সবাইকে শুভেচ্ছা। আমি তো ভাবছিলাম যে, আমাকে হয়ত আরেকটু পরে ডাকবেন। এসেই বক্তৃতা দিতে শুরু করলাম। কারো সাথে পরিচয় হইলো না। মনে হচ্ছে, একটু পরে বললে ভালো হইত। রিফাত হাসানের ওপরে এই অনুষ্ঠান। এটা জানতে পেরে আমি খুব খুশি। চলে এসেছি। যদিও আমার শরীরে জ্বর জ্বর, ম্যাজ ম্যাজ একটা ভাব ছিল। এখন মনে হয় সবারই এ রকম অবস্থা। এই ঘরেই হয়ত ওমিক্রন আক্রান্ত তিন-চার জন থাকতে পারেন। ডেল্টা আক্রান্ত থাকতে পারেন তিন-চার জন। এই ঝুঁকি নিয়েই আমাদের থাকতে হবে। করোনার সঙ্গে বসবাস করতে হবে। করোনা একটা বড়ো ন্যারেটিভ, এটাকে আমরা মেনে নিয়েছি। একটা স্বাস্থ্যবিধি আমাদের মেনে চলতে হচ্ছে। আমরা আগের মতো যেভাবে চলতাম, সেভাবে আর চলতে পারবো না। এর বশ্যতা মেনে জীবনযাপন পদ্ধতি নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। ফলে, করোনা এখানে আমাদের এখানে শাসক। আমরা যেভাবে, যে কোন পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিই, যে কোন বৈরী পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিই, সে রকমই একটা নতুন পরিস্থিতি করোনা।
কীভাবে আমরা আসলে একটা বিরুদ্ধতা ফেস করি? মেনে নিই?
ফেস করা তো দুই অর্থেই সত্যি, এক দিক দিয়ে আমরা এটাকে ঠেকানোর চেষ্টা করি। আরেক দিক দিয়ে মেনে নিই। ফলে, দুইটা মিলিয়ে আমরা টিকে থাকি এবং সেও, আমাদের প্রতিপক্ষও টিকে থাকে। কখনো হয়ত সে জিতে যায় আবার আমরা কখনো কখনো জিতে যাই। ফলে, করোনাটা খুব সিগনিফিকেন্ট একটা ব্যাপার মনে হচ্ছে এখন। ওমিক্রনের ঢেউ, কেউ বলছেন, এটা প্রায় আরো দুই বছর থাকবে। কেউ বলছেন, না, আরো বেশী সময় থাকবে। ফলে, এটা আমাদের জীবন যাপনের একটা অংশ হয়ে যাচ্ছে এবং আমরা এই জেনারেশনগুলো, যারা এখন বেঁচে আছি তাদের অভিজ্ঞতায় এটা যুক্ত হচ্ছে। আমরা একটা বড় মহামারি দেখছি।
রিফাত হাসানের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে আসতে আসতে মনে পড়তেছিলো, আমরা কীভাবে রিফাত হাসানকে চিনলাম। সেটা খুব ইন্টারেস্টিং। আপনাদের শুনলে হয়ত ভালো লাগবে, আবার খারাপও লাগতে পারে। সামহোয়ার ইন ব্লগে রিফাত হাসান যখন লেখা শুরু করলেন, তখন একজন আমাকে বললেন, ব্লগে কিন্তু ফরহাদ মজহার লেখেন। আমি বললাম, ফরহাদ মজহার নিজে লিখতেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তবে বেনামে। উনি লিংক দিলেন আমাকে, ব্লগটা রিফাত হাসানের।
এরকম ঘটনা অবশ্য আরও ঘটছে।
এখানে মেয়েরা নাই। এইটা খুব অদ্ভুত লাগলো, রিফাত হাসানের যে নায়োকোচিত একটা ব্যাপার আছে, সেই ব্যাপারটা থেকে আমার কাছে মনে হইছিল, একজন, দুইজন নারী এখানে উপস্থিত থাকতেই পারতেন। হিজাব পরা হলেও। এই যে মানজুররা আছেন, সাদ আছেন, সাদ্দামরা আছেন, রাকিবরা আছেন, এদের কোন বান্ধবী নাই বা পরিচিত নাই? এটা খুব অদ্ভুত লাগলো।
