fbpx

The
Rifat Hasan
Website

রিফাত হাসানের
অফিসিয়াল সাইট

Blogs

রিফাত হাসান

সম্পর্ক

September 11, 2016   2 comments   7:23 pm

আমার বাচ্চাবেলা বিড়ালে ভরা ছিল। আর নানান রকম পাখি ও পোকামাকড়। তার মধ্যে ছিল কোয়েল আর কবুতর। ওদের জন্য আলাদা কইরা বানানো ঘর ছিল। নিয়মিত চাল খুঁদ আর বাসি ভাত দিয়া উনাদের খাওয়ানো হইত। এইসবে আম্মাও ছিল আমার সাথে। আম্মা মাঝে মধ্যে ডাহুক আর পানকৌড়ি ধরার আয়োজন করত। সন্ধ্যায় বিশেষ কিছু জাল বসালে রাতে ধরা পড়ত ওরা। আমাদের পুকুর পাড়ে এইসব পাওয়া যেত। তখন, প্রায় সকালেই, ডাহুক বা পানকৌড়ির চিৎকারে ঘুম ভাঙত। মাঝে মধ্যে শাদা বকও পড়ত। আর ছিল চড়ুই। ওদেরে আমি পালতাম, কিন্তু চড়ুইগুলো জানত না। এই ভাইবা আমার আনন্দ হত। আমাদের চালের নীচে বাসা ছিল চড়ুইয়ের। ওখানে নানান খুঁদ চাল আর কুড়ো রাইখা আসতাম। পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, জোনাকি, এইসব নিয়া আগ্রহ যে কোন ছোট বাচ্চার থাকে, তাই এইটা তেমন গ্রাহ্য ব্যাপার ছিল না। সমবয়সী অন্যরাও আমার সাথে ছিল। কিন্তু পাখি আমারে কাছে আসতে দিত না, তাই পাখির সাথে পিরিত বেশিদিন চলে নাই। মাঝে মধ্যে কবুতরের ঠোকরে আঙুল ছিঁড়ত, কোয়েল আর চড়ুই কাছে আসলেই উড়ুক্কু। তাই দূর হতেই প্রেম, যার কোন পরিণতি সম্ভাবনা ছিল না। পাখি দেইখাই, পাখিদের সাথে সম্পর্কের ইচ্ছেতেই উড়ার ব্যাপার মাথায় ঢুকে। দাদি বলত, ইসমে আজম পইড়া উড়া যায় আর পানির উপরে হাঁটা যায়। কিন্তু এই ইসমে আজম কেউ জানে না। পাখিরা জানে? দাদি হাসত। দাদি…

Share

আমার বাচ্চাবেলা বিড়ালে ভরা ছিল।

আর নানান রকম পাখি ও পোকামাকড়।

তার মধ্যে ছিল কোয়েল আর কবুতর। ওদের জন্য আলাদা কইরা বানানো ঘর ছিল। নিয়মিত চাল খুঁদ আর বাসি ভাত দিয়া উনাদের খাওয়ানো হইত। এইসবে আম্মাও ছিল আমার সাথে। আম্মা মাঝে মধ্যে ডাহুক আর পানকৌড়ি ধরার আয়োজন করত। সন্ধ্যায় বিশেষ কিছু জাল বসালে রাতে ধরা পড়ত ওরা। আমাদের পুকুর পাড়ে এইসব পাওয়া যেত। তখন, প্রায় সকালেই, ডাহুক বা পানকৌড়ির চিৎকারে ঘুম ভাঙত। মাঝে মধ্যে শাদা বকও পড়ত।

আর ছিল চড়ুই। ওদেরে আমি পালতাম, কিন্তু চড়ুইগুলো জানত না। এই ভাইবা আমার আনন্দ হত। আমাদের চালের নীচে বাসা ছিল চড়ুইয়ের। ওখানে নানান খুঁদ চাল আর কুড়ো রাইখা আসতাম।

