fbpx

The
Rifat Hasan
Website

রিফাত হাসানের
অফিসিয়াল সাইট

পাঠ প্রতিক্রিয়া

মুরাদ হাসান

রিফাত হাসানের পলিটিক্স ও আমার পাঠ

May 19, 2021   0 comments   12:29 pm

রিফাত হাসান। আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি, বুদ্ধিজীবী এবং ক্রিটিক। রাষ্ট্রীয় আলোচনায় উনার নিজস্ব দর্শন রয়েছে। যা অন্য সবার থেকে আলাদা। উনার লেখা, চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা মৌলিকতায় ভরপুর। রিফাত হাসানের বিশ্লেষণ আমাদেরকে কলসের তলা দেখাতে পারে।

Share

রিফাত হাসান। আমাদের সময়ের গুরুত্বপূর্ণ কবি, বুদ্ধিজীবী এবং ক্রিটিক। রাষ্ট্রীয় আলোচনায় উনার নিজস্ব দর্শন রয়েছে। যা অন্য সবার থেকে আলাদা। উনার লেখা, চিন্তাভাবনা, ধ্যানধারণা মৌলিকতায় ভরপুর। রিফাত হাসানের বিশ্লেষণ আমাদেরকে কলসের তলা দেখাতে পারে।

একটু বেশি বলে ফেলেছি কি? তার বিচার রিফাত হাসানের পাঠকরাই করবেন।

রিফাত হাসানের লেখা ‘জল্লাদখানায় বইসা কবিতাপাঠ’ এবং ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’ নামের দুইটা বই লেখকের সাহায্যেই সংগ্ৰহ করেছিলাম। বই দুইটার নাম অদ্ভুত না? অদ্ভুতই বটে! জল্লাদখানা’রে একটু কল্পনা করুন তো। কী দেখতে পাচ্ছেন? জল্লাদ চুরি নিয়ে কাটাকাটি করতেছে? কবি এইখানে বইসাই কবিতাপাঠ করতেছেন। আপনি জল্লাদখানারে রাষ্ট্র ধইরা নিতে পারেন। বোধহয় আর কিছু বলতে হবে না। ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার কথা।

এবার আসি ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’ নিয়ে। আমি এইটা নিয়েই আলোচনা করব। নামটা সুন্দর হইলেও আমার কাছে পছন্দ হয়নি। হয়তো বাংলার প্রতি ভালোবাসা কিংবা ইংরেজির প্রতি বিতৃষ্ণার কারণে। টেক্সট কন্সপিরেসি মানে হচ্ছে ষড়যন্ত্রের গল্প কিংবা ষড়যন্ত্রের পাঠ। রূপকথা তো বুঝেনই। ছোটবেলায় দাদা দাদির কাছ থেইকা রূপকথার গল্প শুনার বায়না ধরছে না এমন মানুষ অল্পই। রিফাত হাসান দাদা দাদির রূপকথার গল্প লিখেননি। উনি লিখেছেন ফ্যাসিজমের রূপকথা। যা যারপরনাই মুগ্ধ করে আমাদেরকে। আমরা এই রূপকথা যতই পাঠ করি ততই গভীর ষড়যন্ত্রের জালে আটকা পড়তে থাকি নিজের অজান্তেই। এই জাল ছিন্ন করতে চান লেখক।

‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’ গ্ৰন্থটি দুইভাগে ভাগ করা। প্রথমভাগ হচ্ছে লেখকের সাক্ষাৎকার। আর দ্বিতীয় ভাগ হচ্ছে “টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’। প্রথমেই আসি সাক্ষাৎকারে। বইটিতে বেশ কয়েকটা দীর্ঘ সাক্ষাৎকার রয়েছে। সাক্ষাৎগুলো আপনারে লেখকের অন্য বইয়ের ব্যাসিকগুলো মোটামুটি ভাবে বোঝাতে সক্ষম। সাক্ষাৎকারে লেখকের রাষ্ট্রচিন্তা, ভাষা মুক্তিযুদ্ধের রূপ, পলিটিক্স, শাহবাগ আন্দোলন, হেফাজতের ৫ই মে’র আন্দোলন, সেক্যুলারিজম এবং ইসলামিস্ট রাজনীতিসহ অনেক কিছুরই তাত্ত্বিক কথাবার্তা উঠে এসেছে।