মেয়েদের কথা মনে পড়লো রওশন আরা মুক্তার কথা মনে পড়ায়। রিফাত হাসানের মতো তার সঙ্গেও একই রকম ঘটনা আছে। আমরা প্রথমে ভাবতাম এরকম নামের তো কোন কবি থাকতে পারেন না। তো উনি একদিন আমাকে ফোন দিছেন, মাহবুব ভাই, আপনার একটা গল্প দরকার। আমি বললাম যে, আমি কিন্তু মনে করি, আপনি একটা ফেক কারেক্টার। মানে, এরকম কেউ নাই। রওশন আরা মুক্তা নামে কেউ নাই। কারণ এ রকম নামের তো কোন কবি থাকতে পারে না। কবির নাম হবে কবির মতো। তখন উনি বললেন যে, আপনি বিশ্বাস করতেছেন না? আমি তো ফোন দিছি। আমি বললাম যে, আপনি হয়ত ফেক একজন, অন্য আরেকজনকে দিয়ে আমাকে ফোন দেওয়াইছেন। তো, তিনি বললেন যে, না। আমি সত্যি একটা ক্যারেকটার। এবং আপনি চাইলে আমার সাথে দেখা করতে পারেন। তারপর আমি তার সঙ্গে দেখা করলাম। আমি বললাম যে, আপনার নাম কি আসলেই রওশন আরা মুক্তা?
আগের কালে এরকম ভুলও ঘটতো।
রিফাত হাসান ও রওশন আরা মুক্তার বেলায় ঘটেছে।
রিফাত হাসানের ক্ষেত্রে আমরা এ রকম আলোচনা করতাম যে, ফরহাদ মজহার নিজে লিখতেছেন রিফাত হাসান নামে। আমি ওই লোকের দেওয়া লিংক ধরে গেলাম। গিয়ে দেখলাম যে, ঠিকই। ফরহাদ মজহারই লিখতেছেন। এটা অনেক আগের কথা অবশ্য। দুই হাজার সাত আট হবে না? সাত-আট হবে। অনেক আরলি আর কি। তো ঐ সময়ে আমিও আইডেন্টিফাই করলাম যে, হ্যাঁ, ফরহাদ ভাই-ই লিখতেছেন। এবং এটা বললাম এ কারণে যে, প্রথম দিকে আমাদের চিন্তার সঙ্গে ফরহাদ মজহারের খুবই নৈকট্য ছিলো। রিফাত হাসানেরও ছিলো। আমারও কোন না কোনভাবে ছিল। পরে আমরা ফরহাদ মজহার থেকে কিছুটা দূরত্ব রচনা করতে পেরেছি। বা চেষ্টা করেছি ওখান থেকে বের হয়ে আসতে। কারণ ফরহাদ ভাইয়ের আলাদা ব্র্যান্ডিং। ফরহাদ ভাই এখনকার এই সময়কে আসলে ঠিক যে ব্যাখ্যা করতে পারছেন যে তা মনে হয় না। ওনাদের মূল সমস্যা যেটা আমার কাছে মনে হয়, ওনারা যত ইসলামের কথা বলেন, আর যতো যাই বলেন, লালনের কথা বলেন, কিন্তু উনারা বেসিকেলি প্রাক্টিসের দিক দিয়ে লেনিনিস্ট। ওনাদের যৌবনকালে উনারা যে পার্টি বা সংগঠন করেছেন, দেখেছেন, এগুলো ওনাদের মনে গভীর ছাপ রেখে গেছে। ওনাদের যে নিয়ন্ত্রণকামীতা, একক নেতৃত্ব, নিজেরাই সঠিক চিন্তা করছেন, এরকম অনেক ব্যাপার মার্কসিস্ট সংগঠন থেকে আসা। আমাদের সময়ের অনেক জিনিস হয়ত তিনি ধরতে পারেন বা ব্যাখ্যা করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হয় যে, তাদের ষাটের দশকের, মানে, তারা যখন বড় হয়ে উঠছেন বা বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করছেন, বা চিন্তা চর্চা করছেন, তখন সমাজতন্ত্র এবং লেনিনিস্ট চিন্তাভাবনা এবং প্রাকটিস একটা বড় আধিপত্য তৈরি করেছিল। ফলে ফরহাদ ভাইরা কখনোই