পাখি, প্রজাপতি, ফড়িং, জোনাকি, এইসব নিয়া আগ্রহ যে কোন ছোট বাচ্চার থাকে, তাই এইটা তেমন গ্রাহ্য ব্যাপার ছিল না। সমবয়সী অন্যরাও আমার সাথে ছিল। কিন্তু পাখি আমারে কাছে আসতে দিত না, তাই পাখির সাথে পিরিত বেশিদিন চলে নাই। মাঝে মধ্যে কবুতরের ঠোকরে আঙুল ছিঁড়ত, কোয়েল আর চড়ুই কাছে আসলেই উড়ুক্কু। তাই দূর হতেই প্রেম, যার কোন পরিণতি সম্ভাবনা ছিল না।

পাখি দেইখাই, পাখিদের সাথে সম্পর্কের ইচ্ছেতেই উড়ার ব্যাপার মাথায় ঢুকে। দাদি বলত, ইসমে আজম পইড়া উড়া যায় আর পানির উপরে হাঁটা যায়। কিন্তু এই ইসমে আজম কেউ জানে না। পাখিরা জানে? দাদি হাসত। দাদি ইসমে আজম জানতো? প্রশ্ন করলে হাসত, তসবির ছড়া ফেলত, কিছু বলতো না। ফলত, বিভিন্নভাবে উড়ার চেষ্টা করতে গিয়া ব্যাথা পাওয়ার গল্প আছে। দাদিরে আইসা বলতাম। বললেই আমারেই উড়িয়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে হাসত দাদী।

অতএব, পাখি হওয়া গেল না।

পাখি শুধু উড়তেই থাকে। আমি মর্ত্যে। অগত্যা, বিড়ালের সাথে হল বন্ধুত্ব। যেহেতু বিড়াল পালতাম, দাদি, অন্ধ বুড়ি, শ্রী ইসলাম খাতুন, যারে আশে পাশের গ্রামের বেগানা পুরুষ কেউ কখনো দেখে নাই, দরবেশ ছিলেন, আমারে ডাকতেন আবু হুরাইরা। মানে বিড়ালের বাপ। রসুলের সাহাবি ছিলেন।

আমি নিজেরে বিড়ালের বাপ ভাইবা আনন্দিত হইতাম।

২.
বিড়াল নিয়া আমার অবসেশনগুলো কীভাবে শুরু বলা মুশকিল।

সব পোকা মাকড়রে নিয়া একটু আধটু খেলতাম। নিজের ভেতরে থাকতাম। এমন কি জোঁকও, এইটারে যে কেন মানুষ এত ভয় পাইত আল্লাহ মালুম- তখন ভাবতাম। একবার, বিলের পানির ভেতরে বড় মইশা জোঁক আমারে কামড়ে ধরছিল। তুলতে গিয়া মাংস উইঠা গেছিল। সাধারণত লবন দিলে জোঁক নরম হয়ে যায়। মরেও যায়। এইটার তেমন হল না। বড়সড় বিচ্ছুর মত ছিল।

এখন ভাবলে গুলিয়ে আসে গা। এখন, এইসব, আমিও ভয় পাই। ভয়ঙ্কর ভয়। সব ভয় ফিরা আসছে। পিঁপড়ার সাইজের জোঁক দেইখাও গা গুলায় আসে।

সেই ঘোরের সময়, একদিন বিড়াল নিয়া হাজির হলাম বাড়িতে। সম্ভবত, রাস্তায় পইড়া ছিল। প্রায়ই এইরকম রাস্তায় পইড়া থাকা বিড়াল দেখা যায়। কেউ হয়ত ফেলে দিয়ে গেছে, বিড়াল আর দরকার হচ্ছে না, বিড়ালটা অনাথের মত চিৎকার করছে। গেরস্তরা বিড়াল পালে, ইঁদুরের কারণে। পরে এইভাবে ফেলে যায়, পথে, আর দরকার না হলে। আমাদেরও বিড়ালের দরকার ছিল বাড়িতে।

ইঁদুর উৎপাত করত খুব। বিড়াল হল ইঁদুরের মহৌষধ। এইভাবেই বিড়ালের প্রবেশ।

বিড়ালটার বৈশিষ্ট্য ছিল না। রোগা। দুর্বল হাঁটার ভঙ্গী, মনে হত এই বুঝি পড়ে যাচ্ছে। বাতাসে উড়ে যাবে। নীলচে ধূসর চোখ, এইটা তো প্রায় সব বিড়ালেরই হয়। নিরীহ চোখ, দৃষ্টি। কোন ভ্রুভঙ্গিমা নেই। শান্ত। আম্মার সন্দেহ, এইটারে দিয়া কিছু হবে না। কিন্তু অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই বিড়ালটারে আমার কোলে দেখা যেতে লাগল।

