্তু এটার জন্যে

রাকিব: এই যে কিছুদন আগে একজনরে ফাঁসি দিলো একজনরে।

শোয়েব: ফাঁসি দিলো হচ্ছে আর, মেজর কাষ্টো নামে যে কশতুরীবাগের মুভমেন্ট যেটা, ঐ ছেলেটারে এরেস্ট করে নিয়া গেলো-

রিহা: হু হু। মানে এইসব ভেতরকার জিনিসগুলোকে বাইর থেকে যেভাবে পপুলারলি দেখা হয় সেভাবে দেখে না। বাইর থেকে আমরা দেখবো যে সেটাই, মানুষ দাঁড়াচ্ছে না, বা দাঁড়াতে পারছে না তার বিরুদ্ধে। একটা নিরব কনসেনসাস।

অর্ক: না, কিন্তু

রাকিব: ভাই, আমরা আলাপ শেষ করবো আজকে।

রিহা: অর্কের আলাপের জায়গাটার গুরুত্ব আছে। এটা নিয়ে আপনার সাথে আরো আলাপ হতে পারে, বাইরে, পরে। সমস্যা নাই।

অর্ক: হ্যাঁ

রাকিব: আচ্ছা, আমরা আলাপ শেষ করবো। দর্শক, আমরা আলাপ শেষ করতেছি। আপনাদের এতো সময় আছে আমি জানি না, দুই ঘন্টা ধরে আপনারা শুনতেছেন। রিফাত ভাই, আপনার হচ্ছে, শেষ করার আগে কোন কিছু বলার আছে কিনা? দর্শকদের উদ্দেশ্যে, বানানের উদ্দেশ্যে।

রিহা: দর্শকদের উদ্দেশ্যে আলাদাভাবে কিছু বলার নাই। ধন্যবাদ সবাইকে।

2 comments

Leave your comment