fbpx

The
Rifat Hasan
Website

রিফাত হাসানের
অফিসিয়াল সাইট

পাঠ প্রতিক্রিয়া

হেলাল উদ্দিন

বাঘ ও রাখালের সম্পর্ক এবং রাজনীতি

June 5, 2021   1 comments   4:11 pm

প্রচ্ছদ ঠিকঠাক। লেখক নিজেই যেহেতু প্রচ্ছদ করেছেন, পাঠককে আলাদা করে আকৃষ্ট করার প্রবণতা ছিল না, মানে শিল্পের ফর্মে বিজ্ঞাপন ঘেঁষা প্রচ্ছদ তো এখন স্বাভাবিক কাণ্ড।আর এক প্রকার আছে ব্র্যান্ডিং প্রচ্ছদ। যেমন ধ্রুব এষ। এমনও দেখেছি একজন লেখক ধ্রুব এষকে উৎসর্গ করেছেন এই বলে যে লেখককে নাকি তিনি (ধ্রুব এষ) কোনো একসময় বলেছিলেন, ‘আপনি দারুন লেখেন’। মানে নিজের ঢোল নিজে পিটে মহানন্দে লাফানো। কিন্তু রিফাত ভাই প্রচ্ছদে নিজের ছবি ব্যবহার করলেন; তাতেও আবার কপাল নেই। এটার মানে কি এই, ফ্যাসিবাদী যুগে আমরা কপালহীন তথা ভাগ্যশূন্য হয়ে আছি? বা এমনও হতে পারে কি নিজেদের কপাল নিজেরাই বাদ দিয়ে দিয়েছি? মানে এই বরাতশূন্যতা আমরা উপভোগ করছি! বাইন্ডিং ভালোই। ডায়েরির সাইজের বই এটি। নোট টুকে রাখার জন্য আমরা আগে যেভাবে খাতা বানাতাম— নোট খাতা; তেমন। তো, আমি এটাকে ধরছি নোটবুক হিসেবে। বই উৎসর্গ করা হয়েছে সত্যযুগের বাঘ ও রাখালকে। বইয়ের ভিতর যা বলার অভিপ্রায় তাই এক বাক্যে তিনি উৎসর্গে বলে দিয়েছেন। রিফাত হাসানের গল্পে একদিন ঠিকই বাঘ ও রাখাল আসে। কিন্তু, কেউ কাউকে খায় না। যে যার মতো মুক্ত হয়ে থাকতে পারে, তাদের সহাবস্থান তৈরি হয়। মানে এই গল্প বন্ধুত্বের। বইয়ের নাম টেক্সট, কন্সপিরেসি ও রূপকথা। এমন নাম কেন তিনি নিজেই ভূমিকাকারে তা বলে দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী যুগে আলাদা করে কোনো কথা বলার সুযোগ নেই,…

Share

প্রচ্ছদ ঠিকঠাক। লেখক নিজেই যেহেতু প্রচ্ছদ করেছেন, পাঠককে আলাদা করে আকৃষ্ট করার প্রবণতা ছিল না, মানে শিল্পের ফর্মে বিজ্ঞাপন ঘেঁষা প্রচ্ছদ তো এখন স্বাভাবিক কাণ্ড।আর এক প্রকার আছে ব্র্যান্ডিং প্রচ্ছদ। যেমন ধ্রুব এষ। এমনও দেখেছি একজন লেখক ধ্রুব এষকে উৎসর্গ করেছেন এই বলে যে লেখককে নাকি তিনি (ধ্রুব এষ) কোনো একসময় বলেছিলেন, ‘আপনি দারুন লেখেন’। মানে নিজের ঢোল নিজে পিটে মহানন্দে লাফানো।

কিন্তু রিফাত ভাই প্রচ্ছদে নিজের ছবি ব্যবহার করলেন; তাতেও আবার কপাল নেই। এটার মানে কি এই, ফ্যাসিবাদী যুগে আমরা কপালহীন তথা ভাগ্যশূন্য হয়ে আছি? বা এমনও হতে পারে কি নিজেদের কপাল নিজেরাই বাদ দিয়ে দিয়েছি? মানে এই বরাতশূন্যতা আমরা উপভোগ করছি!

বাইন্ডিং ভালোই। ডায়েরির সাইজের বই এটি। নোট টুকে রাখার জন্য আমরা আগে যেভাবে খাতা বানাতাম— নোট খাতা; তেমন। তো, আমি এটাকে ধরছি নোটবুক হিসেবে।

বই উৎসর্গ করা হয়েছে সত্যযুগের বাঘ ও রাখালকে। বইয়ের ভিতর যা বলার অভিপ্রায় তাই এক বাক্যে তিনি উৎসর্গে বলে দিয়েছেন। রিফাত হাসানের গল্পে একদিন ঠিকই বাঘ ও রাখাল আসে। কিন্তু, কেউ কাউকে খায় না। যে যার মতো মুক্ত হয়ে থাকতে পারে, তাদের সহাবস্থান তৈরি হয়। মানে এই গল্প বন্ধুত্বের।