এইভাবেই বিড়ালের বাপের সংসার শুরু।

আমি বিড়াল কোলে নিয়া থাকতাম প্রায়ই। আর বিড়ালের ডাক ডাকতাম। ডাকলেই বিড়াল ছুটে আসত। আর আমার পেছনে ঘুরঘুর করত। এটা ওটা দিতাম। খাওয়া শেষ হলে, কাছে এসে, পায়ে গা ঘষত।

আম্মারা হাসত আর বকা দিত। কোলে নিয়া ঘুরার ব্যাপারটি আম্মার পছন্দ ছিল না। বিড়াল পালছি ভাল কথা, এইটারে কোলে নিয়া রাখতে হবে কেন?

কোলে থাকলে ইঁদুর খাবে কখন?

আর বিড়াল থেকে নাকি অসুখ বিসুখ হয়। এই কারণেই আপত্তিটা বেশি। আমার একটা অসুখ হল। সম্ভবত, সেই সময় থেকেই, আমার হৃদয়টা বিড়ালের মত নরম হয়ে গেল। অল্পতে ব্যথা পেতাম। নিজে যেমন, অন্যর ব্যথাও, যেন দেখতে পেতাম আর কি। পিপড়াও মারতে পারতাম না। এক পাশে সরে হাঁটতাম। জোঁক ধইরা ছেড়ে দিতাম পারতপক্ষে। আমারে গৌতম বুদ্ধে পাইছিল। এখনো, উনি প্রায় বহাল তবিয়তে আছেন, আমার মধ্যে।

এদিকে, আম্মার মতে, আমার বিড়ালও হইছে আমার মত।

এইটারেও কখনো ঈঁদুর ধরতে দেখা যায় নাই।

এইটা একটু বিপদই বয়ে আনল বিড়ালের জীবনে।

আম্মার হুকুম, বিড়ালের তো দরকার ছিল ইঁদুরের জন্য। যেহেতু ইঁদুর বহাল তবিয়তে থাকতেছে, তাইলে বিড়াল কোথাও রেখে আসা হউক।

এদিকে, আমার খাওয়া দাওয়া উঠবস সব বিড়ালের সাথে। বিড়াল এক পাশে বসত। বাবা বকা দিতেন। আমি ভাত আর মাছের কাঁটা বিড়ালরে দিতাম। বিড়াল যেন তার অপেক্ষাতেই থাকত। যা যা খেতাম, সবকিছুই বিড়ালরে দিতাম। বিড়াল সবকিছু খেত না। এতে নোংরা হত। আম্মা বিরক্ত হতেন। আমি উইঠা পরে পরিস্কার করতাম। এইভাবে সবকিছুতেই বিড়াল। ঘুমের সময়েও, পাশে আইসা ঘুমাত বিড়াল। আম্মা দেখলে সরিয়ে দিত।

৩.
একদা আমার বিড়ালও ছানা দিল, এটাই নিয়ম। বিড়াল ছানা দেবে।

ছানা দেওয়ার পরে বিড়ালের বিপদ শুরু হল। একে তো ইঁদুর ধরে না। তার উপর ছানাপোনা নিয়া আইসা গেঁড়ে বসছে। আমার ওদেরে দেখতে ভালই লাগত। ছোট ছোট বাচ্চা, মিউ মিউ কইরা ডাকত। একটার উপর একটা গড়াগড়ি খেত। মানুষের বাচ্চার মত মায়ের বুকের দুধ খেত। একদিন ভয় পাইছিলাম যখন দেখি বিড়ালটা একটি ছানারে মুখে নিয়া হাঁটতেছে। খেয়ে ফেলবে না তো! পরে দেখলাম, না, এইটা হচ্ছে ছানাগুলো যেহেতু হাঁটতে জানে না, তাদেরে নিয়া হাঁটাচলার বিড়ালিয় সহজ তরিকা।