সার্বভৌমত্ব কার, রাষ্ট্রের না আপনার? আমি জন্মের সময় যে সার্বভৌমত্ব নিয়ে আসি সেইটা রাষ্ট্রের টেরিটরিতে থাকার কারণে রাষ্ট্রকে কিছু দিয়ে দিতে হয়। রাষ্ট্রে কী করে, আমার সবটুকু সার্বভৌমত্ব কাইড়া নেওয়ার জন্য খোদার ভান ধরে, আগ্ৰাসী হয়ে উঠে। আজ তাই আমরা রাষ্ট্রের সাথে সার্বভৌমত্বরে গুলায়া ফেলি। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটাই হচ্ছে এই সার্বভৌমত্ব আদায় করার লড়াই। রাষ্ট্র আমাদেরকে একটা এরিয়ার মধ্যে বাইন্ধা রাখছে। আপনি রাষ্ট্রের সাথে গোস্বা কইরা যদি রাষ্ট্রের কাছ থেকে আপনার প্রাপ্য চান রাষ্ট্র দেয় না। বরং কয় আমার এলাকা থেইকা চইলা যা। আপনি আরেক রাষ্ট্রের এলাকায় ওরা আপনারে গুলি কইরা মারব। রিফাত হাসান এই রাষ্ট্র থেকে বের হইতে চান। আধুনিক রাষ্ট্রের এই বলয় ধ্বংস করার স্বপ্ন দেখেন তিনি। যে রাষ্ট্র আপনার সার্বভৌমত্ব হরণ করবে না, যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যাওয়া যাবে, রাষ্ট্র থেইকা প্রাপ্য আদায় করা যাবে, রাষ্ট্ররে টেক্কা দেওয়া যাবে, আরেক রাষ্ট্রে গেলে গুলি করবে না এমন রাষ্ট্র গড়তে চান তিনি।

এবার আসি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। লেখক মুক্তিযুদ্ধ না বইলা গণমুক্তিযুদ্ধ বলছেন। উনি মুক্তিযুদ্ধরে জাতিভিত্তিক যুদ্ধ না বইলা জুলুমের বিরুদ্ধে গণ-মানুষের প্রতিরোধ এবং প্রতিরোধ থেকে নতুন দেশের জন্ম বইলা জ্ঞান করেন। এইটা সঠিক। কেননা আমাদের আন্দোলন তারপর বলেন যুদ্ধ যারা করেছে তারা স্রেফ নিম্নবিত্ত এবং নব্য অপুষ্ট মধ্যবিত্ত। যাদের মধ্যে জাতের অহম ছিল না। তবে আমার নোক্তা হচ্ছে এই স্বাধীনতার মাধ্যমে অজান্তেই বাঙালি জাতির একটা মজবুত ভিত্তি জাতি তাত্ত্বিক পরিচয় গড়ে উঠেছিল।

রাজনীতি কী? লেখকের ভাষায় রাজনীতি মানে সম্পর্কের জ্ঞান। মানে আমি একা নামাজ পড়তেছি। এইটা সাধারণ ঘটনা। যখন আরেকজন দেখে ফেলে তখনই একটা সম্পর্ক তৈরী হয়। সম্পর্ক থেকে বন্ধন, বন্ধনের মুক্তি থেকেই রাজনীতি। লেখকের রাজনীতি দর্শনের মূল আলাপ হচ্ছে এটা।

শাহবাগ নিয়ে লেখক তৃতীয়পক্ষ নিয়েছেন। শাহাবাগে কি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য জড়ো হয়েছিল? তারা কি বলছে ন্যায়বিচার চাই? প্রশ্ন তুলেছেন লেখক। তারা বলেছে ফাঁসি চাই। তাদের এই ফাঁসি চাওয়াটাই ফ্যাসিজমের মুয়া হিসেবে দাঁড় হয়ছে। ফ্যাসিজম এইটারে ব্যবহার কইরা ক্ষমতার ভীত শক্ত করছে। শাহবাগীরা বিচারের প্রতি আস্থা তৈরি করতে বা রাখতে পারে নাই যেখানে খোদ শিবিরের একাংশও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে সমর্থন দিয়েছে।

হেফাজতের আন্দোলন সম্পর্কে তিনি বলেছেন এটা হচ্ছে স্রেফ নাগরিক চাওয়া বা দাবির আন্দোলন। এর রাজনৈতিক কোন জটিলতার কিংবা ক্ষমতা দখলের আন্দোলন নয়। রাষ্ট্র নাগরিকদের উপর দৈত্য হয়ে তাদের রাজধানী ছাড়া করেছে। লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে। এ অংশটা এখানেই শেষ করছি।

এবার আসি ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’য়। জঙ্গির রূপকথায় আপনাকে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শুধু মাদ্রাসার ছাত্রদের কল্পনা করা হবে। রাষ্ট্রও যে জঙ্গি আচরণ করছে বন্দুকযুদ্ধের নামে খুন করে বেড়াচ্ছে তা কল্পনা করাবে না রূপকথা। এমন ভাবে উঠে এসেছে ১৩ থেকে বই প্রকাশের সময় পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী। যেমন, ৫ই মে, ব্লগার হত্যা, লুঙ্গি ও ধুতির রাজনীতি, মোদির ক্ষমতায়ন, রাবিন্দ্রিক রাষ্ট্র, সিনহা পর্ব, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইত্যাদি।

আমি বলতে পারি রিফাত হাসানের বই আপনাকে ভাবতে শিখাবে। ভাবনার নতুন একটা জগতে প্রকাশে করাবে। যেখানে খালি চোখে সত্য দেখতে পারবেন।

মুরাদ হাসান, লেখক।

Leave the first comment