বিপ্লবের ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন নাই। এবং তারা সবসময়ই মনে করেছেন থিওরি এবং প্রাক্টিস একসাথে চলতে হবে। এটাকে আমি বলবো ফেতনা, এটা থেকে ফরহাদ ভাইরা কখনোই বের হইতে পারেননি। মানে চিন্তা যে আলাদা একটা জিনিস এবং চিন্তা যে ইটসেল্ফ একটা এক্টিভিজম, এটা করতে গেলে যে, করে দেখাতে হয় না, আমার কাছে মনে হইছে যে, এই জিনিসটা ওনাদের আমরা কোন দিনই বোঝাতে পারবো না।
যে চিন্তা থেকে গ্লোবালি এনজিও তৈরী হইছে সমাজতন্ত্রের বিকল্প হিসাবে সেখান থেকে তাদের বের করে আনতে আমরা পারবো না।
বদরুদ্দীন উমর বলি, ফরহাদ মজহার বলি, আহমদ ছফা বলি, বা আমাদের এই যে বামপন্থি বুদ্ধিজীবীদের যে বৃত্ত, সে বৃত্তে অধিকাংশ সময়েই আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাদের এক্টিভিজমটা তারা দেখায়ে যাইতেছেন। তারা মনে করেন, তারা বিপ্লব করতেছেন, এক্টিভিজম করতেছেন, মানুষের উপকার করতেছেন, কৃষির উন্নতি করতেছেন, গ্রামীণ লোকদের এমপাওয়ার করতেছেন, শ্রমিকদের মধ্যে কাজ করতেছেন। কিন্তু এর মাধ্যমে আলটিমেটলি তারা কাজের পরিধিটা এমন বাড়ায়ে ফেলেন যে, বুদ্ধিজীবিতার কাজটা ঠিক মতো হয় না এবং সংগঠনও দাঁড়ায় না। শেষ পর্যন্ত প্রত্যেকের আন্ডারে ছোট ছোট সংগঠন হয়ে থাকে এক্টিভিজমটা। কিন্তু রাজনীতি তো এইরকম ছেলেখেলা না। অনেক বড় জায়গা।
আমরা এই জায়গাতে তাদের সঙ্গে আলাদা হয়ে যাচ্ছি।
আমরা মনে করি, আমাদের আগের বুদ্ধিজীবিরা যে ভুল এক্টিভিজম এবং সঠিক বুদ্ধিজীবিতার মধ্যে আছেন, এই জায়গাটা থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।
আমরা মানে এ সময়ের নতুন বুদ্ধিজীবি কারা? এরকম একটা প্রশ্ন সাম্প্রতিক সময়ে আমি তুলেছি। আমাদের বুদ্ধিজীবীরা তো নানান মতের, নানান দিকের হতে পারে। আমি অনেক বুদ্ধিজীবীকে নিয়ে একটা তালিকা করতে পেরেছি। সেখানে হয়ত চল্লিশের নিচে কেউ নাই। কিন্তু বড় একটা তালিকা আমরা করেছি। এটা দিয়ে, নতুন ফেসবুক মিডিয়ার সামনে একটা নতুন রূপরেখা তৈরী হয়ে গেছে যে, আগামী দিনের বুদ্ধিজীবিতা কী হবে? কীভাবে দাঁড়াবে? আমার তো ধারণা যে, আমাদের এই তালিকায় যে বুদ্ধিজীবীরা আছে, তাদের বাইরে খুব বেশী যাবে না সামনের দিনের বুদ্ধিজীবিতা।
রিফাত হাসানও সেখানে আছেন।
শুভ্র বলতেছিলো, ঢাকার বাইরে থেকে, নিজের শক্তিতে দাঁড়ানো। আমার কাছে ওরকম মনে হয় না, কারণ এখন ফেসবুক মিডিয়াটা আমাদের কমিউনিকেশনের মূল টুল হয়ে গেছে। এখানে যে ভাববে, আমি কেন্দ্রে আছি, সেই আসলে কেন্দ্রে চলে আসবে। ইস্যু যে ক্রিয়েট করতে পারবে, ইস্যুতে রেসপন্স করতে পারবে, সে এখানে হলো লিড করবে। এই জায়গাতেই তার চ্যালেঞ্জ। রিফাত হাসানের যে বুদ্ধিবৃত্তি- নতুনভাবে দেখার, ব্যাখ্যা