তারপরে বহুত কাণ্ড ঘটল।

একদিন মহাপরিকল্পনা হল, বিড়ালটারে ছাইড়া আসা হবে দূরে কোথাও।

আমি তখন ছিলাম না। বড় ভাই একটি ছোটখাট চটের বস্তায় ভরে ছানাশুদ্ধ বিড়ালটারে খালপাড়ে ফেলে আসল। খালপাড় অনেক দূর। আইসা যখন শুনলাম অনেক কান্নাকাটি করলাম। কিন্তু আমার আম্মা কঠোর। এইসব বিড়াল টিড়াল আর চলবে না। সেই রাতে ফোঁপাতে ফোঁপাতে ঘুমোতে গেলাম।

মধ্যরাতে কার যেন লোমশ আদরে জাইগা ওঠে দেখি, উনি হাজির। আইসাই উনি আমার গা ঘসছেন।

সকালে উঠে সকলে মহা বিরক্ত ও অবাক। আমি খুশি।

এই খুশি প্রকাশের জন্য নানান কাণ্ড করলাম।

সারাদিন বিড়াল এবং বিড়ালের ছানাপোনাদের নানান আদর যত্ন করলাম। কাঁটা টুটা খাওয়ালাম। ওদের থাকার জায়গা ঠিক করে দিলাম পাক ঘরের পাশে, লাকড়ির ঘরে। বাচ্চাগুলো খুব আহলাদি। আদর পেলেই যেন এসব বুঝে। যেন আমি বিড়াল এবং তাদের ছানাপোনাদের সত্যিকারের বাপ।

আম্মা আর বড় ভাই গোপনে ফন্দি আঁটতে লাগলেন। এই বিড়ালগুলো থেকে বাঁচতে হবে। সব জায়গা ময়লা করে রাখছে, তার উপর অসুখ বিসুখ। শুধু মা টা থাকলেও না হয় কথা ছিল।

এইবার শুধু বাচ্চাগুলোরে নিয়ে পরিকল্পনা।

প্রতিবেশিদের কারো যদি লাগে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হল।

আমি মোটামুটি এই কাজে উৎসাহী হলাম।

কারণ পথে ঘাটে রাইখা আসার চেয়ে তাদেরে কোথাও দিয়ে দেওয়া যায়। আমি নিজে বেশ কিছু গণসংযোগ করলাম। কাজ তেমন হল না। একদিন আমার বুলু খালা বেড়াতে আসল। উনাদের বাড়িতে ইঁদুরের খুব উৎপাত। আমাদের বিড়ালের কথা শুনে উনারা খুশি হয়ে বাচ্চা বিড়াল একটা নিয়ে গেল।

এর কিছুদিন পরে বিড়ালের আর একটা বাচ্চা মারা গেল।

বিড়াল খুব মন মরা হয়ে থাকত। একদিন বড় ভাই বিড়ালের আর বাচ্চাগুলোরে কোথায় যেন রাইখা আসল। বিড়ালটা তার পর থেকে একা হয়ে গেল।

আর মেঘের মতই ভারি হয়ে থাকত সব সময়।

এর মধ্যেই প্রায় অনেকবার একটা কাণ্ড ঘটেছে। ঠিক বস্তায় বেঁধে না, কোলে কইরা বিড়ালটারে নিয়ে প্রায়ই দূরে রেখে আসার কসরত করত বড় ভাই। বিড়ালটা ঠিক ঠিকই ফিরে আসত যে কোন ভাবে, হয়তো ভাইয়ের পেছন পেছন, নয়তো রাত্তিরে।

কীভাবে মানুষ বা পথ চিনত, তা আমি হদিস করতে পারতাম না। পরে শুনেছি, বিড়ালের গন্ধজ্ঞান ভাল। গন্ধ শুঁকে, ঠিক পরিচিত পথের মত ওরা ফিরে আসতে পারে। আর, বিড়ালের চোখ তো রাতেই বেশ খোলে, অন্ধকারে ভাল দেখতে পারে।

৪.
কত দিন গেল বলা মুশকিল। লম্বা সময় হবে, কারণ একটু পরিবর্তন হইছে আমার মধ্যে। বিড়াল বিষয়েও কিছু স্বার্থজ্ঞান তৈরী হইছে। হঠাৎ একদিন যেন আমি বড় হয়ে গেলাম। আর বড় ভাইর মত হতে চাইলাম। আমিও বড় ভাইর মত বিড়ালটারে নিয়া দূরে কোথাও রেখে আসতে গেলাম।

বিড়ালটা কিছুতেই আমারে ছাড়বে না। শক্ত করে আমার জামা কামড়ে ধরে রাখল। আমি জামা ছাড়িয়ে বিড়ালটারে অই জায়গায় রেখে পিছন ফিরে হাঁটা শুরু করলাম।

একই ঘটনা।

আমি রাখতেই বিড়ালটা ঠিক আমার পেছন পেছন চইলা আসতে লাগল।

এবার একটু কঠিন হলাম। বিড়ালটারে আবার ধরে একটু কঠিন করে আর একটু দূরে একটা কাঁটার ঝাঁড়ে ছুঁড়ে দিয়ে লুকিয়ে চলে আসতে লাগলাম।

অল্প পথ গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়তে হল। শোনা গেল আবার বিড়ালের মেউ। জাদুর মত আবার হাজির হয়ে গেল যেন। আমার পেছন পেছন হাঁটতে দেখা গেল অল্পক্ষণের মধ্যেই। আবার ফেলে দিয়ে আসলাম। তিনি আবার হাজির হন। এই ঘটনা অনবরত ঘটতে লাগল। এইভাবে, নির্জন জায়গা থেকে আসতে আসতে গ্রামের মূল জনপদে, মানুষের হাঁটাচলার রাস্তায় চলে আসলাম। আমি এবং বিড়াল।

আমি হাঁটতেছি, পেছনে বিড়াল, আর আমার পাশে পাকা দেওয়াল একটা, কোন এক গেরস্ত বাড়ির সদ্য পাকা ঘরের। চকচক করছে নতুন রঙ।

আমারে যেন জ্বীনে পাইল, হঠাৎ বিড়ালটারে হাতে তুইলা নিলাম।

সজোড়ে ছুঁড়ে মারলাম দেওয়ালের উপর।

যেন একটি রাবারের বল, বিড়ালটা আঁছড়ে পড়ল নীচে, আমি বিমূড় হয়ে এই ঘটনার দিকে চেয়ে আছি। বিড়ালটা মাটিতে পড়তেই, আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়লাম। যদি মারা যায়! মানুষের বাচ্চা, যেমন আমি হইলে মারা পড়তাম। কিন্তু বিড়ালের হাড্ডি তো, তার ব্যাথার ব্যাপারটা বোঝা গেল না। দেওয়ালে পড়ার আওয়াজে আমার সম্বিত এসেছিল। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন গ্রামের এক চাচা। উনিও বিহ্বল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন, আর আমার দিকে ঘৃণাভরে তাকালেন। ছিঃ!

আমি দৃশ্যের দিকে তাকিয়ে আছি কেবল।

আমার দুনিয়াটা যেন তখন কেবলমাত্র ঐ নরম মোমের তুলতুলে বল, মাত্র দেওয়ালের উপরে এবং তার থেকে রাস্তায়, মানে পৃথিবীতে আঁছড়ে পড়ল।

আঁছড়ে পড়েই, যেন রাবারের মত উইঠা ছুট দিল আমার দিকে।

আইসা পা ঘেঁসে দাঁড়িয়ে পড়ল, জিহ্বা এবং মুখ দিয়ে ঘসল কিছুক্ষণ আমার পা।

যেন প্রতিদিন এইভাবেই হওয়ার কথা।

কেবলই একটি বল, এইভাবে পড়াই তার নিয়ম। এবং এইভাবে ফিরে আসা।

আমি আচ্ছন্নের মত পা ফেলে বাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে আরো বড় হয়ে উঠলাম বাচ্চাবেলা থেকে। পেছনে আমার বিড়াল।

2 comments

  • ভাই বিড়ালটা পরে কতদিন বাইচা ছিল? মরার আগ পর্যন্ত আপনার সাথেই ছিল?

  • zamir khan

    কিছুক্ষনের জন্য হারায় গেসিলাম!

Leave your comment