Articles, Blogs

রিফাত হাসান

মুসলমানি বঙ্গে আল্লাহু আকবর কেমন শ্লোগান?

October 13, 2022   0 comments   12:59 pm
Primary Author: রিফাত হাসান

মুসলমানি বঙ্গে বিএনপির বৈচিত্রের শ্লোগান এই আল্লাহু আকবর আর হিন্দু ভারতে বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান কি এক? এই তুলনা লইয়া আওয়ামী একটিভিস্ট মহলে বিস্তর আলাপ হইতেছে। আমার উত্তর হল, না। বরং আমরা ভারতে বিজেপির শ্লোগান জয় শ্রীরামের সাথে বাংলাদেশে ‘জয় বাংলা’র সখ্যতা দেখেছি সব সময়। বিএনপির না।

Share

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান ছিল আল্লাহু আকবর। আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণাও ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ’র নামে দেওয়া হয়, যা শেখ মুজিবুর রহমানের ইপিআর বার্তা নামে পরিচিত। ‘আল্লাহু আকবর’ আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল শ্লোগানও। ইতিহাসে, শেখ মুজিব আর আওয়ামী লীগের মতো কইরা ‘জিন্দাবাদ’ ও ‘আল্লাহু আকবর’ এই তল্লাটে আর কেউ বলত না। পোস্টারে বা প্রচারপত্রে সবার উপরে এই শ্লোগান থাকত, ‘বঙ্গবন্ধু’ বা ‘জয় বাংলা’রও আগে। এখন, আপনি যদি আওয়ামীলীগের অফিসিয়াল ঘোষণাপত্র খুঁজেন, অইখানে দেখবেন, ওরা এই শ্লোগান অনুবাদ কইরা লিখছেন, ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’।

আওয়ামীলীগের যেমন জয় বাংলা, বিএনপির অফিসিয়াল শ্লোগান হল, বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। মাঝে মধ্যে শ্লোগানে আল্লাহু আকবর আসে, আসবেই, এইটা বিএনপির বৈচিত্রই। কারণ বিএনপি বহু মতের মিলনমেলা, বিএনপি নিজে কোন ধর্ম হয়ে উঠতে চায় নাই আদতে। তাই বিএনপির সমাবেশে গুম থিকা ফিরে আসা তরুণ বিএনপি নেতা হুম্মামের দেওয়া আল্লাহু আকবর শ্লোগান বিএনপির বৈচিত্রের শক্তি বটে, এইটা বিএনপির মূল শ্লোগান হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই কখনোই।

rifat hasan, রিফাত হাসান, বুদ্ধিজীবী, intellectual, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি, ইমরুল হাসান, রিফাত হাসানের বই

বরং, আওয়ামীলীগের হীনমন্যতা হল, এদেরকে ইতিহাসে বহুবার নিজের নাম ও শ্লোগান কাটাকুটি করতে হইছে, কখনো আরবি, কখনো মুসলিম শব্দটা বাদ দেওয়ার জন্য। পরে, বিএনপি আইসা তো আওয়ামীলীগের ‘জিন্দাবাদ’ শ্লোগানটাই নিয়ে নিল। এখন হাসিনার যে আওয়ামীলীগ, তা স্রেফ বিএনপির জিন্দাবাদের ‘অনুবাদ’ পড়ে। কী হাস্যকর!

২.

মুসলমানি বঙ্গে বিএনপির বৈচিত্রের শ্লোগান এই আল্লাহু আকবর আর হিন্দু ভারতে বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ শ্লোগান কি এক? এই তুলনা লইয়া আওয়ামী একটিভিস্ট মহলে বিস্তর আলাপ হইতেছে। আমার উত্তর হল, না। বরং আমরা ভারতে বিজেপির শ্লোগান জয় শ্রীরামের সাথে বাংলাদেশে ‘জয় বাংলা’র সখ্যতা দেখেছি সব সময়। বিএনপির না।

ভারতে জয় শ্রীরাম বইলা পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মুসলমান ও দলিতদের মারার নজির আছে। আর বাংলাদেশে জয় বাংলা বইলা স্রেফ বিরোধী না, বিরোধী সন্দেহে পিটিয়ে মারার নজির আছে, যেমন বিশ্বজিত, আবরার।

এই উভয় শ্লোগান নিয়া আমাদের আপত্তি ধর্মগন্ধ বা আওয়ামীলীগ, এই জাগায় না। এই শ্লোগানগুলোর জননিপীড়নের মন্ত্র ও হাতিয়ার হয়ে ওঠার যে ব্যাপার, তা। হিটলারের গেস্টাপো বাহিনীর মত কইরাই এই শ্লোগানগুলো এখন কাজ করে। আল্লাহু আকবরের সে রকম নজির নেই বাংলাদেশে। বরং, আল্লাহু আকবর সাধারণ মানুষের শ্লোগান। ফলে, আল্লাহু আকবর এখানে সজিব জনমানুষের শ্লোগান হিশেবেই এখনো বেঁচে আছে। হয়ত, থাকবেও আরো বহুদিন।