করার সেটা আমার কাজে লাগে। ফেসবুকে এটা ঘটে। কখনো মনে হয়, এই জিনিসটা ব্রাত্য রাইসু খুব সুন্দরভাবে ধরছেন। কখনো রিফাত হাসানের ব্যাখ্যা আমি নিই। একটা যৌথ বুদ্ধিজীবিতা বা যৌথ চিন্তার একটা ব্যাপার কিন্তু এই পোস্টমডার্ন মিডিয়াগুলাতে কাজ করে। ইস্যু আসে, এবং আমরা কোন কোন সময়ে একদম বাধ্য হয়ে থাকি। আবার মনে হয়, এই ইস্যুতে আমাদের অবশ্যই প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে। কোন কোন ইস্যুতে দেখা যায় যে, ব্রাত্য রাইসু খুব ভালো একটা ডিসকাশন করছেন, কোনটাতে দেখা যায় মৃদুল মাহবুব করছেন, কোনটাতে দেখা যায় শুভ্র, কোনটাতে দেখা যায় রিফাত হাসান। এখন আমার যেমন মনে পড়ে যে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রিফাত হাসানের দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে গাইড করছে। আমি বুঝতে পারছি এই জিনিসটা মাথায় নেয়া দরকার।
শুভ্র বলতেছিলো, এটা একটা বিকল্প বুদ্ধিজীবিতা বা বুদ্ধিজীবিতার একটা ক্ষুদ্র ধারা। কিন্তু আমার কাছে সেরকম এখন আর মনে হয় না। আমাদের মতপার্থক্য আছে। ডিবেট আছে। কিন্তু শুরুতে যখন আমরা কথাবার্তা বলতাম, ইসলামী চিন্তাধারা, মার্ক্সীয় চিন্তাধারা, এর মধ্যে নাগরিক চিন্তাধারা, কিছুটা লিবারাল চিন্তাধারা- এগুলোর মিশ্রণে একটা নতুন ধরনের বুদ্ধিজীবিতার ধারাকে তখন ছোট মনে হতো। ফরহাদ ভাই কত সালে ক্রুসেড জিহাদ শ্রেণীসংগ্রাম দিয়েছিলেন? ২০০১-এ। তখন কিন্তু এটা ছিলো একেবারে বোমা মারার মতো ঘটনা। আমরা যখন ফরহাদ ভাইয়ের পক্ষে কথা বলতাম, তখন তো মানুষ প্রায় মারতে আসতো। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এখন এসে এটা ছাড়া যেন পরিস্থিতি আর ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া, বিশ্ববিদ্যালয়, একাডেমি, এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান মিলে যে বুদ্ধিজীবিদেরকে আসলে লালন-পালন করে, যাদেরকে আমাদের মনে হয় যে, এরাই বুদ্ধিজীবী, এদের কথাই ম্যাটার করে, আসলে কিন্তু তা না। মেইনস্ট্রিমে মানে মানুষের মগজের মধ্যে এদের কথা আর ম্যাটার করে না। কিন্তু এদেরকে প্রতিদিন টিভিতে দেখাতে দেখাতে, সংবাদপত্রে ছাপতে ছাপতে, বলাতে বলাতে বলাতে , আমাদেরকে বিশ্বাস করানো হয় যে, এটাই বুদ্ধিজীবীতা, এরা যেটা বলছে, সেটাই কাজে দেবে। কিন্তু তরুণদের সঙ্গে কথা বললে, বা তাদের সঙ্গে কোন কিছু শেয়ার করলে আমরা বুঝতে পারি যে, আসলে ঘটনাটা অন্য দিকে ঘটছে।