বইয়ের নাম টেক্সট, কন্সপিরেসি ও রূপকথা।

এমন নাম কেন তিনি নিজেই ভূমিকাকারে তা বলে দিয়েছেন। ফ্যাসিবাদী যুগে আলাদা করে কোনো কথা বলার সুযোগ নেই, এই না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাটাই ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’। আপনি বুঝতে পারবেন এই তিনটির অন্বয় কোথায়, বিচ্যুতি কোথায়। পরিশেষে আপনি এগুলোকে আর আলাদা ভাববেন না। টেক্সট রূপকথাময় এবং রূপকথা ষড়যন্ত্রে ভরপুর।

‘আমরা সেই কন্সপিরেসি ও রূপকথা থেকে বেরুতে চাই’ এই কথার দ্বারা তিনি বিলয়ের যে ধারণা দিচ্ছেন সেটার প্রতি ইশারা করছেন আমাদের। হয় সমন্বয়, নয় বিলয়, এমন।বিলয়ের কাজটা মূলত নিজেকে দিয়েই শুরু করতে হয়। মানে আগে নিজেকে মুক্ত হতে হবে।

রিফাত ভাইয়ের এই বই মূলত গণতন্ত্র আবহের, প্রতিষ্ঠিত গণতন্ত্র উদ্দেশ্য নয় যদিও। আদতে তিনি কোনো তন্ত্রকে পূজা ও অবজ্ঞা উভয়ের সমালোচক। এখানে গণ নিয়েই যত কথাবার্তা। তন্ত্র তো পরের জিনিস, হাসিলের জিনিস, বেশিরভাগ সময় আরোপের জিনিস।

রিফাত ভাই কোরআনিক স্পিরিটটাই গ্রহণ করেছেন মানুষকে বুঝতে। তার চিন্তা থেকে গণ হওয়া বলতে মানুষের দাস অবস্থা থেকে মুক্তি বুঝানো হচ্ছে, যে নিজেই সার্বভৌম। এই সার্বভৌমত্ব আরো এবসলিউড সার্বভৌমত্বের দিকে আমাদের ইশারা করে।

আর এটা এমন সময়ের বর্ণনা যখন কোনো তন্ত্রের আলাপ আসেনি। অথবা তখনো প্রধান বিষয় নয়।

মানুষের মুক্তি একইসাথে রাজনৈতিক ও ধর্মীয়। ধর্মের মতো রাষ্ট্রও একটা ধর্ম, কখনো ব্যক্তিও সে মনোভাব ধারণ করে। আধুনিক রাষ্ট্র ভাবনায় এগুলো এত ছোটো হয়ে গেছে আলাদা করে আর ভাবা যাচ্ছে না। আমরা ভাবতে পারছি না কেন? এই প্রশ্নই প্রত্যেকটি বাক্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সরল কথায় রাষ্ট্র কেমন হতে পারত বলা না। বরং, কেমন-কে প্রসারিত করে বিভিন্নতার সূত্র অনুসন্ধানসহ বলতে পারা এমন এমনও হতে পারত।

তিনি যে ফর্মহীনতার কথা বলছেন আমার কাছে তার স্বরূপ এমন, শব্দের সহজাত ব্যবহার উপস্থিত করছেন; পরিকল্পনা করে কিছু বলছেন না; ভাষাকে মুক্ত করে দিচ্ছেন কাঠামো থেকে। আর বাংলাদেশে এখন চলছে ফর্মের পূজা। মানে কবিরা কবিতা লিখবেন, বুদ্ধিজীবীরা বুদ্ধিজীবীতা, রাজনীতিবিদ রাজনৈতিক আলাপ আনবেন। এর বাইরে যাবেন না, এমন এলিট ভাবাপন্ন। কোন ইস্যুতে কথা বলা যাবে, কোনটাতে যাবে না তা আমাদেরই তো সৃষ্টি। নিজেরাই এই সিস্টেম বানিয়ে সেই সিস্টেমে আটকা পড়ে আছি। এই সিস্টেম ভাঙার কাজই ফর্মহীনতা। তাই দেখা যায়, মানুষ যেভাবে বেড়ে ওঠে, চিন্তা করে, সেই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত আলাপের মতোই রিফাত ভাইয়ের আলাপ। ব্যক্তি নিজের সাথে যে আলাপ করে তাই ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা।’

রিফাত ভাই নিজেই বলছেন তিনি মূলত আমাদের সাথে কথা বলেছেন, কোনো বই লিখেননি।

তো আপনি আপনার সময়টা নিয়ে ভাবার জন্য; যা কিছু মিস করেছেন, তা ফিরে দেখার জন্য; ভবিষ্যতে কী নিয়ে কথা বলবেন, কেন বলবেন; কোনো ঘটনাকে যতদিক থেকে দেখা যায় তা দেখার জন্য ‘টেক্সট কন্সপিরেসি ও রূপকথা’ গুরুত্বপূর্ণ।

হেলাল উদ্দিন, লেখক।

1 comment

  • Hasan Ramiz

    মাশা-আল্লাহ, অনেক সুন্দর এবং সাবলীলভাবে গুছিয়ে লিখেছেন।রিভিউ টা পড়ে বই টা পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেলো।
    ধন্যবাদ হেলাল উদ্দিন।

Leave your comment