এ ত গেল আল্লাহু আকবর নিয়া আলাপ।

rifat hasan, রিফাত হাসান, বুদ্ধিজীবী, intellectual, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি, ইমরুল হাসান, রিফাত হাসানের বই

কিন্তু গতকালকে আমরা আরো ইন্টারেস্টিং ঘটনা দেখলাম। ‘রাজাকারপুত্র’— এইটারে গর্ব ভইরা প্রচার হইতেছে, বিএনপির জনসভায় হুম্মামের বক্তৃতা নিয়া পপুলার ‘ইসলামিস্ট’ মহলে। হুম্মামের পিতা, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ‘রাজাকার’ ছিলেন কিনা, সেই তর্ক না। তার বিচার ইতিহাস করবে। কিন্তু এই যে ইতিহাসে ‘রাজাকার’ ঘটনা গ্লোরিফাই হইতেছে, এর পেছনে কি আপনাদের আওয়ামীলীগ আর শাহবাগের যেনতেন কইরা বিচারের দায় নেই? ‘গ্রে’এরিয়াবাদিরা কী বলেন?

৩.

‘আল্লাহু আকবর’ নিয়া পপুলার বামপন্থার প্রতিক্রিয়াগুলো আরো মজার। এদের বড় সমস্যা হল, ইসলাম বা ধর্মচিহ্নরে অপর কইরা রাখার ঐতিহাসিক সিলসিলা। এই সিলসিলার কারণে, কোনটা জালিমের শ্লোগান, আর কোনটা মজলুমের অন্তর থিকা ওঠে আসা শ্লোগান, তার পার্থক্য করতে না পারা। ফলত, দেখবেন, হুম্মামের আল্লাহু আকবর শ্লোগানের পরে, আওয়ামী একটিভিস্ট ও বুদ্ধিজীবীদের মত কিছু বামপন্থাও বেশ প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে। আর আওয়ামী লীগের কিছু কালচারাল গ্রুপ শাহবাগে ‘আল্লাহু আকবর’ শ্লোগানের এর প্রতিবাদে নেমেছে। এই ঘটনাগুলোরে আমি এক কাতারেই, একই রাজনৈতিক প্রকল্প ও ইসলাম ঘৃণার বর্ণবাদি ঘটনা হিশেবেই পাঠ করতে চাই। যেখানে, আপনার দলীয় শ্লোগানে না হোক, বৈচিত্রেও মুসলমানি ধর্মচিহ্ন আল্লাহু আকবরের জায়গা দিতে না রাজ এরা।

rifat hasan, রিফাত হাসান, বুদ্ধিজীবী, intellectual, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও রাজনীতি, ইমরুল হাসান, রিফাত হাসানের বই

ধর্মরে কুল্লেকুল নেগেইট করতে থাকা, এই ভুল রাজনীতিতেই বঙ্গের পপুলার বামেরা নিমজ্জিত। মজলুমের পক্ষে যে ‘আল্লাহু আকবর’, তারে ঔন করতে না পারা, আর, জালিমের পক্ষে যদি এই শ্লোগান আসে, তারে চিহ্নিত করতে ও বিরোধিতা করতে না পারা, উভয়ই এই বামপন্থাগুলোর লিমিট।

এর বাইরে, আমি ‘ধর্মরাষ্ট্র’ ধরনের সব ধরনের রাষ্ট্রধারণার বিরোধী।

ফলত আওয়ামীলীগের সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও বর্ণবাদের বিপরীতে বিএনপি যে, বাঙালি মুসলমানের জন্য সবচেয়ে সেকুলার সম্ভাবনাময়ী দল, এইটার সম্ভাবনাগুলোরে গুরুত্বের সাথে দেখি। আমি মনে করি, এই অঞ্চলের রাজনীতিতে বিএনপির প্যান ইসলামিক রূপান্তরের সম্ভাবনা কোনভাবেই নেই। বরং বিএনপির লোকেদের কণ্ঠে আল্লাহু আকবর এইটারে সেকুলার পরিমন্ডলে মুসলমানদের সর্বজনগ্রাহ্য শ্লোগানে রূপান্তরিত করবে।

কিন্তু এই এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর ন্যায় ও ইনসাফের আকাঙ্ক্ষার সাথে একমত হৈতে না পারা, আত্মীয়তাবোধ করতে না পারা, এইটা ব্যর্থতাই। এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠী হল নম শূদ্র ও বাঙালি মুসলমান। এই জায়গা থেকে, মুসলমানের ধর্ম কর্ম দোয়া কেরাত কোরান আচার কালচাররে নিয়া ছুঁতমার্গ কইরা যে বামপন্থা আন্দোলন, তা মূলত বর্ণহিন্দুত্ববাদও, এবং গণশত্রুই।

অক্টোবর ১৩, ২০২২

Leave the first comment