আহমদ ছফা নিয়ে রিফাত হাসান হয়ত দ্বিমত করবেন। রিফাত হাসানের সঙ্গে আমি হয়ত ফিফটি পার্সেন্টের বেশি একমত হইতে পারবো না। কিন্তু তার চিন্তার গুরুত্ব তাতে কমবে না। আমি হয়ত আহমদ ছফাকে খুব একসেপ্ট করবো। ফরহাদ মজহারকে আমি একসেপ্ট করবো হয়তো, রিফাত হাসান কিছুটা ক্রিটিকাল থাকবেন। আব্দুর রাজ্জাকের ব্যাপারেও আমাদের ক্রিটিক থাকবে। কিন্তু বৃহত্তর চিন্তার ন্যরেটিভের মধ্যে ফেসবুক, ব্লগ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে একটা বৃহত্তর একটা চিন্তার ন্যরেটিভ তৈরি করতে পেরেছি। আগামী দিনে এই চিন্তাটাই তরুণদের, এক্টিভিস্টদের প্রভাবিত করবে। সেখানে রিফাত হাসান যেমন আছেন, সেখানে ব্রাত্য রাইসু আছেন, সেখানে আব্দুর রাজ্জাক আছেন, সেখানে ফরহাদ মজহার আছেন, আহমদ ছফা আছেন। এটা একটা বড় ন্যারেটিভ এবং এখানে বাম চিন্তা, ইসলামি চিন্তা, নানান ধরনের চিন্তার মিশ্রণ ঘটেছে। এটা আমার কাছে খুব সম্ভাবনাময় মনে হয়। যদিও আমি এক্টিভিজমের দিকে খুবই অনাগ্রহী, কারণ আমার কাছে মনে হয় যে, এক্টিভিজমটা খুব অদরকারী একটা ব্যাপার। মানে, কোন অর্থে অদরকারী ব্যাপার? এক্টিভিজম খুবই অদরকারী যখন, কেউ ক্যাজুয়াল থেকে এক্টিভিজম করতে চায়। যে আমার একটু এক্টিভিজম করার দরকার, এজন্য আমি একটু এক্টিভিজম করতেছি। এটা এক্টিভিজমকে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত করে। মিনিংফুলি করে না। আমি ফরহাদ ভাইদের সমালোচনা করি, এক্টিভিজম করতে গিয়ে এনজিও করে ফেলছি কেন? আবার বলতেছি যে, বিপ্লবের কাজই করতেছি। এটা হয় না আসলে। বিপ্লবের কাজ তো আলাদা। আপনি তো বিপ্লব দেখছেন নানা দেশে। সলিমুল্লাহ খান হয়ত কয়েকজন শিষ্য নিয়ে মনে করতেছেন যে, আমি একটা বিরাট এক্টিভিজম করতেছি। আসলে ওনার কাজটা বুদ্ধিজীবীতাই। বা বদরুদ্দীন উমর, তার কাজটা হলো লেখালেখিরই, বুদ্ধিজীবীতার, কিন্তু উনি একটা ছোট একটা পার্টি গঠন করলেন দুচারদশজন লোক নিয়ে। এবং সারাজীবন এইটা বিশজনের পার্টিতে পরিণত হলো না। এটাকে এক্টিভিজমের মোহ নাকি কী বলবো? ওনারা একটা ভুল ধারণার মধ্যে সারাজীবন কাটায়া গেলেন। এক্টিভিজমের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নাই এ কারণে। আমি বুদ্ধিজীবিতার দিকে খুব আগ্রহী, যারা চিন্তা করবে, নতুন চিন্তা ছড়াবে। প্রত্যেকটা জিনিসকে, প্রত্যেকটা ঘটনাকে বিশ্লেষণ করবে, আমাদের চোখ খুলে দেবে, অনেকের মধ্যে পৌঁছাবে। রিফাত হাসানের এখানে একটা বড় ভূমিকা আছে।
প্রথম যখন শুনলাম এরকম একটা আয়োজন হবে তখন আমি ভাবছিলাম যে, আমরা সবাই চট্টগ্রাম চলে গেলে তো আরো ভালো হইত। আমরা আশা করি যে, তার আরো অনেক জন্মদিন আমরা পালন করবো। সামনের জন্মদিন আমরা হয়ত চট্টগ্রামে গিয়েই পালন করবো। তাকে আমার অনেক শুভেচ্ছা। আমি সরাসরি হয়ত কিছু বলতে পারলাম না, কিন্তু একটা সাধারণ ধারণা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
মাহবুব মোর্শেদ, কবি, কথাসাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী।